গুপ্ত লিপি (যা গুপ্ত ব্রাহ্মী লিপি বা নব্য ব্রাহ্মী লিপি নামেও পরিচিত)[২] ভারতবর্ষে গুপ্ত সাম্রাজ্য চলাকালীন সংস্কৃত ভাষা লিখতে ব্যবহৃত হত। গুপ্ত লিপির উদ্ভব ব্রাহ্মী লিপি থেকে হয়েছিল এবং পরবর্তী কালে নাগরী লিপি, শারদা লিপিসিদ্ধং লিপির উদ্ভব গুপ্ত লিপি থেকে হয়। আবার গুপ্ত লিপি-জাত এই লিপিগুলি থেকে বর্তমানে প্রচলিত ভারতীয় লিপিগুলি, যেমন দেবনাগরী (সংস্কৃত, হিন্দি, মারাঠি, নেপালি ইত্যাদি ভাষা লিখতে ব্যবহৃত লিপি), পাঞ্জাবি ভাষার গুরুমুখী লিপি, বাংলাঅসমীয়া লিপি, তিব্বতী লিপি ইত্যাদির উদ্ভব হয়।

গুপ্ত লিপি
(নব্য ব্রাহ্মী লিপি)
অনন্তবর্মণের গোপিকা গুহার শিলালিপি, সংস্কৃত ভাষায় ও গুপ্ত লিপিতে খোদাই করা। বরাবর গুহাসমূহ, ৫ম বা ৬ষ্ঠ শতাব্দী খ্রিষ্টাব্দ।
লেখার দিকবাম-থেকে-ডান উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
সম্পর্কিত লিপি
উদ্ভবের পদ্ধতি
বংশধর পদ্ধতি
দেওধাই
নাগরী
শারদা
সিদ্ধং
নেপাল লিপি
[ক] ব্রাহ্মী লিপির সেমেটিক উদ্ভব নিয়ে একমত হওয়া যায়নি।
এই নিবন্ধে আধ্বব চিহ্ন রয়েছে। সঠিক রেন্ডারিং সমর্থন ছাড়া, আপনি হয়ত ইউনিকোড অক্ষরের বদলে জিজ্ঞাসা চিহ্ন, বাক্স বা অন্য কোনো চিহ্ন দেখবেন।

উৎপত্তি ও শ্রেণিবিন্যাস সম্পাদনা

বর্তমান ভারতীয় লিপিগুলির সাথে গুপ্ত লিপির পার্থক্য শুধু অক্ষরগুলির রূূূপে, কিন্তু লেখার নিয়মগুলি একই। অর্থাৎ এখানেও ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে স্বরবর্ণের মাত্রা যোগ হয়, এবং মাত্রা না থাকলে বুঝতে হবে ব্যঞ্জনবর্ণের মধ্যেই 'অ' স্বরবর্ণটি অন্তর্নিহিত আছে।

৪র্থ শতাব্দী খ্রিষ্টাব্দ থেকে বর্ণগুলি আরও সর্পিল ও ভারসাম্যযুক্ত হতে থাকে, মূলত দ্রুত ও নান্দনিকভাবে লেখার চলের কারণে। এই একই কারণে গুপ্ত সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে লিপিটি ভিন্ন ভিন্ন রূপ পেতে থাকে। এই আঞ্চলিক রূপগুলিকে চার-পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়,[৩][৪] যদিও শ্রেণিবিন্যাসটি সুস্পষ্ট নয়, কারণ একই শিলালিপিতে একই বর্ণের ভিন্ন ভিন্ন রূপ পাওয়া গেছে। এই কারণে গুপ্ত সাম্রাজ্যে ব্যবহৃত যে কোনো লিপিকেই গুপ্ত লিপি ধরা যেতে পারে, তার যতগুলিই আঞ্চলিক রূপ থাকুক না কেন।

লিপির নমুনা সম্পাদনা

গুপ্ত লিপির যে নমুনা পাওয়া গেছে তা প্রায় সবটাই লোহা বা পাথরের স্তম্ভ বা গুপ্ত বংশের স্বর্ণমূদ্রার উপরে। গুপ্ত লিপিতে লেখা পাঠ্যগুলির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নমুনা পাওয়া যায় প্রয়াগরাজে (এলাহাবাদে), একটি প্রশস্তির রূপে। গুপ্তবংশের দ্বিতীয় সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের সভাকবি ও মন্ত্রী হরিসেন দ্বারা রচিত এই প্রশস্তিতে সমুদ্রগুপ্তের শ্বাসনকালের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এটি সম্রাট অশোকের এলাহাবাদ স্তম্ভে খোদাই করা আছে।

বর্ণমালা সম্পাদনা

গুপ্ত বর্ণমালায় ৩৭টি বর্ণ আছে। এর মধ্যে ৩২টি ব্যঞ্জনবর্ণ ও ৫টি স্বরবর্ণ। বাংলার মতো এখানেও ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে স্বরমাত্রা জুড়ে দেওয়ার, ও ব্যঞ্জবর্ণের সাথে ব্যঞ্জনবর্ণ জুড়ে যুক্তবর্ণ তৈরি করার চল আছে।[৫][৬][৭]

স্বরবর্ণ সম্পাদনা

 
গুপ্ত ব্রাহ্মী লিপির স্বরবর্ণসমূহের গৌণ রূপ (স্বরমাত্রাগুলি)-এর সাথে বাংলা স্বরমাত্রাগুলির একটি তুলনা। বাংলার মতোই এতেও 'অ' স্বরবর্ণটির কোনও গৌণ রূপ নেই। যেখানে ব্যঞ্জনবর্ণটি বসার কথা সেখানে বিন্দু দিয়ে একটি বৃত্ত আঁকা হয়েছে।
           
   

ব্যঞ্জনবর্ণ সম্পাদনা

         
         
         
         
         
        অন্তঃস্থ ব (ওঅ)
       

চিত্রশালা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. গুগল বইয়ে Gazetteer of the Bombay Presidency, পৃ. 30,, Rudradaman’s inscription from 1st through 4th century CE found in Gujarat, India, Stanford University Archives, pages 30–45
  2. Sharma, Ram. 'Brahmi Script' . Delhi: BR Publishing Corp, 2002
  3. Srivastava, Anupama. 'The Development of Imperial Gupta Brahmi Script' . New Delhi: Ramanand, 1998
  4. Fischer, Steven Roger. 'A History of Writing' . UK: Reaktion, 2004
  5. Fischer, Steven Roger (২০০৪)। History of Writing (ইংরেজি ভাষায়)। Reaktion Books। পৃষ্ঠা 123। আইএসবিএন 9781861895882 
  6. Publishing, Britannica Educational (২০১০)। The Culture of India (ইংরেজি ভাষায়)। Britannica Educational Publishing। পৃষ্ঠা 82। আইএসবিএন 9781615302031 
  7. "Gupta Unicode" (পিডিএফ) 
  8. Puri, Baij Nath (১৯৮৭)। Buddhism in Central Asia (ইংরেজি ভাষায়)। Motilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 187 Note 32। আইএসবিএন 9788120803725 
  9. Fleet, John Faithfull (১৯৬০)। Inscriptions Of The Early Gupta Kings And Their Successors। পৃষ্ঠা 150-158।