গোবিন্দরাম মিত্র

ভারতীয় আমলা

গোবিন্দরাম মিত্র ব্রিটিশ শাসনের প্রথমদিকের একজন ভারতীয় আমলা ছিলেন। তিনি তার বিপুল সম্পত্তি ও অমিতব্যয়িতার জন্য খ্যাত ছিলেন।[২]

গোবিন্দরাম মিত্র
জন্ম?
চনক, উত্তর ২৪ পরগণা, কোম্পানী রাজ
(বর্তমানের উত্তর ২৪ পরগণা জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)[১]
মৃত্যু১৭৭৬
পেশাডেপুটি কালেক্টর

প্রথম জীবন সম্পাদনা

তিনি বর্তমান উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ব্যারাকপুরের নিকট চনক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৬৯৮ খ্রিষ্টাব্দে সাবর্ণ রায়চৌধুরির পরিবারের কাছ থেকে কলিকাতা, সুতানুটি ও গোবিন্দপুর নামক তিনটি গ্রাম কিনে কলকাতায় জমিদারি বা প্রেসিডেন্সি গঠন করে। এরপর সেখান থেকে খাজনা আদায়ে ইংরেজ কালেক্টরকে সাহায্য করার জন্য একজন ভারতীয় ডেপুটি কালেক্টর নিয়োগ করা হয়। প্রথম ভারতীয় ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন নন্দরাম সেন। তারপরে দ্বিতীয় ভারতীয় ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে নিযুক্ত হন গোবিন্দরাম মিত্র।[২]

অমিতব্যয়িতা সম্পাদনা

মিত্র তার কর্মকালে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। তিনি এতটাই ক্ষমতাশালী ছিলেন যে তার ঊর্ধ্বতন কর্তা হলওয়েলও তাকে পদ থেকে সরাতে পারেননি।[২] অনেকেই তাকে ঘোড়াগাড়ি চালানো প্রথম বাঙালি হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। তিনি প্রচুর জাঁকজমক ও সাড়ম্বরে পূজা-পার্বণ করতেন। তার সময়ে দুর্গা প্রতিমাকে স্বর্ণ ও রৌপ্য পত্রে মোড়া হত। এর পাশাপাশি দেবীর ভোগের জন্য তিরিশ-পঞ্চাশ মন চাল ব্যবহার করা হত ও এক হাজার ব্রাহ্মণদের ভোজন ও উপহার দেওয়া হত। কুমারটুলিতে পঞ্চাশ বিঘা জমির ওপর তার বিশাল বাড়ি ছিল। গ্রাম বাংলায় নন্দন বাগান নামে তার একটি বাগানবাড়িও ছিল।

কিংবদন্তি সম্পাদনা

মিত্র তার জীবিতকালেই কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি তার ডেপুটি পদের জন্য এতটাই বিখ্যাত হয়েছিলেন যে একটি সাবেকি প্রবাদে গোবিন্দরামের উল্লেখ পাওয়া যায়ঃ

"বনমালী সরকারের বাড়ি

The Zemindar was a collector of revenue as well as a judicial officer; and it is on record that it was part of his duty to “make roads and repair drains” … The President and Council, or any three of them, the President being one, were empowered to hold a court in revenue cases, but the real power lay with the Zemindar, and, it may be added with the Indian deputy, who went by the name of “Black Zemindar.” This office was filled during whole of the period from 1720 to 1756, by the famous Gobindram Metre (Mitter), of whom John Zephaniah Holwell, Zemindar of Calcutta from 1752 to 1756, wrote that by reason of the many changes in the headship of the office, “a power in perpetuity devolved on the standing deputy who was always styled the ‘Black Zemindar,’ and such was the tyranny of this man and such the dread conceived of him in the minds of the natives that no one durst complain or give information.” It need hardly be said that Gobindram accumulated vast wealth during the tenure of power: and he is said to have built in 1731 a magnificent “nine jewel” temple on Chitpore Road, the loftiest pinnacle of which was higher than the Ochterlony Monument… The main building was overthrown in the terrible cyclone and earthquake of 1737.

H.E.A.Cotton

গোবিন্দরামের ছড়ি

উমিচাঁদের দাড়ি

হুজুরিমলের কড়ি

কে না জানে?"[৩]

এখানে বর্ণিত 'ছড়ির' কথা গোবিন্দরামের প্রবল দাপটের কথাই স্মরণ করায়।[৪]

বনমালী সরকারের বিশাল বাড়িটি কুমারটুলিতে ১৭৪০ থেকে ১৭৫০ এর সময়ে নির্মিত হয়েছিল।

প্যাগোডা সম্পাদনা

 
শিবের প্রতি নিবেদিত এই মন্দিরটি গোবিন্দরাম কর্তৃক ১৭২৫ সালে নির্মিত হয়েছিল।

১৭৩১ সালে চিৎপুর রোডের পশ্চিম পারে কুমারটুলির কাছে তিনি একটি বিশাল নবরত্ন বা ন'চূড়া স্থাপত্যের কালী মন্দির নির্মাণ করান। এর ১৬৫ ফুট লম্বা চূড়া নাবিকদের নৌচালনায় সাহায্য করত বলে তারা একে প্যাগোডা বলত।[৫] জেমস বেইলি ফ্রেজারের আঁকা 'Views of Calcutta and its Environs' ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে-এ এই প্যাগোডার ছবি দেখা যায়। ১৭৭৩ সালে ভূমিকম্প ও ঝড়ের দরুন এটি যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ১৮১৩ সালে এটি ধ্বংস হয়ে যায়। বাগবাজারের সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের নিকটে এই মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়।[২]

বংশধর সম্পাদনা

তার পুত্র রঘু মিত্র তার নামে গঙ্গার ধারে একটি স্নান ঘাট নির্মাণ করান (মতান্তরে গোবিন্দরাম স্বয়ং এটি নির্মাণ করিয়েছেন)। এটি পরবর্তীকালে বাগবাজার ঘাট নামে পরিচিত হয়।[৬] রঘু মিত্রের পৌত্র অভয়চরণ মিত্র ২৪ পরগনার কালেক্টরের দেওয়ান ছিলেন এবং তার আধ্যাত্মিক গুরুকে এক লক্ষ টাকা প্রদানের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। তার পরে তার নাতি ধনদাচরণ মিত্র এবং তার পরে তার নাতি জগন্নাথ মিত্র তার ছেলের নাম রাজর্ষী মিত্র এবং বর্তমানে তার ছেলে রমিত মিত্র। কুমারটুলির একটি রাস্তা তার (অভয়চরণ) নামে রয়েছে।[৭]

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কলকাতার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত জোড়াবাগান-এর এরূপ নামকরণের কারণ হল এই অঞ্চলে গোবিন্দরাম মিত্র ও উমিচাঁদের দুটি বাগানবাড়ি ছিল।[৮]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সংসদ বাঙ্গালী চরিতাভিধান (জীবনী অভিধান),(বাংলা), সুবোধ চন্দ্র সেনগুপ্ত এবং অঞ্জলি বোস, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ১৯৭৬, পৃ. ১৩৭
  2. Sengupta, Subodh Chandra and Bose, Anjali (editors), (1976/1998), Sansad Bangali Charitabhidhan (Biographical dictionary) Vol I, (in Bengali), p 144, ISBN 81-85626-65-0
  3. Cotton, H.E.A., p 298.
  4. https://www.anandabazar.com/travel/city-tour/chitpur-road-and-rabindra-sarani-is-like-a-way-of-memory-dgtl-1.638181
  5. Gupta, Bunny and Chaliha, Jaya, Chitpur, in Calcutta, the Living City, Vol I, edited by Sukanta Chaudhuri, p 16, Oxford University Press, ISBN 0-19-563696-1.
  6. Cotton, H.E.A., p281
  7. Cotton, H.E.A., p292
  8. Cotton, H.E.A., p104