আলাই দরওয়াজা (বাংলা: আলাউদ্দিনের দরজা) হল ভারতের দিল্লির মেহরুলিতে অবস্থিত কুতুব মিনার ও স্থাপনাসমূহের দক্ষিণাংশে অবস্থিত একটি দরজা। এটি সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি ১৩১১ সালে নির্মাণ করেন। স্থাপনাটি লাল বেলেপাথর দিয়ে নির্মিত। বর্গাকৃতির এই স্থাপনার উপরে একটি গম্বুজ বিদ্যমান। এছাড়াও, এর প্রবেশমুখে খিলান বিদ্যমান।

আলাই দরওয়াজা
স্থানীয় নাম
উর্দু: علاء دروازه‎‎
আলাই দরওয়াজা
অবস্থানকুতুব মিনার ও স্থাপনাসমূহ, দিল্লি, ভারত
স্থানাঙ্ক২৮°৩১′২৭″ উত্তর ৭৭°১১′০৯″ পূর্ব / ২৮.৫২৪২° উত্তর ৭৭.১৮৫৭° পূর্ব / 28.5242; 77.1857
নির্মিত১৩১১
ধরনসাংস্কৃতিক
নির্ণায়কiv
মনোনীত১৯৯৩ (সপ্তদশ অধিবেশন)
যার অংশকুতুব মিনার ও স্থাপনাসমূহ
দেশ ভারত
অঞ্চলভারত
আলাই দরওয়াজা ভারত-এ অবস্থিত
আলাই দরওয়াজা
ভারতে আলাই দরওয়াজার অবস্থান

বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্গত এই স্থাপনাটি ইন্দো ইসলামি স্থাপত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে কেননা, এটি প্রথম ভারতীয় স্থাপনা যাতে ইসলামি স্থাপত্যরীতি ও অলঙ্করণ ব্যবহৃত হয়েছে।[১][২]

পটভূমি সম্পাদনা

আলাউদ্দিন খলজি ১৩১১ সালে আলাই দরওয়াজা নির্মাণ করেন। এটি কুয়্যার-উল-ইসলাম মসজিদকে চারদিকে প্রসারিত করার পরিকল্পনার অংশ ছিল। তিনি চারটি দরজা নির্মাণের পরিকল্পনা করলেও তার মৃত্যুর পূর্বে শুধু আলাই দরওয়াজার নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছিল।[৩] এটি মসজিদটির পশ্চিম দিকের প্রবেশভাগ।[২] এটি কুতুব মিনার ও স্থাপনাসমূহের দক্ষিণাংশে অবস্থিত।[৩]

১৯৯৩ সালে আলাই দরওয়াজা ও কুতুব মিনার ও স্থাপনাসমূহের অন্যান্য স্থাপনা বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায়।[৪]

স্থাপত্যশৈলী সম্পাদনা

আলাই দরওয়াজার অভ্যন্তরভাগে একটি কক্ষ বিদ্যমান যার অভ্যন্তর ভাগের দৈর্ঘ্য ৩৪.৫ ফুট (১০.৫ মি) এবং বহির্ভাগের দৈর্ঘ্য ৫৬.৫ ফুট (১৭.২ মি)।[৩] এটি ৬০ ফুট (১৮ মি) উঁচু এবং এর দেয়াল ১১ ফুট (৩.৪ মি) পুরু।[৫]

১৩১১ সালের স্থাপনাটিতে প্রযুক্তির সতর্ক ব্যবহার করা হয়েছে কেননা, এর দেয়াল খুব পুরু ও এর গম্বুজ অগভীর যা শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট উচ্চতা বা দূরত্ব থেকে দেখা যায়। এছাড়াও, স্থাপনাটিতে লাল বেলেপাথর ও সাদা মার্বেল ব্যবহার করা হয়েছে যার পরবর্তীকালের ইন্দো-ইসলামী স্থাপত্যে দেখা গিয়েছে। স্থাপনার খিলানে হালকা অশ্বখুরাকৃতি খিলানের ছোঁয়া দেওয়া হয়েছে। এর অভ্যন্তরীণ কোণা খাঁজবিশিষ্ট না হলেও এতে প্রচলিত রীতির মত অগ্রমুখী অভিক্ষেপ বিদ্যমান যাতে সম্ভবত পদ্মকুঁড়ির আকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। জালি, পাথর দিয়ে নির্মিত খোলামুখী পর্দা এতে প্রথমবারের মত ব্যবহৃত হয়েছে যা পূর্বে মন্দিরে ব্যবহৃত হতে দেখা গিয়েছে।[৬]

গম্বুজটির উচ্চতা ৪৭ ফুট (১৪ মি)।[৩] এটি ভারতবর্ষে নির্মিত প্রথম সার্থক গম্বুজ; পূর্বে ভারতবর্ষের স্থাপনায় গম্বুজ তৈরির প্রচেষ্টা সফল হয় নি।[৩]

পুরো স্থাপনাটি লাল বেলেপাথর দিয়ে নির্মিত যার বাইরের দেয়ালে সাদা মার্বেল ব্যবহৃত হয়েছে।[৭] স্থাপনাটির দেয়ালে আরবি ক্যালিগ্রাফি ব্যবহৃত হয়েছে। স্থাপনাটির খিলান অশ্বখুরাকৃতির।[৫] এই স্থাপনার মাধ্যমে ভারতবর্ষে প্রথমবারের মত এই ধরনের খিলান ব্যবহৃত হয়েছে। স্থাপনাটির বহির্ভাগে প্রাক-তুর্কি খোদাই ও প্যাটার্ন চোখে পড়ে।[৩] স্থাপনাটির জানালায় মার্বেল জাফরি বিদ্যমান। স্থাপনাটির মেঝেতে লতাপাতার নিকশা বিদ্যমান।[৩][৮]

চিত্রসম্ভার সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Qutub Minar"www.knowindia.gov.in। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  2. "Qutb Minar"Archaeological Survey of India। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৯ 
  3. Renu Saran (২০১৪)। Monuments of India। Diamond Pocket Books Pvt Ltd। আইএসবিএন 9789351652984 
  4. "Qutb Minar and its Monuments, Delhi"। UNESCO। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৯ 
  5. Ronald Vivian Smith (২০০৫)। The Delhi that No-one Knows। Orient Blackswan। পৃষ্ঠা 4। আইএসবিএন 9788180280207 
  6. Blair, Sheila, and Bloom, Jonathan M., The Art and Architecture of Islam, 1250–1800, p. 151, 1995, Yale University Press Pelican History of Art, আইএসবিএন ০৩০০০৬৪৬৫৯
  7. Ghulam Sarwar Khan Niazi (১৯৯২)। The Life and Works of Sultan Alauddin Khalji। Atlantic Publishers & Dist। পৃষ্ঠা 144। আইএসবিএন 9788171563623 
  8. Margaret Prosser Allen (১৯৯১)। Ornament in Indian Architecture। University of Delaware Press। পৃষ্ঠা 144আইএসবিএন 9780874133998 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা