আর্থার অশি

দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার

আর্থার লেনক্স অশি (ইংরেজি: Arthur Lennox Ochse; জন্ম: ১১ অক্টোবর, ১৮৯৯ - মৃত্যু: ৫ মে, ১৯৪৯) কেপ প্রদেশের গ্রাফ-রেইনেট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা দক্ষিণ আফ্রিকান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯২৭-২৮ মৌসুম থেকে ১৯২৯ সময়কাল পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[১] ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ইস্টার্ন প্রভিন্স দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিং করতেন আর্থার অশি

আর্থার অশি
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামআর্থার লেনক্স অশি
জন্ম(১৮৯৯-১০-১১)১১ অক্টোবর ১৮৯৯
গ্রাফ-রেইনেট, কেপ প্রদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা
মৃত্যু৫ মে ১৯৪৯(1949-05-05) (বয়স ৪৯)
মিডলবার্গ, কেপ প্রদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট
ভূমিকাবোলার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১২২)
২১ জানুয়ারি ১৯২৮ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট২ জুলাই ১৯২৯ বনাম ইংল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯২১/২২–১৯৩৭/৩৮ইস্টার্ন প্রভিন্স
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৪৫
রানের সংখ্যা ১১ ৫৬৪
ব্যাটিং গড় ৩.৬৬ ১০.৪৪
১০০/৫০ –/– –/–
সর্বোচ্চ রান * ৪১
বল করেছে ৬৪৯ ৭৭২৯
উইকেট ১০ ১৪০
বোলিং গড় ৩৬.২০ ২৮.৩৩
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৪/৭৯ ৬/৩৭
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১/– ২০/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১০ মার্চ ২০১৯

ঘরোয়া ক্রিকেট সম্পাদনা

১৯২১-২২ মৌসুম থেকে ১৯২০-এর দশকের শেষদিক পর্যন্ত ইস্টার্ন প্রভিন্সের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকান প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলতেন। এ সময়ে কখনো অবিরাম, আবার কখনোবা কার্যকরী ভূমিকা রাখতেন। এরপর, ১৯৩১-৩২ ও ১৯৩৭-৩৮ মৌসুমে আরও দুইবার ঘরোয়া মৌসুমে অংশ নিয়েছিলেন।[২]

১৯২৪-২৫ মৌসুমে অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের বিপক্ষে শেষ ছয়টি উইকেট মাত্র ৬০ রান খরচায় দখল করে প্রথম সকলের নজর কাড়েন ও দলের জয়ে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন।[৩] ১৯২৭-২৮ মৌসুমে ইংরেজ দল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আসলে টেস্ট বহির্ভূত প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশের পক্ষে খেলার জন্যে তিনি মনোনীত হন। খেলায় তিনি তিন উইকেট পেয়েছিলেন।[৪] তবে, এ ধরনের ক্রীড়াশৈলীর কারণে টেস্ট দলে তার ঠাঁই হয়নি। কিন্তু, জানুয়ারির শুরুতে এমসিসি দলের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত প্রথম-শ্রেণীর খেলায় ৫/৩১ পেলে সফরকারী দলটি মাত্র ৪৯ রানে গুটিয়ে যেতে বাধ্য হয়। তাসত্ত্বেও সফরকারী দল দ্বিতীয় ইনিংসে নিজেদেরকে গুছিয়ে নেয় ও উদ্বোধনী জুটিতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ১৮৭ রান সংগ্রহ করে ১০ উইকেটের জয় তুলে নেয়।[৫]

১৯২৮-২৯ মৌসুমে ইস্টার্ন প্রভিন্সের সদস্যরূপে মাত্র একটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। কার্যত দূর্বল শক্তিমত্তার অধিকারী অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের বিপক্ষে ৪/৪০ লাভের পর ৬/৩৭ পান। এগুলোই পরবর্তীকালে তার সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনের ইনিংসে সেরা বোলিং ও খেলায় সেরা বোলিং পরিসংখ্যান হিসেবে রয়ে যায়।[৬]

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে তিনটিমাত্র টেস্ট খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ হয় তার। ২১ জানুয়ারি, ১৯২৮ তারিখে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে আর্থার অশি’র।

দক্ষিণ আফ্রিকা দল সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে পরাজিত হবার পর তৃতীয় টেস্ট খেলার জন্যে আর্থার অশিকে মনোনীত করে। কিন্তু, ডারবানের কিংসমিডে অনুষ্ঠিত ব্যাটসম্যানের উপযোগী উইকেটে বেশ রান দিয়েও কোন উইকেট লাভে ব্যর্থতার পরিচয় দেন। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে কোন বোলিংই করেননি তিনি।[৭] এ খেলার পর টেস্ট দল থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়। এরপর ১৯২৭-২৮ মৌসুমে কোন খেলায় অংশ নেননি।

ইংল্যান্ড গমন, ১৯২৯ সম্পাদনা

ঘরোয়া ক্রিকেটে অনিন্দ্য সুন্দর বোলিংশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯২৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সাথে ইংল্যান্ড গমনের সুযোগ লাভ করেন। ১৯২৯ সালের ঐ সফরে আর্থার অশি মিশ্র সফলতা পান। উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাকে এ সফরে প্রকৃত মানসম্পন্ন ফাস্ট বোলারের অভাবের কথা উল্লেখ করা হয়।[৮] আর্থার অশি সম্পর্কে বলা হয় যে তিনি প্রচণ্ড শ্রম দিয়েছেন। তবে, সামগ্রিকভাবে প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলোয় বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও ধারাবাহিতা ধরে রাখতে পারেননি। তার বোলিংই প্রায়শঃই এবড়োথেবড়ো ছিল।

এ সফরে নিয়মিত বোলারদের ক্ষেত্রে আর্থার অশি সর্বাপেক্ষা ব্যয়বহুল বোলিং করেন। প্রাপ্ত ৫২ উইকেট ৩৪.৫১ গড়ে লাভ করেছিলেন। ওভারপ্রতি তিন রানেরও অধিক দেন যা সমসাময়িককালের সাথে তুলনান্তে বেশ ব্যয়বহুল ছিল। অংশগ্রহণকৃত কোন ইনিংসেই চার উইকেটের বেশি পাননি।[৯] তাসত্ত্বেও, দুই টেস্টের ঐ সিরিজের একটি টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। দলীয় সঙ্গীদের সাথে তুলনান্তে বেশ ফারাক ছিল ও ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের হাতে বেশ নাকানি-চুবানি খায়। ৩১.৭০ গড়ে ১০টি টেস্ট উইকেট নিয়ে বোলিং গড়ে শীর্ষে আরোহণ করেন। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে চার উইকেট লাভের জন্যে তাকে ৭৯ রান খরচ করতে হয়। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ৮৮ রান খরচায় দুই উইকেট পান। ঐ ইনিংসে ইংল্যান্ড দলের মাত্র চার উইকেটের পতন ঘটেছিল।[১০] এটিই টেস্টে তার সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ছিল।

দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে উইকেটবিহীন অবস্থায় ছিলেন। তবে, তার বোলিং বেশ মিতব্যয়ী ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য ২০ ওভার বোলিং করে চার উইকেট দখল করেছিলেন। এতে কোন মেইডেন ছিল না ও ৯৯ রান খরচ করতে হয় আর্থার অশিকে।[১১] টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ইনিংসের সেঞ্চুরিকারী মরিস লেল্যান্ডমরিস টেটের কাছে বেশ নাকানিচুবানির শিকার হয়েছিল তার স্লো বোলিং। ওভার-পিচ বলগুলোকে তারা ড্রাইভ মারতে ব্যস্ত থাকেন। শর্ট বলগুলোকে থার্ড ম্যান এলাকা দিয়ে সীমানার বাইরে চলে যায়।[১২] এরপর টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েন ও আর কখনো তাকে টেস্ট আঙ্গিনায় দেখা যায়নি।

অবসর সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রত্যাবর্তনের পর আর্থার অশি ১৯২৯-৩০ মৌসুমে একটিমাত্র খেলায় অংশ নেন। এরপর ১৯৩১-৩২ ও ১৯৩৭-৩৮ মৌসুমে আরও দুই মৌসুম খেলেন। কিছুটা নিয়মিতভাবে খেলে উইকেট পেলেও যথেষ্ট রান খরচ করতে হয় তাকে।

৫ মে, ১৯৪৯ তারিখে কেপ প্রদেশের মিডলবার্গে ৫০ বছর বয়সে আর্থার অশি’র দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Arthur Ochse"। www.cricketarchive.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০১-১৬ 
  2. "First-class Matches played by Arthur Ochse"। www.cricketarchive.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৩-১৯ 
  3. "Scorecard: Eastern Province v Orange Free State"। www.cricketarchive.com। ৩১ ডিসেম্বর ১৯২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৩-১৯ 
  4. "Scorecard: South African XI v MCC"। www.cricketarchive.com। ২০ ডিসেম্বর ১৯২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৩-১৯ 
  5. "Scorecard: Eastern Province v MCC"। www.cricketarchive.com। ৭ জানুয়ারি ১৯২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৩-১৯ 
  6. "Scorecard: Eastern Province v Orange Free State"। www.cricketarchive.com। ১ জানুয়ারি ১৯২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৩-১৯ 
  7. "Scorecard: South Africa v England"। www.cricketarchive.com। ২১ জানুয়ারি ১৯২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৩-১৯ 
  8. "South Africans in England"। Wisden Cricketers' Almanack। Part II (1930 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 4। 
  9. "First-class bowling in each Season by Arthur Ochse"। www.cricketarchive.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৩-২১ 
  10. "Scorecard: England v South Africa"। www.cricketarchive.com। ১৫ জুন ১৯২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৩-২১ 
  11. "Scorecard: England v South Africa"। www.cricketarchive.com। ২৯ জুন ১৯২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৩-২১ 
  12. "Cricket: The Second Test Match"। The Times (45245)। London। ৩ জুলাই ১৯২৯। পৃষ্ঠা 7। 

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা