ক্বরক্বি'য়ান (আরবি: قرقيعان; কখনও কখনও ক্বিরক্বউন (আরবি: قرقاعون) নামে উচ্চারণ করা হয়) হচ্ছে একটি অর্ধবর্ষীয়[১] উদ্‌যাপন, যা মূলত পূর্ব আরব, ইরাক এবং ইরানের খুজেস্তান অঞ্চলে পালন করা হয়। এটি ইসলামিক শাবান মাসের ১৫তম রাতে এবং রমজানের ১৫তম রাতে পালন করা হয়। এইদিনে শিশুরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে এবং ঐতিহ্যবাহী গান গাইতে গাইতে প্রতিবেশীদের কাছে মিষ্টি এবং বাদাম নিতে যায়। ঐতিহ্যটি কয়েক শত বছর ধরে বিদ্যমান এবং গভীরভাবে উপসাগরীয় সংস্কৃতির সাথে জড়িত।[২]

আহওয়াজের সমসাময়িক আর্টস মিউজিয়ামে ক্বরক্বি'য়ান উদ্‌যাপন

যদিও ক্বরক্বিয়ানের উদ্‌যাপনের সাথে কিছু পশ্চিমা দেশে পালিত হ্যালোইনের মিল আছে, কিন্তু হ্যালোইনে সঙ্গে ভুত ও ভয়ের একটা ব্যাপার থাকলেও ক্বরকিয়ানের সাথে এমন কোন ব্যাপার নেই।

ব্যুৎপত্তি ও বিকল্প নাম সম্পাদনা

কারক'আন শব্দের সঠিক উৎস অজানা। যদিও এই বিষয়ে বিভিন্ন তত্ত্ব বিদ্যমান; এই ধরনের একটি তত্ত্ব বলে যে, এই শব্দটি ক্বরক্ব'আহ থেকে প্রাপ্ত (আরবি: قرقعة ), যার অর্থ ক্লিক বা স্নিক, পরিবেশনের সময় মিষ্টি রাখা লোহারপাত্রগুলো পরস্পরের সাথে ধাক্কা খেলে যে শব্দ তৈরী হয়।[২] অন্য একটি তত্ত্ব বলে যে এটি মদিনার বাচ্চাদের "কারারাত আল-আইন, ক্বারাত আল-আইন" (আরবি : قرة العين) গান থেকে উদ্ভূত হতে পারে, যা সময়ের সাথে সাথে কারক'আনে পরিবর্তিত হয়েছে।

ছুটির দিনটি প্রতিটি অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত: ইরাকে মজিনা বা কারকিয়ায়ান, কাতার এবং বাহরাইনে গারানগাও বা গারানগাউ, সৌদি আরবে কারকি'আন বা কারিকান, কুয়েতে গার্গিয়ান বা গিরগিয়ান, ওমানে গারাগাশোচ, আত-তাবলাহ বা কার্নাকোষ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের হাগ আল লেইলা।

ধর্মীয় তাত্পর্য সম্পাদনা

উভয় ক্বরক্বিয়ান রাতই সুন্নি ও শিয়া মুসলমান উভয়ের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ। শিয়ারা বিশ্বাস করে যে ১৫ই শাবানের রাতে ক্বরক্বিয়ানে দ্বাদশ ইমাম মুহাম্মদ আল-মাহদীর জন্মদিন।[৩] ক্বরক্বিয়ান ১৫ই রমজান শিয়া ইসলামের দ্বিতীয় ইমাম হাসান ইবনে আলীর জন্মের সাথে মিলে যায়। এর ফলস্বরূপ, অনুষ্ঠানটি শিয়া মুসলিমদের বিশেষত বাহরাইনে আনন্দ এবং উৎসবের সাথে পালন করা হয়।[৪] এইদিন রাতের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধর্মীয় আলোচনা করা হয়। পূর্ব আরবের বেশিরভাগ রাজধানী শহর (যেমন মানামা) আন্দোৎসবের মতো করে সাজানো হয়।

ঐতিহ্য সম্পাদনা

বাচ্চারা বাড়ির সামনে ছোট ছোট দলে জড়ো হয়ে গান করে। গানের কথায় আল্লাহকে আহবান করা হয় পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যকে আশীর্বাদ করার জন্যে, তাকে সুস্থ রাখার জন্য যা মাকে খুশি রাখবে। তারা যত বেশি গান গায়, তত বেশি বাদাম এবং মিষ্টি উপহার পায়, যেগুলো তারা জমিয়ে রাখে। ক্বরক্বিয়ায় ঐতিহ্যটি প্রাপ্তবয়স্কদের এবং শিশুদের মধ্যে ভালবাসা, সুখ এবং স্নেহ ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।

আধুনিক যুগে, সুপারমার্কেট, কর্পোরেশন এবং মলগুলো এই উৎসবের সময় বাচ্চাদের আকর্ষণ করার জন্য সংবাদপত্র এবং টিভিতে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে, বিশেষ প্রচারণা প্রচার করার মাধ্যমে এবং কারকিয়ান অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়।[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. কখনও কখনও এই ছুটির দিনটি শুধুমাত্র রমজান মাসে পালন করা হয়।
  2. "القرقاعون من أهم الاحتفالات الرمضانية الشعبية في مملكة البحرين"Bahrain News Agency (আরবি ভাষায়)। ২ আগস্ট ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ 
  3. ""نسائية سار الرياضي" تقيم مهرجان القرقاعون الأول"Al Wasat (আরবি ভাষায়)। ১৫ আগস্ট ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ 
  4. "القرقاعون: البحرين تحيي ليلة النصف من رمضان"Al Wasat (আরবি ভাষায়)। ২০ নভেম্বর ২০০২। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ 
  5. ""البحرين سيتي سنتر" يحتفل بليلة القرقاعون مساء اليوم"Al Ayam (আরবি ভাষায়)। ৩১ জুলাই ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩