আবদুর রহমান ইবনে আউফ

আবদুর রহমান ইবনে আউফ (আরবি: عبد الرحمن بن عوف) (জন্ম : হস্তীবর্ষের দশম বছর[১]) (মৃত্যু : ৩১ হিজরি / ৬৫২ খ্রিষ্টাব্দ[২] বয়স ৭২ বছর) ছিলেন একজন সাহাবী

আবদুর রহমান ইবনে আউফ
জর্ডানের আম্মানে আবদুর রহমান ইবনে আউফের মাজার
মুহাম্মদ (সা.) এর সাহাবী
জন্মআনুমানিক ৫৮০ সাল
মক্কা
মৃত্যুআনুমানিক ৬৫২ সাল (বয়স ৭২)
শ্রদ্ধাজ্ঞাপনইসলাম
যার দ্বারা প্রভাবিতমুহাম্মদ (সা.)
মাজারের অভ্যন্তরের দৃশ্য

নাম সম্পাদনা

ইমাম বুখারীর মতে জাহিলী যুগে আবদুর রহমান ইবন ’আউফের নাম ছিল ’আবদু ’আমর। ইবন সা’দ তাঁর ‘তাবাকাতে’ উল্লেখ করেছেন, জাহিলী যুগে তাঁর নাম ছিল ’আবদু কা’বা। ইসলাম গ্রহণের পর রাসূল সা. তাঁর নাম রাখেন ‘আবদুর রহমান’। তাঁর মাতা-পিতা উভয়ে ছিলেন ‘যুহরা’ গোত্রের লোক। মাতার নাম শিফা বিনতু ’আউফ। দাদা ও নানা উভয়ের নাম ’আউফ।

তার মূল নাম ছিল আবদু আমর ("আমরের দাস")। ইসলাম গ্রহণের পর মুহাম্মদ (সা.) তার নাম রাখেন আবদুর রহমান ("সবচেয়ে দয়াবানের দাস")।

ইসলাম গ্রহণ সম্পাদনা

আবু বকর আবদুর রহমান ইবনে আউফকে ইসলামের বিষয়ে বলেন ও মুহাম্মদ (সা.) এর সাথে সাক্ষাতের জন্য আমন্ত্রণ জানান। আবদুর রহমান ইবনে আউফ ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম ৮ জন ব্যক্তির অন্যতম।[৩]

৬১৪ সালে মক্কার প্যাগান কুরাইশরা ইসলাম গ্রহণকারীদের প্রতি শত্রুতা দেখানো শুরু করে। মুসলিম সদস্য আছে এমন গোত্রগুলো হামলার স্বীকার হয়।[৪] মুসলিম ব্যবসায়ীদের প্রতি সাধারণ হুমকি ছিল, "আমরা তোমাদের পণ্য বর্জন করব ও তোমাদের ভিক্ষায় বাধ্য করব।"[৫]

আবদুর রহমান ইবনে আউফ আবিসিনিয়ায় হিজরত করা পনেরজন মুসলিমের অন্যতম। অন্য মুসলিমরা পরে তাদের সাথে যোগ দেয়। সেখানে তারা নিরাপদে অবস্থান করতে থাকে এবং নাজাশি তাদের নিরাপত্তা প্রদান করেন।[৬] ৬১৯ সালে বা ৬২০ সালের প্রথমদিকে তারা সংবাদ পান যে মক্কার লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করেছে। মক্কায় ফিরে চল্লিশ জনের মধ্যে তিনিও একজন ছিলেন। কিন্তু মক্কার কাছাকাছি এসে তারা জানতে পারেন যে তাদের পাওয়া খবর সঠিক ছিল না। তাই তারা এক ব্যক্তির সহায়তায় শহরে প্রবেশ করেন।[৭]

মদিনায় হিজরত সম্পাদনা

৬২২ সালে আবদুর রহমান ইবনে আউফ মদিনায় হিজরতকারী মুসলিমদের দলে যোগ দেন। সেখানে নিজের ব্যবসা পুনপ্রতিষ্ঠা করার আগ পর্যন্ত তিনি সাদ ইবনুল রাবির সাথে অবস্থান করেন।[৮][৯]

বদরের যুদ্ধ সম্পাদনা

আবদুর রহমান ইবনে আউফ মুসলিমদের প্রতিপক্ষ উমাইয়া ইবনে খালাফের বন্ধু ছিলেন। মদিনায় হিজরতের পর তারা দুজন একটি চুক্তি করেন যার আওতায় আবদুর রহমান মদিনায় উমাইয়ার সম্পদ ও পরিবারকে রক্ষা করবেন এবং অন্যদিকে উমাইয়া মক্কায় আবদুর রহমানের স্থাবরঅস্থাবর রক্ষা করবে। আবদুর রহমান চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে চাইলে উমাইয়া প্রতিবাদ করে বলে, "আমি কোনো রহমানকে চিনি না" এবং ইসলাম পূর্ব নাম "আবদুল আমর" প্রস্তাব করে। আবদুর রহমান তা মেনে নেন।[১০]

৬২৪ সালে বদরের যুদ্ধে তারা পুনরায় মুখোমুখী হন।

দুমাতুল জান্দাল আক্রমণ সম্পাদনা

৬২৬ সালের আগস্টে মুহাম্মদ (সা.) আবদুর রহমান ইবনে আউফকে দুমাতুল জান্দালের কালব গোত্রের উপর অভিযান চালনার নির্দেশ দেন। তিনি কালব গোত্রকে পরাজিত করেন।[১১][১২]

খিলাফতের উত্তরাধিকারে অবদান সম্পাদনা

৬৩৪ সালে খলিফা আবু বকর মৃত্যুর আগে আবদুর রহমান ইবনে আউফ ও উসমান ইবনে আফফানকে ডেকে জানান যে তিনি উমর ইবনুল খাত্তাবকে তার উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেছেন।

৬৪৪ সালে খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব মৃত্যুর আগে পরবর্তী খলিফা নির্বাচনের জন্য ছয় সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করেন। তাদের নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে খলিফা নির্বাচন করার ভার দেওয়া হয়। এই বোর্ডে ছিলেন সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস, আবদুর রহমান ইবনে আউফ , জুবায়ের ইবনুল আওয়াম, তালহা ইবনে উবাইদিল্লাহ, আলি ইবনে আবি তালিবউসমান ইবনে আফফান। এদের মধ্যে তিনি উসমান ইবনে আফফানের ব্যাপারে মত দেন।[১৩]

মৃত্যু সম্পাদনা

ইবন সা’দের মতে, হযরত আবদুর রহমান হিঃ ৩২ সনে ৭৫ বছর বয়সে ইনতিকাল করেন। তবে ইবন হাজারের মতে, তিনি ৭২ বছর জীবন লাভ করেছিলেন। ইবন হাজার এ কথাও বলেছেন, হযরত উসমান অথবা যুবাইর ইবনুল আওয়াম তাঁর জানাযার ইমামতি করেন এবং তাঁকে মদীনার বাকী’ গোরস্থানে দাফন করা হয়। গোরস্থান পর্যন্ত তার লাশ বহনকারীদের মধ্যে প্রখ্যাত সাহাবী হযরত সা’দ ইবন আবী ওয়াক্কাসও ছিলেন। অন্যান্য মতে, আবদুর রহমান ইবনে আউফ ৩৩ হিজরি মোতাবেক ৬৫৩-৬৫৪ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমান জর্ডানের আম্মানে তাকে দাফন করা হয়।[১৪]

সুন্নি দৃষ্টিভঙ্গি সম্পাদনা

সুন্নিরা তাকে আশারায়ে মুবাশশারার একজন হিসেবে সম্মান করেন।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Al-Isabah 
  2. "Abdul-Rahman Ibn Awf (580Ad-32Hijri/652Ad) A study in his Religions, Economic and Political Role in the State of Islam During its Emergence and Formation"An-Najah Scholars (English ভাষায়)। An-Najah National University। ২০১৪। ২৫ জুন ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০১৬ 
  3. Muhammad ibn Ishaq, Sirat Rasul Allah. Translated by Guillaume, A. (1955). The Life of Muhammad, pp. 115-116. Oxford: Oxford University Press. Note that the expression "the first eight men" does not include a few female converts whose profession of faith may have been earlier.
  4. Guillaume/Ishaq 143.
  5. Guillaume/Ishaq 145.
  6. Guillaume/Ishaq 148.
  7. Guillaume/Ishaq 167-168.
  8. Guillaume/Ishaq 218.
  9. সহীহ বুখারী, ১:৩৪:২৬৫ (ইংরেজি)
  10. সহীহ বুখারী, ৩:৩৮:৪৯৮ (ইংরেজি)
  11. Guillaume/Ishaq
  12. Muhammad ibn Saad, Tabaqat vol. 8. Translated by Bewley, A. (1995). The Women of Madina, pp. 207-208. London: Ta-Ha Publishers.
  13. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৯ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০১৪ 
  14. Malhas Tours

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা