ইন্ডিয়ান ক্যাম্প

"ইন্ডিয়ান ক্যাম্প" (ইংরেজি: Indian Camp) হল আর্নেস্ট হেমিংওয়ে রচিত ছোটগল্প। এটি ১৯২৪ সালে প্যারিস থেকে ফোর্ড ম্যাডক্স ফোর্ডের সাহিত্য পত্রিকা দ্য ট্রান্সআটলান্টিক রিভিউ-এ প্রথম প্রকাশিত হয় এবং ১৯৯৫ সালে বোনাই অ্যান্ড লিভরাইট কর্তৃক হেমিংওয়ের প্রথম মার্কিন ছোটগল্প সংকলন ইন আওয়ার টাইম-এ প্রকাশিত হয়। হেমিংওয়ের অর্ধ-আত্মজীবনীমূলক চরিত্র নিক অ্যাডামস ইন্ডিয়ান ক্যাম্প ছোটগল্পেই প্রথম আত্মপ্রকাশ করে।

ইন্ডিয়ান ক্যাম্প প্রকাশের এক বছর পূর্বে ১৯২৩ সালে হেমিংওয়ের পাসপোর্ট সাইজের ছবি

গল্পে নিক অ্যাডামসের ডাক্তার পিতাকে এক স্থানীয় আমেরিকান বা "ইন্ডিয়ান" ক্যাম্পে একজন মহিলার সন্তান প্রসবের জন্য ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। ক্যাম্পে তাকে জ্যাক-ছুরি দিয়ে জরুরী অস্ত্রোপচার করতে বাধ্য করা হয়, তার সহকারী ছিল নিক। অস্ত্রোপচারের পর তারা সেই মহিলার স্বামীকে মৃত অবস্থায় পান, যে তার নিজের গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এই গল্পে হেমিংওয়ের অল্প কথায় বর্ণনাশৈলীর দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। ইন্ডিয়ান ক্যাম্প হেমিংওয়ের শুরুর দিকের গল্প, যার মূল বিষয়বস্তু সন্তান জন্মদান ও মৃত্যুভীতি, যা তার পরবর্তী কাজগুলোতেও পাওয়া যায়। গল্পটি প্রকাশিত হওয়ার পর এর লেখনীর মান আলোচিত ও প্রশংসিত হয়। পণ্ডিতবৃন্দ "ইন্ডিয়ান ক্যাম্প"-কে হেমিংওয়ের গুরুত্বপূর্ণ কর্ম বলে গণ্য করেন।

কাহিনি সংক্ষেপ সম্পাদনা

গল্পের শুরুতে কিশোর নিক অ্যাডামস, তার পিতা, ও তার চাচা ভোরের পূর্বে এক ভারতীয় ব্যক্তির সাথে নৌকায় করে নিকটবর্তী ইন্ডিয়ান ক্যাম্পে যায়। নিকের ডাক্তার পিতাকে সেই ক্যাম্পে প্রসব যন্ত্রণায় কাতর একজন মহিলার সন্তান প্রসবের জন্য ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। ক্যাম্পে তারা একটি ছোট ঘরে মহিলাটিকে মাটিতে পাটাতনের বিছানায় শোয়া অবস্থায় পান, এবং তার স্বামী তার উপরে বিছানায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত পা নিয়ে শুয়েছিল। মহিলার পেটের সন্তান উল্টা অবস্থায় থাকায় নিকের পিতা জ্যাক-ছুরি দিয়ে জরুরী অস্ত্রোপচার করতে বাধ্য হন। নিক পানি রাখার পাত্র ধরে রেখে তাকে সাহায্য করেন। অস্ত্রোপচারের সময় মহিলাটি চিৎকার করতে থাকেন এবং নিকের চাচা তাকে থামাতে গেলে সে তার হাতে কামড় দেয়। অস্ত্রোপচারের পর তারা সেই মহিলার স্বামীকে উপরে পাটাতনের বিছানায় মৃত অবস্থায় পান, যে তার নিজের গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যা করেছে। নিককে ঘরটি থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং নিকের চাচা দুজন ভারতীয়ের সাথে বেরিয়ে যান। নিক ও তার পিতা নৌকায় করে ক্যাম্প থেকে ফিরে যান। ফিরার পথে নিক তার পিতাকে জন্ম ও মৃত্যু সম্পর্কে প্রশ্ন করে, এবং ভাবতে থাকে সে কখনো মারা যাবে না।

পটভূমি ও প্রকাশনার ইতিহাস সম্পাদনা

 
শাম্বিতে (মন্ত্রোয়া) আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ও তার প্রথম স্ত্রী হ্যাডলি, তাদের পুত্র জনের জন্মের এক বছর পূর্বে

১৯২০-এর দশকের শুরুর দিকে হেমিংওয়ে ও তার স্ত্রী হ্যাডলি প্যারিসে বসবাস করতেন, সেখানে হেমিংওয়ে টরন্টো স্টার-এর বিদেশি প্রতিবেদক ছিলেন। যখন হ্যাডলি অন্তঃসত্ত্বা হন, তিনি টরন্টোতে ফিরে আসেন।[১] হেমিংওয়ের জীবনীকার কেনেথ লিন বলেন হ্যাডলির সন্তান জন্মদান এই গল্পের অনুপ্রেরণা। হ্যাডলির প্রসব বেদনা শুরু হয় যখন হেমিংওয়ে নিউ ইয়র্ক থেকে রেলগাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিলেন। লিন মনে করেন হেমিংওয়ে ভয় পেয়েছিলেন যে হ্যাডলি হয়ত সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে বাঁচবেন না এবং তিনি "ভয়ার্ত অবস্থায় ছিলেন... তার [হ্যাডলির] কষ্ট ও অসহায় অবস্থায় কথা চিন্তা করে তিনি মনে করেন তিনি সম্ভবত তাকে সাহায্য করার মত অবস্থার অনেক পরে ফিরে এসেছেন।"[২] হেমিংওয়ে ১৯২৩ সালের ১০ অক্টোবর টরন্টোতে জন হেমিংওয়ের জন্মের কয়েক মাস পর "ইন্ডিয়ান ক্যাম্প" রচনা করেন।[৩]

টরন্টোতে অবস্থানকালীন প্যারিস থেকে হেমিংওয়ের প্রথম বই থ্রি স্টোরিজ অ্যান্ড টেন পোয়েমস প্রকাশিত হয়। কয়েকমাস পর দ্বিতীয় খণ্ড ইন আওয়ার টাইম প্রকাশিত হয়। এতে শিরোনামহীন অধ্যায়ে ১৮টি ছোট উপন্যাসিকা অন্তর্ভুক্ত ছিল।[১][৪] হেমিংওয়ে, হ্যাডলি ও তাদের পুত্র (ডাকনাম বাম্বি) ১৯২৪ সালের জানুয়ারি মাসে প্যারিসে ফিরে যান এবং সেখানে তারা র‍্যু নত্র দাম দে শাঁয়ে একটি নতুন অ্যাপার্টমেন্টে ওঠেন।[১] এজরা পাউন্ডের সাথে হেমিংওয়ে ফোর্ড ম্যাডক্স ফোর্ডকে নতুন চালুকৃত সাহিত্য পত্রিকা দ্য ট্রান্সআটলান্টিক রিভিউ সম্পাদনায় সহায়তা করতেন। এই পত্রিকায় পাউন্ড, জন ডস প্যাসস, জেমস জয়েস, গারট্রুড স্টেইন এবং হেমিংওয়ের আধুনিকতাবাদী লেখনী প্রকাশিত হত।[৫]

"ইন্ডিয়ান ক্যাম্প" ২৯ পৃষ্ঠা সংবলিত শিরোনামহীন পাণ্ডুলিপি হিসেবে শুরু করা হয়েছিল। হেমিংওয়ে সেটিকে সাত পৃষ্ঠায় নিয়ে আসেন এবং শুরুতে গল্পটিকে "ওয়ান নাইট লাস্ট সামার" নামকরণ করেন।[৬] ১৯২৪ সালে সাত পৃষ্ঠার "ইন্ডিয়ান ক্যাম্প" গল্পটি দ্য ট্রান্সআটলান্টিক রিভিউ পত্রিকার "কাজ চলছে" অংশে জেমস জয়েসের ফিনেগ্যান্স ওয়েক-এর পাণ্ডুলিপির একটি খণ্ডের সাথে প্রকাশিত হয়।[৭] এক বছর পরে ১৯২৫ সালের ৫ই অক্টোবর "ইন্ডিয়ান ক্যাম্প" নিউ ইয়র্কে বোনাই অ্যান্ড লিভরাইট থেকে হেমিংওয়ের প্রথম ছোটগল্প সংকলন ইন আওয়ার টাইম-এ গল্পটির সম্প্রসারিত মার্কিন সংস্করণ পুনঃপ্রকাশিত হয়। সংকলনটির ১৩৩৫টি মুদ্রিত কপি বিক্রি হয়।[৮]

"ইন্ডিয়ান ক্যাম্প" পরে ১৯৩৮ সালের অক্টোবরে হেমিংওয়ের দ্য ফিফথ কলাম অ্যান্ড দ্য ফার্স্ট ফোর্টি-নাইন স্টোরিজ সংকলনে প্রকাশিত হয়।[৯] হেমিংওয়ের মৃত্যুর পর দুটি ছোটগল্প সংকলনে "ইন্ডিয়ান ক্যাম্প" অন্তর্ভুক্ত করা হয়: প্রথমটি দ্য নিক অ্যাডামস স্টোরিজ (১৯৭২) ও দ্য কমপ্লিট শর্ট স্টোরিজ অব আর্নেস্ট হেমিংওয়ে (১৯৮৭)। দ্য নিক অ্যাডামস স্টোরিজ বইটি সম্পাদনা করেন ফিলিপ ইয়ং, এতে "ইন্ডিয়ান ক্যাম্প" বইতে হেমিংওয়ের বাদ দেওয়া অংশটুকু "থ্রি শটস" নামে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[৯][১০]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. বেকার ১৯৭২, পৃ. ১৫-১৮
  2. লিন ১৯৮৭, পৃ. ২২৯
  3. মেয়ার্স ১৯৮৫, পৃ. ২১৪
  4. অলিভার ১৯৯৯, পৃ. ১৬৮–১৬৯
  5. মেয়ার্স ১৯৮৫, পৃ. ১২৬
  6. টেটলো ১৯৯২, পৃ. ৫২
  7. বেকার ১৯৭২, পৃ. ২১–২৪
  8. বেকার ১৯৭২, পৃ. ৪১০; অলিভার ১৯৯৯, পৃ. ১৬৯
  9. বেকার ১৯৭২, পৃ. ৪১২
  10. অলিভার ১৯৯৯, পৃ. ৩৯৪

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা