আসাম চা ভারতের আসামে উৎপাদিত এক প্ৰকারের লাল চা। আসামের চা বিশেষকে Camellia sinensis var. assamica (Masters) নামের এক প্রকার চা গাছ থেকে তৈরী করা হয়।[১][২] এই চা, সমুদ্ৰ পৃষ্ঠের অধিক উচ্চতায় বৃদ্ধি হয়, এর গঠন, স্ফূর্তিদায়ক, সুগন্ধ, এবং অতি উজ্জ্বল রঙ্গের জন্য পরিচিত । আসাম চা, বা অসম নাম সংযোজিত চা, সাধারণত "গরম পানীয়" হিসেবে বিক্ৰী করা হয়। উদাহরণ স্বরুপ, আইরিশ ব্রেকফাস্ট টি, নামের মনোমুগ্ধকর এবং শক্তিশালী পানীয় চা’তে, ক্ষুদ্ৰ-আকৃতির অসম চায়ের পাতা থাকে।[৩] বাংলাদেশ এবং মায়ানমার সীমান্তে, ব্ৰহ্মপুত্ৰের দুধারে অবস্থিত, অসম হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যে সৰ্বাধিক চা-উৎপাদনকারী অঞ্চল। ভারতের এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের হার অনেক বেশি, মৌসুমী জলবায়ুতে দৈনিক সৰ্বাধিক বৃষ্টিপাত ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি (২৫০-৩০০ মিমি) পৰ্যন্ত হতে দেখা যায়। দিনের বেলায় প্ৰায় ১০৩ ফারেনহাইট (৪০°সে) পর্যন্ত উষ্ণতা থাকে, বিরল জলীয় বাষ্প এবং উত্তাপ উপযুক্ত পরিবেশের সৃষ্টি করে। এই বিশেষ জলবায়ুই আসাম চা কে প্ৰসিদ্ধ মনোমুগ্ধকর স্বাদ এবং বৈশিষ্ট প্ৰদান করে।

আসাম চা
ধরনকালো

উৎপত্তিস্থলআসাম, ভারত

সংক্ষিপ্ত বর্ণনাউজ্জ্বল বর্ণের সতেজ ও সহজে দ্রবণীয় চা

যদিও আসামে সাধারণত "রং চা" উৎপাদন করা হয়,তবে কিছু পরিমাণ "সবুজ চা",[৪] এবং নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের "সাদা চা" ও উৎপাদন করা হয়।[৫]

ঐতিহাসিকভাবে, অসম দক্ষিণ চীনের পড়েই দ্বিতীয় সৰ্বাধিক ব্যবসায়িক চা উৎপাদনকারী অঞ্চল ছিল। সমগ্ৰ বিশ্বের মধ্যেই কেবল অসম এবং দক্ষিণ চীনে নিজস্ব প্ৰজাতির চা গাছ পাওয়া যায়।

আবিষ্কার সম্পাদনা

 
১৮৫০ সালের চিত্রটিতে আসাম চা উৎপাদনের বিভিন্ন স্তর দেখানো হয়েছে।

আসাম চা রবাৰ্ট ব্ৰুচ, নামের একজন স্কটিশ ভ্রমণকারী ১৮২৩ সালে আকস্মিকভাবে "আবিষ্কার" করেছিলেন বলে মনে করা হয়। আসামের হাবি-বাগানে ঘুরা ফেরার সময় তিনি এই গাছ "বন্য"অবস্থায় বেড়ে উঠতে দেখতে পান।

মণিরাম দেওয়ান তাকে একজন স্থানীয় চিংফৌ প্রধান বিছা গামের ঘরে নিয়ে যান।[৬] সেখানে তিনি স্থানীয় চিংফৌ লোকদেরকে এই গাছের পাতা থেকে প্ৰস্তুত করা পানীয় গ্ৰহণ করে দেখান এবং তিনি বিছা গামের থেকে সেই গাছের পাতা এবং বীজ বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষণের জন্যে সংগ্ৰহ করে আনেন। এর কিছু দিন পরেই তার মৃত্যু হয়, তিনি এই গাছের প্ৰকৃত শ্ৰেণীবিভাজন জানতে সক্ষম হননি। ১৮৩০ সালে তার ভাই চাৰ্লস আসাম চায়ের পাতা কলকাতা বোটানিক্যাল গার্ডেনে সঠিক পরীক্ষণের জন্যে প্ৰেরণ করেন। অবশেষে সেখানে এই উদ্ভিদকে চা গাছ, বা Camellia sinensis এর একটা প্ৰজাতি বলে সনাক্তকরণ করা হয়, যেটা চীনা প্ৰজাতি Camellia sinensis var. sinensis এর সাথে এক নয়।

ভিন্ন মান সময় সম্পাদনা

আসামের চা বাগানে ভারতএবং শ্রীলঙ্কাতে ব্যবহার করা ভারতীয় মান সময় (IST) অনুসরণ করা হয় না। আসামের চা বাগানের স্থানীয় সময়, যাকে "চা বাগান সময়" বা "বাগানটাইম" বলা হয়, ভারতীয় মান সময় থেকে একঘণ্টা এগিয়ে।[৭] দেশের এই অঞ্চলে আগে সূৰ্যোদয় হওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে, ব্রিটিশ শাসনামলে এই পদ্ধতিটির প্ৰচলন করা হয়েছিল।

এই পদ্ধতিটিকে একটি সফল পদ্ধতি বলা যায়, কারণ এর জন্যেই চা বাগানের সকল কৰ্মীর দিনের মধ্যে অন্ধকার হওয়ার আগেই নিজের কাজ-কর্ম সেরে ফেলতে পারে এবং যেটা বাগানের উৎপাদন বৃদ্ধি করে। চা বাগানের কৰ্মীদের কাজ করার সময় পৌনে ৯ টা (ভা. মা. স. পৌনে ৮ টা) থেকে সন্ধ্যা ৫ টা (ভা. মা. স. সন্ধ্যা ৪ টা) পর্যন্ত, কিন্তু বাগান ভেদে এই সময়ের কিছু তারতম্য দেখা যায়।

উল্লেখ্য যে, চলচ্চিত্ৰ নিৰ্মাতা জাহ্নু বরুয়া উত্তর-পূর্বের জন্যে একটা স্বকীয় মান সময় প্ৰচলন করার জন্যে প্ৰচার চালিয়েছিলেন।[৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Tea Classification from Tea Research Association, Toklai (retrieved 2009/03/25)
  2. ITIS Standard Report Page for Camellia sinensis var. assamica retrieved on 2009-03-28.
  3. (Campbell 1995, পৃ. 203)
  4. (Pettigrew 2004, পৃ. 106)
  5. Goswami, Roopak (২০১১-১২-২৯)। "Assam CTC fetches record price"The Telegraph। ২০১৭-০৭-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০১-৩০ 
  6. Nitin Aant Gokhale (১৯৯৮)। The hot brew: the Assam tea industry's most turbulent decade, 1987-1997। Spectrum Publications। পৃষ্ঠা 4। আইএসবিএন 978-81-85319-82-7 
  7. "Assam tea gardens an hour 'ahead' of India - ZeeNews.com". Retrieved 18 July 2013.