খ্রিষ্টধর্ম প্রচারাভিযান
খ্রিষ্টধর্ম প্রচার অভিযান বা খ্রিষ্টধর্ম প্রচারণা হল সারা বিশ্বে অখ্রিষ্টানদের মাঝে খ্রিষ্টধর্ম ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে আয়োজিত আনুষ্ঠানিক প্রচারণা অভিযান।[১] দ্বিতীয় ভ্যাটিকান পরিষদ (দ্য সেকেন্ড ভ্যাটিকান কাউন্সিল, ১৯৬২-৬৫) শুধুমাত্র অখ্রিষ্টানদের মাঝে ধর্মপ্রচারণার নির্দেশনা দিয়েছে।[১] প্রচারণাগুলোতে সাধারণত এক দেশ বা অঞ্চল থেকে আরেক দেশ বা অঞ্চলে একজন বা কয়েকজন সন্ন্যাসী প্রেরণ করা হয়; এদেরকে ধর্মপ্রচারক বা ধর্ম-অভিযাত্রীও বলা হয়। ধর্মপ্রচারণা অভিযানগুলো ধর্মান্তরকরণের সুবিধার্থে গরিব-মিসকিনদের মাঝে মানবিক ক্রিয়াকলাপও চালিয়ে যায়। বিশ্বে কয়েক ধরনের ধর্মপ্রচার অভিযান লক্ষ্য করা যায়, যেমন স্বল্পমেয়াদী, দীর্ঘমেয়াদী ইত্যাদি। অনেকে তাদের সারা জীবন ধর্মপ্রচারণায় ব্যয় করে।
ইতিহাস সম্পাদনা
ব্যুৎপত্তিগতভাবে, খ্রিষ্টধর্ম প্রচার অভিযান এসেছে গ্রিক শব্দ (apostolē) 'এপোস্টল'-এর থেকে। ইংরেজি ভাষায় বলা হয় 'ক্রিশ্চিয়ান মিশন' (christian mission)। এপোস্টল শব্দের ব্যুৎপত্তিগতভাবে আক্ষরিক অর্থ বিশেষ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করবার লক্ষ্যে কাউকে কোথাও প্রেরণ। খ্রিষ্টধর্মের পরিভাষায় এপোস্টল বর্তমানে খ্রিষ্টধর্ম প্রচার অভিযানে অংশগ্রহণ করবার ঐশী আহ্বানে সাড়া দেওয়া বোঝায়।[২] খ্রিষ্টানদের কাছে ইব্রাহিম, মুসা, পল ইত্যাদি নেতৃস্থানীয় ধর্মপ্রচারক।[২] বাইবেলে খ্রিষ্ট ধর্মপ্রচারে উৎসাহ প্রদান করে বলা হয়েছে, "অতএব তোমরা গিয়ে সমস্ত জাতিকে শিষ্য কর, পিতার ও পুত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাদের বাপ্তিষ্ম দাও, আমি তোমাদের যা যা আদেশ দিয়েছি, সে সমস্ত পালন করতে তাদের শিক্ষা দাও। আর দেখ, আমিই যুগের শেষ পর্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।” (মথি ২৮:১৯–২০)
খ্রিষ্টধর্ম প্রচারণার ফলশ্রুতিতে একবিংশ শতকে বিশ্বের তিন ভাগের একভাগ লোক খ্রিষ্টধর্মে বিশ্বাস করে এবং অনুসারীর সংখ্যায় খ্রিষ্টধর্ম বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মে পরিণত হয়েছে, যা এন্সাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার ভাষায় 'খ্রিষ্টধর্ম প্রচার অভিযানের ফসল'।[২] খ্রিষ্টান জনসংখ্যায় আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া এখন ইউরোপ, আমেরিকা ইত্যাদি খ্রিষ্টধর্মের কেন্দ্রসমূহকে ছাড়িয়ে গেছে। ধর্মের ইতিহাসে এ এক অভিনব ব্যাপার।[২]
ভারত, চীন, ও বাংলাদেশ ইত্যাদি দেশগুলোতে অন্য ধর্ম থেকে খ্রিষ্টধর্মে ধর্মান্তরের হার সবচেয়ে বেশি। ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৯১০০০ হাজার মুসলমান খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষা নিয়েছেন।[৩] চীনে অন্য ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টান বৃদ্ধির বার্ষিক হার ৭ শতাংশ।[৪]
সমালোচনা সম্পাদনা
“ | যখন খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচারকরা আসলো, আমাদের ছিল জমি, আর তাদের ছিল বাইবেল। তারা আমাদের চোখ বন্ধ করে উপাসনা করতে বললো। আমরা যখন চোখ খুললাম, জমি ছিল তাদের দখলে আর আমাদের হাতে শুধু বাইবেল। | ” |
— জোমো কেনিয়াত্তা[৫]
খ্রিষ্টধর্ম প্রচারকদের বিরুদ্ধে উত্থিত অভিযোগগুলোর মাঝে রয়েছে তারা আদিবাসী ও উপজাতিদের পশ্চিমাকরণের মাধ্যমে স্বকীয় সংস্কৃতি ও ভাষা বিলুপ্তকরণে ভূমিকা রাখছে।[৬] সারা বিশ্বে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদ বিকাশে পঞ্চদশ শতক থেকেই খ্রিষ্টধর্ম প্রচার অভিযানগুলো সহায়ক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।[৫] তথ্যসূত্র সম্পাদনা
|