আল-আখতাল

ইরাকি কবি

আল-আখতাল আত-তাগলিবি, উপনাম আবু মালিক,  হিজরি ১৯ সন মোতাবেক ৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনিআরবের তাগলিব গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত একজন আরবি কবি। তিনি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী, তবে বনি উমাইয়ার খলিফাদের প্রশংসায় কবিতা লিখে বিখ্যাত হয়েছিলেন। ইয়াজিদের প্ররোচনায় আনসারগণের বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গাত্বক কবিতা লিখে তিনি সমালোচিত হয়েছিলেন। তিনি তার যুগের শ্রেষ্ঠ তিন কবির একজন, অপর দুই জন হলেন জারির ও ফারাজদাক[১]

আবু মালিক গিয়াস ইবন গাওস ইবন সালত আল-আখতাল আত-তাগলিবি
জন্ম৬৪০
মৃত্যু৭১০
পেশারাজকবি
পরিচিতির কারণআরব কবি

বংশ ও প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

আল আখতালের বংশ পরিচয় হলো: গিয়াস ইবন গাওস ইবন সালত ইবন তারিকা ইবন আমর ইবন সাইজান ইবন আমর ইবন ফিদাওকাস ইবন আমর ইবন মালিক ইবন জাশাম ইবন বাকার ইবন হাবিব ইবন আমর ইবন গানাম ইবন তাগলিব ইবন ওয়াইল ইবন কাসিত ইবন হানাব ইবন আফসা ইবন দা’মি ইবন জাদিলা ইবন আসাদ ইবন রাবিআ ইবন নাজার ইবন মা’দ ইবন আদনান।[২] তিনি দামেস্কে বড় হয়েছেন এবং সেখানে উমাইয়া খলিফদের সাথে মিলিত হয়ে তাদের রাজকবি হয়েছিলেন। জারির এবং আখতালের সাথে তিনি বিদ্রূপাত্মক কবিতা লিখতেন, সে যুগের কবিতা বর্ণনাকারীরা তার কবিতা বর্ণনা করতো, কেননা তার কবিতার সাহিত্যমান ছিল খুবই চমৎকার। তিনি কখনো দামেস্কে বসবাস করতেন, আবার কখনো মেসোপটমিয়ায় বসবাস করতেন।

তিনি শৈশব থেকেই কবিতা রচনা করতেন, তাগলিব গোত্রের কবি কাব বিন জুআইল তাকে আনসারদের নিন্দা করে কবিতা রচনা করতে উৎসাহ দিয়েছিলেন, তিনি আনসারদের সমালোচনায় কবিতা লিখেন। এরপর উমাইয়াদের সাথে তার সম্পর্কের ‍উন্নয়ন ঘটে, এবং তিনি ইয়াজিদের  ঘনিষ্ট হন। এরপর খলিফা আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজকীয় কবি হিসেবে মনোনীত করেন। 

আখতাল প্রশংসা কাব্য, নিন্দা কাব্য, মদের গুণবর্ণনামূলক কবিতা প্রভৃতির জন্য বিখ্যাত।

আল আখতালের বাল্যকালেই তার মায়ের মৃত্যু হয়। তার বাবা আবু মালিক আবার বিয়ে করেন। সৎমায়ের সাথে আল আখতালের সম্পর্ক ভাল ছিলো না। তিনি তার সৎমা নিয়ে অনেক কুৎসামূলক কবিতা রচনা করেন। তিনি উচ্ছৃঙ্খল ও মদ্যপ ছিলেন।

আল আখতালের কবিতা সম্পাদনা

আল আখতালের খ্যাতনামা গ্রন্থ দীওয়ান। এই গ্রন্থে ২৬৮৮টি লাইনের মোট ১৭০ টি কবিতা আছে। কবিতাগুলো প্রধানত ৩ ধরনের।

কুৎসামূলক কবিতা সম্পাদনা

বনু উমাইয়াদের শত্রুদের বিরুদ্ধে কুৎসামূলক কবিতা লেখার জন্য আল আখতাল ছিলেন প্রসিদ্ধ। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে যারা কথা বলতো, তিনি তদের বিরুদ্ধেও কবিতা লিখতেন। তার সৎমা এবং বাবার বিরুদ্ধে এরকম অনেক কবিতা তিনি লিখেছেন।

প্রশংসামুলক কবিতা সম্পাদনা

রাজকবি হওয়ায় অধিকাংশ কবিতায় তিনি শাসকদের প্রশংসা করতেন। খলিফা আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ানের ব্যাপারে কবিতা রচনা করে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন।

শোক জাতীয় কবিতা সম্পাদনা

শোক জাতীয় কবিতার সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম। তিনি ভোগ সম্ভোগ নিয়ে বেশি কবিতা লিখতেন।

কাব্যরীতি সম্পাদনা

দীওয়ান গ্রন্থে আল আখতাল মোট ৮ টি বাহর (আরবী কবিতার নিজস্ব চলার পথ) ব্যবহার করেছেন। এগুলো হলঃ ১) বাহরুল ওয়াফির ২) বাহরুত ত্ববিল ৩) বাহরুল বাসিত ৪) বাহরুল কামিল ৫) বাহরুর রাজায ৬) বাহরুল রামালা ৭) বাহরুল মুতাকারিব ৮) বাহরুল খফীক। উক্ত গ্রন্থে তিনি ১৭ টি কাফিয়া (আরবী কবিতার বিশেষ অন্ত্যমিল) দিয়ে ১৭০টি কবিতা রচনা করেছেন।

মৃত্যু সম্পাদনা

আল-আখতাল সত্তর বছর বয়সে ৯২ হিজরি মোতাবেক ৭১০ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায় না। তবে অধিকাংশের মতে তিনি তার গোত্রের সাথে আপার মেসোপটামিয়ায় অবস্থান কালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময়ও তিনি খৃষ্টান ধর্মের অনুসারী ছিলেন। [৩]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Ayyildiz, Esat (২০১৭-১২-২৭)। "El-Ahtal'ın Emevilere Methiyeleri"Ankara Üniversitesi Dil ve Tarih-Coğrafya Fakültesi Dergisi (তুর্কি ভাষায়)। 57 (2)। আইএসএসএন 2459-0150। ২০২০-০৭-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২৩ 
  2. إكمال الكمال ج4 ص383
  3. "الموسوعة العربية: الأخطل"। ২ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৮