ওল্ড ম্যান অব হোয়

ওল্ড ম্যান অব হোয় (ইংরেজি: Old Man of Hoy) ৪৪৯ ফুট (১৩৭ মিটার) উচু হোয় দ্বীপের একটি সাগর স্ট্যাক, যা স্কটল্যান্ডের উত্তর উপকূলের অর্কনেয় দ্বীপমালার একটি অংশ। প্রাচীন লাল বেলেপাথর দ্বারা গঠিত এটি ব্রিটেনের সবচেয়ে উচু সী স্ট্যাক। ওল্ড ম্যান পর্বতারোহীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় এবং এতে ১৯৬৬ সালে প্রথম আহোরণ করেন। ১৭৫০ সালের পরে কিছু সময় ধরে জলীয় কর্মকান্ডের দ্বারা একটি খাড়া বাধঁ ক্ষয় হয়, যার ফলে এটি শীঘ্রই সমুদ্রে ভেঙ্গে পড়তে পারে। এটি মূলত কয়েকশ বছর বয়সী একটি সী স্ট্যাক ছাড়া আর কিছু নয়, যা শীঘ্রই সাগরে বিলুপ্ত হতে পারে ।

উত্তর দিক থেকে ওল্ড ম্যান অব হোয়

ভৌগোলিক অবস্থান সম্পাদনা

 
 
ওল্ড ম্যান অব হোয়
স্কটল্যান্ডের মধ্যে ওল্ড ম্যান অব হোয় চিহ্নিত করা হয়েছে

ওল্ড ম্যান স্কটল্যান্ডের অর্কনি দ্বীপপুঞ্জের হোয় দ্বীপের পশ্চিম উপকূলে রকউইক উপসাগরের পাশে দাড়িয়ে আছে এবং এটি স্ক্রাবস্টার থেকে স্ট্রমনেজ যাওয়ার পথে ফেরি থেকে দেখা যায়।[১] একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে এটিকে একটি মানবিক চিত্রে অনুরূপ বলা যায়।[২]

এখানে প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কাছাকাছি সময় ধরে, বাতাসের বেগ প্রতি সেকেন্ডে ৮ মিটারের (১৮ mph) চেয়েও বেশি দ্রুততর থাকে এবং এক বছরে গড়ে ২৯ দিন প্রবল ঝড় হয়। সমুদ্রের গভীরতা অনেক বেশি, যা উচ্চ শক্তি সম্পন্ন টেউ সৃষ্টি করে। এ ঢেউ খুব দ্রুত যা প্রায় ৬০ মিটার (২০০ ফুট) বেগে হোয়ের পশ্চিম উপকূলে পতিত হয়, ফলে দ্রুত ক্ষয় হয়ে চলেছে।[৩]

ভূ গঠন সম্পাদনা

ওল্ড ম্যান অব হোয় বর্তমানের ব্রিটেনের সবচেয়ে উচু সী স্ট্যাক, যা লাল বেলে পাথরের এটি স্তুপ এবং এটি ব্যাসল্ট পাথরের ভিত্তির উপর অধিষ্ঠিত।[৪][৫] এটি ৬০ মিটার (২০০ ফুট) গভীর খাদ দ্বারা মূল ভূখণ্ড থেকে পৃথক হয়েছে। ওল্ড ম্যানের পার্শ্বগুলো প্রায় খাড়া এবং এর কয়েকমিটার চওড়া একটি শীর্ষ রয়েছে।[৩] শিলার নরম স্তরগুলো গঠিত হয়েছে বালূ, নুড়ি পাথর ও বেলেপাথর দ্বারা, পুরাতন লাল বেলেপাথরের কঠিন শিলাগুলো দেখতে খাজকাঁটা ও ফলকের মত।[৬][৭]

ইতিহাস সম্পাদনা

 
উইলিয়াম ড্যানিয়েল-এর একটি চিত্রকর্মে ওল্ড ম্যান অব হোয় যা ১৮১৭ সাল বা সমসাময়িক সময়ের

ওল্ড ম্যান ১০০ বছরের বেশি, সম্ভবত ২৫০ বছরের চেয়ে কম বয়সী একটি সী স্ট্যাক, যা শীঘ্রই ভেঙ্গে পড়তে পারে।[৩][৮] প্রায় ১২৩০ খ্রিষ্টাব্দের সমকালীন সময়ে লেখা অর্কনেয়িগা সাগায় ওল্ড ম্যানের কোন উল্লেখ নেই, ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে আকাঁ উইলিয়াম ব্লাউ-এর ম্যাপেও এটি প্রদর্শিত হয়নি। এই স্থানে একটি হেডল্যান্ড বিদ্যামান ছিল, যেখানে বর্তমানে ওল্ড ম্যান দাড়িয়ে আছে।[৮] ১৭৫০ খ্রিষ্টাব্দের ম্যাকেঞ্জি ম্যাপেও একইভাবে একটি হেডল্যান্ড দেখায়, কিন্তু কোন স্ট্যাক নেই। কিন্তু ১৮১৯ সালের দিকে ওল্ড ম্যান মূলভুমি থেকে আলাদা হয়েছিল।[৮] সেই সময়ে উইনিয়াম ড্যানিয়েল একটি বৃহত্তর স্থম্ভ হিসাবে, গোড়ায় একটি খিলান ও একটি ছোট উপরি বিভাগসহ সী স্ট্যাকটির একটি নকশা আকেঁন। এই চিত্র থেকেই এর নামকরণ করা হয় ওল্ড ম্যান।[৮][৯]

১৯ শতকের প্রথম দিকে একটি প্রবল ঝড়ে এর একটি অংশ ধুয়ে যায় এবং আজকের এ অবস্থায় আসে। আজও এর ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে।[৮] ১৯৯২ সালে দক্ষিণপাশের উপরে একটি ৪০ মিটার ফাটল দেখা গিয়েছিল, যার ফলে একটি বড় ঝুলানো অংশ যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়বে।[৩][৫][৮]

আরোহণ সম্পাদনা

 
ওল্ড ম্যান অব হোয়

ওল্ড ম্যানে ১৯৬৬ সালে প্রথম তিনজন পর্বতারোহী আরোহণ করেন; তারা হলেন- ক্রিস বনিংটন, রাস্টি বাইলিটম প্যাটি[১০][১১] ১৯৬৭ সালে ৮-৯ জুলাই, একটি দুর্দান্ত আরোহণের এসেন্ট ফিচার বিবিসিতে তিন রাত সরাসরি সম্প্রচারিত হয়, যার দর্শক ছিল ১৫ মিলিয়নেরও বেশি।[১২] এই ফিচারে তিন জোড়া আরোহী ছিলো: বনিংটন ও প্যাটি তারা মুল রুটে পুনরায় আরোহণ করেছিলেন এবং দুটি নতুন লাইনে যথাক্রমে জো ব্রাউন ও ল্যান ম্যাকনাটস ডেভিস এবং পিটি ক্রু ও ডগল হ্যাসটন।[১৩]

রেড স্জেল ওল্ড ম্যানে আরোহণকারী প্রথম অন্ধব্যক্তির খেতাব অর্জন করেন। তিনি রেটিনিটিস পিগমেন্টোসা (ইংরেজি: retinitis pigmentosa) রোগে ভুগছিলেন এবং তার বাম পাশের চোখে মাত্র ৫% দৃষ্টি ছিল। স্জেল ২০১৩ সালে এই স্ট্যাকে আরোহণ করেন। তাকে সহযোগিতা করেন মার্টিন মরান এবং নিক কার্টার।[১৪][১৫][১৬]

স্ট্যাকটিতে আরোহণের ৭টি রাস্তা রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় মূল ভূখণ্ডের দিকে অবস্থিত ই-১।[১৭][১৮] আরোহণের রেকর্ড হিসাবে, শিলাস্তুপের চুড়ায় টুপারওয়্যার কন্টেইনারে একটি লগ বই স্থাপিত আছে।[১৬][১৯] এই স্ট্যাকটিতে গড়ে প্রতি বছর ৫০ জনেরও বেশি আরোহণ করতে আসে।[১৯]

বিএএসই জাম্পিং সম্পাদনা

ওল্ড ম্যান থেকে প্রথম বিএএসই জাম্পিং করে ২০০৮ সালের ১৪ মে রজার হোমস, গাস হাসটিন্সন-ব্রাউনটিম এমেট নামের তিনজন জনপ্রিয় জাম্পার।[২০] হাসটিন্সন-ব্রাউন এ লাফের ১১ দিন পরে সুইজাল্যান্ডের মৃত্যু বরণ করে।[২১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Facts about the Old Man of Hoy"। NorthLink Ferries। ১৮ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৪ 
  2. "My Old Man"। Radio Scotland। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০১৩ 
  3. Hansom, Jim (২০০৭)। "West Coast of Orkney" (পিডিএফ)। JNCC। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  4. Seward 2011, পৃ. 230।
  5. "ওল্ড ম্যান অব হোয়"। Scapa Flow Landscape Partnership Scheme। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৪ 
  6. Hansom, James D.; Evans, David J. A. (১৯৯৫)। "The old man of Hoy"। Scottish Geographical Magazine111 (3): 172–174। ডিওআই:10.1080/00369229518736960 
  7. "Old Man of Hoy"। scottishgeology.com। ৭ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৪ 
  8. জিম হ্যানসন। "ওল্ড ম্যান অব হোয়"। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৪ 
  9. "উইলিয়াম ড্যানিয়েল: ওল্ড ম্যান অব হোয়"। Tate। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০১৩ 
  10. "1966 climb: The Old Man of Hoy"। Mountaineering Council of Scotland। Archived from the original on ১০ আগস্ট ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৪ 
  11. Thompson 2011, পৃ. 231
  12. "The Great Climb"। BBC Scotland। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১১ 
  13. Latter 2009, পৃ. 452
  14. Liz Roberts (৩০ জুন ২০১৩)। "Blind climber Red Széll: Old Man of Hoy ascent was dream come true"grough। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৩ 
  15. Tina Gardner (২৮ জুন ২০১৩)। "Old Man of Hoy success for blind climber"British Mountaineering Council। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৩ 
  16. Red Szell। "The Blind Man of Hoy"। UKClimbing। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৪ 
  17. "The Old Man of Hoy"। orkney-seastacks.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৪ 
  18. Chris Mellor। "The Old Man of Hoy: the routes"। UKClimbing। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৪ 
  19. Grylls 2009, পৃ. 234
  20. Roger Holmes। "Old Man Of Hoy - BASE 1st Descent"। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১১ 
  21. "Angus Hutchison-Brown"The Scotsman। ১ জুলাই ২০০৮। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৪ 

উৎস সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা