কাঁওড় যাত্রা

হিন্দুধর্মের ঐতিহ্য বা পবিত্র রীতি

কাঁওড় যাত্রা শিবভক্তদের বার্ষিক তীর্থযাত্রা। এই তীর্থযাত্রীদের কাঁওড়ীয়া বা ভোলে বলে। তাঁরা উত্তরাখন্ড-এর হরিদ্বার, গোমুখ, গঙ্গোত্রী এবং বিহার-এর সুলতানগঞ্জে পবিত্র গঙ্গা নদীর জল আনতে যায়। লাখ লাখ ভক্ত গঙ্গার পবিত্র জল বহুদূর বহন করে স্থানীয় শিব মন্দির বা বিশেষ মন্দির যেমন মীরাটের পুরা মহাদেব এবং ঔঘরনাথ ও কাশী বিশ্বনাথ, বৈদ্যনাথ এবং ঝাড়খণ্ড-এর দেওঘরে জলাবিশেষ করে।

হরিদ্বারের হর কি পাউরীতে কাঁওড় মেলায় কাঁওড়ীগণ

ধর্মীয় রীতিতে পবিত্র উৎসের জল কাঁধের ভারের দুইদিকে নিয়ে যাত্রা করা পুণ্যার্থীদের কাঁওড় বলে।[১] প্রারম্ভে এই যাত্রা সীমিত লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯৮০র দশকের শেষদিকে এই যাত্রা জনপ্রিয়তা অর্জন করে।[২] বর্তমান হরিদ্বারের কাঁওড় যাত্রা ভারত-এর অন্যতম বৃহৎ ভক্তের সমাগম হওয়া শহরে পরিগণিত হয়েছে। বর্তমানে এই উৎসব গোটা ভারতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।[৩]

নামের উৎপত্তি সম্পাদনা

কাঁওড় যাত্রায় কাঁওড়ীয়ারা কাঁধে এক বিশেষ ধরনর ভার বহন করে। সাধারণতে বাঁশ দ্বারা নির্মিত এই ভারের দুদিকে জল বহন করার ব্যবস্থা থাকে। এই ভারটিকে কাঁওড় বলে এবং এই যাত্রার নাম এর থেকেই এসেছে।[৪]

ইতিহাস সম্পাদনা

 
জল তুলে নেওয়া একজন কাঁওড়ীয়া

কাঁওড় যাত্রা হিন্দু ধর্মগ্রন্থ পুরাণে উল্লিখিত সমুদ্র মন্থন-এর সঙ্গে জড়িত। সমুদ্রমন্থনে প্রথমে অমৃতের পরিবর্তে হলাহলের অভির্ভাব হয়েছিল। এই বিষের ভয়ানক পরিনাম থেকে জগতকে উদ্ধার করতে দেবাদিদেব মহাদেবে বিষপান করেছিলেন। কিন্তু হলাহলের ঋণাত্মক প্রভাবের জন্য শিব কষ্ট পাচ্ছিলেন। তেত্রাযুগে শিবের পরম ভক্ত রাবণ কাঁওড়ে পবিত্র গঙ্গার জল এনে রামেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গে জলাভিষেক করেছিলেন এবং ভগবান শিব হলাহলের ঋণাত্মক প্রভাব থেকে মুক্তি লাভ করেছিলেন।

বোল বম সম্পাদনা

 
বোল বম

বোল বম বা বল বম ভারত এবং নেপাল-এর শিবভক্তগণ শিবের গুণ-গরিমা গান করা বার্ষিক তীর্থযাত্রা। এই উৎসব শ্রাবণ মাস বা শাওন মাসে অনুষ্ঠিত হয়। ভক্তরা গঙ্গা বা অন্য কোনো পবিত্র উৎসর জল কাঁওড়ে নিয়ে কাঁধে তুলে নেয়। এই যাত্রায় কাঁওড়ীয়ারা গেরুয়া বসন পরিধান করে খালি পায়ে শিব মন্দিরে উপস্থিত হয়ে জলাভিষেক করে। সাধারণত এই যাত্রায় কাঁওড়ীয়ারা সপরিবারে, আত্মীয়স্বজন, কাছের প্রতিবেশীদের সাথে যাত্রা করে। এই যাত্রায় তাঁরা 'বোল বম' বা 'বল বম' অর্থাৎ শিবের নাম উচ্চারণ করে। এর সঙ্গে তাঁরা ভজন স্তুতিমূলকসংগীত গেয়ে ভগবান শিবের নাম নেয়।

যাত্রা সম্পাদনা

শ্রাবণ বা শাওন মাস ভগবান শিবের প্রতি উৎসর্গিত। ভক্তদের বেশিরভাগই শাওন মাসের সোমবারে ব্রত উপাসনা করে। তদুপরি শ্রাবণ মাস হিন্দু মান্যতা অনুসারে পবিত্র চতুর্মাস কালের অন্তর্ভুক্ত, তাই এই মাসে তীর্থযাত্রা এবং পবিত্র নদীতে স্নান করা হয়। এই সময় হাজার হাজার ভক্ত গেরুয়া বসন পরিধান করে হরিদ্বার, গঙ্গোত্রী এবং গোমুখের গঙ্গার জল আনতে যায়। এর সঙ্গে অন্য অন্য পবিত্র স্থল থেকে জল এনে স্থানীয় বা প্রধান শিবলিঙ্গে অর্পণ করে।[৫] এই যাত্রায় বেশি সংখ্যক পুরুষ অংশ নেয় যদিও কিছুসংখ্যক মহিলাও এতে অংশগ্রহণ করে। এইযাত্রায় বেশিরভাগই খালি পায় যায় যদিও বেশি দূরত্বের শহর সমূহে বিভিন্ন বাহনের সহায়তায় যাওয়া হয়। বিভিন্ন সংগঠন এই যাত্রার যাত্রীদের সুবিধার্থে স্থানে স্থানে ক্যাম্পের আয়োজন করে।[২] বর্তমানে এই যাত্রা ভারতের সব শহরে ছড়িয়ে পড়েছে।[৬] পবিত্র স্থল থেকে জল আনার পর সেই জল শ্রাবণ মাসের ত্রয়োদশী তিথিতে বা মহাশিবরাত্রির দিন শিবলিঙ্গের জলাভিষেক করা হয়ে থাকে।

তথ্যসূত্ৰ সম্পাদনা

  1. Singh, Vikash, (২০১৭)। Uprising of the fools : pilgrimage as moral protest in contemporary India। Stanford, CA: Stanford University Press। আইএসবিএন 978-1503601673ওসিএলসি 953363490 
  2. "Kanwarias flock highways"The Hindu। ১৪ জুলাই ২০০৪। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. "Security stepped up at Delhi-Haridwar rail, road routes"The Hindu। ২৬ জুলাই ২০০৭। ৭ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০২০ 
  4. Largest Hindi to Hindi Dictionary — Current Hindi Word: कांवड़, ২০১১-১০-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৮-০৬, Snippet: ... काँवर, स्त्री० [सं० काँवाँरथी से] एक विशेष प्रकार की बहँगी जिसमें बाँस के टुकड़े के दोनों सिरों पर पिटारियाँ बँधी रहती हैं ... kānvar, fem. [from Sanskrit kānvānrathi] a special type of scales-like structure in which containers are fastened to opposite ends of a bamboo staff ... 
  5. "LUDHIANA: KANWAD YATRA:"The Tribune। ২৩ জুলাই ২০০২। 
  6. Choudhary, p. 29