কোনবাউং রাজবংশ

১৭৫২ থেকে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মিয়ানমার শাসনকারী রাজবংশ

কোনবাউং রাজবংশ (বর্মী: ကုန်းဘောင်မင်းဆက်), তৃতীয় বর্মী সাম্রাজ্য (တတိယမြန်မာနိုင်ငံတော်)[৭] নামেও পরিচিত, হলো শেষ রাজবংশ যেটি ১৭৫২ থেকে ১৮৮৫ সাল পর্যন্ত বার্মা/মিয়ানমার শাসন করেছিল। এই রাজবংশটি বর্মী ইতিহাসের দ্বিতীয় বৃহত্তম সাম্রাজ্য তৈরি করেছিল[৮] এবং টাউঙ্গু সাম্রাজ্য দ্বারা চালুকৃত প্রশাসনিক সংস্কারসমূহ অব্যাহত রেখেছিল যা পরবর্তীতে আধুনিক বার্মা রাষ্ট্রের ভিত্তি রচনা করে। যাইহোক, এই সংস্কারগুলো ব্রিটিশদের অগ্রগতি প্রতিরোধ করার জন্য অপর্যাপ্ত বলে প্রমাণিত হয়েছিল, যাঁরা ছয় দশকের ব্যবধানে (১৮২৪–১৮৮৫) তিনটি ইঙ্গ-বর্মি যুদ্ধে বর্মিদের পরাজিত করেছিল এবং ১৮৮৫ সালে সহস্রাব্দ-প্রাচীন বর্মি রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়েছিল। এই রাজবংশের দাবিদাররা নিজেদের থিবোর কন্যাদের একজন মিয়াত পায়া লাতের বংশধর বলে দাবি করেন।[৯]

কোনবাউং সাম্রাজ্য

ကုန်းဘောင်ဧကရာဇ်နိုင်ငံတော်
১৭৫২–১৮৮৫
জাতীয় সঙ্গীত: စံရာတောင်ကျွန်းလုံးသူ့ (সম্পূর্ণ দক্ষিণ দীপ তাঁর অধিকারভুক্ত) (আনু. ১৮০৫-১৮৮৫)[৬]
এপ্রিল ১৭৬৭ সালে কোনবাউং সাম্রাজ্য
এপ্রিল ১৭৬৭ সালে কোনবাউং সাম্রাজ্য
১৮২৪ সালে কোনবাউং সাম্রাজ্য
১৮২৪ সালে কোনবাউং সাম্রাজ্য
রাজধানীশৈবো (১৭৫২–১৭৬০)
সাগাইং (১৭৬০–১৭৬৫)
আভা (১৭৬৫–১৭৮৩, ১৮২১–১৮৪২)
অমরপুর (১৭৮৩–১৮২১, ১৮৪২–১৮৫৯)
মান্দালয় (১৮৫৯–১৮৮৫)
প্রচলিত ভাষাবর্মী
ধর্ম
থেরবাদী বৌদ্ধধর্ম
জাতীয়তাসূচক বিশেষণবর্মী
সরকারনিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র
রাজা 
• ১৭৫২–১৭৬০
আলংফ্রা (প্রথম)
• ১৮৭৮–১৮৮৫
থিবো (শেষ)
আইন-সভাহ্লুটো
ঐতিহাসিক যুগপ্রারম্ভিক আধুনিক যুগ
• রাজবংশের প্রতিষ্ঠা
২৯ ফেব্রুয়ারি ১৭৫২
• বার্মার পুনঃএকত্রীকরণ
১৭৫২–১৭৫৭
১৭৫৯–১৮১২, ১৮৪৯–১৮৫৫
১৭৬৫–১৭৬৯
১৮২৪–১৮২৬, ১৮৫২, ১৮৮৫
• রাজবংশের সমাপ্তি
২৯ নভেম্বর ১৮৮৫
মুদ্রাক্যত (১৮৫২ সাল থেকে)
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
টাউঙ্গু রাজবংশ
পুনর্গঠিত হংসবতী রাজ্য
আরাকান (মধ্যযুগীয় রাজ্য)
আহোম রাজ্য
কাছাড়ি রাজ্য
লান না
অয়ুধ্যা রাজ্য
ছিং রাজবংশ
মুঘল সাম্রাজ্য
ব্রিটিশ ভারত
বার্মায় ব্রিটিশ শাসন
রত্নসিংহ রাজ্য

একটি সম্প্রসারণবাদী রাজবংশ হিসেবে, কোনবাউং রাজারা মণিপুর, আরাকান, আসাম, পেগুর মোন রাজ্য, শ্যামদেশ (অয়ুধ্যা, ধনবুরি, রত্নখোসিন) এবং চীনের ছিং রাজবংশের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় – এভাবে তৃতীয় বার্মিজ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। ব্রিটিশদের সাথে পরবর্তী যুদ্ধ ও চুক্তিগুলোর সাপেক্ষে, আধুনিক মিয়ানমার রাষ্ট্রের বর্তমান সীমানা এই ঘটনাগুলোর মাঝে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।

কোনবাউং রাজবংশের রাজধানী ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও কৌশলগত কারণে বেশ কয়েকবার স্থানান্তরিত হয়েছিল।

ইতিহাস সম্পাদনা

১৮শ শতকে এসে টংগু রাজবংশের অধীনে মিয়ানমার খণ্ডীভূত হয়ে পড়েছিল। আভার উত্তর ও পূর্বে অবস্থিত শান রাজ্যগুলিতে বর্মীদের পাশাপাশি চীনাদেরও আধিপত্য ছিল। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্বে মন জাতির লোকেদের মধ্যে ১৭৪০ সাল নাগাদ বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ১৭৫২ সালে শোয়েবো এক গ্রাম্য নেতা আলংফ্রা একটি সেনাবাহিনী সংগঠিত করেন এবং মিয়ানমারের দক্ষিণাংশে মন শাসকদের বিরুদ্ধে সফল সামরিক অভিযান সম্পন্ন করেন। আলংফ্রা আরও দক্ষিণে অগ্রসর হতে থাকেন এবং সমস্ত স্থানীয় প্রতিরোধ দমন করেন। তিনি শান রাজাদেরকে তার আনুগত্য স্বীকারে বাধ্য করেন। এরপর তিনি পূর্বদিকে অগ্রসর হন এবং অযুত্থয় রাজ্য (তৎকালীন থাইল্যান্ড) আক্রমণ করেন, কিন্তু সেখানে তিনি সফল হননি। ১৭৬০ সালে সেখান থেকে পশ্চাদপসরণের সময় তিনি আহত হয়ে মারা যান।

১৭৬৪ সালে এই রাজবংশের তৃতীয় রাজা হসিনবিয়ুশিন রাজ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন এবং নতুন করে অযুত্থয় আক্রমণ করেন। ১৭৬৭ সালে তিনি সম্পূর্ণ অযুত্থয় রাজ্যকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেন। কিন্তু তিনি এলাকাটি বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি। হসিনবিয়ুশিনের সেনাবাহিনী শান ও লাও রাজ্য এবং মণিপুর রাজ্য (বর্তমানে ভারতের একটি প্রদেশ)-এর অনেক গভীরে চলে যেতে সক্ষম হয়। তারা চারবার মিয়ানমারের উপর চীনা আক্রমণ প্রতিহত করে। হসিনবিয়ুশিন এরপর দক্ষিণ দিকে শান্তিস্থাপনে মনোযোগ দেন, কিন্তু ১৭৭৬ সালে এসে বাধাপ্রাপ্ত হন। এই রাজবংশের ৬ষ্ঠ রাজা বোদওপয়া ১৭৮২ থেকে ১৮১৯ পর্যন্ত রাজত্ব করেন এবং অযুত্থয় পুনরায় দখলের চেষ্টা করেন। তিনি থাইদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযান চালালেও সফল হননি। রাজা বোদওপয়া মিয়ানমারের রাজধানী অমরপুর শহরে সরিয়ে নেন।

বোদওপয়ার পৌত্র বাগিদও ১৮১৯ থেকে ১৮২৬ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তার আমলেও প্রথম ইঙ্গ-বর্মী যুদ্ধে (১৮২৪-১৮২৬) মিয়ানমার ব্রিটিশদের হাতে পরাজয় বরণ করে। এরপর থেকে মিয়ানমারের রাজত্বের পরিধি কমতে থাকে এবং এর প্রশাসনের ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। থারাওয়াদি এবং তার পুত্র পাগান দুজনেই দুর্বল রাজা ছিলেন এবং তারা স্বরাষ্ট্রীয় বা পররাষ্ট্রীয় উভয় ক্ষেত্রেই তেমন কোন অবদান রাখেননি। ফলে ১৮৫২ সালে দ্বিতীয় ইঙ্গ-বর্মী যুদ্ধতে ব্রিটিশেরা সমগ্র দক্ষিণ মিয়ানমার দখলে নিয়ে নিতে সক্ষম হয়। ১৮৫৩ থেকে ১৮৭৮ পর্যন্ত মিন্দন নামের রাজার অধীনে মিয়ানমার তার অতীত গৌরব পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালায়, কিন্তু ব্যর্থ হয়। মিন্দন এবং ব্রিটিশ বার্মার প্রশাসনের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। ১৮৭৮ সালে মিন্দনের ছোট ছেলে থিবও সিংহাসনে আরোহণ করেন। ১৮৮৫ সালে তৃতীয় ইঙ্গ-বর্মী যুদ্ধের পর ব্রিটেন সম্পূর্ণ মিয়ানমার করায়ত্ত করতে সক্ষম হয়। এরই রেশ ধরেই ১৮৮৬ সালের ১লা জানুয়ারি ব্রিটিশ সরকার কোনবং রাজবংশ বিলুপ্ত ঘোষণা করে।

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. တက္ကသိုလ်စိန်တင် (জুন ২০০৫)। သီပေါဘုရင်နှင့် စုဖုရားလတ် [King Thibaw and Supayalat]। ৬ নভেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০২২ 
  2. Mister Maung Hmaing (১৯১৪)। ဒေါင်းဋီကာ [Peacock Details]। ৬ নভেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০২২ 
  3. ဝရဇိန် (ဆရာစံမြေ) (সেপ্টেম্বর ২০১১)। မြန်မာ့သမိုင်းဝင်အလံများနှင့် မြန်မာခေါင်းဆောင်မျာ [Myanmar's Historical Flags And Myanmar Leaders]। ৬ নভেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০২২ 
  4. Page 6 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে, Part 2, Treatise about State Seals and State Flags Used Through Successive Periods In Myanmar.
    Presenter = Yi Yi Nyunt, Director, Nationalities Youth Resources Development Degree College Sagaing, Department of Education and Practising, Ministry of Border Affairs, Republic of the Union of Myanmar, 5 February 2014
  5. ဗန်းမော်တင်အောင်မြန်မာနိုင်ငံတော်သမိုင်း [Myanmar State History]। ১০ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০২২ 
  6. "စံရာတောင်ကျွန်းမှသည် မြူမှောင်ဝေကင်းသို့"। ২৫ অক্টোবর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০২২ 
  7. Scott, Paul (৮ জুলাই ২০২২)। "Property and the Prerogative at the End of Empire: Burmah Oil in Retrospect"papers.ssrn.comডিওআই:10.2139/ssrn.4157391। ১২ আগস্ট ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ 
  8. Ni, Lee Bih (২০১৩)। Brief History of Myanmar and Thailand (ইংরেজি ভাষায়)। Universiti Malaysi Sabah। পৃষ্ঠা 7। আইএসবিএন 9781229124791 
  9. "The "Second Princess", daughter of King Thibaw"Lost Foot Steps (বর্মি ভাষায়)। Thant Myint-U। ২৪ অক্টোবর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০২২ 
  • Buyers, Christopher। "The Royal Ark: Burma – Konbaung Dynasty"। সংগ্রহের তারিখ April 2011  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য); |অধ্যায়= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  • Charney, Michael W. (২০০৬)। Powerful Learning: Buddhist Literati and the Throne in Burma's Last Dynasty, 1752–1885। Ann Arbor: University of Michigan। 
  • Dai, Yingcong (২০০৪)। "A Disguised Defeat: The Myanmar Campaign of the Qing Dynasty"। Modern Asian Studies। Cambridge University Press: 145–189। 
  • Findlay, Ronald and O'Rourke, Kevin H. (2007) Power and Plenty: Trade, War, and the World Economy in the Second Millennium [১]
  • Koenig, William J. "The Burmese Polity, 1752–1819: Politics, Administration, and Social Organization in the early Kon-baung Period", Michigan Papers on South and Southest Asia, Number 34, 1990.
  • Lieberman, Victor B. “ Political Consolidation in Burma Under the Early Konbaung Dynasty, 1752-c. 1820.” Journal of Asia History 30.2 (1996): 152–168.
  • Hall, D.G.E. (১৯৬০)। Burma (3rd edition সংস্করণ)। Hutchinson University Library। আইএসবিএন 978-1-4067-3503-1 
  • Harvey, G. E. (১৯২৫)। History of Burma: From the Earliest Times to 10 March 1824। London: Frank Cass & Co. Ltd। 
  • Htin Aung, Maung (১৯৬৭)। A History of Burma। New York and London: Cambridge University Press। 
  • Letwe Nawrahta and Twinthin Taikwun (c. 1770)। Hla Thamein, সম্পাদক। Alaungpaya Ayedawbon (Burmese ভাষায়) (1961 সংস্করণ)। Ministry of Culture, Union of Burma।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  • Maung Maung Tin, U (১৯০৫)। Konbaung Hset Maha Yazawin (Burmese ভাষায়)। 1–3 (2004 সংস্করণ)। Yangon: Department of Universities History Research, University of Yangon। 
  • Myint-U, Thant (২০০৬)। The River of Lost Footsteps—Histories of Burma। Farrar, Straus and Giroux। আইএসবিএন 978-0-374-16342-6, 0-374-16342-1 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য) 
  • Phayre, Lt. Gen. Sir Arthur P. (১৮৮৩)। History of Burma (1967 সংস্করণ)। London: Susil Gupta। 
  • Pollak, Oliver B. "Dynasticism and Revolt: Crisis of Kingship in Burma, 1837–1851." Journal of Southeast Asian Studies 7 (1976): 187–196.
  • Wyatt, David K. (২০০৩)। History of Thailand (2 সংস্করণ)। Yale University Press। আইএসবিএন 0-300-08475-7, 9780300084757 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য) 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা


উদ্ধৃতি ত্রুটি: "lower-alpha" নামক গ্রুপের জন্য <ref> ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="lower-alpha"/> ট্যাগ পাওয়া যায়নি