কুয়াকু অ্যানান্সির গল্পের উৎপত্তিস্থল আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিমে, ঘানাতে। ঘানার প্রচলিত ভাষা ‘আকান’ অনুসারে অ্যানান্সি শব্দের অর্থ মাকড়সা।[১] তবে প্রচলিত কথায় এই ‘অ্যানান্সি’ শব্দটির আরো বেশ কয়েকটি উচ্চারণ আছে। কোথাও কোথাও একে বলা হয় ‘অ্যানান্সে’, কোথাও বলা হয় ‘কুয়াকু আনান্সে’, আবার কেউ কেউ ‘কুয়েকু আনানসি’ও বলে থাকেন। তবে যেটাই বলুন না কেন,সবচেয়ে বেশি প্রচলিত নামের উচ্চারণ হল ‘অ্যানান্সি’।

আন্যান্সি
জ্ঞান, গল্প, চালাকি, এবং জ্ঞানের মাকড়সা ঈশ্বর
আরাধ্যআকান পুরাণ
প্রতীকমাকড়সা
জাতিগত গোষ্ঠীআকানঅসন্তেআফ্রিকান মার্কিনআফ্রো-ক্যারিবীয়

ঘানায় উদ্ভূত, এই মাকড়সার গল্পগুলি ট্রান্সআটলান্টিক ক্রীতদাস বাণিজ্যের মাধ্যমে ক্যারিবিয়ানে প্রেরণ করা হয়েছিল।[২] আনানসি তার ধূর্ততা, সৃজনশীলতা এবং বুদ্ধি ব্যবহারের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়ার এবং জয় করার ক্ষমতার জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত।[৩]

ঘানাতে অ্যানান্সির সবচেয়ে প্রচলিত যে ছবিটা চালু আছে সেখানে অ্যানান্সিকে আঁকা হয়েছে আট পা-ওয়ালা এক ঈশ্বর হিসেবেই। পশ্চিম আফ্রিকার এই মাকড়সা সদৃশ ঈশ্বরের একটা পরিবারও আছে, পরিবারের সব সদস্যই দেখতে এই অ্যানান্সির মতোই। অ্যানান্সির মায়ের নাম ‘অ্যাসাসি ইয়া’। ঘানার মানুষের কাছে এই ‘অ্যাসাসি ইয়া’ হলেন পৃথিবীর দেবী। অ্যানান্সির পরিবারে এই মা ছাড়াও আছে একজন স্ত্রী আর তিনজন সন্তান। তার স্ত্রীর নাম ‘ওকোনোরে ইয়া’ আর তিন সন্তানের নাম যথাক্রমে- ‘তিকুমা’, ‘তিকেলেনকিলেন’ আর ‘ন্যানকোনওয়া’। এর মধ্যে তিকুমা নিজের বাবাকে প্রচন্ড ভয় পায় বলে পশ্চিম আফ্রিকার পুরাণে উল্লেখ আছে।

কুয়াকু অ্যানান্সির স্বভাব বলতে গিয়ে ঘানার পুরাণে বলা হয়েছে, অ্যানান্সি ভীষণরকম ধূর্ত। নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তিনি শক্ত সব প্রতিপক্ষকেও হারিয়ে দেবার ক্ষমতা রাখেন বলে বিশ্বাস করে পশ্চিম আফ্রিকার মানুষেরা। এমনকি অ্যানান্সির বুদ্ধিমত্তাকে ঘানার মানুষেরা এতটাই পূজনীয় মনে করে যে ঘানার ‘আকান’ ভাষাতে অ্যানান্সির নামে একটা আস্ত শব্দই আছে- ‘অ্যানান্সিসিম’। ইংরেজিতে রূপান্তর করলে শব্দটার অর্থ করলে দাঁড়ায়- a story too incredible to believe.

অর্থাৎ এমন কোনো গল্প যেখানে এতটাই বুদ্ধিমত্তার নজির আছে যা বিশ্বাস করাই কষ্টকর- এমন সব ঘটনা ব্যাখ্যা করতে ‘আকান’ ভাষাতে আপনার একটা শব্দই যথেষ্ট- ‘অ্যানান্সিসিম’।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Spider popular in Caribbean folklore takes center stage"Sun Sentinel। ৮ জুন ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-১৪ 
  2. Lee, F H. Folk Tales of All Nations. New York: Tudor publ. Co, 1930. Print, p. 15
  3. Eriksen, Thomas Hylland (ডিসেম্বর ২০১৩)। "The Anansi position"। Anthropology Today29 (6): 14–17। আইএসএসএন 0268-540Xডিওআই:10.1111/1467-8322.12072  (Respond to this article at ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ আগস্ট ২০১৭ তারিখে)