আবু জাফর শামসুদ্দীন

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

আবু জাফর শামসুদ্দীন (ইংরেজি: Abu Zafar Shamsuddin, ১২ মার্চ, ১৯১১ - ২৪ আগস্ট, ১৯৮৮) ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ও প্রগতিশীল লেখক। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। উপন্যাস, ছোট গল্প ও মননশীল প্রবন্ধ লিখে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি একুশে পদক লাভ করেছেন। [২] তার রচিত পদ্মা মেঘনা যমুনা বাংলার সাহিত্যের একটি অনন্য গ্রন্থ। এছাড়াও তার রচিত বেশ কিছু গ্রন্থ ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু, মারাঠি, জাপানি ভাষায় অনুবাদ ও প্রকাশ করা হয়েছে।

আবু জাফর শামসুদ্দীন
জন্মআবু জাফর শামসুদ্দীন
(১৯১১-০৩-১২)১২ মার্চ ১৯১১
দক্ষিণবাগ, কালীগঞ্জ, গাজীপুর, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যু২৪ আগস্ট ১৯৮৮(1988-08-24) (বয়স ৭৭)
ঢাকা, বাংলাদেশ
ছদ্মনামঅল্পদর্শী
পেশাসম্পাদক, সাহিত্যিক, লেখক
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাবাংলাদেশী
শিক্ষাইন্টারমেডিয়েট
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ
ধরনউপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি[১]
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারএকুশে পদক
বাংলা একাডেমি পুরস্কার
সক্রিয় বছর১৯৩১–১৯৮৫
দাম্পত্যসঙ্গীআয়েশা আখতার খাতুন

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

আবু জাফর শামসুদ্দীন গাজীপুর জেলার দক্ষিণবাগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মোহাম্মদ আক্কাছ আলী ভুঁইয়া, দাদা নাদিরুজ্জামান ভুঁইয়া ছিলেন মওলানা কেরামত আলী জৌনপুরীর শিষ্য ও স্থানীয় প্রতিনিধি। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় গ্রামের প্রভাত পণ্ডিতের পাঠশালায়। ১৯২৪ সালে স্থানীয় একডালা মাদরাসা থেকে জুনিয়র মাদরাসা পরীক্ষায় ও ১৯২৯ সালে ঢাকা সরকারি মাদরাসা থেকে হাই মাদরাসা পরীক্ষায় পাস করেন। কিছুদিন ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সাংবাদিকতায় যোগ দেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

কর্মজীবনের শুরুতে তিনি দৈনিক সুলতানের সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৩১ সালে তিনি সরকারের সেচ বিভাগে যোগ দেন। ১৯৪২ সালে সেচ বিভাগের কাজ পরিত্যাগ করে কটকে নির্মাণাধীন বিমানঘাটি তদারকি অফিসের হেড ক্লার্ক পদে যোগ দেন। কয়েক মাস পর তিনি এ চাকরি ছেড়ে আবার সাংবাদিকতা শুরু করেন। এ সময় তিনি দৈনিক আজাদে যোগ দেন। ১৯৪৮ সালের অক্টোবরে পত্রিকাটি কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসার পর তিনি সহকারী সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৫০ সালে আজাদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হলে তিনি প্রকাশনা ব্যবসা সংস্থা কিতাবিস্তান প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫০-৫১ সালে তিনি সাপ্তাহিক ইত্তেফাকের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।[৩]

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত কাগমারীর সাংস্কৃতিক সম্মেলনের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির জন্মলগ্ন থেকেই তিনি এ দলের সঙ্গে জড়িত হন এবং কিছুদিন ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬১ সালে বাংলা একাডেমির অনুবাদ বিভাগের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯৭২ সালে তিনি এ চাকরি থেকে অবসর নেন।[৪] এরপর তিনি দৈনিক পূর্বদেশের সম্পাদকীয় বিভাগে যোগ দেন। ১৯৭৫ সালে পূর্বদেশ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি দৈনিক সংবাদে যোগ দেন। সংবাদে তিনি অল্পদর্শী ছদ্মনামে বৈহাসিকের পার্শ্বচিন্তা নামে কলাম লেখেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেন।[৫]

সাহিত্যকর্ম সম্পাদনা

উপন্যাস সম্পাদনা

গল্প গ্রন্থ সম্পাদনা

  • জীবন(১৯৪৮)
  • শেষ রাত্রির তারা(১৯৬৬)
  • রাজেন ঠাকুরের তীর্থযাত্রা(১৯৭৮)
  • ল্যাংড়ী(১৯৮৪)
  • নির্বাচিত গল্প(১৯৮৮)

প্রবন্ধ গ্রন্থ সম্পাদনা

  • চিন্তার বিবর্তন ও পূর্ব পাকিস্তানি সাহিত্য
  • সোচ্চার উচ্চারণ, সমাজ
  • সংস্কৃতি ও ইতিহাস
  • মধ্যপ্রাচ্য
  • ইসলাম ও সমকালীন রাজনীতি
  • লোকায়ত সমাজ ও বাঙালি সংস্কৃতি
  • বৈহাসিকের পার্শ্বচিন্তা
  • " একুশে ফেব্রুয়ারি "

পুরস্কার সম্পাদনা

কর্মজীবনে তিনি বহু পুরস্কার পেয়েছেন। উপন্যাসে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য একুশে পদক পান। তছাড়াও উল্লেখযোগ্য :

  • বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৮)
  • একুশে পদক (১৯৮৩)
  • সমকাল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৯)
  • শহীদ নূতনচন্দ্র সিংহ স্মৃতিপদক (১৯৮৬)
  • মুক্তধারা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬)
  • ফিলিপস পুরস্কার (১৯৮৮) (মরণোত্তর)

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "আবু জাফর শামসুদ্দীন স্মরণে আলোচনা"দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা, বাংলাদেশ। জুন ৫, ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৬ 
  2. "আবু জাফর শামসুদ্দীন এক ঐতিহাসিক যুগসন্ধির সন্তান"দৈনিক যায় যায় দিন। ঢাকা, বাংলাদেশ। জুন ১৩, ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৬ 
  3. আব্দুল্লাহ আল সিফাত (২৪ আগস্ট ২০১৪)। "আবু জাফর শামসুদ্দীন: সাহিত্যে নিবেদিত এক প্রাণ"দৈনিক মানবকণ্ঠ। ঢাকা, বাংলাদেশ। ৩০ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৬ 
  4. "আবু জাফর শামসুদ্দীন"দৈনিক সংবাদ। ঢাকা, বাংলাদেশ। ১১ মার্চ ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৬ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. ইমরান রহমান (১১ মার্চ ২০১৩)। "আবু জাফর শামসুদ্দীন"দৈনিক আমার দেশ। ঢাকা, বাংলাদেশ। ৩ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৬ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা