কোদণ্ডরাম মন্দির, ওন্টিমিট্ট

শ্রী কোদণ্ডরাম স্বামী মন্দির (তেলুগু: కోదండ రామాలయం) একটি হিন্দু মন্দির, এটি ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের কডপ্পা জেলার ওন্টিমিট্ট শহরে অবস্থিত একটি রাম মন্দির। মন্দিরটি ষোড়শ শতাব্দীর বিজয়নগরীয় স্থাপত্যশৈলীর একটি নিদর্শন। এটি এই অঞ্চলের বৃহত্তম মন্দির। মন্দিরটি রাজাম্পেটের নিকটে কডপ্পা হতে ২৫ কিলোমিটার (১৬ মা) দূরত্বে অবস্থিত।

শ্রী কোদণ্ডরাম স্বামী মন্দির
কোদণ্ডরাম স্বামী মন্দিরের দৃশ্য
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাকডপ্পা
অবস্থান
অবস্থানওন্টিমিট্ট
রাজ্যঅন্ধ্র প্রদেশ
দেশভারত
স্থাপত্য
ধরনদ্রাবিড়ীয় স্থাপত্য
সৃষ্টিকারীচোলা এবং বিজয়নগরের রাজাবৃন্দ
উচ্চতা১৫১ মি (৪৯৫ ফু)

কিংবদন্তি সম্পাদনা

স্থানীয় কিংবদন্তি অনুযায়ী ওন্টুডু এবং মিট্টুডু নামক দুজন রাম উপাসক মন্দিরটি নির্মাণ করেন, যারা পূর্বে ডাকাত ছিলেন। মন্দিরটি তৈরি হবার পরে তারা দুজন পাথরে পরিণত হয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।[১]

ইতিহাস সম্পাদনা

মন্দিরটি ষোড়শ শতকে চোল এবং বিজয়নগরের রাজাদের রাজত্বকালে নির্মিত হয়েছিলো।[২][৩]

বম্মের পোতন ওন্টিমিট্টয় বসবাস করতেন, তিনি ভাগবত পুরাণ তেলুগু ভাষায় অনুবাদ করেন এবং তা ভগবান রামের প্রতি উৎসর্গ করেন। 'অন্ধ্র বাল্মীকি' হিসেবে পরিচিত ভাভিলাকোলানু সুব্বা রাও যিনি বাল্মীকি রামায়ণ তেলুগু ভাষায় অনুবাদ করেছেন তিনিও এখানে ভগবান রামের উপাসনায় তার সময় অতিবাহিত করেছেন। বলা হয় সন্ন্যাসী-কবি আন্নামাচারিয়া এই মন্দির পরিদর্শন করেছেন এবং এখানে রাম কীর্তন রচনা করেছেন ও গেয়েছেন। ফরাসী পর্যটক জঁ-ব্যাপটিস্ট তাভেরনির ১৬৫২ সালে এই মন্দির পরিদর্শন করেন এবং এর অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীর প্রশংসা করেন।[১]

বৈশিষ্ট্যসমূহ সম্পাদনা

 
মন্দিরের একটি আকাশজাত দৃশ্য
মন্দিরের প্রধান প্রবেশ পথের দৃশ্য গোপুরাম
মন্দিরের ভেতরে রাঙ্গামানতাপামের দৃশ্য
 
মান্দাপামের একটি পাথরের স্তম্ভে জটিল ভাস্কর্য

বিজয়নগরীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত মন্দিরটি এই অঞ্চলের বৃহত্তম মন্দির[২]। এটি "সন্ধ্যারা" বিন্যাসে[৪] গঠিত দেয়াল দ্বারা ঘেরা এবং আয়তক্ষেত্রাকার[৪]। মন্দিরটি বক্রপেটা হয়ে সিদ্ধৌত থেকে ১৬ কিলোমিটার (৯.৯ মা) দূরত্বে অবস্থিত। মন্দিরটির স্থাপত্যশৈলী মার্জিত এবং চিত্তাকর্ষক। মন্দিরটির তিনটি কারুকার্য খচিত মিনার রয়েছে। এর মধ্যে পূর্বমুখী কেন্দ্রীয় মিনারটি মন্দিরের প্রবেশদ্বার, অপর দুটি মিনার উত্তর ও দক্ষিণমুখী। মধ্যভাগের মিনারটি পাঁচটি স্তরে নির্মিত, এখান থেকে কয়েক ধাপ সামনে প্রধান ফটক।[২][৪][৫]

মন্ডপ বা রঙ্গমন্তপম একটি খোলা নাট্যশালা, এখানে কিছু সূক্ষ্ম ভাস্কর্য রয়েছে। মধ্যরঙ্গরদপম হিসেবে পরিচিত মণ্ডপটি ৩২ টি পিলার দ্বারা নির্মিত।[৫] মন্ডপের স্তম্ভ গুলোতে অপ্সরা বা দেবীদের মূর্তি খচিত রয়েছে। মধ্যভাগের সাপোর্ট সিস্টেমের দক্ষিণ পার্শ্বে ভগবান কৃষ্ণ এবং বিষ্ণুর মূর্তি প্রদর্শন করা হয়েছে। কোণার দিকের প্রতিটি কলামে তিনটি করে ভাগ রয়েছে যেখানে অপ্সরা এবং দেবদেবীদের ছবি খচিত রয়েছে। মন্ডপের কেন্দ্রীয় অংশের স্তম্ভগুলো হিন্দু পৌরণিক প্রাণী ভেদালার(সিংহ, হাতি ও ঘোড়ার সংমিশ্রণ) চিত্র দ্বারা শোভিত। কেন্দ্রীয় অংশের ছাদ অনেক কারুকাজ খচিত বন্ধনী দ্বারা নির্মিত হয়েছে।[২] মণ্ডপের একটি কলামে ভগবান রাম এবং তার ভাই লক্ষণের মূর্তি খোদাই করা হয়েছে। এখানে রামকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখানো হয়েছে, তার বাম হাতে তীর এবং ডান হাতে ধনুক। এছাড়াও রামের চিত্রটিতে কানের দুল, মালা, হাতের বালা, উপনয়ন প্রভৃতি দ্বারা অলংকরণ করা হয়েছে।[৬]লক্ষ্মণের চিত্রটি ত্রি-বক্র ভঙ্গিতে খোদাই করা হয়েছে যেখানে তার বাম হাতে ধনুক এবং ডান হাত খালি রয়েছে। তার চিত্রটি মুকুট, কোমর বন্ধনী প্রভৃতি দ্বারা অলংকৃত করা হয়েছে।[৭] ভগবান কৃষ্ণের প্রতিকৃতিটি ভয়তস্থপদে উল্লেখিত দ্বিভঙ্গ ভঙ্গিতে বাম পা দৃঢ়ভাবে মাটিতে স্থাপন করে ডান পা হাঁটুতে ন্যুব্জ অবস্থায় দেখা যায়। এখানে তার ডান হাতে গো-বর্ধন পর্বত এবং অন্যটি কাটিতে দেখা যায়। চিত্রটিকে কিরতিমুক্তা এবং অন্যান্য আরো অলংকার দ্বারা অলংকৃত করা হয়েছে। তার পাশে দুটি গরুও দেখানো হয়েছে।[৮]

মণ্ডপ হতে সামনে রয়েছে একটি অন্তরালয় বা কুঠুরির মধ্যে মন্দিরের পবিত্রতম স্থান বা গর্ভগৃহ, যা বিভিন্ন ভাস্কর্য দ্বারা সুশোভিত।[৫] গর্ভগৃহের ভেতরে কেন্দ্রে একটি পাথরে রাম, তার স্ত্রী সীতা এবং লক্ষ্মণের চিত্র একসাথে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এটাও অনুমান করা হয় যে সম্পূর্ণ গর্ভগৃহ একটিমাত্র পাথরের ব্লক থেকে খোদাই করা হয়েছে।[১] রামভক্ত বানররাজ হনুমানকে সচরাচর এই তিন জনের সাথে দেখা গেলেও এখানে তাকে দেখানো হয় নি। কিন্তু সেখানে হনুমানে একটি পৃথক মন্দির রয়েছে। এছাড়াও মণ্ডপের ভেতরে নাচের ভঙ্গিতে গণেশের একটি ভাস্কর্য রয়েছে।[৩]

রাজ্য সরকার মন্দিরটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেটি বর্তমানে ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপকারী প্রতিষ্ঠান (এএসআই) এর সাথে মিলিত ভাবে করা হয়। এএসআই মন্দিরটিকে একটি প্রাচীন স্মৃতিচিহ্ন (এন-এপি-৫০) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।[৯] দুটি পবিত্র জলাধার রাম তীর্থ এবং লক্ষ্মণ তীর্থ মন্দিরের পাশেই অবস্থিত।[১]

পরিচালনা সম্পাদনা

অন্ধ্র প্রদেশ সরকার মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থনাম (টিটিডি) এর নিকট ন্যস্ত করেছে। ২৯ জুলাই২০১৫ তারিখে টিটিডি একটি প্রস্তাব পাসের মাধ্যমে মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে।[১০]

উৎসব সম্পাদনা

তেলেঙ্গানা রাজ্যটি ২০১৪ সাল পর্যন্ত অন্ধ্র প্রদেশের অংশ ছিলো। অন্ধ্র প্রদেশ সরকার রীতি অনুসারে ভদ্রচলম মন্দিরে রামের জন্মদিন বা রাম নবমী উদ্‌যাপন করতো, যেটি পরবর্তীতে তেলেঙ্গানা রাজ্যের অংশ হয়ে যায়। এর ফলে ২০১৫ সাল হতে সরকারী ভাবে রাম নবমী উদ্‌যাপনের জন্য কোদণ্ডরাম স্বামী মন্দির মনোনীত করা হয়।[৯]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Sri Kodandarama Swamy Temple at Vontimitta"। Indian Express। ১১ মে ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  2. Michell 2013, পৃ. 333।
  3. "Sri Kodanda Rama Swamy Temple, Vontimitta, Kadapa"। Government of Andhrapradesh Tourism। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৮ 
  4. Kamalakar 2004, পৃ. 114।
  5. Sajnani 2001, পৃ. 46।
  6. Kamalakar 2004, পৃ. 120।
  7. Gurumurthi 1990, পৃ. 18।
  8. Gurumurthi 1990, পৃ. 20।
  9. "Vontimitta temple to host Ramnavami fete"। The Times of India। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫। 
  10. "Ontimitta temple brought under TTD fold"। The Hindu। ২৯ জুলাই ২০১৫। 

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা