কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের গাণিতিক সূত্রায়ন

কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের গাণিতিক সূত্রায়ন (ইংরেজি: Mathematical formulation of quantum mechanics) বলতে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের একটি কঠোর বিধিবদ্ধ বর্ণনা প্রদানকারী গাণিতিক সূত্রসমূহের সমষ্টিকে বোঝায়। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিককার বছরগুলিতে এই গাণিতিক সূত্রগুলি লিপিবদ্ধ হয়েছিল। এই সূত্রগুলির প্রকৃতি পূর্বতন সূত্রগুলির চেয়ে আলাদা। এগুলিতে বিমূর্ত গাণিতিক সংগঠন, যেমন অসীম-মাত্রাবিশিষ্ট হিলবার্ট জগৎসমূহ এবং ঐ জগৎগুলির উপর প্রযুক্ত অপারেটর ব্যবহার করা হয়েছে। এই সংগঠনগুলির অনেকগুলিই ফাংশনাল বিশ্লেষণ নামক বিশুদ্ধ গণিতের একটি গবেষণা ক্ষেত্র থেকে নেয়া হয়েছিল। এই বিশেষায়িত ক্ষেত্রটি কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের সমসাময়িককালে উদ্ভাবন করা হয় এবং কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের গাণিতিক ব্যাখ্যার চাহিদা ক্ষেত্রটির উন্নয়নে প্রভাব রেখেছিল। সংক্ষেপে, ভৌত পর্যবেক্ষণসম্ভব রাশি যেমন শক্তি ও ভরবেগের মানগুলি দশা জগতের ফাংশনসমূহের মান হিসেবে আর গণ্য করা হচ্ছিল না। বরং এগুলিকে হিলবার্ট জগতে রৈখিক অপারেটরসমূহের আইগেনমান হিসেবে গণ্য করা হল।

কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের এই সূত্রায়ন আজও ব্যবহৃত হয়। এই বর্ণনার কেন্দ্রে রয়েছে "কোয়ান্টাম অবস্থা" এবং "কোয়ান্টাম পর্যবেক্ষণসম্ভব" এই দুইটি ধারণা। পারমাণবিক মাপের ব্যবস্থাগুলির ক্ষেত্রে এই ধারণা দুটি অতীতের ভৌত বাস্তবতার মডেলগুলিতে ব্যবহৃত ধারণাগুলি অপেক্ষা অত্যন্ত ভিন্ন প্রকৃতির। এই গাণিতিক সূত্রায়ন অনুসারে যদিও অনেক রাশি পরীক্ষণের মাধ্যমে পরিমাপ করা সম্ভব, তা সত্ত্বেও এতে একই সাথে পরিমাপযোগ্য মানের ব্যাপারে একটি নির্দিষ্ট তাত্ত্বিক সীমা রয়েছে। এই সীমাবদ্ধতাটি সর্বপ্রথম হাইজেনবের্গ একটি চিন্তা পরীক্ষণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেন। নতুন সূত্রায়নে গাণিতিকভাবে এই সীমাকে কোয়ান্টাম পর্যবেক্ষণসম্ভবগুলির অবিনিময়যোগ্যতার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে।

একটি আলাদা তত্ত্ব হিসেবে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের আবির্ভাবের পূর্বে পদার্থবিজ্ঞানে যে গণিত ব্যবহৃত হত, তা ছিল মূলত অন্তরক জ্যামিতি এবং আংশিক অন্তরক সমীকরণসমূহ। এছাড়া পরিসংখ্যানিক বলবিজ্ঞানে সম্ভাবনা তত্ত্ব ব্যবহৃত হত। অন্তরক জ্যামিতি ও আংশিক অন্তরক সমীকরণে জ্যামিতিক স্বজ্ঞা নিঃসন্দেহে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করত। আপেক্ষিকতার তত্ত্বগুলি সম্পূর্ণভাবে জ্যামিতিক ধারণার আশ্রয় নিয়েই সূত্রায়িত করা হয়েছিল। মোটামুটি ১৮৯৫ ও ১৯১৫ সালের মধ্যবর্তী সময়ে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের ব্যাপারগুলি নিয়ে বিজ্ঞানীরা চিন্তাভাবনা শুরু করেন। ১৯২৫ সালে কোয়ান্টাম তত্ত্বের আবির্ভাবের ১০-১৫ বছর আগেও পদার্থবিজ্ঞানীরা চিরায়ত বলবিজ্ঞানের মধ্যে থেকেই, বিশেষত একই ধরনের গাণিতিক সংঘটন ব্যবহার করে, ঘটনাগুলি ব্যাখ্যার চেষ্টা চালান। এই প্রচেষ্টাগুলির মধ্যে সবচেয়ে পরিশীলিত উদাহরণ হল সমারফেল্ড-উইলসন-ইশিওয়ারা কোয়ান্টায়ন নিয়ম। এই নিয়মটি সম্পূর্ণভাবে চিরায়ত দশা জগতে সূত্রায়িত করা হয়েছিল।