আমর ইবনুল আস মসজিদ

মিশরের মসজিদ

আমর ইবনুল আস মসজিদ (আরবি: جامع عمرو بن العاص) (আমর মসজিদ বলেও পরিচিত) ৬৪১-৬৪২ সালে মিশরের নতুন স্থাপিত রাজধানী ফুসতাতের কেন্দ্র হিসেবে নির্মিত হয়। এটি ছিল আফ্রিকায় স্থাপিত প্রথম মসজিদ। শতাব্দীব্যপী পুনর্গঠনের কারণে মূল মসজিদটি বর্তমানে উপস্থিত নেই। তবে বর্তমান মসজিদটি পুরনো কায়রোর গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।

আমর ইবনুল আস মসজিদের প্রবেশপথ। ছাদের উপর "আল্লাহু আকবর" লেখা।

স্থান সম্পাদনা

 
মসজিদের ভেতরের খোলা স্থান

প্রচলিত জনশ্রুতি অনুযায়ী এর স্থল একটি পাখির কারণে নির্বাচিত হয়। খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাবের আদেশে আমর ইবনুল আস মিশর বিজয় করেন। তৎকালীন রাজধানী আলেক্সান্দ্রিয়া আক্রমণের পূর্বে আমর নীল নদের পূর্ব পাশে শিবির স্থাপন করেন। একটি পাখি এসময় তার তাবুতে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে তাই সেই তাবুটি গুটিয়ে নেয়া থেকে আমর বিরত থাকেন। বিজয়ী হওয়ার পর নতুন রাজধানী গড়ার প্রয়োজনীয়তা অণুভূত হলে তিনি সেই তাবুর স্থানকেই রাজধানীর কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাই নতুন শহর ফুসতাত বা মিসর আল ফুসতাত (তাবুর শহর) নামে পরিচিত পায়। পরে মসজিদও একই স্থানে নির্মিত হয়।

 
আমর ইবনুল আস মসজিদ, ১৮৯৩, উইলবোর লাইব্রেরি অব ইজিপ্টোলজি, ব্রুকলিন মিউজিয়াম

কাঠামো সম্পাদনা

 
মসজিদের অভ্যন্তরভাগ।
 
আমর মসজিদ - ব্রুকলিন মিউজিয়াম আর্কাইভে রক্ষিত ছবি।

মসজিদের মূল কাঠামো ছিল আয়তাকার। এর দৈর্ঘ্য ২৯ মিটার ও প্রস্থ ১৭ মিটার ছিল। ছাদ ছিল নিচু ও এর নির্মাণে পাম গাছের খুটি, পাথর ও মাটির ইট ব্যবহার করা হয়। ছাদ পাম পাতা দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। মেঝেতে পাথর বিছানো থাকত। মসজিদটি আমর ইবনুল আসের সেনাবাহিনী এতে নামাজ পড়ার মত বড় ছিল। এসময় তাতে কোনো মিনার ছিল না।

৬৭৩ সালে গভর্নর মাসলামা ইবনে মুখাল্লাদ আল আনসারি মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করেন। এসময় মসজিদের চারকোণে চারটি মিনার যুক্ত করা হয় এবং মসজিদের আকার দ্বিগুণ করা হয়। ৬৯৮ সালে গভর্নর আবদুল আজিজ ইবনে মারওয়ান পুনরায় মসজিদ সম্প্রসারণ করেন। ৭১১ সালে এতে মিহরাব যুক্ত করা হয়। ৮২৭ সালে গভর্নর আবদুল্লাহ ইবনে তাহির মসজিদের আরো সম্প্রসারণ করান। এসময় তা বর্তমান আকারে পৌছায়।

৯ম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফা আল মামুন মসজিদ সম্প্রসারণ করেন। তিনি দক্ষিণ পশ্চিম অংশে কিছু অংশ যোগ করেন। এসময় মসজিদের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ১২০ মি ও ১১২ মি এ পৌছায়।

ফাতেমীয় যুগে মসজিদের পাঁচটি মিনার ছিল। চারকোণের চারটি ছাড়াও বাকি একটি মিনার ছিল মসজিদের প্রবেশপথে। তবে বর্তমানে এসব মিনার নেই। বর্তমান মিনারগুলো ১৮০০ সালে মুরাদ বে নির্মাণ করেন। এছাড়াও ফাতেমীয় খলিফা আল মুসতানসির বিল্লাহ মিহরাবে রূপার বেল্ট যুক্ত করেন। ফুসতাতে অগ্নিকান্ডের পর পুনর্নির্মাণের সময় সালাহউদ্দিন তা মিহরাব থেকে বাদ দিয়েছিলেন।

১১৬৯ সালে অগ্নিকান্ডে ফুসতাত শহর ও মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মিশরের উজির শাওয়ার ক্রুসেডারদের হাতে শহরের পতন ঠেকাতে আগুন লাগিয়েছিলেন। ক্রুসেডারদের প্রতিহত করার পর নুরউদ্দিন জেনগির সেনাবাহিনী এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। সালাহউদ্দিন ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে মসজিদ পুনর্নির্মাণ করেন।

১৪শ শতাব্দীতে বুরহানউদ্দিন ইবরাহিম আল মাহালি মসজিদের সংস্কারের জন্য অর্থ প্রদান করেন। একটি ভূমিকম্পের পর ১৩০৩ সালে আমির সালার মসজিদ সংস্কার করেন।

১৮শ শতাব্দীতে অন্যতম মামলুক নেতা মুরাদ বে কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে মসজিদ পুনর্নির্মাণ করেন। ১৮৭৫ সালে পুনরায় মসজিদ সংস্কার করা হয়। ২০শ শতাব্দীতে দ্বিতীয় আব্বাস হিলমির শাসনামলেও মসজিদ সংস্কার করা হয়। ১৯৮০ এর দশকে প্রবেশপথ পুনর্নির্মিত হয়।

মসজিদের ভেতরের প্যানারোমা দৃশ্য

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  • Behrens-Abouseif. Doris. 1989. Islamic Architecture in Cairo. Leiden: E. J. Brill.
  • Creswell, K.A.C. 1940. Early Muslim Architecture, vol. II. Oxford University Press. Reprinted by Hacker Art Books, New York, 1979.
  • Eyewitness Travel: Egypt। Dorlin Kindersley Limited, London। 2001, 2007। আইএসবিএন 978-0-7566-2875-8  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা