কার্মা-পাক্শি

তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের অন্যতম প্রধান ধর্মসম্প্রদায় ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের কার্মা-ব্

কার্মা-পাক্শি (তিব্বতি: ཀར་མ་པ་ཀཤི་ওয়াইলি: karma pak shi) (১২০৪-১২৮৩) তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের অন্যতম প্রধান ধর্মসম্প্রদায় ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মীয় গোষ্ঠীর দ্বিতীয় র্গ্যাল-বা-কার্মা-পা বা প্রধান ছিলেন।

কার্মা-পাক্শি
কার্মা-পাক্শি

পরিবার সম্পাদনা

কার্মা-পাক্শির জন্ম হয় ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বতের খাম্স অঞ্চলের সা-স্তোদ-দ্ক্যিল-লে-ৎসাগ নামক স্থানে। তার পিতার নাম র্গ্যা-দ্বাং-ত্শুর-ত্শা-স্প্রাং-থার (ওয়াইলি: rgya dbang tshur tsha sprang thar) এবং মাতার নাম সেং-ব্জাং-মাং-স্ক্যিদ (ওয়াইলি: seng bzang mang skyid)।[১]

শিক্ষা সম্পাদনা

কার্মা-পাক্শি এগারো বছর বয়সে ভিক্ষুর শপথ গ্রহণ করেন। তিনি স্পোম-ব্রাগ-পা-ব্সোদ-নাম্স-র্দো-র্জে ছাড়াও কাতোগ বৌদ্ধবিহারের তৃতীয় ও চতুর্থ প্রধান ব্যাম্স-পা-'বুম এবং মাং-ফু-বা-ব্সোদ-নাম্স-'বুম নামক র্ন্যিং-মা বৌদ্ধ ভিক্ষুর নিকট শিক্ষাগ্রহণ করেন। স্পোম-ব্রাগ-পা-ব্সোদ-নাম্স-র্দো-র্জে তাকে কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম র্গ্যাল-বা-কার্মা-পা দুস-গ্সুম-ম্খ্যেন-পার অবতার রূপে অভিহিত করেন।[১]

মঙ্গোলদের সাথে সম্পর্ক সম্পাদনা

 
কার্মা-পাক্শির ধাতব মূর্তি

তিনি পূর্ব তিব্বতে ও চীনের সীমান্তবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা পরিভ্রমণ করে বহু বৌদ্ধবিহার নির্মাণ ও সংস্কার করেন। ১২৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি লাসা শহরের পশ্চিমে স্তোদ-লুং অঞ্চলে ম্ত্শুর-ফু বৌদ্ধবিহারে গমন করে সেখানে বহু বছর অতিবাহিত করেন। এই সময় তিনি কুবলাই খান দ্বারা আমন্ত্রিত হয়ে রোং-য়ুল-গ্সের-স্তোদ নামক স্থানে তার সাথে মিলিত হন। এরপর তিনি পাঁচ বছরের কিছু কম সময় কুবলাই খানের সাথে অতিবাহিত করে পুনরায় চীন-তিব্বত সীমান্তে ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়েন। ১২৫৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মোংকে খানের আমন্ত্রণে সিরা ওর্দো নামক স্থানে অবস্থিত রাজপ্রাসাদে যাত্রাকালে 'ফ্রুল-স্নাং-স্প্রুল-পা'ই-ল্হা-খাং স্থাপন করেন। মোংকে খানের রাজসভায় তিনি বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের সাথে দার্শনিক আলোচনা ও তর্কে অংশগ্রহণ করতেন। মঙ্গোলিয়া থেকে তাকে পাক্শি বা শিক্ষক উপাধি দেওয়া হয়। কিন্তু কুবলাই খান মঙ্গোলিয়ার শাসনভার গ্রহণের পর তিনি কার্মা-পাক্শিকে তার বিরোধী শক্তির সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেন ও তার কিছু অনুগামীকে মৃত্যুদন্ড দেন। এরফলে ১২৬৪ খ্রিষ্টাব্দে কার্মা-পাক্শিকে মঙ্গোলিয়া ত্যাগ করতে হয় এবং আট বছর পরে তিনি ম্ত্শুর-ফু বৌদ্ধবিহারে ফিরে আসেন। তার উল্লেখযোগ্য শিষ্যরা ছিলেন ও-র্গ্যান-পা-রিন-ছেন-দ্পাল এবং ব্যাং-সেম্স-র্গ্যাল-বা-য়ে-শেস (ওয়াইলি: byang sems rgyal ba ye shes)।[১]

রচনা সম্পাদনা

কার্মা-পাক্শি বহু তান্ত্রিক গ্রন্থের রচয়িতা হলেও বেশির ভাগ গ্রন্থেরই বর্তমানে কোন অস্তিত্ব নেই। তিনি অনেকসময় রাং-ব্যুং-র্দো-র্জে ছদ্মনামে তার গ্রন্থ রচনা করতেন বলে তার লেখা গ্রন্থের স্টহিক পরিসংখ্যান সম্বন্ধে ধারণা স্পষ্ট নয় কারণ রাং-'ব্যুং-র্দো-র্জে নামক এক বাস্তব চরিত্র কার্মা-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মীয় গোষ্ঠীর পরবর্তী অর্থাৎ তৃতীয় র্গ্যাল-বা-কার্মা-পা ছিলেন। কিন্তু র্গ্যা-ম্ত্শো-ম্থা'-য়াস-ক্যি-স্কোর (ওয়াইলি: rgya mtsho mtha’ yas kyi skor) নামক গ্রন্থটি যে কার্মা-পাক্শি নিজে লিখেছিলেন, এই সম্বন্ধে নিশ্চিত করে বলা যায়।[২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Sorensen, Michelle (2011-04)। "The Second Karmapa, Karma Pakshi"The Treasury of Lives: Biographies of Himalayan Religious Masters। সংগ্রহের তারিখ 2013-12-13  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  2. Kapstein, Matthew T. 2000. The Tibetan Assimilation of Buddhism: Conversion, Contestation and Memory. New York: Oxford UP.

আরো পড়ুন সম্পাদনা

  • Thinley, Karma (২০০৮)। The History of Sixteen Karmapas of Tibet। USA: Prajna Press। পৃষ্ঠা 150। আইএসবিএন 1-57062-644-8 
  • Ken Holmes, Karmapa, Altea Publishing 1995, আইএসবিএন ০-৯৫২৪৫৫৫-৪-৪. Author's website
  • Lama Kunsang, Lama Pemo, Marie Aubèle (2012). History of the Karmapas: The Odyssey of the Tibetan Masters with the Black Crown. Snow Lion Publications, Ithaca, New York. আইএসবিএন ১-৫৫৯৩৯-৩৯০-৪.
  • Karma Pakshi. 1978. Autobiographical Writings of the Second Karmapa Karma Pakshi and a work called Spyi Lan Ring mo — a defence of the Bka' brgyud pa teachings addressed to G.yag sde Paṇ chen. Gangtok: Gonpo Tseten.
  • Jackson, David. 2009. "The Black Hats of the Karmapas." In Patron and Painter; Situ Paṇchen and the Revival of the Encampments Style, pp. 39–69. New York: Rubin Museum of Art.
  • Richardson, Hugh. 1958-1959. "The Karma-pa Sect." Journal of the Royal Asiatic Society, no. 3 and 4: 139-164, no. 1 and 2, pp. 1–18.
  • Roerich, George, trans. 1996. The Blue Annals. Delhi: Motilal Banarsidas.
  • Tucci, Giuseppe. 1949. Tibetan Painted Scrolls. Rome: La Libreria dello Stato.
  • Van der Kuijp, Leonard. 1995. "'Baghsi' and Baghsi-s in Tibetan Historical, Biographical and Lexicographical Texts." Central Asiatic Journal, vol. 39, pp. 275–302.
পূর্বসূরী
দুস-গ্সুম-ম্খ্যেন-পা
কার্মা-পাক্শি
দ্বিতীয় র্গ্যাল-বা-কার্মা-পা
উত্তরসূরী
রাং-'ব্যুং-র্দো-র্জে