উজানি আসাম

আসামের প্রশাসনিক অঞ্চল

উজানি আসাম (সৌমারপীঠ) হল আসামের এক প্রশাসনিক বিভাগ বা সংমন্ডল। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার উচ্চাংশের অবিভক্ত লখিমপুর এবং শিবসাগর নিয়ে এটি গঠিত হয়েছে। এই খণ্ডসমূহ হল নিম্ন আসাম, উত্তর আসাম ও পর্বতীয়া এবং বরাক উপত্যকা৷ এই বিশেষ খণ্ডটি যোরহাট জেলার বিচার-ব্যবস্থার অধীন।

উজনি আসাম
আসামের সংমন্ডল
ডিব্রুগড়, উজনি আসামের এক উল্লেখযোগ্য শহর
ডিব্রুগড়, উজনি আসামের এক উল্লেখযোগ্য শহর
দেশভারত
রাজ্যআসাম
সদর দপ্তরসরাইদেউ, গড়গাঁও, শদেয়া (মধ্যযুগের)
জনসংখ্যা
 • মোট৭৫,০০,০০০
সময় অঞ্চলইউ টি সি +০৫:৩০ (ভারতীয় মান সময়)

প্রারম্ভিক অবস্থাত সাতটি জেলারে গঠিত হওয়া উজনি আসামের খণ্ডটিতে জেলার সংখ্যা এখন নখের মত বৃদ্ধি পেয়েছে। সেইগুলি হল - যোরহাট, ডিব্রুগড়, ধেমাজি, শিবসাগর, গোলাঘাট, সরাইদেউ, লখিমপুর, মাজুলী এবং তিনসুকিয়া৷ উল্লেখনীয় যে, সরাইদেউ এবং মাজুলী নতুনকরে গঠিত হওয়া জেলা। ২০১৬ সালে এই দুটি জেলার মর্যাদা পেয়েছিল।[১][২] বর্গ কিলোমিটারেরভিত্তিতে বৃহত্তম গোলাঘাট এবং তিনসুকিয়া জেলা যথাক্রমে ১৯৮৭ এবং ১৯৮৯ সালে মর্যাদা পেয়েছিল।[৩][৪]

ডিব্রুগড়, গোলাঘাট এবং যোরহাট জেলাও এই খণ্ডের পুরানো ও জনবসতিতে পূর্ণ শহরাঞ্চল (পৌর অঞ্চল)। স্বাধীনতার আগেই এই তিনটি জেলার গঠন আরম্ভ হয়েছিল।[৫]

বৃহত্তর উজনি আসাম অঞ্চলটি শোণিতপুর, কার্বি আংলং এবং নগাঁও জেলা নিয়ে গঠিত। এই খণ্ডটি রাজ্যের সর্বাধিক উৎপাদনশীল অংশ। উজনি আসাম প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন - কয়লা, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসে পরিপূর্ণ। উজনি আসামে চায়ের বাগান ব্যাপকভাবে করা হয়।

ইতিহাস সম্পাদনা

মধ্যযুগীয় সম্পাদনা

আহোম সাম্রাজ্য (১২২৮-১৮২৬) সম্পাদনা

ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাতে আহোম সাম্রাজ্য প্রায় ছ'শ বছর ধরে রাজত্ব করেছিল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মোগলদের শাসনের থেকে প্রতিরক্ষা করে এসেছিল। মংগ মাওর একজন টাই রাজকুমার চু্কাফার দ্বারা এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৬ শতকে চুহুংমুঙর সময়ে এই সাম্রাজ্যর পরিসর বৃদ্ধি পায় এবং এটি বহু-জাতীয় হয়ে পড়ে। মোয়ামরীয়া বিদ্রোহের সময়ে এই সাম্রাজ্য ক্রমে দুর্বল হতে শুরু করে এবং মানসেনার উপুর্যপরি আক্রমণের ফলে এই সাম্রাজ্যর পতন আরম্ভ হয়। মানসেনার সঙ্গে পরাভূত হওয়ার পর ১৮২৬ সালে ইয়ান্ডাবু সন্ধি হয় এবং এই ভূখণ্ড ব্রিটিশদের অধীনে যায়।

চুতীয়া সাম্রাজ্য (১১৮৭-১৭৬৩) সম্পাদনা

চুতীয়া লোকরা হল এই খণ্ডের ইতিহাসে থাকা লোক। ৪০০০ বছর আগে এই খণ্ডে স্থায়ীত্ব নেওয়া গোষ্ঠীসমূহের মধ্যে তারা ছিলেন অন্যতম। ১১৮৭ সালে বীরপাল ব্রহ্মপুত্র নদীর উত্তরদিকে মধ্যযুগীয় চুতীয়া সাম্রাজ্য স্থাপন করেছিলেন। উত্তর আসামকে ধরে অরুণাচল প্রদেশের কিছু অংশ এই সাম্রাজ্যের শাসনাধীন ছিল। শদেয়াতে তাদের রাজধানী ছিল। বর্তমান আসামের লখিমপুর, ধেমাজি, তিনসুকিয়া, এবং ডিব্রুগড়কে ধরে শোণিতপুর, গোলাঘাট, যোরহাট এবং শিবসাগর জেলা তারাও শাসন করেছিল। অন্যদিকে আসাম-অরুণাচলের সীমান্তে থাকা কিছু জেলাও তাদের অধীনে ছিল।

জনসংখ্যা সম্পাদনা

উজনি আসাম খণ্ডের জনসংখ্যা প্রায় ৭৫ লাখ (আসামের মোট জনসংখ্যার ২৪ শতাংশ)। আশি শতাংশেরও অধিক মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তারপর আছে ইসলাম ধর্ম। ৭০ শতাংশেরও অধিক মানুষ অসমীয়া ভাষায় ভাব-বিনিময় করে। কিছুসংখ্যক বাংলাভাষী এবং হিন্দীভাষীও এইখণ্ডে আছে। উজনি আসামের প্রধান সম্প্রদায়গুলি হল - আহোম, চুতীয়া, চা জনগোষ্ঠী, মিসিঝ, সোনোয়াল কাছাড়ি, মরাণ, মটক, দেউরী, এবং ঠেঙাল-কাছাড়ি ইত্যাদি।

চিত্রসম্ভার সম্পাদনা

পাদটীকা সম্পাদনা

  • ^১   ডিব্রুগড় পৌরখণ্ডের গঠন,১৮৭৩.[৬]
  • ^২   গোলাঘাট পৌরখণ্ডের গঠন,১৯২০ [৭]
  • ^৩   যোরহাট পৌরখণ্ডের গঠন, ১৯০৯[৮]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Preparations afoot for inauguration of Charaideo district at Sonari, The Eastern Today"ET Correspondent। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। 
  2. "Assam: Majuli becomes 1st river island district of India"Hindustan TimesGuwahati। ২৭ জুন ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুন ২০১৬ 
  3. Law, Gwillim (২০১১-০৯-২৫)। "Districts of India"Statoids। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-১১ 
  4. "Various Districts in Assam" 
  5. Sharma, Anil Kumar (১ জানুয়ারি ২০০৭)। "Quit India Movement In Assam"। Mittal Publications। সংগ্রহের তারিখ ৫ আগস্ট ২০১৬ – Google Books-এর মাধ্যমে। 
  6. "Dibrugarh Municipal Board"। ১১ জুন ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০১৯ 
  7. "AGP lists civic poll candidates (Golaghat Municipal Board)"। সংগ্রহের তারিখ ৫ আগস্ট ২০১৬ 
  8. "Jorhat Municipal Board(JBM), Jorhat, Assam"। ২০১৬-০৩-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৮-০৫ 
  9. Shakespear, Leslie (১৯১৪)। History of Upper Assam, Upper Burmah and Northeast Frontier.। Cambridge University Press.।