আবু আল আসওয়াদ আদ-দুওয়ালি

আবু আল আসওয়াদ আদ-দুওয়ালি ( আরবি: أَبُو ٱلْأَسْوَد ٱلدُّؤَلِيّ , আবু আল আসওয়াদ আদ-দুওয়ালি ; C.-16 / 603-69 / 689) এর পুরো নাম আবু আল আসওয়াদ জালিম ইবনে আমর ইবনে সুফিয়ান ইবনে জান্দাল ইবনে ইয়ামার ইবনে হিলস ইবনে নুফাথা ইবনে আদি ইবনে আদ-দিল ইবনে বকর [১] তার ডাক নাম আদ-দিলি, অথবা আল-দুওয়ালি। তিনি আলী বিন আবু তালিবের কবি সঙ্গী ও ব্যাকরণবিদ ছিলেন। ইসলামী সাম্রাজ্যের প্রসারতা বাড়তে থাকলে লক্ষ লক্ষ নও-মুসলিম কুরআন পড়তে এবং তিলাওয়াত করতে আগ্রহী হয়। তখন আরবির একটি আনুষ্ঠানিক ব্যাকরণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। আদ-দুওয়ালীকে আরবি ব্যাকরণের জনক হিসাবে সম্মান দেয়া হয়। তার ব্যাকরণ বিজ্ঞানের ফলশ্রুতিতে এবং তারই নেতৃত্বে বসরায় ব্যাকরণবিদদের প্রথম বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। বিখ্যাত বিদ্যালয়টি কুফা নগরীর বিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দীতা করতো। আল-দুওয়ালি ব্যঞ্জনবর্ণ এবং স্বরবর্ণ চিহ্ন লেখা শুরু করেন। তিনি আরবি ভাষাবিদ্যার প্রথমদিককার ব্যাকরণ (নাহু/নাহব) লেখেন। [২] তাঁর অনেক ছাত্র এবং অনুসারী ছিল। [৩]

আবু আল আসওয়াদ আদ-দুওয়ালি
أَبُو ٱلْأَسْوَد ٱلدُّؤَلِيّ
উপাধিআবুল আসওয়াস
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম১৬ হিজরি (৬০৩ খ্রিস্টাব্দ)
মৃত্যুহিজরি ৬৯ (৬৮৮/৬৮৯)
ধর্মইসলাম

অক্ষর-নির্দেশক এবং স্বর-নির্দেশক সম্পাদনা

আল-দুয়ালি ব্যঞ্জনবর্ণকে পৃথক করার জন্য নির্দিষ্ট বর্ণগুলির জন্যে গাঢ় বর্ণের বিন্দু রাখার ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেন।। [৪] :৬৬৪ [৫] :১৩১ ব্যঞ্জনাত্মক পার্থক্যকে ইজাম (বা নুক্তা ) বলা হয় । ইঙ্গিতকে তাশকিল বলা হয় । আল-দু'আলির গাঢ় বিন্দু ব্যবস্থা এই উভয়কেই নির্দেশ করেছে। পাঠকদের বিভ্রান্তি দূর করে এবং আরবী শব্দ কীভাবে পড়তে এবং লিখতে হবে তা পরিষ্কার করে দিতে সক্ষম হয়। :১৩১

কার্যকর হলেও, গাঢ় আকারের বিন্দুগুলি ছোট আকারের ফন্টগুলিতে ব্যবহার কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিলো এবং স্ক্রিপ্টগুলির সীমিত নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনওটিতে ব্যবহার করা শক্ত। এছাটা যে কোনও আকারের ফন্ট বা স্ক্রিপ্ট তৈরি ক্রা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার ছিল। সুতরাং, উমাইয়া গভর্নর আল-হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ আল-থাকাফি আল-দুসালির দু'জন শিক্ষার্থীকে একটি নতুন পদ্ধতি তৈরি ও সংকেতায়িত করার জন্য বলেছিলেন যা সহজ এবং আরও কার্যকর ছিল। আল-খলিল ইবনে আহমদ আল-ফারাহিদি ( মৃত্যু: ৭৮৬) একটি নতুন তাশকিল (ভোকালাইজেশন) ব্যবস্থা তৈরি করেছিলেন। এটি একাদশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে আরবি লিপির জন্য সর্বজনীনভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। [৫] :১৩১

আরবি সূত্রের রেফারেন্স সম্পাদনা

ইবনে আল-নাদিমের দশম শতাব্দীর গ্রন্থ ' কিতাব আল-ফিহরিস্ট' গ্রন্থে আল-বসরা্র ব্যাকরণবিদদের সম্পর্কে একটি অধ্যায়ে আল-দুওয়ালীর সম্পর্কে বেশ কয়েকটি প্রাথমিক মন্তব্যকারীর উদ্ধৃতি রয়েছে:

বেশিরভাগ বিদ্বান মনে করেন যে ব্যাকরণটি আবিষ্কার করেছিলেন আবু আল-আসওয়াদ আদ-দুয়ালি, এবং তিনি ''বিশ্বাসী''র কমান্ডার আলী ইবনে আবী তালিবের কাছ থেকে শিখেছিলেন। আবার কেউ কেউ বলে যে নছর ইবনে আসিম আল দুয়ালালি, যাকে আল- লেথি বলা হয়, ব্যাকরণ তৈরি করেছিলেন"। [৬]

ভাষা বিশেষজ্ঞ আবু উবাইদাহ'র ( মৃত্যু: ২১০ হিজরী) এ্ইক মত, এবং কথাসাহিত্যিক আল-জুবায়েদী ( মৃত্যু: ৩৯7 হিঃ) আবু আল-আসওয়াদ সম্পর্কে বলেছেন:

"তিনিই সর্বপ্রথম আরবি ভাষার (বিজ্ঞান) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এর পদ্ধতিগুলি লিখেছিলেন এবং এর বিধি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।"

আবু উবায়দাহ বলেন,

আল-দুয়ালি আলী ইবনে আবি তালিবের নিকট হতে ব্যাকরণ শিখেছিলেন, তবে তা প্রকাশ করেননি এবং যখন জিয়াদ তাকে জনপ্রিয় সাহিত্যের উন্নতির জন্য ব্যাকরণ রচনার জন্য অনুরোধ করেছিলেন, তখন তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবে যখন তিনি একজনকে কুরআনের ৯ নম্বর সূরার তিন নম্বর আয়াত "আল্লাহ মুশরিকদের ছেড়ে চলে গেলেন এবং তাঁর রসূলও" এর পরিবর্তে "আল্লাহ মুশরিক ও তাঁর রসূলকে ছাড়েন" পাঠ করতে শুনলেন তখন ত্নিনি আমিরের আদেশে সম্মত হলেন এবং উদ্দেশ্য ও বিধেয় সম্পর্কিত একটি অধ্যায় লেখেন। তিনি একজন বুদ্ধিমান ও আনুগত্যকারী লেখক চেয়েছিলেন। আবদুল আল-কায়েস গোত্রের প্রথম লেখকের কাজে সন্তুষ্ট না হলে দ্বিতীয় লেখককে প্রেরণ করা হয়। আবু আল আসওয়াদ আদ-দুওয়ালি তাকে লেখার নির্দেশ দেন। [৭]

আবু সাইদ আল-সিরাফি বর্ণনা করেন যে কীভাবে একবার দুওয়ালি নুবান্দজান থেকে আসা সাদ নামে এক পার্সির মুখোমুখি হয়েছিল [৮][৯]। সাদ ও সহযোগী পার্সিয়ানদের একটি দল ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল এবং কুদামাহ ইবনে মাআন- এর প্রট্যাগে পরিণত হয়েছিল । আল-দুওয়ালি সাদকে তার ঘোড়ার সাথে হাঁটতে লক্ষ্য করে জিজ্ঞাসা করল "ওহে সাদ, আপনি চড়েন না কেন?" সাʿদ জবাব দিলেন "আমার ঘোড়া শক্তিশালী (দালি)", যার ফলে কয়েকজন পথচারী হাসতে শুরু করেছিলেন। তিনি "খোঁড়া" (জালি) বলতে চেয়েছিলেন। অতঃপর আল-দুয়ালা তাদের ধমক দিয়ে বললেন:

"এই মাওয়ালিরা (আরব দেশে বসবাসকারী অনারব) ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে এবং আমাদের ভাই হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা তাদের কথা বলা শেখাই নি। যদি কেবল আমরা তাদের জন্য ভাষার [বিধিগুলি] রাখি! "

আল-নাদিমের আল-ফিহরিস্টের প্রথম বিবরণটি এই দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে যে আল-দুওয়ালি প্রথম ব্যাকরণবিদ ছিলেন। তিনি হাদিছা শহরে এক বই সংগ্রাহক মুহাম্মাদ ইবনে আল-হুসেনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তার কাছে আল-নাদিমের দেখা সবচেয়ে দুর্দান্ত গ্রন্থাগার ছিল। সেখানে ব্যাকরণ, শব্দতত্ত্ব এবং সাহিত্যের উপর আরবি বই এবং প্রাচীন বই ছিল। তিনি বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করেছেন এবং সংগ্রাহক তার প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার করেছিলো। আল হুসেইন কুফা নগরীর একজন প্রাচীন লেখাসংগ্রাহকের দেয়া একটি বাক্স তাকে দেখালেন । আন-নাদিম দেখতে পেলো বাক্সটি মিশর, চীন, তিহামাহ, 'অ্যাডাম' চামড়া এবং খুরসানের কাগজে লেখা বিভিন্ন পার্চমেন্ট এবং দলিলে পূর্ণ । আবু আমর ইবনুল' আলা ', আবু আমর আল-শায়বানি, আল-আসামি, ইবন আল আরাবি, সিবাওয়েহ, আল-ফাররা', এবং আল-্কিসাই সহ বিভিন্ন বিদ্বানের হাতে লেখা ব্যাকরণ ছিলো। এগুলির মধ্যে আননাদিম দেখতে পেলো যে ব্যাকরণটি আবু আল-আসওয়াদ [আল-দুওয়ালি] থেকে এসেছে। বইয়ের সংগ্রাহক মারা গেলে পাণ্ডুলিপি বাদে বাকি বিষয়বস্তুগুলি হারিয়ে যায়। [১০]

তার প্রভাব সম্পাদনা

আবু আল-আসওয়াদ কাছে যেসব বিদ্বান পড়াশোনা করেছেন তাদের মধ্যে ইয়াহিয়া ইবনে ইয়ামার, 'আনবাসাহ ইবনে মাআদান ,' আনবাসাহ আল-ফিল ('হাতির আনবসাহ); মায়মুন ইবনে আল-আকরান ছিলেন। নাসর ইবনে আসিম তাঁর সাথে পড়াশোনা করেছেন বলে বলা হয়। [১০]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. https://archive.org/stream/WafayatAl-ayantheObituariesOfEminentMenByIbnKhallikan/Vol1/page662
  2. Ibn Khallikan. Wafaayat al-'Ayaan. vol. 1 p. 663.
  3. M. Mukarram Ahmed. Encyclopaedia of Islam. p. 83.
  4. Ibn-Ḫallikan, Aḥmad Ibn-Muḥammad (১৮৪৩)। Ibn Khallikan's Biographical Dictionary, 1, Volume 4। Oriental Translation Fund of Great Britain and Ireland। 
  5. Leaman, Oliver (২০০৬)। The Qur'an: An Encyclopedia। Taylor & Francis Group: Routledge। আইএসবিএন 0-415-32639-7 
  6. B Dodge (1970) The Fihrist of al-Nadim vol.1, p77
  7. B Dodge (1970) The Fihrist of al-Nadim vol.1, p88
  8. Tabari vol.36 
  9. Strange G., Lands 
  10. B Dodge (1970) The Fihrist of al-Nadim vol.1, pp.89-90