গেইন (ইলেকট্রনিক্স)

ইলেকট্রনিকসগেইন বলতে একটি টু-পোর্ট বর্তনীর (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অ্যামপ্লিফায়ার) ইনপুট থেকে আউটপুট সিগন্যালের পাওয়ার কিংবা বিস্তার বৃদ্ধির সামর্থ্য কে বুঝায়।[১][২][৩][৪] মূলত পাওয়ার সাপ্লাই থেকে শক্তি নিয়ে সিগন্যালে রূপান্তর করে সেটিকে প্রদত্ত ইনপুট সিগন্যালের সাথে যুক্ত করার মাধ্যমে পাওয়ার বা বিস্তার বৃদ্ধি করা হয়। সাধারণত আউটপুট প্রান্তের সিগন্যালের বিস্তার বা পাওয়ার এবং ইনপুট প্রান্তের সিগন্যালের বিস্তার বা পাওয়ার এর অনুপাত দ্বারা গেইন কে সংজ্ঞায়িত করা হয়।[১] এছাড়া প্রায়শই একে লগারিদমিক ডেসিবেল (dB) একক ("dB গেইন") এ প্রকাশ করা হয়।[৪] এক এর চেয়ে বড় গেইন অর্থাৎ শূন্য ডেসিবেল এর চেয়ে বড় গেইন এর বাস্তব ফলাফল হচ্ছে বিবর্ধন এবং এই বিবর্ধন ই একটিভ উপাদান বা বর্তনীর সংজ্ঞায়নকারী ধর্ম। অন্যদিকে প্যাসিভ উপাদান বা বর্তনীর ক্ষেত্রে গেইন হবে এক এর চেয়ে কম অর্থাৎ শূন্য ডেসিবেল এর চেয়ে কম।[৪]

সূক্ষ্মভাবে আলোচনা করা  গেলে বলতে হয়,গেইন শব্দটি নিজে একটি অস্পষ্ট পদ, সুনির্দিষ্টভাবে গাণিতিক কোনো সমীকরণ ধারণ করে না। এটি আউটপুট থেকে ইনপুট বিভব বা ভোল্টেজ এর অনুপাত কে নির্দেশ করতে পারে (ভোল্টেজ গেইন); আবার আউটপুট থেকে ইনপুট তড়িৎ প্রবাহের অনুপাত কে নির্দেশ করতে পারে (কারেন্ট গেইন), ক্ষেত্রবিশেষে আউটপুট থেকে ইনপুট বৈদ্যুতিক ক্ষমতা বা পাওয়ার এর অনুপাতও নির্দেশ করতে পারে (পাওয়ার গেইন)।[৪] শব্দতরঙ্গের আলোচনা এবং অ্যামপ্লিফায়ার এর সাধারণ উদ্দেশ্য আলোচনায়, বিশেষ করে অপারেশনাল অ্যামপ্লিফায়ারের ক্ষেত্রে গেইন দ্বারা ভোল্টেজ গেইন বুঝানো হয়।[২] কিন্তু রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যামপ্লিফায়ার এ (বেতার তরঙ্গ বিবর্ধক) গেইন সাধারণত পাওয়ার গেইন কে নির্দেশ করে। এছাড়াও গেইন কে সেন্সর(সংবেদক) এর প্রক্রিয়া আলোচনায় ব্যবহার করা হয় যেখানে আউটপুট এবং ইনপুট এর একক ভিন্ন থাকে; এসব ক্ষেত্রে গেইন এর একক অবশ্যই নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা থাকতে হয়। উদাহরণস্বরূপ "৫ মাইক্রোভোল্ট পার ফোটন" অর্থাৎ প্রতি ফোটনে ৫ মাইক্রোভোল্ট বলতে হচ্ছে একটি আলোক সংবেদক বা ফটোসেন্সর এর রেসপন্সিভিটি বা সংবেদনশীলতা। একটি বাইপোলার ট্রানজিস্টর এর ক্ষেত্রে গেইন দ্বারা সম্মুখ প্রবাহ সরবরাহের (ফরওয়ার্ড কারেন্ট ট্রান্সফার) অনুপাত কে নির্দেশ করেঃ হয়তো hFE ("বিটা", একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়াধীন বিন্দুতে Ic এবং Ib এর স্থির অনুপাত) কিংবা কিছুক্ষেত্রে hfe ("স্মল সিগন্যাল কারেন্ট গেইন", Ic বনাম Ib লেখচিত্রের যেকোনো বিন্দুতে ঢাল)।

একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র বা বর্তনীর গেইন সাধারণত প্রযুক্ত বা প্রদত্ত সিগন্যালের কম্পাংকের সাপেক্ষে পরিবর্তিত হয় অর্থাৎ কম্পাংকের উপর নির্ভরশীল। যদি ভিন্নমত উল্লেখিত না থাকে, তাহলে গেইন দ্বারা পাসব্যান্ড কম্পাংকের ব্যবধিতে গেইন নির্দেশ করা হয় যেখানে পাসব্যান্ড হচ্ছে যন্ত্রের অভিষ্ট প্রক্রিয়াশীল কম্পাংক ব্যবধি। অন্যদিকে এন্টেনা নকশার ক্ষেত্রে গেইন ভিন্নরকম অর্থ বহন করে। এন্টেনা গেইন হচ্ছে একটি দিকনির্দেশক এন্টেনা থেকে এর রেডিয়েশন ইনটেন্সিটি বা বিকিরণ তীব্রতার অনুপাত (একটি ক্ষতিহীন এন্টেনা অর্থাৎ যে এন্টেনার কোনো অপচয় নেই, সবটুকু শক্তি রূপান্তর করতে সক্ষম এমন এন্টেনার গড় বিকিরণ তীব্রতা বা রেডিয়েশন ইনটেন্সিটি)

Graph of the input (blue) and output voltage (red) of an ideal linear amplifier with a voltage gain of 3 with an arbitrary input signal. At any instant the output voltage is three times the input voltage.

লগারিদমিক একক এবং ডেসিবেল সম্পাদনা

পাওয়ার গেইন সম্পাদনা

ডেসিবেল(dB) এককে পাওয়ার গেইন, এর সংজ্ঞায়নঃ

 

যেখানে   হচ্ছে ইনপুট প্রান্তে প্রয়োগকৃত পাওয়ার বা ক্ষমতা,   হচ্ছে আউটপুট প্রান্তে প্রাপ্ত পাওয়ার বা ক্ষমতা।

হুবুহু একইরকমভাবে স্বাভাবিক লগারিদম ব্যবহার করেও পাওয়ার গেইন হিসেব করা যায়; এক্ষেত্রে গেইন এর একক ডেসিবেল এর পরিবর্তে নেপারস হবেঃ

 

ভোল্টেজ গেইন সম্পাদনা

পাওয়ার গেইন কেই পাওয়ার বা ক্ষমতার পরিবর্তে ভোল্টেজ বা বিভব দ্বারা হিসেব করা যায় জুলের প্রথম সূত্র   ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে সংজ্ঞায়নের সূত্রটি হবেঃ

 

এখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইনপুট ইমপিডেন্স   এবং আউটপুট ইমপিডেন্স   সমান হয়, সেক্ষেত্রে উপরিউক্ত সমীকরণটিকে এর সরলীকৃত রূপ হবেঃ

 
 

এই সরলীকৃত সূত্রটিকে ২০ লগ নিয়ম বা 20 log রুল বলে এবং এটি ডেসিবেল এককে ভোল্টেজ গেইন হিসেব করতে ব্যবহৃত হয়।এটি পাওয়ার গেইনের সমান হবে যদি ও কেবল যদি ইনপুট ও আউটপুট ইমপিডেন্স পরস্পর সমান হয়।

কারেন্ট গেইন সম্পাদনা

একইভাবে   সূত্র থেকে প্রতিস্থাপন করে পাওয়ার গেইন কে যখন পাওয়ার বা ক্ষমতার পরিবর্তে তড়িৎ প্রবাহ দিয়ে হিসেব করা হয় তখন সংজ্ঞায়ন সূত্র হবেঃ

 

আগের মতই এখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইনপুট ইমপিডেন্স এবং আউটপুট ইমপিডেন্স সমান হয়, সেক্ষেত্রে উপরিউক্ত সমীকরণটিকে এর সরলীকৃত রূপ হবেঃ

 
 

এই সরলীকৃত সূত্রটি ডেসিবেল এককে কারেন্ট গেইন হিসেব করতে ব্যবহৃত হয় এবং এটি পাওয়ার গেইনের সমান হবে যদি ও কেবল যদি ইনপুট ও আউটপুট ইমপিডেন্স পরস্পর সমান হয়।

একটি বাইপোলার ট্রানজিস্টর এর ক্ষেত্রে কারেন্ট গেইন   বা   হবে একক বিহীন একটি সংখ্যা মাত্র,   এবং   এর অনুপাত (কিংবা   এর জন্য   বনাম   লেখচিত্রের যেকোনো বিন্দুতে ঢাল)

উপরের প্রতিটি ক্ষেত্রে গেইন এর কোনো একক থাকবে না, গেইন হবে একক বিহীন একটি সংখ্যা পরিমাণ যেহেতু এরা একই এককবিশিষ্ট দুইটি পরিমাপ এর অনুপাত (এখানে ব্যবহৃত ডেসিবেল কোনো একক নয়, বরঞ্চ এটি লগারিদমিক সম্পর্ক নির্দেশের একটি প্রক্রিয়া মাত্র)। বাইপোলার ট্রানজিস্টর এর ক্ষেত্রে এটি আউটপুট ও ইনপুট কারেন্ট বা তড়িৎ প্রবাহের অনুপাত যেখানে দুটি প্রবাহই অ্যাম্পিয়ার এককে পরিমাপকৃত। অন্যান্য যন্ত্রের ক্ষেত্রে গেইন এর একটি এসআই এককে একটি মান থাকবে; যেমন অপারেশনাল ট্রান্সকনডাকট্যান্স অ্যামপ্লিফায়ার এ একটি ওপেন-লুপ  গেইন (ট্রান্সকনডাকট্যান্স) থাকবে সিমেন্স এককে (mho) কারণ এক্ষেত্রে গেইন হবে আউটপুট কারেন্ট/তড়িৎ প্রবাহ ও ইনপুট ভোল্টেজ/বিভবের অনুপাত।

উদাহরণ সম্পাদনা

প্রশ্নঃ একটি অ্যামপ্লিফায়ার এর ইনপুট ইমপিডেন্স ৫০ ওহম এবং এটি ৫০ ওহম এর একটি লোড এর সাথে সংযুক্ত।  এর ইনপুট ভোল্টেজ( ) বা বিভব যখন ১ ভোল্ট তখন আউটপুট ভোল্টেজ( ) বা বিভব ১০ ভোল্ট হয়। অ্যামপ্লিফায়ার এর ভোল্টেজ ও পাওয়ার গেইন কত হবে?

উত্তরঃ সহজভাবে এর ভোল্টেজ গেইন হবে

 

এখানে V/V একক উল্লেখ করাটা ঐচ্ছিক, বাধ্যতামূলক নয়; তবে এখানে এই গেইন টি যে পাওয়ার গেইন নয় বরং ভোল্টেজ গেইন- এই বিষয়টি নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে একক উল্লেখ করা হয়েছে। আবার পাওয়ার বা ক্ষমতার সূত্র P = V2/R ব্যবহার করে পাওয়া যায়, পাওয়ার গেইনঃ

 

একইভাবে এখানে W/W একক উল্লেখ করাটা ঐচ্ছিক; পাওয়ার গেইন হিসেবে নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে একক উল্লেখ করা হয়েছে। তবে মূলত পাওয়ার গেইন কে ডেসিবেল পদ্ধতিতে বেশি ব্যবহার বা হিসেব করা হয়, তাই পাওয়ার গেইনঃ

 

ইনপুট-আউটপুট এর ভোল্টেজ/বিভব এবং ইমপিডেন্স একই রকম বা সমান হলে, ১ (এক) অনুপাত বিশিষ্ট গেইন অর্থাৎ শূন্য  ডেসিবেল বিশিষ্ট গেইনকে ইউনিটি গেইন বা একক গেইন বলা হয়।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Graf, Rudolf F. (১৯৯৯)। Modern Dictionary of Electronics (7 সংস্করণ)। Newnes। পৃষ্ঠা 314। আইএসবিএন 0080511988 
  2. Basu, Dipak (২০০০)। Dictionary of Pure and Applied Physics। CRC Press। পৃষ্ঠা 157। আইএসবিএন 1420050222 
  3. Bahl, Inder (২০০৯)। Fundamentals of RF and Microwave Transistor Amplifiers। John Wiley and Sons। পৃষ্ঠা 34। আইএসবিএন 0470462310 
  4. White, Glenn; Louie, Gary J (২০০৫)। The Audio Dictionary (3 সংস্করণ)। University of Washington Press। পৃষ্ঠা 18। আইএসবিএন 0295984988