ইক্সিয়াস মারিয়ান্নে

কীটপতঙ্গের প্রজাতি

ইক্সিয়াস মারিয়ান্নে (বৈজ্ঞানিক নাম: Ixias marianne(Cramer)) ‘পিয়েরিডি’ পরিবার, পাইরিনি[১] উপগোত্র এবং ইক্সিয়াস বর্গভুক্ত মাঝারি আকারের প্রজাতি।[২]

ইক্সিয়াস মারিয়ান্নে
White orange tip
ডানা খোলা অবস্থায়
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণীজগৎ
পর্ব: সন্ধিপদী
শ্রেণী: পতঙ্গ
বর্গ: লেপিডোপ্টেরা
পরিবার: Pieridae
গণ: Ixias
প্রজাতি: I. marianne
দ্বিপদী নাম
Ixias marianne
(Cramer, 1779)

আকার সম্পাদনা

ইক্সিয়াস মারিয়ান্নে এর প্রসারিত অবস্থায় ডানার আকার ৫০-৫৫মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়।[৩]

উপপ্রজাতি সম্পাদনা

এই প্রজাতির কোনো উপপ্রজাতি ভারতে নেই।[৪]

বিস্তার সম্পাদনা

ভারত (শুষ্ক অঞ্চল ছাড়া প্রায় সর্বত্র), নেপাল, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা এর বিভিন্ন অঞ্চলে এদের দেখা যায়।[১]

বর্ণনা সম্পাদনা

প্রজাপতির দেহাংশের পরিচয় বিশদ জানার জন্য প্রজাপতির দেহ এবং ডানার অংশের নির্দেশিকা দেখুন:-

আর্দ্র ঋতুরূপ সম্পাদনা

পুরুষ সম্পাদনা

উপরিতল: উভয় ডানার উপরিতল ফট্‌ফটে সাদা। সামনের ডানার অ্যাপেক্স (শীর্ষভাগ) টার্মেন, টর্নাস চওড়াভাবে এবং কোস্টার এক-তৃতীয়াংশ সরুভাবে কালো। উজ্জ্বল কমলা বর্ণের একটি চওড়া এবং বৃহদাকারে পটি (patch) কোস্টার সামান্য নীচ থেকে টর্নাসের উপর পর্যন্ত এবং বাইরের প্বার্শে অ্যাপেক্স এবং টার্মেন এর দিকে বিস্তৃত। উক্ত কমলা পটিটির উপরিভাগে এবং মধ্যভাগে খুব চওড়া এবং নিম্নভাগে ক্রমশ সরু হয়ে কৌনিক অবস্থানে শেষ হয়েছে এবং সরু কালো শিরা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে খন্ডিত। কমলা পটির ভিতরের প্বার্শ কোস্টাল শিরার নিচ থেকে ডরসামের অগ্রভাগ অধিক বিস্তৃত মাঝারি মাপের চওড়া কালো দাগ দ্বারা সীমায়িত (Bordered)। পিছনের ডানায় টার্মেন চওড়া ভাবে কালো। উভয় ডানার গোড়ার অংশ অথবা বেস ও সেল কালো আঁশে (Scale) ছাওয়া।[৫]

নিম্নতল: ডানার নিম্নতল উজ্জ্বল সালফার রঙা হলুদ যা ইক্সিয়াস বর্গভুক্ত অন্যান্য প্রজাতির অনুরূপ এবং লালচে বাদামী ছোট, তীর্যক দাগ এবং বিন্দু দ্বারা আবৃত। সামনের ডানায় উপরিতলের চওড়া কমলা পটি সচ্ছতার কারনে নিম্নতলে আবছাভাবে দৃশ্যমান। সেল এর নিচে চওড়া ত্রিকোনাকৃতি একটি সাদা অংশ এবং এক অথবা একাধিক বড় এবং সুস্পষ্ট ডিসকোসেলুলার ছোপ দেখা যায়। উক্ত ডিসকোসেলুলার ছোপ কালো এবং মধ্যভাগ সাদা। উভয় ডানায় লালচে-বাদামী, কম বেশি স্পষ্ট এবং বিভিন্ন আকার আকৃতি বিশিষ্ট ডিসকাল ছোপের তীর্যক সারি বর্তমান-অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছোপগুলির কেন্দ্রভাগ সাদা। সামনের ডানা অপেক্ষা পিছনের ডানার ডিসকাল ছোপগুলি আকারে বড়। ইক্সিয়াস বর্গভুক্ত অন্যান্য প্রজাতিতে ডানার নিম্নতলে এই জাতীয় ছোপ ছোখে পড়ে শুষ্ক ঋতু রুপে। পিছনের ডানায় সেল এর বর্হিভাগে সাদা কেন্দ্রযুক্ত ছোট লালচে বাদামী ছোপ দৃশ্যমান। সামনের ডানায় টর্নাস এর উপরিস্থ পটিটি সুস্পষ্ট ভাবে প্রতীয়মান এবং কিছু কিছু নমুনাতে উক্ত পটি খুব বড় আকারের।[৬]

শুঙ্গ লালচে-বাদামী বর্ণের। মাথা ও বক্ষদেশ অগ্রভাগে লালচে বাদামী লোমে ঢাকা। বক্ষদেশের উপরিভাগ ধূসর এবং সাদা রোঁয়ায় আবৃত। উদরের উপরিতল কালো। মাথা, বক্ষ এবং উদর এর নিম্নতল সাদা বর্ণের।[৬]

স্ত্রী সম্পাদনা

স্ত্রী প্রকারে সামনের ডানার উপরিতলে অবস্থিত কমলা পটিটি পুরুষ অপেক্ষা কম চওড়া এবং নিচের দিকে কম বিস্তৃত। ২ থেকে ৫ নং শিরামধ্যে কমলা পটিতে ৪টি কালো ছোট ছোপের সারি বর্তমান। কমলা পটির পার্থক্য ব্যতীত উভয় ডানার উপরিতল পুরুষেরই অনুরূপ। ডানার নিম্নতলও একইরকম, শুদ্গু স্ত্রী প্রকারে দাগ-ছোপগুলি সামান্য বেশি বড়। শুঙ্গ, মাথা, বক্ষদেশ এবং উদর পুরুষেরই অনুরূপ।[৬]

শুষ্ক ঋতুরূপ সম্পাদনা

স্ত্রী-পুরুষ উভয় প্রকারেই শুষ্ক ঋতুরূপ এবং আর্দ্র ঋতুরূপ পার্থক্য খুবই কম। ডানার নিম্নতলের দাগছোপগুলি শুষ্ক ঋতুরূপ্র বেশি দেখা যায় এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে দাগ-ছোপগুলি অনেক অনেক বেশি স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।[৬]

আচরণ সম্পাদনা

নিয়মিত ভাবে দেখতে পাওয়া এই প্রজাতির উড়ান দ্রুত এবং ভূমির কাছাকাছি নিচু দিয়ে ওড়ে। এদের ওড়া দেখে মনে হয় সর্বদাই যেন তাড়াহুড়ো এবং ব্যস্ততার মধ্যে রয়েছে। পুরুষ প্রকার খুব দ্রুতবেগে মাটির ১-২ ফুট উপর দিয়ে ওড়ে এবং মাঝেমাধ্যেই ওড়া বন্ধ করে ফুল অথবা ঝোপঝাড়ে গিয়ে বসে। স্ত্রী প্রকারকে পুরুষ অপেক্ষা খুব কমই দেখা যায়; কদাচিৎ এদের দর্শন মেলে যখন এরা নিচু ঝোপঝাড় এবং গাছপালার মধ্যে ডিম পাড়ার উপযুক্ত পরিবেশের খোঁজে ব্যস্ত থাকে। পাতায়, গাছের সরু ডালে, পাথরে এবং মাটিতে বসে ডানা মেলা ও বন্ধ উভয় অবস্থানেই এদের রোদ পোহাতে দেখা যায় এবং ভিজে মাটি, পাথর অথবা মাটির ভিজে ছোপে বসে মাড-পাডল করে। সূর্যালোক প্রেমী এই প্রজাতি সমতলভূমী, নিচু উচ্চতাযুক্ত জঙ্গলের ফাঁকা জায়গা, পাহাড়ের পাদদেশে ঝোপঝাড়যুক্ত অঞ্চল, সবরকম পরিবেশেই বিচরন করে। পাহাড়ী জঙ্গলের ২০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত এদের দেখা পাওয়া যায়।[৭] তবে তাঁর অধিক উচ্চতায় এদের বিচরন চোখে পড়তেও পারে। উইন্টার ব্লাইদ লিখেছেন, সিমলাতে এবং নীলগিরি পর্বতে ৬৮০০ ফুট উচ্চতায় তিনি এই প্রজাতির দেখা পেয়েছিলেন, যদিও এত উচ্চতায় এদের দর্শনলাভ খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা।[৩] মিশ্র পর্নমোচী অরণ্য এবং কাঁটা বন এবং সমতল এদের প্রিয় বাসভূমি। বিশেষত বর্ষাকাল এবং বর্ষার ঠিক পরবর্তী সময়ে এদের বিচরন বেশি চোখে পড়ে।[২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Varshney, R.K.; Smetacek, Peter (২০১৫)। A Synoptic Catalogue of the Butterflies of India। New Delhi: Butterfly Research Centre, Bhimtal & Indinov Publishing, New Delhi। পৃষ্ঠা 75। আইএসবিএন 978-81-929826-4-9ডিওআই:10.13140/RG.2.1.3966.2164 
  2. Savela, Markku। "Ixias marianne (Cramer, [1779])"Lepidoptera and Some Other Life Forms। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২, ২০১৮ 
  3. Wynter-Blyth, M.A. (1957) Butterflies of the Indian Region, pg .৪৩৬.
  4. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০২০ 
  5. Swinhoe, Charles (১৯০৫–১৯১০)। Lepidoptera Indica. Vol. VII। London: Lovell Reeve and Co.। পৃষ্ঠা 115–117। 
  6. Bingham, C.T. (1907) The Fauna of British India, Including Ceylon and Burma, pg.196–197.
  7. Kunte, Krushnamegh (২০১৩)। Butterflies of The Garo Hills। Dehradun: Samrakshan Trust, Titli Trust and Indian Foundation of Butterflies। পৃষ্ঠা ১৬২। 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা