খালেক নওয়াজ খান

বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ

খালেক নওয়াজ খান (২৬ মার্চ ১৯২৬ – ২ অক্টোবর ১৯৭১) বাংলাদেশের একজন ভাষা সৈনিক, রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী ছিলেন। তিনি ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলা আইনসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য ২০০৮ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়েছিল।[১]

খালেক নওয়াজ খান
জন্ম(১৯২৬-০৩-২৬)২৬ মার্চ ১৯২৬
মৃত্যু২ অক্টোবর ১৯৭১(1971-10-02) (বয়স ৪৫)
মাতৃশিক্ষায়তনচন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
রাজনৈতিক দলআওয়ামী লীগ
পুরস্কারএকুশে পদক (২০০৮; মরণোত্তর)

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

খালেক নওয়াজ খান ১৯২৬ সালের ২৬ মার্চ ময়মনসিংহের নান্দাইলের আচারগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[২] তার পিতা এলাহী নওয়াজ খান ছিলেন একজন সাব ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও তার মা আলতাফুন্নেছা ছিলেন একজন গৃহিণী। ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুল ও জলপাইগুড়ি স্কুলে তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয়।[৩] তিনি নান্দাইল চণ্ডীপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৪২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।[২][৩] এরপর তিনি ইসলামিয়া কলেজ থেকে ১৯৪৪ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর‍, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৮ সালে স্নাতক ও ১৯৫২ সালে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন।[২]

রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা

ছাত্রজীবনে ১৯৪৪ সালে তিনি বেকার হোস্টেল ছাত্র সংসদের সহসভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।[৪]

খালেক নওয়াজ খান ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একজন সদস্য ছিলেন।[৫] তিনি ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ হরতালের অংশ হিসেবে পিকেটিং করতে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন।[৬] পিকেটিং জন্য সেদিনই তাকে গ্রেফতার করা হয়।[৭] ১৯৪৯ সালের এপ্রিল মাসে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আবার গ্রেফতার হন।[৮]

খালেক নওয়াজ খান ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেও ভাষা আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মাসে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করা হয়।[২] পরবর্তীতে, তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ১৯৫৩ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি মুক্তি পান।[২]

১৯৫৪ সালে খালেক নওয়াজ খান পূর্ব বাংলা আইনসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি নির্বাচনে পূর্ব বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনকে পরাজিত করেন।[৯]

মৃত্যু ও সম্মাননা সম্পাদনা

খালেক নওয়াজ খান ১৯৭১ সালের ২ অক্টোবর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।[২][৩] মৃত্যুর পর ২০০৮ সালে ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য তাকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়।

সমালোচনা সম্পাদনা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে খালেক নওয়াজ খানকে "ময়মনসিংহের বিশিষ্ট কর্মী"[১০] ও "প্রথম শ্রেণীর কর্মী"[৮] বলে উল্লেখ করলেও কয়েক জায়গায় তার সমালোচনা করেন।

“খালেক নেওয়াজকে নিয়ে আর এক মহাবিপদ ছিল।... ওর মুখও খুব খারাপ ছিল, অকথ্য ভাষায় গালাগালি করত।”

— অসমাপ্ত আত্মজীবনী (পৃ. ১১৭–১১৮), শেখ মুজিবুর রহমান

শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রলীগে খালেক নওয়াজের ভূমিকারও সমালোচনা করেন।

“... খালেক নওয়াজ খানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল (মুসলিম ছাত্রলীগের)।... তবে খালেক নেওয়াজ খান সম্পর্কে অনেকের আপত্তি ছিল। কারণ সে কথা একটু বেশিই বলত।... আমি স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি, আমার মনোনীত প্রার্থী খালেক নেওয়াজ প্রতিষ্ঠানের মঙ্গলের চেয়ে অমঙ্গলই বেশি করেছিল। সে চেষ্টা করত সত্য, কিন্তু কোন সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা তার ছিল না। আর অন্যের কথা শুনত, নিজে ভাল কি মন্দ বিবেচনা করত না, বা করার ক্ষমতা ছিল না।”

— অসমাপ্ত আত্মজীবনী (পৃ. ১২৬–১২৭), শেখ মুজিবুর রহমান

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "একুশে পদকপ্রাপ্ত সুধীবৃন্দ" (PDF)সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০২০ 
  2. "স্মরণ : ভাষাসৈনিক খালেক নওয়াজ খান"ভোরের কাগজ। ২ অক্টোবর ২০১৫। ১৬ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০২০ 
  3. পারভেজ, আলী আহসান খান (২০১৫)। "জ্যোতির্ময় লক্ষত্রের গল্প"। প্রাণোল্লাস: শতবর্ষ উদ্‌যাপন। চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। 
  4. "ছাত্রলীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ"একুশে টেলিভিশন। ৪ জানুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০২০ 
  5. "নাজিমুদ্দিনের ঘোষণায় মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষার নতুন শপথ"ভোরের কাগজ। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫। ১২ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০২০ 
  6. রহমান, শেখ মুজিবুরঅসমাপ্ত আত্মজীবনী (ষষ্ঠ মুদ্রণ: ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সংস্করণ)। ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড। পৃষ্ঠা ৯২। আইএসবিএন 978-984-506-059-2 
  7. "ঐতিহাসিক ১১ মার্চের আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান"ভোরের কাগজ। ১১ মার্চ ২০১৭। ১৬ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০২০ 
  8. রহমান, শেখ মুজিবুরঅসমাপ্ত আত্মজীবনী (ষষ্ঠ মুদ্রণ: ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সংস্করণ)। ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড। পৃষ্ঠা ১১৭-১১৮। আইএসবিএন 978-984-506-059-2 
  9. Zaman, Habibuz (১৯৯৯)। Seventy Years in a Shaky Subcontinent। Janus Publishing Company Limited। পৃষ্ঠা 182। আইএসবিএন 1-85756-405-7 
  10. রহমান, শেখ মুজিবুরঅসমাপ্ত আত্মজীবনী (ষষ্ঠ মুদ্রণ: ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সংস্করণ)। ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড। পৃষ্ঠা ২৪৭। আইএসবিএন 978-984-506-059-2