গাজী রাকায়েত

বাঙালী চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা ও প্রকৌশলী

গাজী রাকায়েত হোসেন একজন বাংলাদেশী অভিনেতা, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র পরিচালক।[১] নাট্য অভিনয় দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু হলেও পরে তিনি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র নদীর নাম মধুমতী (১৯৯৫)। পরবর্তীতে তিনি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক খেলাঘর (২০০৬), নাট্যধর্মী আহা! (২০০৭), নাট্যধর্মী চন্দ্রগ্রহণ (২০০৮), মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দ্য লাস্ট ঠাকুর (২০০৮), নাট্যধর্মী প্রিয়তমেষু (২০০৯), মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আমার বন্ধু রাশেদ (২০১১) ও গেরিলা (২০১১) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ২০১৩ সালে তার চলচ্চিত্র পরিচালনায় অভিষেক হয় মৃত্তিকা মায়া চলচ্চিত্র পরিচালনার মাধ্যমে। এই চলচ্চিত্রের জন্য তিনি এখন পর্যন্ত (২০১৭ সাল) এক বছরে সর্বাধিক পাঁচটি বিভাগে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।[২] এছাড়া তিনি ২০১৫ সালের অনিল বাগচীর একদিন চলচ্চিত্রে আইয়ুব আলী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।[৩]

গাজী রাকায়েত
জন্ম
গাজী রাকায়েত

(1966-06-15) ১৫ জুন ১৯৬৬ (বয়স ৫৭)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
শিক্ষাসিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং (স্নাতক)
মাতৃশিক্ষায়তনবুয়েট
পেশাঅভিনেতা, পরিচালক
কর্মজীবন১৯৯৩–বর্তমান
উল্লেখযোগ্য কর্ম
মৃত্তিকা মায়া
অনিল বাগচীর একদিন
দাম্পত্য সঙ্গীআফসানা মিমি (বি. ১৯৯৫–১৯৯৬) (বিবাহ বিচ্ছেদ)
গাজী নায়রা শাহরিন (বি. ১৯৯৭–বর্তমান)
পিতা-মাতা
  • আবদুল আউয়াল গাজী (পিতা)
  • বিলকিস বেগম (মাতা)
পুরস্কারপূর্ণ তালিকা

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

গাজী রাকায়েতের জন্ম ১৯৬৬ সালের ১৫ জুন বাংলাদেশের ঢাকায়। তার পিতা আবদুল আউয়াল গাজী এবং মাতা বিলকিস বেগম। তার পড়াশুনার পাঠ শুরু হয় গেন্ডারিয়ায়ায়। তিনি ১৯৮৩ সালে গেন্ডারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৮৫ সালে নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন।[৪]

কর্মজীবন সম্পাদনা

গাজী রাকায়েত ১৯৯৩ সালে খ ম হারুনের পরিচালিত সংগীত পদযাত্রা নাটকের মাধ্যমে অভিনয় শুরু করেন। এরপর তিনি অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন এবং নাটক পরিচালনা করেছেন। তার অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে একজন আয়নাল লস্কর, সাকিন, জন্মসূত্র, চিঠি, বৃষ্টি রাতের গল্প, অনিরুদ্ধ, সাম্প্রতিক একটি আত্মহত্যার কথা উল্লেখযোগ্য। ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথম তানভীর মোকাম্মেলের পরিচালিত নদীর নাম মধুমতী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ২০০৬ সালে মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত খেলাঘর এবং ২০০৭ সালে এনামুল করিম নির্ঝর পরিচালিত আহা! চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এরপর তিনি মুরাদ পারভেজ পরিচালিত চন্দ্রগ্রহণ (২০০৮), সাদিক আহমেদ পরিচালিত দ্য লাস্ট ঠাকুর (২০০৮), মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত প্রিয়তমেষু (২০০৯) ও আমার বন্ধু রাশেদ (২০১১), নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত গেরিলা (২০১১) ছায়াছবিতে অভিনয় করেছেন।[৫] এছাড়া ২০১৪ সালে খালিদ মাহমুদ মিঠু পরিচালিত জোনাকির আলো চলচ্চিত্রে চিত্রকর এস এম সুলতানের চরিত্রে অভিনয় করেন।[৬]

অভিনয় ও নাট্য নির্মাণের পাশাপাশি গাজী রাকায়েত স্বল্পদৈর্ঘ্য ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। তার নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলো হল ঘুণ (২০০৪) এবং জীবনমৃত (২০০৫)। ২০১৩ সালে তার নিজের রচনায় নির্মাণ করেন তার প্রথম ছায়াছবি মৃত্তিকা মায়া[৭] চলচ্চিত্রটি ২০১৫ সালে প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও শ্রেষ্ঠ পরিচালকসহ রেকর্ড ১৭টি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে।[৮] বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের এই প্রথম কোন চলচ্চিত্র ১৭টি শাখায় পুরস্কৃত হয়।[৯] এছাড়াও ২০১৪ সালে প্রদত্ত বাচসাস পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও শ্রেষ্ঠ পরিচালকসহ সাতটি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে।[১০] গাজী রাকায়েত তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র গোর-এর চিত্রনাট্যের কাজ করছেন।

তিনি দীর্ঘ দিন নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়-এর সদস্য হিসেবে মঞ্চে কাজ করেছেন। গাজী রাকায়েত "চারুনিড়ম অভিনয় স্কুল"-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। প্রতিষ্ঠানটি এখন নিয়মিত নাটক মঞ্চায়ন করছে।[১১] ২০১৬ সালে গাজী রাকায়েত প্রথম ডিরেক্টরস গিল্ড নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন।[১২]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

১৯৯৫ সালে গাজী রাকায়েত সহশিল্পী আফসানা মিমিকে বিয়ে করেন। ১৯৯৬ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।[১৩] পরে তিনি,১৯৯৭ সালে গাজী নায়রা শাহরিনকে বিয়ে করেন।

চলচ্চিত্রের তালিকা সম্পাদনা

অভিনয় সম্পাদনা

বছর চলচ্চিত্র চরিত্র পরিচালক ভাষা টীকা
১৯৯৬ নদীর নাম মধুমতী তানভীর মোকাম্মেল বাংলা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র
২০০৬ খেলাঘর টুনু মোরশেদুল ইসলাম বাংলা মাহমুদুল হক রচিত খেলাঘর উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র
২০০৭ আহা! কাঞ্চন এনামুল করিম নির্ঝর বাংলা
২০০৮ চন্দ্রগ্রহণ শম্ভু মুরাদ পারভেজ বাংলা
দ্য লাস্ট ঠাকুর সাইফুর রহমান সাদিক আহমেদ বাংলা
২০০৯ প্রিয়তমেষু মিজান মোরশেদুল ইসলাম বাংলা হুমায়ূন আহমেদ রচিত প্রিয়তমেষু উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র
২০১১ আমার বন্ধু রাশেদ মোরশেদুল ইসলাম বাংলা মুহম্মদ জাফর ইকবাল রচিত আমার বন্ধু রাশেদ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র
গেরিলা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাংলা সৈয়দ শামসুল হক রচিত নিষিদ্ধ লোবান উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র
২০১৪ জোনাকির আলো এস এম সুলতান খালিদ মাহমুদ মিঠু বাংলা কিংবদন্তি চিত্রকর এস এম সুলতানের চরিত্রে
২০১৫ অনিল বাগচীর একদিন আইয়ুব আলী মোরশেদুল ইসলাম বাংলা হুমায়ূন আহমেদ রচিত অনিল বাগচীর একদিন উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র
বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
২০১৮ আহত ফুলের গল্প অন্ত আজাদ বাংলা
২০১৯ চন্দ্রাবতী কথা দেওয়ান এন রাশেদ চৌধুরী বাংলা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম বাঙালি নারী কবি চন্দ্রাবতীর জীবনালেখ্য।
২০২০ গোর সিরজা মিয়া গাজী রাকায়েত বাংলা, ইংরেজি ইংরেজি ভাষায় নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম ছায়াছবি।
২০২১ মুন্সিগিরি অমিতাভ রেজা চৌধুরী বাংলা শিবব্রত বর্মণের মৃতেরাও কথা বলে অবলম্বনে নির্মিত ছায়াছবি।
২০২৩ বুকের মধ্যে আগুন তানিম রহমান অংশু বাংলা হইচই ওয়েব ধারাবাহিক

পরিচালনা সম্পাদনা

স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র

  • ঘুণ (২০০৪)
  • জীবনমৃত (২০০৫)

পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র

পুরস্কার সম্পাদনা

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

বছর বিভাগ চলচ্চিত্র ফলাফল
২০১৫ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র (প্রযোজক) মৃত্তিকা মায়া (২০১৩) বিজয়ী ফরিদুর রেজা সাগরের সাথে যৌথভাবে
শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিজয়ী
শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার বিজয়ী
শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিজয়ী
শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা বিজয়ী
২০১৭ শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা অনিল বাগচীর একদিন বিজয়ী

বাচসাস পুরস্কার

বছর বিভাগ চলচ্চিত্র ফলাফল
২০১৪ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র (প্রযোজক) মৃত্তিকা মায়া (২০১৩) বিজয়ী ফরিদুর রেজা সাগরের সাথে যৌথভাবে
শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিজয়ী

সার্ক চলচ্চিত্র উৎসব

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Gazi Rakayet at Raat-Biraat-e [রাত বিরাতে গাজী রাকায়েত]"দ্য ডেইলি ন্যাশন। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২৪ নভেম্বর ২০১৪। ১৮ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১৬ 
  2. "'Mrittika Maya' reigns supreme in National Film Award"দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা, বাংলাদেশ। ১০ মার্চ ২০১৫। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১৬ 
  3. "জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৫ ঘোষণা"এনটিভি অনলাইন। ঢাকা, বাংলাদেশ। ১৮ মে ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. Sadia Khalid (৫ অক্টোবর ২০১৩)। "Gazi Rakayet Never Giving Up"দ্য ডেইলি স্টার। ঢাকা, বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১৬ 
  5. মারুফ কিবরিয়া (২৬ জুলাই ২০১৬)। "সবার সহযোগিতা চান গাজী রাকায়েত"দৈনিক মানবজমিন। ঢাকা, বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১৬ 
  6. কাউসার রুশো (১৪ এপ্রিল ২০১৬)। "আলো ছড়ালো না জোনাকির আলো"মুখ ও মুখোশ। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১৬ 
  7. "'মৃত্তিকা মায়া'র পুনর্জাগরণ হয়েছে: গাজী রাকায়েত"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ১৭ মার্চ ২০১৫। ২৭ জুলাই ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১৬ 
  8. "জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে 'মৃত্তিকা মায়া'র জয়জয়কার"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ১০ মার্চ ২০১৫। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১৬ 
  9. "Record award-winning feat by Bangladeshi film"ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। নয়া দিল্লী, ভারত। ৫ জুলাই ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১৬ 
  10. "পাঁচ বছরের বাচসাস পুরস্কার ঘোষণা"দৈনিক ইত্তেফাক। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪। ১৪ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১৬ 
  11. "তারকালাপের অতিথি গাজী রাকায়েত"সাতদিন। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫। ১১ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১৬ 
  12. "সভাপতি গাজী রাকায়েত-সাধারণ সম্পাদক এসএ হক অলিক"দৈনিক জনকণ্ঠ। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২৩ জুলাই ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১৬ 
  13. "ঢালিউডে আলোচিত বিবাহ বিচ্ছেদ"চ্যানেল আই অনলাইন। ৬ জুন ২০১৬। ২২ জুলাই ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১৬ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা