কুইয়ার (ইংরেজি: Queer) একটি ইংরেজিজাত পরিভাষা, যা দিয়ে সাধারণত বিপরীতকামী বা সামাজিক ভাবে স্বাভাবিক বলে গণ্য করা দৈহিক লিঙ্গ (সেক্স) ও সামাজিক লিঙ্গের (জেন্ডার) সংজ্ঞার বাইরে অবস্থিত দৈহিক এবং সামাজিক লিঙ্গগতভাবে সংখ্যালঘু ব্যক্তিদেরকে নির্দেশ করা হয়।

২০১০ সালে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত কুইয়ার প্রাইড বা গৌরবযাত্রার একাংশ

ব্যুৎপত্তি সম্পাদনা

ইংরেজি ভাষায় "কুইয়ার" শব্দটি আক্ষরিক অর্থে অজ্ঞাত বা অদ্ভুত বোঝায়, তবে সাম্প্রতিককালে একে এলজিবিটি+ সম্প্রদায়ের প্রেক্ষাপটে বহুলভাবে ব্যবহার করা হয়। ১৯ শতকের শেষ দিকে সমকামী সম্পর্ক এবং আকাঙ্ক্ষাকে বোঝাতে প্রথম "কুইয়ার" শব্দ ব্যবহারে এসেছিল। ১৯৮০র দশকে "কুইয়ার নেশন" নামের যৌন এবং লিঙ্গগতভাবে সংখ্যালঘু ব্যক্তিদের অধিকারের পক্ষে কাজ করা সংস্থাটি "কুইয়ার" শব্দটিকে এলজিবিটি সম্প্রদায়ের সমস্ত শাখাকে বোঝাতে আরম্ভ করেছিল। ২০০০র দশকে "কুইয়ার" শব্দটিকে যৌন বর্ণালীকে বোঝাতে ব্যবহৃত হতে আরম্ভ হয়। ইংরেজিভাষী বিশ্বে বিষমকামী এবং "সিস-জেন্ডার" অর্থাৎ প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া লিঙ্গকে নিজের লিঙ্গ বলে গণ্য করা ব্যক্তিরা ব্যতীত অন্য সমস্ত লিঙ্গ এবং যৌন অভিমুখিতার ব্যক্তিরা নিজেদের "কুইয়ার" বলে পরিচয় দিতে আরম্ভ করেছে।[১] শিক্ষাক্ষেত্রে কুইয়ার তত্ত্বের উদ্ভব হয়েছে, যেখানে লৈঙ্গিক দ্বৈততাকে সমর্থন করা হয় না। আধুনিক কুইয়ার অভিব্যক্তির মাধ্যম হিসাবে প্রকাশ হওয়া শিল্পকলা, সংস্কৃতিক গোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক দল এলজিবিটি আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে পড়ে।

সংস্কৃতি এবং রাজনীতি সম্পাদনা

বিশ্বের বিভিন্ন এলজিবিটি সামাজিক আন্দোলন নিজেদের কুইয়ার হিসাবে সম্বোধন করে। উদাহরণ স্বরূপ সাইপ্রাস দেশের কুইয়ার সাইপ্রাস অ্যাসোসিয়েশন এবং যুক্তরাজ্যের কুইয়ার ইউথ নেটওয়র্ক উল্লেখযোগ্য। ভারতে অনুষ্ঠিত প্রাইড প্যারেড বা গৌরবযাত্রায় "কুইয়ার" শব্দটি বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়, যেমন: কুইয়ার আজাদি মুম্বাই, দিল্লী কুইয়ার প্রাইড প্যারেড ইত্যাদি। অস্ট্রেলিয়ায় রাষ্ট্রীয় পরামর্শ এবং সহায়িকা সেবা কিউ লাইফ[২] ও কিউ পত্রিকার মাধ্যমে কুইয়ার সম্প্রদায়কে একত্র করা হয়েছে।

এলজিবিটি সম্প্রদায়ের ব্যক্তি সবসময় সমাজ থেকে লিঙ্গ বৈষম্য এবং যৌন অভিমুখিতার জন্য নির্যাতনের বলি হয়ে সচরাচর তুলনামূলকভাবে সুরক্ষিত স্থানে অভিবাসন করে। একে কুইয়ার অভিবাসন বলে। কিছু লৈঙ্গিক এবং যৌন সংখ্যালঘুদের জন্য কাজ করা সংস্থা যেমন ইরানিয়ান রেলরোড ফর কুইয়ার রিফিউজিস এবং রেইনবো রেলরোড তাদের সংস্থাপনের জন্য কাজ করে।[৩]

শিল্পকলা সম্পাদনা

"কুইয়ার" শব্দটি প্রায়শ শিল্পকলা আন্দোলনের সঙ্গে বিশেষত চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত করা হয়। ১৯৯০র দশকে নব কুইয়ার সিনেমা আন্দোলনের অংশ হিসাবে কুইয়ার বিষয়কে মূল বিষয় হিসাবে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছিল। এই চলচ্চিত্রসমূহ পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন কুইয়ার চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত করা হয়েছে। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কুইয়ার চলচ্চিত্র উৎসব হল অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন কুইয়ার চলচ্চিত্র উৎসব এবং মার্ডি কুইয়ার চলচ্চিত্র উৎসব, ভারতের মুম্বই কুইয়ার চলচ্চিত্র উৎসব, জাপানের এশিয়ান কুইয়ার চলচ্চিত্র উৎসব এবং সুইজারল্যান্ডের কুইয়ারসিস। চীনা চলচ্চিত্র নির্দেশক সুই জিয়েনের ২০০৮ সালে নির্মান করা কুইয়ার চায়না নামের এক তথ্যচিত্র সরকার নিষিদ্ধ করার পর ২০০৯ সালের বেইজিং কুইয়ার চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শন করা হয়েছিল।[৪] বহুমুখী কুইয়ার কলা উৎসব যেমন উত্তর আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আউটবার্স্ট কুইয়ার আর্ট ফেস্টিভেল বেলফাস্ট, কানাডার কুইয়ার আর্ট ফেস্টিভেল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশন্যাল কুইয়ার আর্ট ফেস্টিভেল উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া বিভিন্ন দেশের দূরদর্শনের বিভিন্ন কার্যক্রমে কুইয়ার শব্দ ব্যবহার করে এলজিবিটি সম্প্রদায়ের বিষয়সমূহ উপস্থাপন করা হয়েছে।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "queer"। Oxford English Dictionary। Oxford University Press। ২০১৪। 
  2. "Archived copy"। ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ৩১, ২০১৪ 
  3. "Rainbow Railroad - What we do"। জুন ২৫, ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ৯, ২০১৮ 
  4. Tran, Tini (জুন ১৮, ২০০৯)। "Gays In China: Beijing Queer Film Festival Goes Off Without A Hitch"The World Post। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১৪ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা