আবু নসর ওহীদ

বাঙালি শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ

আবু নসর ওহীদ (২১ সেপ্টেম্বর ১৮৭৮ – ৩১ মে ১৯৫৩) ছিলেন একজন অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ। তিনি আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় নিউ স্কিম মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তক হিসেবে খ্যাত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বিভাগীয় প্রধান ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি আসাম প্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

শামসুল উলামা
আবু নসর ওহীদ
আসামের শিক্ষামন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৯৩৭ – ১৯৩৮
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৮৭৮-০৯-২১)২১ সেপ্টেম্বর ১৮৭৮
সিলেট, আসাম প্রদেশ, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু৩১ মে ১৯৫৩(1953-05-31) (বয়স ৭৪)
ঢাকা, পূর্ব পাকিস্তান
পিতাকারি জাভিদ বখ্ত
প্রাক্তন শিক্ষার্থীপ্রেসিডেন্সি কলেজ
পেশাশিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ
ধর্মইসলাম

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

আবু নসর ওহীদ ১৮৭৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের আসাম প্রদেশের সিলেট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার কালারুকা গ্রামে। তাঁর পিতা কারি জাভিদ বখত ছিলেন শাহ কারামত আলী জৌনপুরীর শিষ্য।

আবু নসরের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় নিজ পরিবারেই। ১৮৯২ সালে সিলেট সরকারি হাইস্কুল থেকে তিনি এন্ট্র্যান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৮৯৫ সালে মুরারিচাঁদ কলেজ থেকে এফএ এবং ১৮৯৭ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আরবিতে বি.এ. (সম্মান) ও এম.এ. পাশ করেন। তিনি ছিলেন আরবিতে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রিধারী প্রথম বাঙালি মুসলিম।[১]

কর্মজীবন সম্পাদনা

আবু নসর শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। স্নাতক পরীক্ষা শেষে তিনি কিছুদিন সিলেট সরকারি স্কুল ও কলকাতা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। ১৯০১ সালে তিনি কটন কলেজের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। চার বছর পর, ১৯০৫ সালে তিনি ঢাকা মাদ্রাসার সুপারিনটেন্ডেন্টের দায়িত্ব পান। ১৯১৯ সালে মাদ্রাসাটি ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে রূপান্তরিত হয় এবং তিনি কলেজটির অধ্যক্ষ হন। ১৯২৭ সালে তিনি এ পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[১]

আবু নসর তার কর্মজীবনে বেশ কিছু উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। এর মধ্যে ১৯০৬ সালের মাদ্রাসা সংস্কার কমিটি, ১৯০৭ সালের আর্ল কনফারেন্স, ১৯০৯ সালের শার্ফ কমিটি, ১৯১২ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিনাথান কমিশন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ১৯৩৫ সালে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসাকে কামিল হাদিসে উন্নীতকরণেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু রিফর্ম মাদ্রাসা স্কিম তথা নিউ স্কিমের প্রবর্তনই শিক্ষা ক্ষেত্রে তার সবচেয়ে বড় অবদান বলে বিবেচিত হয়। কেননা এর ফলে আলিয়া মাদ্রাসার পাঠ্যক্রমে সাধারণ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হয় এবং মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন সম্ভব হয়। ফলে ইংরেজি শিক্ষার প্রতি মুসলিম সমাজের বিদ্বেষ প্রশমিত হতে শুরু করে।[১][২]

চল্লিশের দশকে তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন। তিনি আসামের বিধান সভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৩৭ সালে তিনি আসাম প্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হন এবং প্রায় নয় মাস এ দায়িত্ব পালন করেন।[২]

এর পাশাপাশি তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেন। এর মধ্যে বাকারাতুল আদব, মিরকাতুল আদব, সালসিল কিরয়াত, নুখাবুল উলুম, মাদারিজুল কিরয়াত প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।[২] তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯০৯ সালে ভারত সরকার তাকে শামসুল উলামা খেতাবে ভূষিত করে।[১]

মৃত্যু সম্পাদনা

আবু নসর ওহীদ ১৯৫৩ সালের ৩১ মে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।[১]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. এ.কে.এম নূরুল আলম (২০১২)। "শামসুল উলামা, আবু নসর ওহীদ"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  2. "কীর্তিমান শিক্ষাবিদ মাওলানা আবু নাসের ওয়াহেদ"সাহিত্য সওগাত। ৩০ জুলাই ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০২১ 

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

  • মোঃ আব্দুল্লাহ আল-মামুন (২০০৮)। ব্রিটিশ আমলে বাংলার মুসলিম শিক্ষা সমস্যা ও প্রসার। বাংলা একাডেমি। 
  • আবদুস সাত্তার (২০১৫)। আলিয়া মাদ্রাসার ইতিহাস। মোস্তফা হারুন কর্তৃক অনূদিত (৩য় সংস্করণ)। ইসলামিক ফাউন্ডেশন। আইএসবিএন 9840609106 
  • দেওয়ান নূরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরী (১৯৯৭)। জালালাবাদের কথা। বাংলা একাডেমি। আইএসবিএন 9840735276