কালো বন পর্বতশ্রেণী

জার্মানিতে অবস্থিত একটি বৃহৎবনভূমি পর্বতশ্রেণী

ব্ল্যাক ফরেস্ট পর্বতশ্রেণী (Black Forest Mountain Range) দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির বাডেন-ওয়ার্টেমবার্গ রাজ্যের একটি বৃহৎবনভূমি পর্বতশ্রেণী। এটি পশ্চিম এবং দক্ষিণে রাইন উপত্যকা দ্বারা আবদ্ধ। এর সর্বোচ্চ শিখরটির নাম ফিল্ডবার্গ যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৯৯৩ মিটার (৪,৯৮৮ ফুট) উঁচু। অঞ্চলটি আকারে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার (১০০ মাইল) দীর্ঘ এবং এর প্রস্থ দক্ষিণে ৫০ কিমি (৩০ মাইল) এবং উত্তরে ৩০ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি। ঐতিহাসিকভাবে, অঞ্চলটি আকরিক সমৃদ্ধ হিসেবে পরিচিত ছিল, যার ফলে এর স্থানীয় অর্থনীতিতে খনির ব্যাপক ভূমিকা ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, পর্যটন, এ এলাকার প্রাথমিক শিল্পে পরিণত হয়েছে যার মাধ্যমে প্রায় ১,৪০,০০০ সংখ্যক চাকরীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই অঞ্চলটিতে ১৭শ শতাব্দীর বেশ কয়েকটি ধ্বংসপ্রাপ্ত সামরিক দুর্গ বিদ্যমান।

ব্ল্যাক ফরেস্ট
সর্বোচ্চ বিন্দু
উচ্চতা১,৪৯৩ মি (৪,৮৯৮ ফু) উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
স্থানাঙ্ক৪৮°১৮′০০″ উত্তর ৮°০৯′০০″ পূর্ব / ৪৮.৩০০° উত্তর ৮.১৫০° পূর্ব / 48.300; 8.150
মাপ
দৈর্ঘ্য১৬০ কিলোমিটার (৯৯ মাইল)
আয়তন৬,০০০ বর্গকিলোমিটার (২,৩০০ বর্গমাইল)
ভূগোল
ব্ল্যাক ফরেস্ট সহ জার্মানির মানচিত্র
দেশজার্মানি
Stateবাডেন-ওয়ার্টেম্বার্গ
মূল পরিসীমাদক্ষিণ জার্মান উচ্চভূমি
ভূতত্ত্ব
পর্বতবিদ্যাCentral Uplands
শিলার ধরনGneiss, Bunter sandstone

ভূগোল সম্পাদনা

ব্ল্যাক ফরেস্ট দক্ষিণে জার্মানির হাই রাইন থেকে উত্তরে ক্রেইচগাউ পর্যন্ত প্রসারিত। পশ্চিমে এটি ঊর্ধ্ব রাইন সমভূমি দ্বারা আবদ্ধ (আপার রাইনের নিম্নভুমি বা পাদদেশের অংশও এর অন্তর্ভুক্ত)। এটির পূর্বে গাউ বনভূমি,বার মালভূমী এবং জার্মানির ক্লেটগৌর জেলার পার্বত্য অঞ্চলের পশ্চিমাংশ অবস্থিত। ব্ল্যাক ফরেস্ট দক্ষিণ জার্মানের স্কার্পল্যান্ডসের সবচেয়ে উঁচু অঞ্চল। এর বেশিরভাগ অংশ ঘন বনভূমি এবং এটি প্রাচীন হার্সিনিয়ান বনভূমির একটি ভাগ। এটি 'স্ফটিক বেসমেন্ট' এবং 'বান্টার স্যান্ডস্টোন' শিলাস্তরের উপরে অবস্থিত এবং এর প্রান্তসীমাটি প্রাকৃতিকভাবে মাশেলকল্ক নামক একপ্রকার চুনাপাথরের স্তূপ দিয়ে তৈরি হয়েছে। এখানকার মাটির উর্বরতা ভূ-অভ্যন্তরীণ শিলার উপর নির্ভরশীল। পর্বতশ্রেণীটি একটি উঁচু ফল্ট ব্লক তৈরি করে, যা মুলত আপার রাইন হতে উৎপন্ন হয়েছে, আবার পূর্ব দিক থেকে, এখানে ভারী বনভূমিসম্পন্ন মালভূমি দেখা যায়।

প্রাকৃতিক অঞ্চল সম্পাদনা

ভূতাত্ত্বিকভাবে, ব্ল্যাক ফরেস্টের প্রধান বিভাজনটি পূর্বপ্রান্তের বৃত্তাকার পাহাড় এবং প্রশস্ত মালভূমিসম্পন্ন ঢালগুলোর মাঝে অবস্থিত এবং এর পশ্চিমে গভীর ও খাড়া খাদ বিদ্যমান। এ অংশটি 'আপার রাইন গ্রাবেন' -এর অন্তর্ভুক্ত যাকে ব্ল্যাক ফরেস্ট ভ্যালি বা ট্য়ালশোয়ার্জওয়াল্ড বলা হয়। এরই পশ্চিম অংশে এলাকাটির সর্বোচ্চ পাহাড়গুলো দেখা যায় এবং একই সাথে এদের উচ্চতার সর্বাধিক (১০০০ মিটার পর্যন্ত) পার্থক্য পাওয়া যায়। এখানকার উপত্যকাগুলোর বেশিরভাগই সংকীর্ণ এবং গিরিখাতের মতো, খুব কম সংখ্যকই বেসিন-আকৃতির (প্রশস্ত ও বৃত্তাকার) হয়ে থাকে। পাহাড়ের শিখরগুলি বৃত্তাকার এবং এতে মালভূমির অবশিষ্টাংশ ও সূক্ষ্ম শৈলশিরার মতো ভূ-খন্ড রয়েছে। পূর্ব এবং পশ্চিমাংশের মাঝেও সুস্পষ্ট বিভাজন দেখা যায়। পূর্ব ব্ল্যাক ফরেস্টের বৃহৎ অঞ্চলগুলি 'বান্টার স্যান্ডস্টোন' শিলাস্তর দ্বারা গঠিত যা দক্ষিণ জার্মানির স্কার্পল্যান্ডসের সর্বনিম্ন স্তর এবং এরা অসংখ্য শঙ্কুযুক্ত (coniferous) বন দ্বারা আচ্ছাদিত। পশ্চিমের খোলা বেসমেন্টটি মূলত রূপান্তরিত শিলা এবং গ্রানাইট দ্বারা গঠিত,তবে এটি কাঠামোগতভাবে অসম হলেও, এতে বিভিন্ন ধরনের তৃণভূমিসম্পন্ন উপত্যকা রয়েছে এবং এখানে বসতি স্থাপন করাও সহজ।

ব্ল্যাক ফরেস্ট পর্বতশ্রেণীর অঞ্চলগুলিকে উত্তর থেকে দক্ষিণে ভাগ করা সবচেয়ে সহজ। ১৯৩০ এর দশক অবধি, এটিকে উত্তর ও দক্ষিণ ব্ল্যাক ফরেস্টে বিভক্ত করা হয়েছিল এবং জার্মানির কিনজিগ নদীর উপত্যকার রেখা ছিল এটির সীমান্ত। পরে এটিকে ভারী বনভূমিসম্পন্ন উত্তর বনভূমিতেও বিভক্ত করা হয় এবং এর যে নিম্ন ও মধ্যভাগ প্রধানত কৃষিকাজের জন্য ব্যবহৃত হতো তা ছিল কালো বনের কেন্দ্রীয় অংশ। এ অঞ্চলের স্বতন্ত্র অর্থনীতি ছিল, এটি বরফ যুগের তুষারকালীন রিলিফসম্পন্ন একটি অংশ যা দক্ষিণদিকের কালো বন হিসেবে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি উঁচু ছিল । হাই ব্ল্যাক ফরেস্ট শব্দটি দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-মধ্য ব্ল্যাক ফরেস্টের সর্বোচ্চ অঞ্চলগুলিকে বোঝায়। ব্ল্যাক ফরেস্ট-এর জন্য আঁকা সীমানা অবশ্য বেশ বৈচিত্র্যময় ছিল। ১৯৩১ সালে, রবার্ট গ্র্যাডম্যান কেন্দ্রীয় ব্ল্যাক ফরেস্টকে কিনজিগ নদীর জলাবদ্ধ অঞ্চল হিসেবে বলেছিলেন এবং জার্মানির গুটাচ নদীর নিম্ন এলজ (Elz) উপনদী এবং কিনজিগ উপনদী পর্যন্ত অংশটিকে পশ্চিমাংশ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। এর উপর ভিত্তি করে, কেন্দ্রীয় ব্ল্যাক ফরেস্টটি উত্তরে কিনজিগ এবং দক্ষিণে জার্মান নদী ড্রেসাম থেকে গুটাচ পর্যন্ত প্রশস্ত রেখাটির মাঝে সীমাবদ্ধ। ১৯৫৯ সালে, রুডলফ মেটজ পূর্ববর্তী বিভাগগুলি একত্রিত করেছিলেন এবং একটি পরিবর্তিত ত্রিপক্ষীয়(তিন ভাগে বিভক্ত) বিভাগের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা প্রাকৃতিক এবং আঞ্চলিক পদ্ধতির মাঝে সমন্বয় করতে সক্ষম হয় এবং ব্যাপকভাবে এর ব্যবহার শুরু হয়। এটিতে কেন্দ্রীয় ব্ল্যাক ফরেস্ট উত্তরে আকার ও রেঞ্চ নদীর বিভাজিকা দ্বারা ঘেরা যা পরবর্তীকালে মুর্গ এবং কিনজিগ নদীর বিভাজিকায় রূপান্তরিত হয়। ব্ল্যাক ফরেস্টের দক্ষিণ প্রান্ত 'বনডরফ গ্র্যাবেন জোন' দ্বারা বেষ্টিত এবং এই 'বনডরফ গ্র্যাবেন জোন' ও 'ফ্রিউডেনস্ট্যাড গ্রাবেন' একত্রে ব্ল্যাক ফরেস্টের পূর্ব প্রান্তকে বেষ্টিত করে।

পর্বত, নদী এবং হ্রদ সম্পাদনা

সমুদ্রতল থেকে ১,৪৯৩ মিটার উপরে দক্ষিণ ব্ল্যাক ফরেস্ট-এর 'ফিল্ডবার্গ' পাহাড় এলাকার সর্বোচ্চ শিখর। একই অঞ্চলে হার্জোজেনহর্ন (১,৪১৫ মিটার) এবং বেলচেন (১,৪১৪ মিটার) পাহাড়ও বিদ্যমান। সাধারনত দক্ষিণ বা উচ্চ ব্ল্যাক ফরেস্ট পাহাড়, উত্তর দিকের পাহাড়গুলোর চেয়ে বেশি উঁচু হয়ে থাকে।ব্ল্যাক ফরেস্টের সবচেয়ে উঁচু পর্বতশৃঙ্গ রেখার নাম কান্ডেল (১,২৪১.৪ মিটার) যা 'ফ্রেইবার্গ-হোলেণ্টাল–নিউস্টাড' লাইনের উত্তরে অবস্থিত। এছাড়াও অন্যান্য পাহাড়ের মধে উল্লেকযোগ্য হর্নিসগ্রাইন্ড (১,১৬৩ মিটার), শাউসল্যান্ড (১,২৮৪.৪ মিটার) এবং ব্লাউয়েন (১,১৬৪.৭ মিটার) পর্বত, এদের প্রত্যেকেই পশ্চিম উপত্যকার কাছে অবস্থিত।

ব্ল্যাক ফরেস্টের নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে ডানুব (যা ব্ল্যাক ফরেস্টের ব্রিগাচ এবং ব্রাগ নদীর সাথে একই অববাহিকায় উৎপন্ন হয়), এনজ, কিনজিগ, মুরগ, নাগোল্ড, নেকার, রেঞ্চ এবং উইস নদী অন্তর্ভুক্ত। ব্ল্যাক ফরেস্ট রাইন নদ দ্বারা প্রবাহিত আটলান্টিক মহাসাগরের ড্রেইনেজ অববাহিকা (কোন সাগরের অববাহিকা সরু হয়ে নদী বা হ্রদের অববাহিকায় যুক্ত হলে তাকে বলা হয় ড্রেইনেজ অববাহিকা বলা হয়) এবং ডানুব নদী দ্বারা প্রবাহিত ব্ল্যাক সি এর ড্রেইনেজ অববাহিকার মধ্যবর্তী মহাদেশীয় বিভাগের কিছু অংশ দখল করে। ব্ল্যাক ফরেস্টের দীর্ঘতম নদী এনজ, কিনজিগ, এলজ, ওটাচ, নাগোল্ড, ডানুব ইত্যাদি। এনজ নদী ব্ল্যাক ফরেস্ট-এর দীর্ঘতম নদী যার দৈর্ঘ্য ১১৫ কিলোমিটার। এখানকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হ্রদ হলো ব্রেগ, ব্রিগাচ, মুর্গ, রেনচ, শুটার, উইস, আচের, ড্রাইসাম ইত্যাদি। এখানে দীর্ঘতম হ্রদ মুর্গ যা ৭৯ কিলোমিটার দীর্ঘ।

ভূতত্ব সম্পাদনা

ব্ল্যাক ফরেস্ট নেইস পাথর এবং গ্রানাইটের স্তরের উপর বেলেপাথরের আচ্ছাদন দিয়ে গঠিত। একসময় ব্ল্যাক ফরেস্ট এবং এর নিকটবর্তী ভোগেস পর্বতমালা এ এলাকার টেকটনিক বিবর্ধনের একটি অংশ ছিল। পরবর্তীতে ইওসিন যুগের মাঝামাঝি সময়ে একটি রিফটিং(মাটিতে ফাটল ধরে মাটি চিড়ে যাওয়া) পিরিয়ড অঞ্চলটিকে প্রভাবিত করে এবং আপার রাইনের সমতল অংশটি গঠিত হয়। উয়ার্ম গ্লাসিয়াল যুগের সর্বশেষ পিরিয়ডে ব্ল্যাক ফরেস্টে অনেকগুলো হিমবাহ সৃষ্টি হয়, যেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু যেমন,মামেলজেই এখনো হ্রদ আকারে বিদ্যমান।

ভূগর্ভ

ব্ল্যাক ফরেস্টের ভূতাত্ত্বিক ভিত্তিটি ভারিস্কান (প্রাকৃতিকভাবে পাহাড় সৃষ্টি হওয়ার একটি প্রক্রিয়া) বেসমেন্টের স্ফটিক বেড পাথর দ্বারা গঠিত। এটি পূর্ব এবং উত্তর-পূর্বে বাঙ্কার বেলেপাথরের ফলক দিয়ে গঠিত। এর পশ্চিম প্রান্তের আপার রাইন গ্রাবেন অঞ্চলটি এক প্রকার অধোগামী, খাদবিশিষ্ট, ছোট ছোট পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত যেগুলো ট্রায়াসিক এবং জুরাসিক পিরিয়ডের শিলাস্তর দিয়া গঠিত। ব্ল্যাক ফরেস্টের বেসমেন্টের সর্বপ্রধান পাথর হলো নেইস পাথর। কার্বনিফেরাস যুগে এই নেইস পাথরগুলোতে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর পরিমাণে গ্রানাইট প্রবেশ করে। এদের মধ্যে সবছেয়ে বড় গ্রানাইট পাথর হলো ট্রাইবার্গ গ্রানাইট এবং ফোর্ব্যাক গ্রানাইট, কনিষ্ঠতম হলো বারহল্ড গ্রানাইট। ব্ল্যাক ফরেস্টের দক্ষিণে ব্যাডেনওয়েলার-লেঞ্জকার্চ জোন অবস্থিত, যা মাইক্রো-কন্টিনেন্টাল সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট প্যালেওজিক শিলা (আগ্নেয়গিরি ও পলল শিলা) দ্বারা গঠিত। জার্মানির এর্সবার্গ এলাকার গ্যাব্রো পাথর, টডমুসের নিকটে সারপান্টিনাইটস ও পাইরোক্সিনাইটস পাথর এবং জার্মানির হরব্যাক অঞ্চলের নোরাইট পাথর ব্ল্যাক ফরেস্টের দক্ষিণপূর্বে টডমুস এলাকার আশেপাশের রেঞ্জে পাওয়া যায় এবং এ পাথরগুলোকে একটি মহাদেশীয় সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট অ্যাক্রেশনারি ওয়েজ নামক পললশিলার অবশিষ্টাংশ হিসেবে ধারণা করা হয়। রোটলিজেন্ড সর্বশেষ কার্বোনিফেরাস যুগের একটি অঞ্চল যা মধ্য ও পশ্চিম ইউরোপজুড়ে অবস্থিত। ব্ল্যাক ফরেস্টের কিছু উল্লেখযোগ্য বেসিন(খোলা,প্রশস্ত, বৃত্তাকার অঞ্চল) এই রোটলিজেন্ডে বিদ্যমান, যেমন, স্ক্র্যামবার্গ বা বাডেন-বাডেন বেসিন, যেগুলো মোটা, কঠিন স্ফটিক শিলাবিশিষ্ট এবং চুনাপাথরজাতীয় প্লেটের উপর অবস্থিত।

উঁচু পার্বত্য অঞ্চল

ইওসিন যুগে আপার রাইন গ্রাবেনের নিমজ্জনের পর পূর্বের ব্ল্যাক ফরেস্ট এবং পশ্চিমের ভোগেস পাহাড়ের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। এর কেন্দ্রে অবস্থিত কায়জার্সটুল আগ্নেয়গিরি মায়োসিন যুগে সৃষ্টি হয়েছিল।পরবর্তীতে, এর পার্বত্য অঞ্চলের মেসোজোইক যুগে সৃষ্ট প্ল্যাটফর্মটি ক্ষয়ে গিয়ে বান্টার স্যান্ডস্টোন এবং রোটলিজেন্ড শ্রেণী থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল, তবে এটি শেষ পর্যন্ত টিকে যায়। প্লায়োসিন যুগে এ এলাকার ভূখন্ডে একধরনের অসমতল বৃদ্ধি ঘটে যা ফিল্ডবার্গ সহ দক্ষিণের ব্ল্যাক ফরেস্টকে প্রভাবিত করে। ফলস্বরূপ, উত্তর ব্ল্যাক ফরেস্টের হার্নিসগ্রিন্ড অঞ্চলের আশেপাশের এলাকা তুলনামূলকভাবে বেশ নীচু। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্ল্যাক ফরেস্টে, কিনজিগ এবং মুর্গ নদীর মাঝে এক ধরনের টেকটোনিক সিঙ্কলাইন সৃষ্টি হয়েছিল। ভূতত্ত্ববিজ্ঞানী ওয়ালথার পেনক (১৮৮৮-১৯২৩) ব্ল্যাক ফরেস্টকে একটি উন্নত ভূতাত্ত্বিক প্রাসাদ হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন এবং এটিকে তার 'পাইডমন্ট বেঞ্চল্যান্ডস' তত্ত্বের মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন।

প্ল্যাটফর্ম

ব্ল্যাক ফরেস্ট-এর উত্তরে স্ফটিক বেসমেন্টের উপরের অংশ এবং এর সাথে যুক্ত কেন্দ্রীয় ব্ল্যাক ফরেস্ট-এর অংশগুলোতে বান্টার স্যান্ডস্টোন(বান্টার বেলেপাথর)-এর শিলাস্তর প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান।এখানকার গ্রিনডেন উজানের সবচেয়ে শক্ত স্তর এবং এনজ নদীর এর উপরের এলাকাগুলো মূলত সিলিকার স্তূপ দিয়ে গঠিত, যা পরবর্তীতে মুর্গ নদীর শাখা-নদীগুলো দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যায়। তবে পূর্ব এবং উত্তরের এলাকায় আপার বান্টার (বেলেপাথর ও লালমাটি)-এর স্তর বিদ্যমান। এছাড়া, কিনজিগ নদীর দক্ষিণের বান্টার বেলেপাথরের জোনটি পর্বতশ্রেণীগুলোর পূর্বদিকের একটি সীমানাকে বেষ্টিত করে।

বরফ যুগ এবং টোপোগ্রাফি (বরফ যুগ ও ভূসংস্থান)

প্রায় ১০,০০০ বছর আগে রিস এবং উয়ার্ম বরফ যুগের সময় ব্ল্যাক ফরেস্ট ঘন বরফ দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। বিশেষত উত্তর-পূর্বকোণের দিকটিতে তুষার মালভূমির শৃঙ্গগুলোর প্রায় বায়ুপ্রবাহবিহীন বৃত্তাকার ঢালের মতো অংশে জমে হিমবাহ তৈরি করত যা পাহাড়ের ফানেল-আকৃতির এলাকাগুলোর সীমানা তৈরী করেছিল। তবে মানবসৃষ্ট দূষণের ফলে এ ফানেল-আকৃতির এলাকাগুলো নিম্ন-ভূমির টিলায় পরিণত হয়েছে যেখানে কিছু প্রাচীন ঢালে এখনও কিছু হিমবাহ হ্রদ আকারে বিদ্যমান, যেমন, মামেলসি, ওয়াইল্ডসি, স্কার্মসি, গ্লাসল্ডসি, ননেনমেটভিয়ার, ফেল্ডসি ও বুলবাকসি। এগুলো ছাড়াও রয়েছে টিটিসি হিমবাহ, যা বরফযুগের মোরেইন (হিমবাহ দ্বারা প্রবাহিত মাটি ও নুড়িপাথরের স্তুপ)-এর উপরে তৈরী হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

জলবায়ু সম্পাদনা

জলবায়ুগতভাবে ব্ল্যাক ফরেস্টের গ্রামগুলোর চেয়ে পার্বত্য অঞ্চলের তাপমাত্রা কম এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি। এখানকার উচ্চভূমিগুলোতে প্রায় সারা বছরই নিয়মিত বৃষ্টিপাত হতে থাকে। অবশ্য এখানে উচ্চতার সাথে তাপমাত্রা বা বৃষ্টিপাতের পরিমাণের কোন সম্পর্ক নেই, অর্থাৎ বেশি উঁচু অঞ্চলে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বেশি হবে, ব্যাপারটা এমন নয়। বরং নিম্ন অঞ্চলগুলিতেও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক সময় বেড়ে যায় এবং পাহাড়ের পশ্চিম দিকটায় বর্ষার সময় খুব ভারী বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।

বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সম্পাদনা

ব্ল্যাক ফরেস্টের আর্দ্রতম অঞ্চল হলো উত্তরের হর্নিসগ্রিন্ডের চারপাশের এলাকা এবং দক্ষিণের বেলচেন ও ফিল্ডবার্গের আশেপাশের উচ্চভূমি, যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১,৮০০ থেকে ২,১০০ মিলিমিটার পর্যন্ত পৌঁছে যায়। আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমা ও ভীষণ আর্দ্র বায়ুপ্রবাহ উত্তর ব্ল্যাক ফরেস্টের নিম্নভূমিতে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত ঘটায় যা দক্ষিণ ব্ল্যাক ফরেস্টের উঁচু অঞ্চলগুলিতে ঘটা বৃষ্টিপাতের পরিমাণের চেয়েও অনেক বেশি। এই এলাকাটিতে ভোসগেস এই বায়ুপ্রবাহের বিরুদ্ধে এক ধরনের ঢাল হিসেবে কাজ করে এবং এ বায়ুকে বাধাপ্রাপ্ত করে। কেন্দ্রীয় ব্ল্যাক ফরেস্টের পূর্বাঞ্চলটি অবশ্য এস এলাকা হতে অনেক বেশি শুষ্ক এবং এখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রতি বর্গমিটারে মাত্র ৭৫০ লিটার।

তাপমাত্রা এবং রোদ সম্পাদনা

তাপমাত্রার দিক দিয়ে, ব্ল্যাক ফরেস্টের উঁচু অঞ্চলগুলিতে সারা বছরজুড়ে তাপমাত্রার খুবই কম পরিবর্তন হ‍য়ে থাকে। এর পেছনে কারণ হলো, উঁচু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহ কিছুটা হালকা হয় এবং গ্রীষ্মকালে এখানে প্রচুর পরিমাণে মেঘ থাকায় রোদ ও তাপমাত্রার পরিমাণ কম থাকে। আবার শীতকালে পাহাড়ের শেখরগুলো বেশ রোদেলা থাকে যেখানে উপত্যকাগুলো বরফ ও ঘন কুয়াশায় আচ্ছাদিত হয়ে যায়।

ইতিহাস সম্পাদনা

প্রাচীনকালে একজন কেল্টিক দেবতা অ্যাবনোবার নামানুসারে ব্ল্যাক ফরেস্টকে অ্যাবনোবা মন্স নামে অভিহিত করা হতো যার অর্থ হলো অ্যাবনোবা দেবতার মন্দির। এরও আগে, রোমান যুগে জার্মান শব্দ মার্কা (অর্থ- সীমান্ত) হতে ব্ল্যাক ফরেস্টের নামকরণ করা হয় সিলভা মার্সিয়ানা বা মার্সিনিয়ান বনভূমি।এর কারণ মার্কোমানি নামক একটি জার্মান জাতীয় মানবগোষ্ঠী যারা রোমান লাইম নামক জার্মান সীমান্তের কাছে বসবাস করতেন, ধারণা করা হয় যে ব্ল্যাক ফরেস্ট এই মার্কোমানি কলোনির সীমানার একটি অংশ ছিল। এই জনগোষ্ঠী জার্মান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সুয়েবি (যে জাতির নামে জার্মানির সবিয়া অঞ্চলের নামকরণ করা হয়েছে) জাতি হতে আগত।

রোমান সীমান্তের কাছে অবস্থিত বাডেনওয়েলার, সুলজবার্গ ও এদের আশেপাশের কিছু এলাকায় বসতি তৈরী এবং 'কিনজিগটালস্ট্রাই' নামক রাস্তার নির্মাণকার্য ছাড়া সমগ্র ব্ল্যাক ফরেস্টের নগরায়ণ মূলত রোমান নয়, আলেমানি জনগোষ্ঠী দ্বারা সম্পন্ন হয়েছিল। এ জনগোষ্ঠী সর্বপ্রথম রেড স্যান্ডস্টোন সীমান্তের উপত্যকাগুলিতে (যেমন- বার উপত্যকার এলাকা) বসতি স্থাপন করে। এই নগরায়ণ দ্রুত উঁচু পার্বত্য অঞ্চল এবং বনভূমিগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে যার ফলে ১০ দশকের শেষের দিকে সৃষ্ট প্রাচীন গ্রামগুলো রেড স্যান্ডস্টোন এলাকার আশেপাশে পাওয়া যায়, যেমন- রোটেনবাকে প্রাপ্ত প্রাচীন গ্রামটি হিসাবনুযায়ী ৮১৯ সালের দিকে সৃষ্ট।

১৬ শতকের জার্মান কৃষক যুদ্ধের পিছনে কারণ হিসেবে যে বিদ্রোহগুলো হয়েছিল, তাদের মধ্যে বান্ডসু বিদ্রোহ সহ বেশ কিছু বিদ্রোহ ব্ল্যাক ফরেস্টে সংগঠিত হয়েছিল। পরবর্তী দুই শতাব্দীতে আরও কিছু কৃষক বিদ্রোহ ব্ল্যাক ফরেস্টের হোজেনওয়াল্ডে সংগঠিত হয়। ব্ল্যাক ফরেস্টে ১৭ শতক ও ১৮ শতকের অনেকগুলো সামরিক দুর্গের অবশিষ্টাংশ এখনো বিদ্যমান, বিশেষত এর পর্বতমালাগুলোতে এদের বেশি দেখা যায়। উদাহরণহিসেবে বলা যায়, জার্মান সামরিক কমান্ডার লুইস উইলিয়ামের বিভিন্ন বারোক কর্ম (সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে প্রচলিত স্থাপত্যশৈলী), অ্যালেকজান্ডার দুর্গ (যেখানে সৈনিকদের আত্নরক্ষার জন্য আলাদা স্থান তৈরী করা হয়েছিল), রঁশেনশ্যাঞ্জ দুর্গ, সুইডিশ দুর্গ স্কুইডেনশ্যাঞ্জ ইত্যাদি।

ব্ল্যাক ফরেস্ট মূলত পর্ণমোচী গাছ (প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট মৌসুমে পাতা ঝরায় যে সকল গাছ) এবং দেবদারু গাছের একটি মিশ্র বন ছিল, এ গাছগুলো ধীরে ধীরে উঁচু এলাকাগুলোতেও বাড়তে থাকে। কিন্তু ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ব্ল্যাক ফরেস্টকে প্রায় বনভূমিশূন্য করে ফেলে এসব গাছের পরিবর্তে এখানে বিভিন্ন ধরনের শৌখিন গাছ লাগানো শুরু করা হয়। ১৯৯০ সালে, ভিভিয়ান ও ওয়াইবকে নামক দু'টি হ্যারিকেন সাইক্লোন দ্বারা ব্ল্যাক ফরেস্ট মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২৬শে ডিসেম্বর, ১৯৯৯ সালে,হ্যারিকেন লোথার দ্বারা ব্ল্যাক ফরেস্ট আরও ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রুহেস্টেইন এলাকার প্রায় ১০ হেক্টর জমি একটি হ্যারিকেন দ্বারা সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এসব ঝড়ে ভেঙ্গে পড়া গাছগুলো সে সময় বছরের পর বছর কিছু ক্ষণস্থায়ী গুদামঘরে রেখে দেয়া হতো।তবে পরবর্তীতে এই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের মতো করে বিকশিত হয় এবং এ কারণে বর্তমানযুগে ব্ল্যাক ফরেস্ট আবার একটি মিশ্র বনভূমিতে পরিণত হয়েছে।

সংস্কৃতি সম্পাদনা

ব্ল্যাক ফরেস্ট মূলত গ্রামীণ এলাকা। বহু ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গ্রাম এবং হাতেগোনা কয়েকটি বড় শহর নিয়ে গঠিত ব্ল্যাক ফরেস্ট। ঐতিহ্য এবং রীতিনীতি এখানকার অনেক জায়গায় উৎসব আকারে উদযাপিত হয়। ব্ল্যাক ফরেস্ট এর স্থানীয় ফার্মহাউসগুলোর বেশ সুপরিচিত, এই ফার্মহাউসগুলো হাই-হিপ ছাদ বা বাংলো জাতীয় ছাদের জন্য অন্য ফার্মহাউস থেকে আলাদা। এছাড়াও ব্ল্যাক ফরেস্ট এর ব্ল্যাক ফরেস্ট গ্যাটেও বা ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক, ব্ল্যাক ফরেস্ট হ্যাম (মাংসের তৈরী এক ধরনের খাবার), ব্ল্যাক ফরেস্ট নোম (ব্ল্যাক ফরেস্টের রূপকথায় প্রচলিত এক ধরনের কাল্পনিক প্রাণী যাদের রেঁনেসা যুগের যাদু ও রসায়নবিদ্যায় পারদর্শী বলা হয়ে থাকে) , কির্শওয়াসের নামক এক প্রকার স্বচ্ছ পানীয় এবং কোকিল-ঘড়ি বা Cuckoo Clock এর জন্য বিখ্যাত।

উপভাষা সম্পাদনা

ব্ল্যাক ফরেস্ট অঞ্চলে কথিত প্রধান উপভাষা হলো আলেমানিক।

পোশাক সম্পাদনা

ঐতিহ্যবাহী পোশাক বা ট্র্যাক্টেন সাধারণত উৎসব উপলক্ষে আজও পরা হয়। এই জাতীয় পোশাকের চেহারা একেক অঞ্চলে এক রকম হয় অর্থাৎ এক অঞ্চল হতে আরেক অঞ্চলে পরিবর্তিত হয়। ব্ল্যাক ফরেস্টের অন্যতম জনপ্রিয় পোশাকগুলি কার্নবাক, রেইচেনবাক এবং গুটাচ ইম কিনজিগটাল গ্রামগুলিতে দেখা যায় এবং এ পোশকগুলোর একটি বৈশিষ্ট্য হলো বোলেনহাট হেড্রেস, যা বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক উৎসবে চুলে বা মাথায় পরা হয়। অবিবাহিত মহিলারা লাল টুপি বা বোলেন(উলের বল) যুক্ত টুপি পরেন, বিবাহিত মহিলারা একই টুপি কালো রঙের পরে থাকেন। আক্দ সম্পন্ন মহিলারা তাদের বিয়ের দিন এবং অনেক সময় বিয়ের আগের কিছুদিন শ্যাপেল নামক এক ধরনের মুকুট পরে থাকেন, এই মুকুটগুলোর সবচেয়ে বড় আকারের উদাহরণ সেন্ট জর্জেন শহরে পাওয়া যায় যেখানে এগুলো ৫ কেজি ওজনের পর্যন্তও হয়ে থাকে।

চিত্রকর্ম সম্পাদনা

ব্ল্যাক ফরেস্টের গ্রামীণ সৌন্দর্যের পাশাপাশি এর বাসিন্দাদের ঐতিহ্যবাহী চেতনা ১৯ এবং ২০ শতকের গোড়ার দিকে অনেক শিল্পীকে আকৃষ্ট করেছিল, যাদের শিল্পকর্মগুলো ব্ল্যাক ফরেস্টকে বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত করে তুলেছে। এদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেন বারনাউ-এর হ্যান্স থোমা এবং তার সহপাঠী রুডল্ফ এপ, যাকে বাডেনের তৎকালীন প্রধান নৃপতি ফ্রেডেরিকের নির্দেশে পাঠানো হয়েছিল। উভয় শিল্পীই সারাজীবন ব্ল্যাক ফরেস্টের মোটিফ এঁকে গেছেন। ড্যাসেল্ডর্ফের শিল্পী জে মেজলার তাঁর প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি আঁকার জন্য সমগ্র ব্ল্যাক ফরেস্ট ভ্রমণ করেছিলেন।জার্মান চিত্রশিল্পী উইলহেলম হ্যাসম্যানের 'গুটাচ শিল্পী কলোনি'-এর কাজগুলি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল, তাদের ল্যান্ডস্কেপ এবং জেনার মোটিফগুলি ব্ল্যাক ফরেস্টের আসল চরিত্র তুলে ধরেছে। স্থানীয় লেখক হেইনরিক হ্যান্সজ্যাকোবের সাথে এ শিল্পী কলোনিও বাডেন লোক পোশাকের আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল।

কারুশিল্প সম্পাদনা

ব্ল্যাক ফরেস্টে কাঠ খোদাই করে হাতে বানানো বিভিন্ন ধরনের মূর্তি যেমন, লঙ্গিনাস ক্রস, বিখ্যাত ভাস্কর্য মাথিয়াস ফ্যালার ইত্যাদি তৈরী করা হয়। একজন নামহীন রোমান সৈনিক যাকে যীশুখ্রিষ্টের সাথে বিদ্ধ করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়, জার্মানে তাকে সেইন্ট লঙ্গিনাস এবং খ্রিষ্টান ধর্মে হলি ল্যান্স বলে অভিহিত করা হয়। লঙ্গিনাস ক্রস এক ধরনের ভাস্কর্য যা সেইন্ট লঙ্গিনাস এবং তার জীবনকাহিনীর বিভিন্ন অংশকে প্রদর্শন করে । কাঠের খোদাই ব্ল্যাক ফরেস্টের একটি ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্প এবং কাঠের খোদাই করে তৈরী গহনা বা অলঙ্কারগুলি এখনও পর্যটকদের জন্য ব্ল্যাক ফরেস্ট প্রতীক হিসাবে যথেষ্ট পরিমাণে উৎপাদিত হয়। কোকিল-ঘড়ি বা Cuckoo Clock ব্ল্যাক ফরেস্টে তৈরী কাঠের শিল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত যা এখানকার অর্থনীতি ও ইতিহাসেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

রান্না ও বিভিন্ন পদের খাবার সম্পাদনা

ব্ল্যাক ফরেস্ট হ্যাম এই অঞ্চলেই সর্বপ্রথম তৈরী করা হতো এবং হ্যামের পাশাপাশি ব্ল্যাক ফরেস্টের আরেকটি বিখ্যাত খাবারের নাম ব্ল্যাক ফরেস্ট গ্যাটেও যা "ব্ল্যাক ফরেস্ট চেরি কেক" বা "ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক" নামে পরিচিত এবং এটি চকোলেট কেক, ক্রিম, টক চেরি এবং কির্শ্চ (গাঁজানো চেরীর জুস) দিয়ে তৈরি করা হয়। ব্ল্যাক ফরেস্টে হ্যাম, পনির এবং ক্রিম দিয়ে তৈরি ফ্ল্যামকুচেন নামক পিৎজা জাতীয় এক ধরনের খাবার তৈরী যা বাডেন শহরের একটি বিশেষত্ব। ফানকুচেন নামের ক্রেপ কাপড়ের মতো পাতলা এক প্রকার পেস্ট্রিও এখানে বেশ জনপ্রিয়। ব্ল্যাক ফরেস্টের জনগণ ভোজনবিলাসী হওয়ায় এখানকার খাবার সুস্বাদু হিসেবে পরিচিত।শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে খ্যাত ফ্রান্সের একটি খাবারের ম্যাগাজিন সিরিজ 'মিশেলিন' প্রতিবছর ইউরোপের সবচেয়ে প্রাচীন ও সর্বশ্রেষ্ঠ খাবারের হোটেলগুলো তালিকা আকারে প্রকাশ করে এবং ব্ল্যাক ফরেস্টের ১৭টি রেস্তোঁরাকে এ ম্যাগাজিন তালিকাভুক্ত করেছে , এদের মধ্যে দুটি রেস্তোঁরা (বেয়ার্সব্রনের ব্যারেইস রেস্তোঁরা এবং শোয়ার্জওয়াল্ডস্টিউব রেঁস্তোরা) তিন স্টার বিশিষ্ট। পাশাপাশি শোয়ার্জওয়াল্ডস্টিউব জার্মানির একমাত্র রেস্তোঁরা যা প্রতি বছর ১৯৬৬ সাল থেকে মিশেল স্টার রেস্তোরাঁ হিসেবে ভূষিত করা হয়েছে। শোয়ার্জওয়াল্ডস্টিউব হোটেলের মালিক পরিবারের প্রায় সকলেই পেশাদার রাধুঁনী এবং তিন প্রজন্ম ধরে এই পরিবার হোটেলের এ ঐতিহ্য রক্ষা করে আসছেন।

ফ্যাসনেট উৎসব সম্পাদনা

জার্মানির একটি প্রচলিত ধর্মীয় উৎসবের নাম লেন্ট। এই লেন্ট উৎসবের কয়েকদিন আগে ব্ল্যাক ফরেস্টসহ জার্মানির বেশ কিছু জায়গায় একটি কার্নিভাল বা মেলা জাতীয় উৎসব পালিত হয় যাকে ফ্যাসন্যাক্ট বা ফ্যাসনেট বলা হয়। ফ্যাসনেটের দিনটি জার্মানির ছুটির দিনগুলোর মধ্যে একটি। অ্যাশ ওয়েডনেসডে বা একটি বিশেষ বুধবারে অনেক খ্রিষ্টান বিশেষ নামায ও রোযা সম্পন্ন করে এবং এই দিনটির ঠিক আগের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবারে ফ্যাসনেট উদযাপিত হয়। ফ্যাসনেট উদযাপনের এ দিনটিকে ফ্যাসনেটমেন্ডিগ বলা হয়। এদিন অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন ধরনের হাতে বানানো কাঠের তৈরী মুখোশ পরে রাস্তায় নেমে পড়ে, এর মধ্যে একটি বিশেষ ধরনের মুখোশকে ব্ল্যাক ফরেস্ট মুখোশ বলা হয় যা ব্ল্যাক ফরেস্টের জনগণ ফ্যাসনেটের দিন পরে থাকেন এবং এখানেই এদের বানানো হয়, এই মুখোশ এতই জনপ্রিয় যে ব্ল্যাক ফরেস্টের বাইরের অন্যান্য এলাকার জনগণও এদের পরিধান করে থাকেন।

সিগো খেলা সম্পাদনা

ব্ল্যাক ফরেস্টের একটি জনপ্রিয় তাস খেলার নাম সিগো যা পৃথিবীর যেকোন তাস খেলা থেকে আলাদা। এই খেলার জন্য ব্ল্যাক ফরেস্টে আলাদা এক ধরনের তাসের কার্ড বানানো হয়। সিগো এখানকার সংস্কৃতির একটি ঐতিহ্য। ১৮০৩ সালে ফ্রান্সে নেপোলিয়নীয় যুদ্ধ শুরুর কিছুদিন আগে বাডেনের সৈনিকেরা নেপোলিয়নীয় সৈনিকদের সাথে স্পেনে পাড়ি দেন এবং সেখানে গিয়ে তারা অমব্রে নামক এক ধরনের তাস খেলা শেখেন। এই খেলা তারা বাডেনে ফিরে এসে ট্যারক তাসের কার্ড দিয়ে খেলতে শুরু করেন যা পরবর্তীতে সিগো তাস খেলার জন্ম দেয়। এই খেলাটি বাডেন ও হোহেনজোলার্নের জাতীয় খেলায় পরিণত হয়েছে এবং এ জায়গা দু'টি জার্মানির একমাত্র স্থান যেখানে আজও খেলায় ট্যারক তাসের কার্ড ব্যবহার করা হয়। খেলাটি বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার কারণে একেক এলাকায় এটি একেকভাবে খেলা হয়ে থাকে। তবে সাম্প্রতিককালে, 'ব্ল্যাক ফরেস্ট সিগো চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতা' শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিযোগিতাটির জন্যে জাতীয়ভাবে এ খেলার নিয়ম প্রবর্তন করা হয়েছে। এমনকি বর্তমানে এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়মানুসারে খেলতে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়ে থাকে। ব্ল্যাক ফরেস্টের বিভিন্ন জায়গায় আঞ্চলিকভাবে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে পালিত আলেমানিক উইক বা আলেমানিক সপ্তাহ নামক উৎসবের একটি স্থায়ী ও নিয়মিত বৈশিষ্ট্য হলো এই প্রতিযোগিতা।

অর্থনীতি সম্পাদনা

খনি সম্পাদনা

আকরিক সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে ব্ল্যাক ফরেস্টের অর্থনীতির অন্যতম অংশ হলো খনি। এই আকরিকগুলো এক সময় কার্বনিফেরাস এবং আর্থোনেইস পাথরের সাথে সংযুক্ত অবস্থায় ছিল। সাম্প্রতিক আবিষ্কার হতে দেখা যায় যে, এই আকরিকের খনিগুলো খুব প্রাচীন নয়(ট্রায়াসিক যুগ হতে টারটায়ারি যুগের মধ্যে সৃষ্ট)। এরকম বিভিন্ন আকরিক পাওয়া যায় ফোর্জহেইমের নিকটবর্তী উত্তর ব্ল্যাক ফরেস্টের ফ্লোরাইড খনি, কেন্দ্রীয় ফ্রিউডেনস্ট্যাডের বারাইট খনি, ওয়াইল্ডসাব্যাক এলাকার ফ্লোরাইড, লেড এবং রূপার খনি এবং দক্ষিণ কালো বনের টডনাউ, উইডেন, আরবার্গ এলাকার নিকটবর্তী র‍্যানক্যাক ও ওলসব্যাক উপত্যকার ফ্লোরাইড খনি হতে পাওয়া যায়। টডমুস এবং হারব্যাকের নিকটবর্তী হোজেনওয়াল্ড বনভূমিতে গলিত লাভা জমে সৃষ্ট নোরাইট পাথরে নিকেল-ম্যাগনেটাইট আকরিক রয়েছে। ভূসংযুক্ত আকরিকের মধ্যে রয়েছে ফুটহিল জোনের লৌহ আকরিক এবং মিউলেনব্যাক বা বাডেন-বাডেনের কাছাকাছি এলাকার ইউরেনিয়াম আকরিক। এছাড়াও রয়েছে পাথুরে কয়লা, যা শুধুমাত্র বার্গোপটেন এবং ডায়ার্সবার্গের কাছে পাওয়া যায়।

খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম বা ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে, উত্তর ব্ল্যাক ফরেস্টে কেল্ট জাতি(রোমানদের পূর্ববর্তী একটি প্রাচীন জাতি) লৌহ আকরিক উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। রোমান যুগে দক্ষিণ ও বিশেষত মধ্য ব্ল্যাক ফরেস্টে (প্রাপ্ত প্রমাণ অনুযায়ী সুলজবার্গ,বাডেন ওয়েইলার এবং মিউনস্টার উপত্যকায়) রূপা এবং লেড আকরিক সংগ্রহ শুরু হয়। শেষ মধ্যযুগে (প্রায় ১১০০ সাল থেকে) টডনাউ,মিউনস্টার, সাগেন উপত্যকা এবং পরবর্তীতে স্কাউন্ডসল্যান্ডেও খনির কাজ এক বিশেষ বিকাশ লাভ করেছিল। ধারণা করা হয় যে প্রায় ৮০০-১,০০০ খনি কর্মচারী মধ্যযুগের শেষ অবধি মিউনস্টার উপত্যকায় বসবাস ও কাজ করেছেন। প্লেগ রোগের মহামারী, জার্মান কৃষক যুদ্ধ এবং কেন্দ্রীয় ইউরোপে সংঘঠিত ত্রিশ বছর যুদ্ধের সময় এ খনির কাজ অনেক বেশি হ্রাস পেয়ে যায়। একটি গুরুত্বপূর্ণ খনির অঞ্চল ছিল কিনজিগ উপত্যকা এবং এর আশেপাশের উপত্যকাগুলি। কিনজিগ উপত্যকার উঁচু অঞ্চলে অবস্থিত শেনকেনজেলের কাছে উইটিচেনে বিভিন্ন ধরনের বারাইট, কোবাল্ট এবং রূপা পাওয়া গিয়েছিল।

ব্ল্যাক ফরেস্টে বিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ওয়াইল্ডসাব্যাকের কাছে এবং স্কাউন্ডসল্যান্ডে (১৯৫৪ সাল অবধি) অ-লৌহঘটিত ধাতুর খনন অব্যাহত ছিল। ওবারওলফ্যাকের র‍্যানক্যাক উপত্যকার ক্লারা পিটে আজও ফ্লোরাইট এবং বারাইট খনন করা হয়। রিংশিমের নিকটে ডগার জোনে লৌহ আকরিকের সংগ্রহকরণ ১৯৭০ এর দশক অবধি অব্যাহত ছিল এবং এরা জার্মানির কেহলে নিষ্কাশিত হয়েছিল। জার্মানির হার্জ পর্বত ও মধ্য ইউরোপের আকরিক পর্বতমালা হতে ব্ল্যাক ফরেস্টে প্রাপ্ত রূপার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশ কম ছিল এবং অন্যান্য রৌপ্য-খনির অঞ্চলে উৎপাদিত রূপার পরিমাণের মাত্র দশ শতাংশ ছিল এ এলাকার রূপার উৎপাদনের পরিমাণ। ব্ল্যাক ফরেস্টে প্রচুর শো মাইন রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: নিউইনবার্গের নিকটে ফ্রিচগ্লাক পিট, নিউইনবার্কের নিকটবর্তী হেল্লা গ্লাক পিট, সিবাচের নিকটে সিলবারগ্রিউন্ডেল পিট, হালাওয়াগেনের নিকটবর্তী হিমিলিচ হিয়ার পিট ইত্যাদি।

বনজ সম্পাদনা

বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে ব্ল্যাক ফরেস্টের কাঠ নৌ-কাঠামো হিসাবে এবং অন্যান্য জাহাজীকরণ শিল্পে ব্যবহারের জন্য এনজ, কিনজিগ, মুর্গ, নাগোল্ড এবং রাইন নদীগুলোতে করে পরিবহন করা হতো। শিল্পের এই শাখাটি ১৮ শতকে ফুটে উঠেছিল। বেশিরভাগ দীর্ঘ, সোজা পাইন গাছের কাঠগুলো নেদারল্যান্ডসে জাহাজ নির্মানের জন্য নদীপথে পরিবহন করা হয়েছিল, যাদের "ডাচম্যান" হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। এ কাঠগুলো নেদারল্যান্ডসে বালুকাময় এবং ভেজা জাতীয় মাটিতে ঘর নির্মাণের বিম হিসাবে ব্যবহৃত হতো। আমস্টারডামে আজও এই কাঠগুলি দিয়ে নির্মিত প্রচুর ঐতিহাসিক বিল্ডিং রয়েছে। বিকল্প পরিবহন হিসাবে রেলপথ এবং সড়ক নেটওয়ার্কের প্রসারণের ফলে, ১৯ শতকের শেষের দিকে নদীপথে পরিবহনের ব্যাপক অবসান ঘটে। বর্তমানে কাঠুরেরা মূলত জাপানে পাঠানোর জন্য খুব লম্বা এবং শাখাবিহীন দেবদারূ গাছ সংগ্রহ করেন। গরমের জন্য কাঠের পেলেটগুলির ক্রমবর্ধমান চাহিদা থাকায় নির্মিত কাঠের গুরুত্ব তীব্রভাবে বেড়ে গিয়েছে।

কাচ তৈরি, কয়লা-দহন এবং পটাশ(পটাশিয়ামের শক্তিশালী ক্ষার) খনন সম্পাদনা

ব্ল্যাক ফরেস্টের কাঠের সংস্থানগুলো অর্থনীতির নানান ক্ষেত্রে পণ্য সরবরাহ করত যা এখন অনেকাংশে অদৃশ্য হয়ে গেছে। কাঠকয়লা পোড়ানোর কাজে নিয়োজিত কর্মচারীরা বনের ভেতর কাঠের স্তূপ তৈরি করে এ থেকে কয়লা তৈরি করত, একইভাবে পটাশ বয়লারগুলি কাচ তৈরীর শিল্পের জন্য আরেকটু আধুনিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। ব্ল্যাক ফরেস্ট কাচ তৈরির কাঁচামাল এবং শক্তি সরবরাহ করত। বর্তমান সময়ে টডনাউ,ওলফাচ এবং গার্সবাচের ফরেস্ট গ্লাস সেন্টারে (যা দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত) অবস্থিত কিছু কাঁচের বাড়ি সেই প্রাচীন কাচ ব্যবসার প্রমাণ দেয়।

ঘড়ি এবং গহনা উৎপাদন সম্পাদনা

ব্ল্যাক ফরেস্টের উপত্যকাগুলোর দুর্গম অঞ্চলগুলোতে শিল্পায়নের দিন শেষ পর্যন্ত আর আসেনি। শীতকালে, অনেক কৃষক তাদের বিকল্প আয় হিসেবে কাঠের কোকিল-ঘড়ি (Cuckoo Clock) তৈরি করতেন, যা উনিশ শতকে যথাযথ ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ঘড়ির শিল্পে বিকশিত হয়েছিল এবং ব্ল্যাক ফরেস্টের বিভিন্ন উপত্যকার রেললাইনের প্রবেশপথে এদের সাজিয়ে রাখা হতো। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকার নানান অসুবিধার জন্য কাঠের হস্তশিল্প যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়ে যা বনের কাঠ ও খনি হতে প্রাপ্ত ধাতুর সাথে মিলিয়ে ব্যবহার করা হতো। এরপর বাডেন রাজ্য সরকার ছোট কারিগরদের যাতে ভাল প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় এবং বিক্রির আরও উন্নত সুযোগ তৈরী হয় তা নিশ্চিত করতে ১৮৫০ সালে ফার্টওয়ানজেনে প্রথম ঘড়িনির্মাণের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। যন্ত্রেরে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে জুনহানস এবং কেইনজেলের মতো বড় কোম্পানিও প্রতিষ্ঠিত হয়। বিংশ শতাব্দীতে সাবা, ডুয়াল এবং বেকারের মতো সংস্থাগুলিও অবদান রাখতে শুরু করে। ১৯৭০ এর দশকে ইউরোপের পূর্বাঞ্চলের আধুনিক শিল্প প্রতিযোগিতার কারণে এ শিল্পটি কমে গেছে। তবুও, ব্ল্যাক ফরেস্ট আজো ধাতবশিল্পের কেন্দ্র হিসাবে রয়ে গেছে এবং অনেকগুলি উচ্চ প্রযুক্তির কোম্পানি এখনো এখানে অবস্থিত। শিল্পায়নের শুরু থেকে ফোরজেইমে অসংখ্য সংস্থা তৈরী হয়েছে যারা গহনা তৈরি করে এবং মূল্যবান ধাতু ও পাথর দিয়ে কাজ করে। ফোরজেইমে একটি স্বর্ণকারের স্কুলও রয়েছে।

জলবিদ্যুৎ সম্পাদনা

বিপুল পরিমাণে বৃষ্টিপাত এবং বিভিন্ন উচ্চতার পর্বত থাকার কারণে ব্ল্যাক ফরেস্টের উল্লেখযোগ্য জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনা রয়েছে। উনিশ শতকের আগে বিভিন্ন কারখানা বিশেষত করাত-কল এবং হাতুড়ি কল সহ অসংখ্য কল-কারাখানা পরিচালনার জন্য জলবিদ্যুৎ ব্যবহৃত হতো এবং ব্ল্যাক ফরেস্টের কিছু উপত্যকায় শিল্পায়নের অন্যতম কারণগুলির মধ্যে একটি ছিল জলবিদ্যুৎ। বিংশ শতাব্দীর পর থেকে, ব্ল্যাক ফরেস্টে নদীর প্রবাহ এবং পাম্পড স্টোরেজ পাওয়ার স্টেশনগুলি ব্যবহার করে সর্ববৃহৎ পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। ১৯১৪ থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত মুর উপত্যকায় রুডলফ ফেটউইস সংস্থা প্রতিষ্ঠিত ছিল যা উত্তর কালো বনে শোয়ারজেনবাক বাঁধ নির্মাণ করে। ১৯৩২ সালে, শ্লুচসি জলাশয়টি এর নতুন বাঁধ দিয়ে চালিত পাম্প-স্টোরেজ শক্তির কারণে কেন্দ্রীয় ব্ল্যাক ফরেস্টের উপরের বেসিনে পরিণত হয়। ২০১৩ সালে 'দক্ষিণ ব্ল্যাক ফরেস্ট শাল্কসিওয়ার্ক' সংস্থা ১৪টি স্টোরেজ ট্যাংক সহ পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে। হর্নবার্গ অববাহিকায় নিয়মানুযায়ী হোয়েরা জলাশয়ে প্রবাহিত হওয়ার আগে গড়ে ৬২৫ মিটার পানি টারবাইনগুলি ঘোরাতে ব্যবহার করা হয়। একবিংশ শতাব্দীতে, নবায়নযোগ্য শক্তি উৎস আইনের প্রেক্ষিতে, নদীগুলোর অসংখ্য ছোট ছোট বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুনরায় খোলা বা নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে।

ভ্রমণ ও পরিবহন সম্পাদনা

ব্ল্যাক ফরেস্টের প্রধান শিল্প হলো পর্যটন। ব্ল্যাক ফরেস্ট পর্যটন সংস্থার ২০০৯ সালের হিসাব অনুযায়ী পর্যটন খাতে প্রায় ১,৪০,০০০ চাকরী বিদ্যমান এবং গড়ে প্রায় ৩৪.৮ মিলিয়ন পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। গ্রীষ্ম, বসন্ত ও শরৎকালে এ এলাকার বিভিন্ন হাইকিং ট্রেইল ও বাইকিং এর পথ খুলে দেওয়া হয় যা পর্যটকের সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দেয়। একইভাবে, শীতকালে এখানে বিভিন্ন শীতকালীন খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে ডাউনহিল স্কি ও নরডিক স্কি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বিভিন্ন উচ্চতার পাহাড়গুলো গ্লাইডিং করতে ব্যবহৃত হতো। ব্ল্যাক ফরেস্টের হাইকিং, স্কি ও বাইকিং এর ট্রেইলগুলোর দৈর্ঘ্য সব মিলিয়ে মোট ২৩,০০০ কিলোমিটার এবং ব্ল্যাক ফরেস্ট ক্লাব এদের রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত এবং এ ক্লাবের সদস্য বা কর্মচারী সংখ্যা প্রায় ৯০,০০০।

পর্যটক আকর্ষণ সম্পাদনা

ব্ল্যাক ফরেস্টের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র ও রিসোর্ট হলো টিটিসি ও শাল্কসি। উভয় হ্রদেই ডাইভিং ও উইন্ড সার্ফিং এর মতো ওয়াটার গেমসের ব্যবস্থা রয়েছে। জার্মানির বাডেন-বাডেন শহরও এখানকার একটি দর্শনীয় শহর। এটি মূলত স্পা শহর নামে পরিচিত এবং এর উল্লেখযোগ্য স্পা রিসোর্ট হলো ব্যাডেনওয়েলার, বাড হেরেনাল্ব, ওয়াইল্ডবাড, বাড ক্রোজিঙ্গেন, বাড লাইবেনজেল ​​এবং ব্যাড বেলিনঙ্গেন স্পা রিসোর্ট। অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে গেঙ্গেনবাক শহরের প্রাচীন সাম্রাজ্য, ওলফ্যাক,স্কিল্ট্যাক ও হ্যাসল্যাক অঞ্চলের ১ম বিভাগীয় শহর এবং হর্নিসগ্রিন্ডের কাছে অবস্থিত ফুল ও পানীয়ের জন্য বিখ্যাত গ্রাম সাসব্যাকওয়াল্ডেন। ভ্রমণের জন্য আরো কিছু মনোরম প্রাচীন শহর হলো আল্টেনস্টেইগ, ডর্নস্টেস্টেন, ফ্রেইবার্গ ইম ব্রেইসগো, গের্নসবাক, ভিলিগেন এবং জেল অ্যাম হার্মারবাচ। পানভোজনের উৎসবের কেন্দ্রস্থল বায়ার্সব্রন, জার্মানির সবচেয়ে বড় বাজার ফ্রেউডেন্ট্যাড, গের্সব্যাকের ফুলের প্রদর্শনী (যা দু'বার 'গোল্ডেন ভিলেজ' পুরষ্কারে ভূষিত) এখানকার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য্যের জন্য জনপ্রিয় জায়াগা সেইন্ট ব্লেসিন, স্যাঙ্ক ট্রাডপার্ট, সেইন্ট পিটার, সেইন্ট মারগেন, অ্যালফসব্যাক অ্যাবেই ও প্রায় ধ্বংশপ্রাপ্ত হারসাউ অ্যাবেই যারা প্রত্যেকেই লাল বর্ণের বেলেপাথর দিয়ে তৈরি। আরেকটি মনোরম প্রাচীন অট্টালিকা বিদ্যমান স্কেনজেলের নিকটবর্তী উইটিচেন অ্যাবেইতে। নদীগুলোর আশেপাশের উপত্যকাগুলোও পর্যটকদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। মোট কথায় ব্ল্যাক ফরেস্টের ঐতিহাসিক শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে বাডেন-বাডেন, ফ্রেইবার্গ, ক্যাল (হারমান হেসির জন্ম শহর), গেঙ্গেনবাক, স্টাফেন, শিল্টাক, হাসলাক এবং আলটেনস্টেইগ। অন্যান্য জনপ্রিয় গন্তব্যগুলির মধ্যে রয়েছে ফিল্ডসবার্গ, বেলচেন, কান্ডেল এবং স্কাউইনসল্যান্ডের মতো পাহাড়, টিটিসি এবং শ্লুচির হ্রদ, সকল সেইন্ট জলপ্রপাত, ট্রাইবার্গ জলপ্রপাত ইত্যাদি। এই জলপ্রপাতগুলো সর্বোচ্চ নয়, তবে এরা জার্মানির সর্বাধিক বিখ্যাত জলপ্রপাত।আরো আছে ইউটাক নদীর ঘাট যা ব্ল্যাক ফরেস্টের অন্যতম মনোরম স্থান। দার্শনিক মার্টিন হাইডেগার ব্ল্যাক ফরেস্টে দার্শনশাস্ত্র বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। হাইডেগার ব্ল্যাক ফরেস্টের একটি ছোট্ট কুঁড়েঘরে তাঁর কিছু দার্শনিক রচনা সম্পাদন করেছিলেন এবং সেখানে তার ছাত্র হান্না অ্যারেন্ড সহ পদচারণের জন্য দর্শনার্থীদের আমন্ত্রণ করা হত। এই ঝুপড়িটি তাঁর রচনা, আবাসন, চিন্তাভাবনায় স্পষ্টভাবে সম্পৃক্ত, যা এখনো অসংখ্য পর্যটকের আকর্ষণের কেন্দ্র।

যাদুঘরসমূহ সম্পাদনা

গুটাচের ভগসবাওয়ার্ফ ফার্মে অবস্থিত 'ব্ল্যাক ফরেস্ট ওপেন এয়ার মিউজিয়াম'-এ প্রাচীন ব্ল্যাক ফরেস্টে নির্মিত বাড়ি বিদ্যমান, এগুলো প্রাচীনকালে ব্ল্যাক ফরেস্টের জনগণের তৈরী আসল বাড়ি যাদেরকে একত্রে একটি মিউজিয়াম হিসেবে দেখানো হয় এবং এগুলো ১৬ থেকে ১৭ শতাব্দীর কৃষিজীবনকে তুলে ধরে। এই বাড়িগুলোকে এদের আসল অবস্থান থেকে কিছুটা ভেঙ্গে ফেলা হয় এবং মূল অংশগুলোকে আলাদা করে নিয়ে এসে পুন-নির্মিত করা হয়। ফারটোয়াঙ্গেনে অবস্থিত 'জার্মান ক্লক মিউজিয়াম' ব্ল্যাক ফরেস্টের ঘড়ি উৎপাদন শিল্পের যুগটিকে প্রদর্শন করে। স্কিলট্যাকের 'শ্যাটেস্যাক মিউজিয়াম'-কে ব্ল্যাক ফরেস্টের বনজ(কাঠ ও চামড়া শিল্প) অর্থনৈতিক যুগের জীবন্ত ইতিহাস বলা হয়, যা মূলত কিনজিগ নদীর উপত্যকার বনজ সম্পদ নির্ভর অর্থনৈতিক যুগের অনেক তথ্য প্রদান করে। ব্ল্যাক ফরেস্ট ও এর আশেপাশের এলাকাগুলোর পোশাক-আশাকের স্পষ্ট বিবরণ পাওয়া যায় হাস্ল্যাক ইম কিঞ্জিটালে অবস্থিত 'ব্ল্যাক ফরেস্ট কস্টিউম মিউজিয়াম' হতে। একই স্থানের আরেকটি যাদুঘরের নাম 'হ্যান্সজ্যাকব মিউজিয়াম ও হ্যান্সজ্যাকব আর্কাইভ' যা বাডেনের বিখ্যাত লেখক,কাহিনীকার, পুরোহিত, রাজনীতিবিদ এবং ইতিহাসবিদ হেইনরিক হ্যান্সজ্যাকবের কর্ম-কীর্তির উপর গঠিত। আরো রয়েছে 'মিমা মিনারেলোজি অ্যান্ড ম্যাথমেটিক্স মিউজিয়াম' যা ব্ল্যাক ফরেস্টের খনিজ শিল্পযুগকে তুলে ধরে। এটি ওবারওয়ালফ্যাকে অবস্থিত। এ যাদুঘরে বিভিন্ন খনি, আকরিক ও এদের খননে ব্যহৃত হাতিয়ারের প্রদর্শনী রয়েছে এবং এদের প্রত্যেকের পাশে এসব খনন কাজ ও আকরিক সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের গাণিতিক বিশ্লেষণও বিদ্যমান।

সড়ক পরিবহন সম্পাদনা

বেশ কয়েকটি পর্যটক রুট ব্ল্যাক ফরেস্টের মধ্য দিয়ে চলে। সুপরিচিত ছুটির দিনে খোলা রুটগুলি হলো ব্ল্যাক ফরেস্ট হাই রোড (বি ৫০০) এবং জার্মান ক্লক রোড। স্থানীয় রাস্তাগুলোর কারণে ব্ল্যাক ফরেস্ট মোটরসাইকেল চালকদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। তবে বহুসংখ্যক দুর্ঘটনা এবং প্রচুর শব্দদূষণের কারণে গতিসীমা প্রবর্তনের মাধ্যমে কিছু নির্দিষ্ট রাস্তা ছাড়া বাকি রাস্তাগুলো সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৮৪ সাল থেকে, মোটরসাইকেল চালকদের জন্য গ্রীষ্মের সাপ্তাহিক ছুটির সময়ে স্কাউইনসল্যান্ডে পর্বত-রেসিং রুট ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ড্রাইভারদের জন্য, এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রধান রুট ফাস্ট এ ৫ (E৩৫) মোটরওয়ে, তবে বিভিন্ন মনোরম রুট যেমন শোয়ার্জওয়ালঢোকস্ট্রাই (৬০ কিমি), বাডেন-বাডেন থেকে ফ্রেউডেন্সট্যাড, শোয়ার্জওয়াল্ড ট্যালেস্ট্রাই (১০০ কিমি), মুর্গ ও কিনজিগ উপত্যকা বা বাডিস্ক ওয়েইনস্ট্রাই (বাডেন ওয়াইন স্ট্রিট, ১৬০ কিলোমিটার), বাডেন-বাডেন থেকে ওয়েল অ্যাম রাইন পর্যন্ত একটি ওয়াইন রুট, এগুলো তুলনামূলক কম গতিসম্পন্ন ড্রাইভিং এর জন্য ব্যবহৃত হয়। শেষোক্ত রুটটি উত্তর ব্ল্যাক ফরেস্ট হতে দক্ষিণ ব্ল্যাক ফরেস্ট পর্যন্ত একটি মনোরম ট্রিপ এবং এতে রয়েছে বহু পুরানো ওয়াইনারি এবং ক্ষুদ্র গ্রাম। আরেকটি,জনপ্রিয় রুট হলো জার্মান ক্লক রুট, একটি বৃত্তাকার রুট যা এই অঞ্চলের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশকে প্রদর্শন করে। মধ্যযুগীয় সময় থেকে সমৃদ্ধ খনির ইতিহাসের কারণে এখানে জনসাধারণের জন্য পুনরায় প্রচুর খনি খোলা হয়েছে। এই জাতীয় খনিগুলি কিনজিগ উপত্যকা, সুজেন্টাল, মুনস্টার উপত্যকা এবং টডমুসের আশেপাশে দেখা যেয়ে থাকে।

রেলপথ পরিবহন সম্পাদনা

ব্ল্যাক ফরেস্টের সম্পূর্ণ এলাকা একসময় রেলওয়ে দ্বারা সংযুক্ত ছিল। উত্তর ব্ল্যাক ফরেস্টের পূর্ব অংশের এনজ উপত্যকা থেকে শুরু করে ফোরজেম থেকে বাড ওয়াইল্ডবাড ও নাগোল্ড ভ্যালি, সেখানকার রেলপথ হয়ে হর্ব অ্যাম নেকার, ওয়ার্টেমবার্গ ব্ল্যাক ফরেস্ট রেলপথ এসটাটগার্ট থেকে ক্যাল এবং গাউ রেলপথ এসটুটগার্ট থেকে ফ্রয়েডেনস্ট্যাড বা তার বর্তমান বিভাগটি ইউটিঞ্জেন থেকে ফ্রয়েডেনস্ট্যাড পর্যন্ত বিদ্যমান। রাইন সমভূমির উপত্যকাগুলি থেকে ব্ল্যাক ফরেস্টে অনেকগুলি রেললাইন চলমান,যেমন আলব ভ্যালি রেলপথ কার্লসরুহ থেকে বাড হেরেনালব, রাসট্যাট থেকে ফ্রেউডেনস্টাড পর্যন্ত মুর্গ ভ্যালি রেলপথ , আকার্ন থেকে ওটেনহোফেন ইম স্কোয়ার্জওয়াল্ড পর্যন্ত আকার ভ্যালি রেলওয়ে, অ্যাপেনউইয়ার থেকে বাড গ্রিজবাক পর্যন্ত রেঞ্চ ভ্যালি রেলপথ ইত্যাদি। বাডেন ব্ল্যাক ফরেস্ট রেলওয়ে ১৮৭৩ সাল থেকে হাউসাচ, ট্রাইবার্গ, সেন্ট জর্জেন, ভিলিনজেন এবং ডোনয়েসচিনজেনের উপর দিয়ে চলমান কনস্ট্যান্স হ্রদের উপরের এলাকা কনস্টানজের সাথে অফেনবার্গকে যুক্ত করে। হাউস্যাকে কিনজিগ ভ্যালি রেলওয়ে শাখা ফ্রয়েডেনস্টাডের কাছে ছেড়ে ডেনজলিংগনে এলজ ভ্যালি রেলওয়েটি ফ্রেউডেন্সট্যাড পর্যন্ত রয়েছে, ডেনজ-লিঙ্গেনে এলজ উপত্যকার রেলওয়ে এলজ্যাকে গিয়ে শেষ হয়েছে, হোলেন্টাল রেলওয়ে হোলেন্টাল উপত্যকা দিয়ে ফ্রেইবার্গ ইম ব্রেইসগাউ থেকে ডনউশিঙ্গেন পর্যন্ত যায়, আরও রয়েছে মিউনস্ট্রেটাল রেলওয়ে(বাড ক্রোজিঙ্গেন থেকে মিউনস্ট্রেটাল), ক্যান্ডার ভ্যালি রেলওয়ে (বাসেলের নিকটবর্তী হাল্টিঙ্গেন থেকে ক্যান্ডার উপত্যকার ভেতর দিয়ে ক্যান্ডার্ন পর্যন্ত) এবং উইজেন ভ্যালি রেলোয়ে(ক্যান্ডার্ন থেকে জেল ইম উইজেন্টাল)। থ্রি লেকস রেলওয়ে টিটিসি শহরের হোলেন্টাল রেলওয়ে থেকে উইন্ডফলওয়াইহার ও স্কালসি পর্যন্ত যাওয়া আসা করে। ইউট্যাক ভ্যালি রেলওয়ে বাডেন-ওয়ার্টেমবার্গ ও সুইজারল্যান্ডের সীমানা দিয়ে অতিক্রম করে এবং ওয়াল্ডশাটিয়েঙ্গেনের সাথে ইমেনডিয়েঙ্গেন অঞ্চলকে ব্ল্যাক ফরেস্ট রেলওয়ের উপর যুক্ত করে। এই রুটগুলির বেশিরভাগ আজও ব্যস্ত, তবে কিছু জনপ্রিয় রেলওয়ে এখন শুধুই ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  • 1. Black Forest travel guide from Wikivoyage
  • 2. "Black Forest". Encyclopedia Britannica. 4 (11th ed.). 1911.
  • 3. Schwarzwald and baden information sector