গোগুমল কিষেনচন্দ

ভারতীয় ক্রিকেটার

গোগুমল কিষেনচন্দ হরিসিংহানী (pronunciation; গুজরাটি: ગોગુમલ કિશનચંદ; জন্ম: ১৪ এপ্রিল, ১৯২৫ - মৃত্যু: ১৬ এপ্রিল, ১৯৯৭) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের করাচি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ভারতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ভারত ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ সময়কালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

গোগুমল কিষেনচন্দ
সংগৃহীত স্থিরচিত্রে গোগুমাল কিষেনচন্দ
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামগোগুমল কিষেনচন্দ হরিসিংহানী
জন্ম(১৯২৫-০৪-১৪)১৪ এপ্রিল ১৯২৫
করাচি, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু১৬ এপ্রিল ১৯৯৭(1997-04-16) (বয়স ৭২)
বরোদরা, ভারত
উচ্চতা৫ ফুট ৪ ইঞ্চি (১.৬৩ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম পেস
ভূমিকাব্যাটসম্যান
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৩৮)
২৮ নভেম্বর ১৯৪৭ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট২৩ অক্টোবর ১৯৫২ বনাম পাকিস্তান
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ১২৭
রানের সংখ্যা ৮৯ ৭,১৮৭
ব্যাটিং গড় ৮.৯০ ৪৭.৯১
১০০/৫০ ০/০ ১৫/৪০
সর্বোচ্চ রান ৪৪ ২১৮
বল করেছে - ১৯৭২
উইকেট - ৩৭
বোলিং গড় - ৩১.৯৪
ইনিংসে ৫ উইকেট -
ম্যাচে ১০ উইকেট -
সেরা বোলিং - ৫/৬৭
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৯৩/১
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২১ মার্চ ২০২০

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বরোদরা, গুজরাত, সিন্ধু ও পশ্চিম ভারত দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন গোগুমল কিষেনচন্দ

শৈশবকাল সম্পাদনা

করাচির মডেল হাইস্কুলে অধ্যয়ন করতেন গোগুমল কিষেনচন্দ। ১৯৩৯-৪০ মৌসুমে সিন্ধুর বর্ষসেরা বিদ্যালয় বালকের সম্মাননা লাভ করেন। ঐ মৌসুমে তিনি বারোটি শতরানের ইনিংস খেলেন। তন্মধ্যে সর্বোচ্চ করেন অপরাজিত ১৭৫* রান। ১৫ বছর বয়সে সিন্ধুর সদস্যরূপে অভিষেক ঘটে তার। বোম্বে পঞ্চদলীয় প্রতিযোগিতায় নিজস্ব প্রথম আসরে অংশ নেন। পার্সিসের বিপক্ষে মনোরম ৭৫ ও মুসলিমের বিপক্ষে অপরাজিত ১৭৫ রান তুলেন। পঞ্চদলীয় খেলায় তিন শতক সহযোগে ১০১.০০ গড়ে ৬১১ রান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি।

ভারতীয় ক্রিকেটে মাঝারিমানের সফলতা পেয়েছেন। সঙ্কোচ চিত্তে ডানহাতে ব্যাটিং করলেও রক্ষণাত্মক ঢংয়ে খেলার প্রয়োজনীয় গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন তিনি। অনেকটা বাঁকানো অবস্থায় ব্যাট নিয়ে ক্রিজে দাঁড়াতেন। তাসত্ত্বেও চমৎকারভাবে ড্রাইভ ও হুকের মার মারতেন। এছাড়াও মাঝে-মধ্যে দলের প্রয়োজনে লেগ ব্রেক বোলিং করতেন তিনি।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

১৯৪০-৪১ মৌসুম থেকে ১৯৬৯-৭০ মৌসুম পর্যন্ত গোগুমল কিষেনচন্দের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ১৯৪০-এর দশকের শুরুরদিকে পশ্চিম ভারতীয় রাজ্যে চলে যান। পরবর্তীকালে গুজরাত, বরোদরার পাশাপাশি সিন্ধুর পক্ষে খেলেছিলেন। সিন্ধুর পক্ষে দ্বিতীয় পর্যায়ে খেলাকালীন ১৯৪৫-৪৬ মৌসুমে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন গোগুমল কিষেনচন্দ।

রঞ্জী ট্রফিতে দূর্দান্ত খেলেন ও প্রতিপক্ষের কাছে সমীহের পাত্রে পরিণত হন। তিন দশকব্যাপী রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ৫৪.০৫ গড়ে ৪২১৬ রান তুলেন। তন্মধ্যে, দশটি শতরানের ইনিংস ছিল। সর্বোচ্চ করেন ১৮১ রান। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে হিন্দু দলের পক্ষে মাত্র তিন মৌসুম অংশ নেন। এ পর্যায়ে ১০১.৮৩ গড়ে ৬১১ রান তুলেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ করেছিলেন ২১৮ রান। ১৯৪৬-৪৭ মৌসুমের আঞ্চলিক চতুর্দলীয় প্রতিযোগিতায় এ রান করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে, ১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়া গমনার্থে ভারত দলের সদস্যরূপে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

আটটি অনানুষ্ঠানিক টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এ পর্যায়ে ২৬.৪০ গড়ে ২৬৪ রান করেছিলেন। সর্বোচ্চ করেন ৭৩ রান। তন্মধ্যে, ১৯৪৫ সালে অস্ট্রেলিয়ান সার্ভিসেস দলের বিপক্ষে ছয়টি অনানুষ্ঠানিক টেস্টে অংশ নেন। ১৯৪৯-৫০ মৌসুমে প্রথমবার কমনওয়েলথ দলের পক্ষে খেলার পর পরের মৌসুমে আবারও খেলেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে পাঁচটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন গোগুমল কিষেনচন্দ। ২৮ নভেম্বর, ১৯৪৭ তারিখে ব্রিসবেনে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ২৩ অক্টোবর, ১৯৫২ তারিখে লখনউয়ে সফরকারী পাকিস্তান দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। তবে, শক্তিশালী বোলিং বিভাগের কাছ থেকে খুব কমই সুবিধা আদায় করতে পেরেছিলেন। কেবলমাত্র সিডনিতে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে মূল্যবান অবদান রাখেন। এ পর্যায়ে সপ্তম উইকেটে দাত্তু ফাড়করের সাথে ৭০ রানের জুটি গড়েছিলেন। টেস্ট খেলাগুলোয় তেমন সফলতার স্বাক্ষর রাখতে পারেননি তিনি। তবে, ডন ব্র্যাডম্যানের শততম শতক হাঁকানোকালে বোলিং করেছিলেন গোগুমল কিষেনচন্দ। ৯৯ রান থাকাকালে অস্ট্রেলীয় একাদশের সদস্যরূপে ব্র্যাডম্যানকে ভারতীয় একাদশের সদস্যরূপে বোলিং করেন। এ পর্যায়ে ভারতীয় অধিনায়ক লালা অমরনাথ তাকে বোলিং করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এটিই এ সফরে তার প্রথম বোলিং করা ছিল। কয়েকটি বল সতর্কতার সাথে মোকাবেলা করে মিড-অনে ঠেলে দিয়ে এক রান নেন ও কাঙ্ক্ষিত শতরান পূর্ণ করেন ডন ব্র্যাডম্যান। এরপর ১৯৫২-৫৩ মৌসুমে আর একটিমাত্র টেস্ট খেলায় পাকিস্তানের বিপক্ষে অংশ নিয়েছিলেন।

পরিসংখ্যানগত কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ডের সাথে স্বীয় নামকে জড়িয়ে রেখেছেন তিনি। অংশগ্রহণকৃত পাঁচ টেস্টের প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে এক ইনিংসে শূন্য রানের সন্ধান পেয়েছেন।

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

বরোদরার মহারাজার অধীনে চাকরি করতেন। পরবর্তীতে বরোদরাভিত্তিক সত্যদেব কেমিক্যালসে কাজ করেছিলেন। ছোটখাটো গড়নের অধিকারী ছিলেন। মাত্র ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতা তার।

আকস্মিকভাবে হৃদযন্ত্রে ক্রীয়ায় আক্রান্ত হন। অতঃপর ১৬ এপ্রিল, ১৯৯৭ তারিখে ৭২ বছর বয়সে ভারতের বরোদরা এলাকায় গোগুমল কিষেনচন্দের দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা