কংকর্ড, নিউ হ্যাম্পশায়ার

নিউ হ্যাম্পশায়ারের রাজধানী

কংকর্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের রাজধানী ও মেরিম্যাক কাউন্টির সদর দপ্তর। ২০১০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এর জনসংখ্যা ছিল ৪২,৬৯৫।[১] ২০১৯ সালে জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩,৬২৭-এ। [২]

ডাউনটাউন কনকর্ড, নিউ হ্যাম্পশায়ার

উত্তর দিকে অবস্থিত পিনাকোট গ্রামেই কংকর্ড শহরের পত্তন হয়। এখানেই নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের একমাত্র আইন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাম্পশায়ার স্কুল অব ল, নিউ হ্যাম্পশায়ার পুলিশ একাডেমি ও নিউ হ্যাম্পশায়ার ফায়ার একাডেমি অবস্থিত। যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্দশ রাষ্ট্রপতি ফ্র্যাঙ্কলিন পিয়ার্স এখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত। [৩]

ইতিহাস সম্পাদনা

হাজার বছর আগে কংকর্ডে আবেনাকি আদিবাসীর অন্তর্ভুক্ত পিনাকুক গোত্রের লোক এখানে বসবাস করত। [৪] তারা মেরিম্যাক নদীতে স্যালমন, স্টার্জন ও আলেউইভস মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। মেরিম্যাক নদী হয়ে ডিঙি নৌকা করে তারা উইনিপিসাওকে হ্রদ থেকে শুরু করে আটলান্টিক মহাসাগর পর্যন্ত নৌযাত্রা করত। মেরিম্যাক নদীর পলিসমৃদ্ধ মাটি তরমুজ, শিম,লাউ, কুমড়োভুট্টা চাষের উপযোগী ছিল।

১৬৫৯ সালে "পিনাকুক" নাম দিয়ে এখানে বসতি স্থাপন করা হয়।[৫] ১৭২৫ সালের ১৭ই জানুয়ারি ম্যাসাচুসেটস বে প্রদেশ কংকর্ড পরিচালনার ভার "পিনাকুক আবাদ-এলাকা"-র উপর অর্পণ করে। ১৭২৫ থেকে ১৭২৭ সালের মধ্যে এবেনেজার ইস্টম্যানসহ ম্যাসাচুসেটস এর হাব্রেভিল শহরের অনেক বাসিন্দা এখানে বসতি স্থাপন করে। ১৭৩৪ সালের ৯ জানুয়ারি শহরটিকে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হয়। তখন এর নাম হয় "রামফোর্ড।" রামফোর্ড ও বাউ শহরের মধ্যে সীমানা নিয়ে বিরোধ উপস্থিত হলে গভর্নর বেনিং ওয়েন্টওয়ার্থ এর নামকরণ করেন "কংকর্ড", যার অর্থ সম্প্রীতি। মূলত রামফোর্ড ও বাউ শহরের মধ্যে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠাই ছিল এর লক্ষ্য।

কংকর্ড অষ্টাদশ শতাব্দীতে ক্রমশ প্রসিদ্ধি লাভ করতে থাকে। সে আমলের অনেক বাড়ি শহরের মেইন স্ট্রিটের উত্তরাংশে এখনো সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।[৬]

১৮০৭ সালে স্যামুয়েল বায়োগট খাল খননের একটি নতুন কৌশল উদ্ভাবন করেন। যার ফলে আমোসকাগ জলপ্রপাত দিয়ে জাহাজ চলাচলের একটি নতুন পথ খুলে যায়। এর ফলে কংকর্ড মিডলসেক্স সেতুর মধ্য দিয়ে বোস্টনের সাথে সংযুক্ত হয়। ১৮০৮ সালে রাজ্য সরকার একে তাদের যাবতীয় কার্যক্রমের মূল কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দেয়। ১৮১৯ সালের বিধানসভা ভবনের মূল কাঠামো অদ্যাবধি অক্ষুণ্ন রয়েছে এবং এখানে নির্বাচিত সদস্যরা প্রতিবছর মিলিত হন। আসবাবপত্র তৈরি ও গ্রানাইট কোয়ারির জন্য শহরটি দ্রুত সুপরিচিত হয়ে ওঠে। ১৮২৮ সালে লুইস ডাউনিং ও জে স্টিফেনস অ্যাবট "অ্যাবট ও ডাউনিং" প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেন। এর কংকর্ড আরামকেদারা ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা লাভ করে। ঊনবিংশ শতকে এখানে রেলপথশিল্প ও বস্ত্রশিল্পের প্রসার ঘটে। শহরটিতে বর্তমানে স্বাস্থ্যসেবা ও বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।

ভূগোল সম্পাদনা

আদমশুমারি ব্যুরোর ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী কংকর্ড শহরের আয়তন ৬৭.৫ বর্গমাইল। এর মধ্যে ৬৪.২ বর্গমাইল স্থল এবং বাকিটুকু জল। কংকর্ড শহরের ৪.৭৯%-ই জল দ্বারা আবৃত। সমুদ্রসীমার ৮৬০ মিটার উপরে ওক পাহাড়ে কংকর্ড শহরের সর্বোচ্চ বিন্দু অবস্থিত।[১]

শহরের উত্তর-পশ্চিম হতে দক্ষিণ-পূর্ব দিক পর্যন্ত মেরিম্যাক নদী প্রবাহিত হয়। মেরিম্যাকের উপনদী সাউকক নদী কংকর্ডের পূর্ব সীমানা দিয়ে বয়ে যায়। দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে তুর্কি ও পিনাকুক গ্রামে রয়েছে কনটোকুক নদীর প্রবাহ।

শহরটি নিউ হ্যাম্পশায়ারের ১৬ মাইল ও বোস্টনের ৬৬ মাইল উত্তরে অবস্থিত।

জলবায়ু সম্পাদনা

কংকর্ডের জলবায়ু অনেকটা কোপেন ধরনের। শীতকালে কংকর্ড শহর অত্যন্ত তুষারাচ্ছন্ন হয়। আবার গ্রীষ্মকালে এখানে তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে। শরৎকাল ও বসন্তকালের দৈর্ঘ্য বেশ সংক্ষিপ্ত।

জনমিতি সম্পাদনা

২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী কংকর্ডের জনসংখ্যা ছিল ৪২,৬৯৫। এর জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৪৪.২ জন। বাসিন্দাদের মধ্যে ৯১.২% শ্বেতাঙ্গ, ২.২% কৃষ্ণাঙ্গ অথবা আফ্রো-আমেরিকান, ০.৩% আদিবাসী আমেরিকান ও ৩.৪% এশিয়ান। এদের মধ্যে ২.১% হিস্পানিক অথবা লাতিনো। [৭]

শহরটির পরিবারগুলোর মাথাপিছু আয় (২০০৯-২০১১ এর হিসাব অনুযায়ী) ৭৩,৪৫৭ মার্কিন ডলার। শহরের মাথাপিছু আয় ২৯,২৯৬ মার্কিন ডলার। ৫.৫% পরিবার ও ১০.৮% বাসিন্দা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছিল। [৮]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা