কোলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ

ক্রোয়েশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান

কোলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ (জন্ম ২৯ এপ্রিল ১৯৬৮) ক্রোয়েশিয় রাজনীতিবিদ এবং কূটনীতিক। তিনি ৪র্থ ক্রোয়েশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান। ২০১৫-র ১৫ ফেব্রুয়ারি, ক্রোয়েশিয়া প্রজাতন্ত্রের প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।[২][৩]

কোলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ
৪র্থ ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট
কাজের মেয়াদ
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ – ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০
প্রধানমন্ত্রীজোরান মিলানভিচ
তিহোমির ওরেসকোভিচ
আন্দ্রেজ প্লেকোভিচ
পূর্বসূরীআইভো জোসিপোভিচ
উত্তরসূরীজোরান মিলানভিচ
অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল অফ ন্যাটো ফর পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি
কাজের মেয়াদ
৪ জুলাই ২০১১ – ২ আক্টোবর ২০১৪
পূর্বসূরীস্টিফ্যানি বাবস্ট (ভারপ্রাপ্ত)
উত্তরসূরীটেড হোয়াইটসাইড (ভারপ্রাপ্ত)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রোয়েশিয়া রাষ্ট্রদূত
কাজের মেয়াদ
৮ মার্চ ২০০৮ – ৪ জুলাই ২০১১
পূর্বসূরীনেবেন জুড়িকা
উত্তরসূরীভাইস স্ক্রাচিক (ভারপ্রাপ্ত)
৯ম পররাষ্ট্র ও ইউরোপ বিষয়ক মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ – ১২ জানুয়ারি ২০০৮
প্রধানমন্ত্রীআইভো সানডার
পূর্বসূরীমিওমির জুজুল (পররাষ্ট্র বিষয়ক)
স্বয়ং (ইউরোপিয় বিষয়)
উত্তরসূরীগর্ডান জন্দরোকোভিচ
৩য় ইউরোপ বিষয়ক মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
২৩ ডিসেম্বর ২০০৩ – ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৫
প্রধানমন্ত্রী[[আইভো সানডার]]
পূর্বসূরীনেবেন জুড়িকা
উত্তরসূরীঅবস্থান বিলুপ্ত
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মকোলিন্দা গ্রাবার
(1968-04-29) ২৯ এপ্রিল ১৯৬৮ (বয়স ৫৫)
রিজিকা, সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ক্রোয়েশিয়া, যুগোস্লাভিয়া
রাজনৈতিক দলক্রোয়েশিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (এইচডিজেড) (১৯৯৩–২০১৫)
স্বাধীন (২০১৫–বর্তমান)[১]
দাম্পত্য সঙ্গীজ্যাকব কিতারোভিচ (১৯৯৬ - বর্তমান)
সন্তানক্যাটরিনা
লোকা
আত্মীয়স্বজনদুব্রভকা গ্রাবার (মা)
ব্রংকো গ্রাবার (বাবা)
প্রাক্তন শিক্ষার্থীইউনিভার্সিটি অফ জাগরেব
ডিপ্লোমেটিক একাডেমি অফ ভিয়েনা
ওয়েবসাইটসরকারি ওয়েবসাইট

ক্রোয়েশিয়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে, প্রশাসনে এবং কূটনৈতিক অঙ্গনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তিনি।[৪] এর মধ্যে ছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকার বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব; কানাডায় ক্রোয়েশীয় দূতাবাসে ডিপ্লোম্যাটিক কাউন্সিলর এবং মিনিস্টার-কাউন্সিলর। ইউরোপীয় সমন্বয় মন্ত্রী, পররাষ্ট্র ও ইউরোপীয় সমন্বয় মন্ত্রী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রোয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব এবং ন্যাটো'র সহকারী মহাসচিব।

১৯৯৩ সালে তিনি ক্রোয়েশিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (এইচডিজেড)-এ যোগ দেন। ২০০৩ সালে তিনি তার দল ক্রোয়েশিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের মনোনয়নে সংসদ নির্বাচিত হন। নিয়ম অনুযায়ী ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোন রাজনৈতিক দলের পদে থাকতে পারবেন না। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে তাকে ক্রোয়েশিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন থেকে পদত্যাগ করতে হয়।

ফোর্বস ম্যাগাজিনের ২০১৭ সালের তালিকা অনুযায়ী তিনি বিশ্বের ৩৯তম সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি।[৫]

২০১৮ সালের গুগল অনুসন্ধানের প্রবণতায় বাংলাদেশে সর্বোচ্চ অনুসন্ধান হওয়া শীর্ষ ব্যক্তি ছিলেন তিনি।[৬]

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা সম্পাদনা

 
বাম থেকে ডানে: কোলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ, সলবান্দ এবং ডি হুপ শেফার প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবলু বুশের সাথে, ২০০৮ সালের ন্যাটো তে আলবেনিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার অন্তরর্ভুক্তি সমর্থনে প্রোটোকল স্বাক্ষর।

কোলিন্দা গ্রাবারের জন্ম ১৯৬৮ সালের ২৯ এপ্রিল ক্রোয়েশিয়ার রিজিকা এলাকায়। ওই সময় ক্রোয়েশিয়া যুগোস্লাভিয়ার অধীনে ছিল।[৭] ১৯১৮ সালে দক্ষিণ ইউরোপে সার্বিয়া, মন্টেনিগ্রো, স্লোভানিয়া, মেসিডোনিয়া, ক্রোয়েশিয়া আর বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা মিলে গঠিত হয় নতুন রাষ্ট্র যুগোস্লাভিয়া। নব্বইয়ের দশকে একে একে চারটি যুদ্ধের মাধ্যমে ক্রোয়েশিয়া, মেসিডোনিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা আর স্লোভেনিয়া স্বাধীন হয়ে যায়। সার্বিয়া আর মন্টেনিগ্রো ‘ফেডারেল রিপাবলিক অব যুগোস্লাভিয়া’ নাম নিয়ে কিছুকাল টিকে থাকলেও ২০০৬ সালে মন্টেনিগ্রো স্বাধীন হয়ে গেলে যুগোস্লাভিয়া বিলীন হয়ে যায় ।

বাবা ব্রংকো গ্রাবার এবং মা দুব্রভকা গ্রাবার সাথে রিজিকার দক্ষিণে লাপাসা গ্রামে বাস করতেন। তাদের পরিবারের কসাইয়ের দোকান এবং একটি খামার ছিল।[৭] ১৭ বছর বয়সে স্কুল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের আওতায় তিনি পাড়ি জমায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোলস আলামোস শহরে। লস আলামোস হাই স্কুল থেকে তিনি হাইস্কুল পাশ করেন।[৭][৮]

এর পরে ফিরে আসেন ক্রোয়েশিয়ায়। ভর্তি হন দেশের সব চেয়ে বড় এবং পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অফ জাগরেব-এর মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ থেকে ১৯৯৩ সালে ইংরেজি এবং স্প্যানিশ ভাষা এবং সাহিত্যে গ্রাজুয়েশন করেন।[৪][৯] এর পরে ১৯৯৫-১৯৯৬ পর্যন্ত ডিপ্লোমা কোর্স করেন অস্ট্রিয়াডিপ্লোম্যাটিক একাডেমি অফ ভিয়েনা থেকে।[১০] আবার ইউনিভার্সিটি অফ জাগরেবে ফিরে আসেন। ২০০০ সালে রাজনৈতিক বিজ্ঞান অনুষদ থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। [৪]

২০০২-২০০৩ সালে জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে ফুলব্রাইট স্কলার হিসাবে যোগ দিয়ে ছিলেন।[১১][১২] তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিজন এফ. কেনেডি স্কুল অফ গভর্নমেন্টের ফেলোশিপ পেয়েছিলেন। জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ অ্যাডভান্সড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ভিজিটিং স্কলার ছিলেন।[৪] ২০১৫ তে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রির জন্য আবার যোগ দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অফ জাগরেবের রাজনৈতিক বিজ্ঞান অনুষদে।[১৩]

কর্মজীবন সম্পাদনা

 
কোলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ ২০০৬ সালে

কোলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ তার কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৯২ সালে ক্রোয়েশিয়ার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিভাগে যোগদানের মধ্য দিয়ে।[১৪] ১৯৯৩ সালে তিনি ক্রোয়েশিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (এইচডিজেড)-এ যোগ দেন। [১৫] একই বছরই তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা হিসাবে বদলি করা হয়।[১৪] ১৯৯৫ সালে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকার বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পান। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন।[১৪] এর পরে তিনি ডিপ্লোম্যাটিক কাউন্সিলর হয়ে কানাডায় ক্রোয়েশীয় দূতাবাসে চলে যান। ১৯৯৮ থেকে তিনি দূতাবাসের মিনিস্টার-কাউন্সিলরের দায়িত্ব পান।[১৬]

২০০০ সালের নির্বাচনে ক্রোয়েশিয়ার ক্ষমতায় আসে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ ক্রোয়েশিয়া (এসডিপি)। নতুন প্রশাসন বাতিল করে দেয় ক্রোয়েশিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের সকল রাজনৈতিক নিয়োগ। কোলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ কে ৬ সপ্তাহের মধ্যে দেশে ফেরার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু সেসময় তিনি সন্তানসম্ভবা ছিলেন - এবং তিনি চাচ্ছিলেন কানাডায় তার সন্তানকে জন্ম দিতে। সরকারি নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে তিনি ফুল-ব্রাইট স্কলারশিপের জন্য আবেদন করেন জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে। ফুল-ব্রাইট স্কলারশিপ পেয়ে গেলে চলে যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানেই জন্ম হয় তার প্রথম কন্যাসন্তানের। গ্রাজুয়েশন শেষ করে ২ বছর পরে ফিরে আসেন ক্রোয়েশিয়ায়। থাকতে শুরু করেন রাজধানী জাগরেব-এ।

২ বছর পরে সিদ্ধান্ত নেন ক্রোয়েশিয়ান পার্লামেন্টের নির্বাচনে অংশ নেয়ার। ২০০৩ সালে তিনি তার রাজনৈতিক দল ক্রোয়েশিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের মনোনয়নে সংসদ নির্বাচিত হন।[১৭] ক্ষমতায় ক্রোয়েশিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন ফিরি আসলে তিনি ইউরোপীয় ইন্টিগ্রেশন মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পান। দায়িত্ব পেয়ে তিনি ক্রোয়েশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। দুই বছর পরে পররাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইন্টিগ্রেশন মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পান। তার কূটনৈতিক জ্ঞান, নেতৃত্বগুণ এবং রাজনৈতিক ক্যারিশমা দ্রুত তাকে স্পর্টলাইটে নিয়ে যায়।[৪][৪][১৪][১৮] অটোয়া চুক্তিতে পালন করেন বিশেষ ভূমিকা।

পরের নির্বচনে জিতে ক্ষমতায় থেকে যায় ক্রোয়েশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কেবিনেটে আবার জায়গা হয় কোলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচের। কিন্তু ২০০৮ সালে তাকে 'অজানা কারণে' কেবিনেট থেকে অপসারণ করা হয়।[১৯]

তবে সেই বছরই তৎকালীন প্রেসিডেন্ট তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রোয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব দেন। ওয়াশিংটন ডিসি তে থাকার সময় এক কেলেঙ্কারিতে জড়িয় পড়ে তার নাম। তারা স্বামীর নীতিমালা ভেঙে ব্যক্তিগত কাজের দূতাবাসের অফিসিয়াল গাড়ী ব্যবহারকে কেন্দ্র করে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়।[২০][২১][২২][২৩]

২০১১ সালে রাষ্ট্রদূতের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ন্যাটো'র সহকারী মহাসচিবের দায়িত্ব নেন। প্রধানমন্ত্রীকে না জানিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেয়ায় সমালোচন মুখে পড়ে তিনি। তার এমন সিদ্ধান্তের জন্য ৯ মাস ফাঁকা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রোয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূতের পদ। আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনীর ইমেজ বৃদ্ধি এবং সৈনিকদের মনোবল বাড়ানোই ছিল তার মূল দায়িত্ব। ন্যাটোতে থাকাকালেই কোলিন্দা গ্রাবার যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা ব্যবসায়ী (রাজনীতিবিদ) ডেভিড রকিফেলোর প্রতিষ্ঠিত ‘ট্রাইলেটারাল কমিশন’-এর সদস্য মনোনীত হন। আমেরিকার বৈশ্বিক প্রাধান্য (হেজিমনি) তৈরি এবং ৯ /১১ পরবর্তী পরিস্থিতি সৃষ্টির অন্যতম কারিগর এই ‘ট্রাইলেটারাল কমিশন’। ন্যাটো এবং ‘ট্রাইলেটারাল কমিশন’-এ কাজের অভিজ্ঞতা কোলিন্দা গ্রাবারকে মার্কিন এস্টাবলিশমেন্টের খুব কাছে নিয়ে এসেছিল। সমালোচকদের মতে, এই সম্পর্ক তাকে ক্রোশিয়ার প্রেসিডেন্ট হতে সহায়তা করে। এর মধ্যে সাধারণ নির্বাচনে দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। রাড়তে থাকে তার রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা। ২০১৫ সালে ক্রোয়েশিয়ার প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।[২৪][২৫][২৬][২৭][২৮]

রাষ্ট্রপতি প্রার্থীতা সম্পাদনা

 
কোলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ ২০১৪ সালে।

ক্রোয়েশীয় দৈনিক পত্রিকার জুটর্নজি লিস্ট ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে বলে, আগামী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ক্রোয়েশিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের প্রার্থী হবেন কোলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ। [২৯][৩০] সেই সময় অনেকে এটাকে নিছক ভবিষ্যতবানি মনে করলেও ২০১৪ নিশ্চিত করা হয় তিনিই হচ্ছেন প্রার্থী।[৩১] ভোটের আগে কোলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ বলেছিলেন যে তিনি এই নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী কেননা এই নির্বাচন হচ্ছে পরিবর্তনের নির্বাচন। ২০১৩ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য হয় ক্রোয়েশিয়া। এ দেশটির ২০ শতাংশ মানুষ এখনো বেকার যা কিনা বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ। কোলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ তাই দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের উপর বেশি জোর দেবেন বলে ঘোষণা করেছিলেন।

রাষ্ট্রপতি নির্বচনে প্রথম দফয় ভোটো তিনি পেয়ে ছিলেন ৩৭ দশমিক দুই শতাংশ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদন্দি পেয়েছিলন ৩৮ দশমিক পাঁচ শতাংম বোট। দ্বিতীয় দফার 'রান-অফ'-এ প্রয়োজনীয় ৫০ দশমিক সাত শাতাংশ ভোটে পেয়ে ক্রোয়েশিয়ার প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। [৩২][৩৩][Note ১][৩৪] কোলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ক্রোয়েশিয়ার সরকার ব্যবস্থায় বামপন্থীদের দীর্ঘ ছয় বছরের শাসনের অবসান ঘটে।

 
প্রেসিডেন্ট গ্রাবার-কিতারোভিচ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সেক্রেটারি অব স্টেট জন কেরি, সমকালীন ফিউচার পার্টনারশিপ সভায় ২০১৬
 
প্রেসিডেন্ট গ্রাবার-কিতারোভিচ ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট রেইভেন রিভলিনের সাথে
 
দুই দেশের মধ্যে ২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

ব্যক্তি জীবনে ১৯৯৬ সালে তিনি জ্যাকব কিতারোভিচ কে বিয়ে করেন। রাজনৈতিক এই নেত্রী দুই সন্তানের জননী। তার মেয়ে ক্যাটরিনার (জন্ম এপ্রিল ২৩, ২০০১) আর ছেলে লোকা (জন্ম ২০০৩)। [৩৫][৩৬][৩৭] তিনি ক্রিস্টান ধর্মের রোমান ক্যাথলিকে বিশ্বাসী। [৩৮][৩৯]

কলিন্ডা ক্রোয়েশিয়ান ছাড়াও ইংরেজি, স্প্যানিশপর্তুগীজ ভাষায় পারদর্শী। এছাড়া জার্মান, ফ্রেঞ্চইতালিয়ান ভাষাও তিনি বুঝতে পারেন। [৪][১৪]

২০১৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে ক্রোরোশিয়ার প্রতি ম্যাচেই দেখা গেছে তার ঝলমলে উপস্থিতি। ক্রোয়েশিয়ার সব ম্যাচে যে কোনো উত্তেজনার পরই ক্যামেরা তাক করে থাকে এই আবেদনময়ী প্রেসিডেন্টের দিকেই। শুধু মাঠে ভাত্রেনি (ক্রোয়েশিয়া ফুটবল দলের ডাকনাম। মানে রূপকথার বালক!) কে সমর্থন করাই নয়, ফুটবলারদের অনুপ্রেরণা দিতে ড্রেসিংরুমেও হাজির ছিলেন 'হটেস্ট' প্রেসিডেন্ট। এমনকী জয়ের পর প্রত্যেক ফুটবলারকে নাকি জড়িয়েও ধরেছিলেন তিনি। তার বক্তব্য, ‘আসলে ভিভিআইপি বক্সে বসে খেলা দেখলে প্রথাগত পোশাক পরতে হয়। দলের হয়ে গলা ফাটাতেও সমস্যা হয়, তাই স্টেডিয়ামে বসেই খেলাটা উপভোগ করতে চাই আমি।’ ক্রোয়েশিয়া থেকে আর পাঁচজন সাধারণ নাগরিকের মতো তিনি ইকোনমি ক্লাসের টিকিট কাটেন। সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গেই উড়ে আসেন রাশিয়ায়। আর পাঁচজন ফুটবল সমর্থকের মতোই লাইনে দাঁড়িয়ে সংগ্রহ করেন বিশ্বকাপের ফ্যান আইডি। তারপর সটান স্টেডিয়ামে। প্রিয় দলের জয়ে উচ্ছ্বাসও তার ছিল আর পাঁচজন সাধারণ সমর্থকের মতোই। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেইসব ছবি শেয়ার করেছেন কোলিন্দা নিজেই। কোলিন্দা গ্রাবার-কিতরোভিচ একাধারে ক্রোয়েশিয়ার প্রশাসনিক প্রধান, সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক, আবার ফুটবল ভক্তও। তবে, আর পাঁচজন রাষ্ট্রনায়কের মতো ভিভিআইপি বক্সে বসে খেলা দেখতে পছন্দ করেন না কোলিন্দা। রাশিয়ায় গিয়ে কোলিন্দা গ্রাবার-কিতরোভিচ কূটনীতি যতটুকুই করেছেন, সেটিও ফুটবলকেন্দ্রিক। পুতিন ছাড়াও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মেকে উপহার দিয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার জার্সি। বিশ্বকাপের মাঝে অনুষ্ঠিত ন্যাটোর সম্মেলনে গিয়ে জার্সি উপহার দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। ভ্লাদিমির পুতিনকে জার্সি উপহার দেন ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্রাবার-কিতরোভিচ।[৪০][৪১]

টিকা সম্পাদনা

  1. Ema Derossi-Bjelajac served as President of the Presidency of the Socialist Republic of Croatia, a constituent republic of the Socialist Federative Republic of Yugoslavia and thus held a position equivalent to a head of state

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "BIOGRAFIJA KOLINDE GRABAR KITAROVIĆ, PRVE HRVATSKE PREDSJEDNICE Put marljive odlikašice iz Rijeke do Pantovčaka"। Jutarnji.hr। ২০১৫-০১-১২। ২০১৯-০১-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৯-০৬ 
  2. "Grabar-Kitarovic elected Croatia's first woman president"BBC। ১২ জানুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০১৫ 
  3. "Kolinda Grabar-Kitarovic elected president of Croatia"CBC। ১১ জানুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০১৫ 
  4. NATO (২৯ আগস্ট ২০১৪)। "NATO – Biography: Kolinda Grabar-Kitarovic, Assistant Secretary General for Public Diplomacy"NATO 
  5. "FORBESOV IZBOR Kolinda Grabar-Kitarović je 39. najmoćnija žena na svijetu"। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ 
  6. Rummana Foisal Nafiu (১৬ ডিসেম্বর ২০১৮)। "Most googled in Bangladesh: Croatian president, Hero Alam, royal wedding and more"Dhaka Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। 
  7. "BIOGRAFIJA PRVE ŽENE NA ČELU DRŽAVE"Jutarnji.hr। ৭ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০১৪ 
  8. "Grabar-Kitarovic to Speak Feb. 14 – News Releases"। Library of Congress। 
  9. "Kolinda Grabar Kitarović"vecernji.hr (ক্রোয়েশীয় ভাষায়)। ১ ডিসেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুন ২০১৮ 
  10. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ 
  11. "Officials"AllGov.com। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  12. "GW News Center"gwu.edu 
  13. "Kolinda Grabar-Kitarović i službeno se upisala na doktorski studij - Večernji.hr"। Vecernji.hr। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-২৩ 
  14. "Kolinda Grabar Kitarović : CV" (PDF)। Mvep.hr। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৯-০৬ 
  15. "Bogata karijera prve hrvatske predsjednice: 'Prostrana polja, široke ravnice...'" (Croatian ভাষায়)। Dnevnik Nove TV। ১১ জানুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ 
  16. "Kolinda GRABAR-KITAROVIC – European Forum Alpbach"। alpbach.org। ২৭ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১৮ 
  17. "Ambassador Kolinda Grabar-Kitarović"NATO after the Wales Summit। ২৬ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১৮ 
  18. "Anti-Personnel Mine Ban Convention Sixth Meeting of States Parties"। ১৩ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৬ 
  19. "Croatian Ministers for Foreign Affairs" (ক্রোয়েশীয় ভাষায়)। Croatian Ministry of Foreign and European Affairs। 
  20. "TKO JOJ PODMEĆE Kolinda mužu dala službeni auto da vozi djecu (VIDEO) > Slobodna Dalmacija > Hrvatska"। Slobodnadalmacija.hr। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৯-০৬ 
  21. "Životopis prve hrvatske predsjednice Kolinde Grabar-Kitarović — Vijesti.hr"। Vijesti.rtl.hr। ২০১৫-০১-১২। ২০১৯-০৪-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৯-০৬ 
  22. "Kolinda mora vratiti auto i nadoknaditi sve troškove"। Jutarnji.hr। ২০১০-০৩-১০। ২০১৬-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৯-০৬ 
  23. "Kolinda Grabar-Kitarović sigurno u utrci za Pantovčak, Željko Reiner samo rezerva"। Jutarnji.hr। ২০১৪-০১-০৩। ২০১৬-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৯-০৬ 
  24. "Ni mami nije rekla za NATO, pa se ona čudila zašto ponavlja francuski"। Jutarnji.hr। ২০১৫-০১-১৪। ২০১৬-০৩-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৯-০৬ 
  25. "Kolinda Grabar Kitarović za Obris.org: "Odlično sam se snašla""। Obris.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৯-০৬ 
  26. "Kolindin nadimak Swambo – Ona koju se mora slušati - Večernji.hr"। Vecernji.hr। ২০১৫-০২-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৯-০৬ 
  27. "Josipović pomogao lansirati Grabar Kitarović u NATO"। tportal.hr। ২০১৪-১২-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৯-০৬ 
  28. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ২৭ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ 
  29. "Tomislav Karamarko: Kolinda Grabar-Kitarović će biti prva žena na čelu Hrvatske!"। Jutarnji.hr। ২০১২-০৯-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৯-০৬ 
  30. B.V.। "Karamarko želi Kolindu Grabar Kitarović za predsjednicu Hrvatske"। Dnevnik.hr। 
  31. "Ivo Josipović ili Kolinda Grabar Kitarović – evo što kaže prvo istraživanje!"Večernji.hr 
  32. "Grabar-Kitarović gewinnt Präsidentschaftswahlen in Kroatien"der Standard। Austria। 
  33. Croatians Elect Kolinda Grabar-Kitarovic as Their First Female President. The New York Times
  34. "Croatia will become rich, pledges new president"। The Scotsman। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০১৫ 
  35. "LIJEPA KOLINDINA KĆI BRILJIRA NA LEDU Hoće li nova državna prvakinja Katarina Kitarović braniti boje Hrvatske na Olimpijskim igrama?"Jutarnji list 
  36. "Suprug Kolinde Grabar Kitarović konačno izašao iz sjene"। tportal.hr। 
  37. "Moj suprug nije papučar nego moderan muškarac"। Gloria.hr। ২৬ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১৮ 
  38. "KOLINDA ODUŠEVLJAVA: 'U Međugorju osjećam duboku spiritualnost i nazočnost onoga u što vjerujem!'"। Dnevno.hr। ১৩ আগস্ট ২০১৬। 
  39. "Kolinda sa prijateljima u privatnoj posjeti Međugorju"। Haber.ba। ১১ আগস্ট ২০১৬। ৮ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১৮ 
  40. "Emotional Croatian leader Grabar-Kitarovic consoles Modric after World Cup final defeat (PHOTOS)"RT International (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৭-১৬ 
  41. Zagreb, Una Hajdari in (২০১৮-০৭-১৬)। "Croatia's real World Cup star? The president in the stands"the Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৭-১৬ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

রাজনৈতিক দপ্তর
পূর্বসূরী
নেভেন মিমিকা
ইউরোপিয় ইন্টিগ্রেশন মন্ত্রী
২০০৩-২০০৫
অবস্থান বিলুপ্ত
পূর্বসূরী
মিওমির জুজুল
পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে
পররাষ্ট্র ও ইউরোপ বিষয়ক মন্ত্রী
২০০৫-২০০৮
উত্তরসূরী
গর্ডান জন্দরোকোভিচ
পূর্বসূরী
স্বয়ং
ইউরোপ বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে
পূর্বসূরী
আইভো জোসিপোভিচ
ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট
২০১৫–২০২০
উত্তরসূরী
জোরান মিলানভিচ
কূটনৈতিক পদবী
পূর্বসূরী
নেবেন জুড়িকা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রোয়েশিয়া রাষ্ট্রদূত
২০০৮-২০১১
উত্তরসূরী
ভাইস স্ক্রাচিক
ভারপ্রাপ্ত
পূর্বসূরী
স্টিফ্যানি বাবস্ট
ভারপ্রাপ্ত
অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল অফ ন্যাটো ফর পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি
২০১১-২০১৪
উত্তরসূরী
টেড হোয়াইটসাইড
ভারপ্রাপ্ত