গতিনিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র

গতিনিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র বলতে ভূ-পৃষ্ঠস্থ লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত এক ধরনের পথনির্দেশনাপ্রাপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রকে বোঝায় যেগুলির গতিপথ পৃথিবীর আবহমণ্ডলে বিরাজ করে এবং গতিপথের সিংহভাগ সময় এটি মোটামুটি স্থিতিশীল গতিবেগে গমন করে। দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করে উচ্চ সুক্ষ্মতা বজায় রেখে বৃহৎ আকারের বিস্ফোরক-মুখ (Warhead) লক্ষ্যস্থলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য গতিনিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্রগুলি নকশা করা হয়। আধুনিক গতিনিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্রগুলি অতিশাব্দিক দ্রুতিতে কিংবা উচ্চ উপশাব্দিক দ্রুতিতে উড্ডয়ন করতে সক্ষম। এগুলি স্বয়ং-পথনির্দেশনা প্রদান করতে পারে এবং অ-নিক্ষেপী ও অত্যন্ত নিম্ন উচ্চতার গতিপথে উড্ডয়ন করতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টোমাহক ক্রুজ মিসাইল নামক গতিনিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র

সাধারণ নকশা সম্পাদনা

একটি গতিনিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র সাধারণত নিম্নলিখিত উপাদানগুলি নিয়ে গঠিত হয়: একটি পথনির্দেশক ব্যবস্থা, বহনকৃত মূল্যবান বোঝা (payload) এবং একটি উড়োযান প্রচালন ব্যবস্থা। এই সবগুলি উপাদানকে একটি উড়োকাঠামো-র (airframe) ভেতরে স্থাপন করা হয়, যে কাঠামোটির উড্ডয়ন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একাধিক ছোট ডানা ও লেজসদৃশ ব্যবস্থা (empennage) থাকে। বহনকৃত মূল্যবান বোঝাটি সাধারণত একটি প্রথাগত বিস্ফোরক মুখ কিংবা একটি পারমাণবিক বিস্ফোরক মুখ হয়ে থাকে। গতিনিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে সাধারণত জেট ইঞ্জিন দিয়ে সম্মুখে প্রচালন করা হয়। নিম্ন উচ্চতা ও উপশাব্দিক দ্রুতিতে অধিকতর কর্মদক্ষতা প্রদর্শন করে বিধায় টার্বোফ্যান ইঞ্জিন জাতীয় জেট ইঞ্জিন বেশি পছন্দ করা হয়ে থাকে।

পথনির্দেশক ব্যবস্থা সম্পাদনা

পথনির্দেশক ব্যবস্থাগুলি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ী ব্যবস্থাগুলিতে রাডার উচ্চতামাপক যন্ত্র, বায়ুচাপভিত্তিক উচ্চতামাপক যন্ত্র এবং ঘড়ি ব্যবহার করে একটি ডিজিটাল চিলতে মানচিত্র (Digital strip map) অনুসরণ করা হয়। অধিকতর উন্নত ব্যবস্থাগুলি অভ্যন্তরীণ পথনির্দেশনা, কৃত্রিম উপগ্রহীয় পথনির্দেশনা এবং বন্ধুরতার সমোন্নতি রেখা মিলকরণ (terrain contour matching (TERCOM)) পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করা হয়। পথনির্দেশনা ব্যবস্থাটিতে স্বয়ংক্রিয় লক্ষ্যবস্তু শনাক্তকরণ (automatic target recognition (ATR)) অ্যালোগোরিদম বা যন্ত্রাংশ থাকলে ক্ষেপণাস্ত্রের নির্ভুলতা বৃদ্ধি পায়।

প্রকারভেদ সম্পাদনা

গতিনিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে এদের আকার, দ্রুতি (অতিশাব্দিক বা উপশাব্দিক), পাল্লা এবং উৎক্ষেপণ উৎস (ভূমি, বায়ু, সমুদ্রপৃষ্ঠের জাহাজ বা ডুবোজাহাজ), ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে প্রকারভেদ করা হয়। প্রায়শই একই ক্ষেপণাস্ত্রের বিভিন্ন সংস্করণ ভিন্ন ভিন্ন উৎক্ষেপণ মঞ্চের জন্য নির্মাণ করা হতে পারে। কখনও কখনও বায়ু ও ডুবোজাহাজ থেকে উৎক্ষিপ্ত সংস্করণগুলি ভূমি ও জাহাজ থেকে উৎক্ষিপ্ত সংস্করণগুলি অপেক্ষা অধিক হালকা ও ছোট হয়ে থেকে। ক্ষেপণাস্ত্রভেদে পথনির্দেশক ব্যবস্থাগুলি ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

ব্যবহার সম্পাদনা

গতিনিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে তুলনামূলকভাবে উচ্চ-মূল্যের লক্ষ্যবস্তু যেমন শত্রু জাহাজ, নিয়ন্ত্রক ঘাঁটি বা বাংকার, সেতু এবং বাঁধ, ইত্যাদি আক্রমণ করার জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় ।[১] আধুনিক পথনির্দেশক ব্যবস্থাগুলি নির্ভুল আক্রমণে সহায়তা করে।

আধুনিক যুদ্ধবিগ্রহে কর্মদক্ষতা সম্পাদনা

বর্তমানে গতিনিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্রগুলি একবার ব্যবহারযোগ্য অস্ত্রগুলির মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল একটি শ্রেণী গঠন করেছে। একেকটি গতিনিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্রের দাম কয়েক মিলিয়ন (দশ লক্ষ) মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। এর পরিণতিতে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারকারীদের জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা একটি দুরূহ নির্বাচনমূলক সমস্যা। তারা কম মূল্যের লক্ষ্যবস্তুর উপরে এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র অপচয় করা এড়াতে চান।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Raytheon: Tomahawk Cruise Missile"www.raytheon.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৯-১৯ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

টেমপ্লেট:ক্ষেপণাস্ত্রের প্রকার