আনতারাহ ইবন শাদ্দাদ

আনতারাহ ইবন শাদ্দাদ (আরবি: عنترة بن شداد العبسي, ʿআনতারাহ ইবন শাদ্দাদ আল-ʿআবসি; খ্রিঃ ৫২৫–৬০৮), যিনি ʿআনতার নামেও পরিচিত, একজন ইসলাম-পূর্ব আরব নাইট ও কবি ছিলেন, যিনি একইসাথে তার কবিতা ও দুঃসাহসিক জীবনের জন্য বিখ্যাত। তার উল্লেখযোগ্য কবিতা দিয়ে মু'আলাকাত-এর একটি অংশ রয়েছে, যেগুলো একসময় কাবার দেয়ালে বিখ্যাত সাতটি "ঝুলন্ত ওডে"-র সংকলন।

আনতারাহ ইবন শাদ্দাদ
عنترة بن شداد
ঘোড়ার পিঠে আনতারাহ
জন্ম৫২৫ খ্রিস্টাব্দ
কাসিবা আল-কাসিম অঞ্চল, প্রাচীন আরব
(বর্তমান সময়ের সৌদি আরব)
মৃত্যু৬০৮ খ্রিস্টাব্দ (বয়স ৮৩)
যুগইসলাম-পূর্ব আরব
অঞ্চলআল-জিওয়া, প্রাচীন আরব, আরব বিশ্ব
প্রধান আগ্রহ
আরবি কবিতা
ভাবশিষ্য
  • সালেহ, মুহাম্মাদ মাহদি আল-জাওয়াহিরি, আবদ আল-ওয়াহাব আল-বয়াতি, মোহাম্মদ রিধা আল-শাবিবি

জীবন সম্পাদনা

 
১৯ শতকের একটি ট্যাটুতে আনতারাহ ও আবলা।
 
আনতারাহ যেখানে আবলার সাথে দেখা করতো সে বিখ্যাত পাথরের একটি সাম্প্রতিক ছবি।

ʿআনতারাহ আরবের নাজদে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন শাদ্দাদ আল-ʿআবসি, বনু আবসের একজন সম্মানিত যোদ্ধা।[১] তার মা ছিলেন জাবিবাহ একজন ইথোপিয়ান মহিলা। [২] তার বাবা যুদ্ধের সময় তার মাকে একজন দাসী হিশেবে অপহরণ করে আনেন।[১] তিনি তাঁর গায়ের কালো রঙের জন্য "আরব কাক" (আল-আগরিবাহ আল-'আরব) নামে পরিচিত ছিলেন।[৩]ʿআনতারাহ নিজেও একজন দাস হিশেবে বড় হন। তিনি তার চাচাতবোন ʿআবলার প্রেমে পতিত হন, কিন্তু তার নিজের সামাজিক অবস্থানের জন্য বিয়ে করার আশা করতে পারেননি।[১] তার বাবার স্ত্রী শাম্মিয়াহর শত্রুতারও স্বীকার হন তিনি।[১]

তিনি তার অসাধারণ ব্যক্তিগুণ, যুদ্ধে সাহস ও কবিতায় অসাধারণত্বের জন্য সম্মান ও জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হন। অন্য একটি জাতি বনু ʿআবসকে আক্রমণের পর তিনি তার স্বাধীনতা অর্জন করেন। তার বাবা তাকে বললেন, "ʿআনতারাহ, যোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধ করো", তিনি উত্তরে বললেন, "দাসরা যুদ্ধ করতে আক্রমণ করতে জানে না, দাসরা রক্ষা করতে জানে না, তারা শুধু তাদের প্রভুদের অধীনে কাজ করতে জানে, আর ছাগলের দুধ দোহাতে জানে।"। তার পিতা তাকে উত্তরে বললেন: "তোমার জাতিকে রক্ষা করো, ও ʿআনতার, তুমি স্বাধীন"। আক্রমণকারীদের হারানো পর, তিনি তার চাচাত বোনকে বিয়ে করার অনুমতি চান। বিয়ে করার জন্য আনতারাকে পূর্ব আরব রাজ্য থেকে বিশেষ একপ্রকারের উট আনতে হতো। ʿআনতারাহ ʿআবস ও দুবিয়ানের অনেকগুলো গোষ্ঠীর যুদ্ধে অংশ করেন।

তার মৃত্যুর সময় ও ধরন নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক আছে। তাইয়ের যুদ্ধে তিনি মারা যান, অথবা বৃদ্ধ বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

ʿআনতারাহর কবিতায় যুদ্ধপ্রি মূল্যবোধ, সাহসিকতা ও নায়োকচিত আচরনে কথা, সাথে সাথে ʿআবলার জন্য তার ভালবাসার কথা বলে। তার একটি কবিতা মু'আলাকাতে যুক্ত হওয়ার পর তার কবিতা অমরত্ব অর্জন করে। যুদ্ধ, বর্ম, অস্ত্র, ঘোড়া, মরু ও সেসময়ের বিভিন্ন থিমের উপস্থিতি তার কবিতাকে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলে।

উত্তরাধিকার সম্পাদনা

 
কাঁচের উপর আনতারাহ ইবন শাদ্দাদের একটি আলেপ।

ʿআনতার ও ʿআবলার প্রেমকাহিনী আল-আসমায়ীর কাব্যিক সাগায় এসেছে, যিনি হারুনুর রশিদের একজন সভাকবি ছিলেন।[১] আরব কফিঘরের ঐতিহ্যবহারী গল্প বলিয়েরা এখনও এ কবিতাগুলো আবৃতি করেন। ইংরেজি সাহিত্যের আর্থারিয়ান রোমান্সসমূহের সাথে এর গুরুত্বের তুলনা করা হয়।[১] বৈৎলেহেমের সাতটি বিখ্যাত গোষ্ঠীর একটির নাম আনত্রেহ, যার নামকরণ করা হয়েছে ʿআনতারাহ থেকে।

রাশিয়ান সুরকরা নিকোলাইন রিমস্কি-কোরশাকোভ তার ২ নং সিম্পনি লিখেন ʿআনতারের উপকথার উপর ভিত্তি করে। ১৮৯৮ সালে ফরাসি শিল্পী এতিয়েনে দিনেত ১৩ শতকের আরবি কবিতা আনতার-এর অনুবাদ করেন, যা ʿআনতারাহকে ইউরোপিয়দের নজরে আনে।

লেবানিয় শিল্পী রফিক চরাফ আন্তার ও আবলার উপকথাকে ভিত্তি করে পেইন্টিঙের একটি ধারা নির্মান করেন।‌[৪]

কর্ম সম্পাদনা

আনতারার কবিতাগুলো উইলহেম অলওয়ার্ডটের লেখা দ্যা ডিভান্স অব দ্যা সিক্স এনশেন্ট এরাবিক পোয়েটস (লন্ডন, ১৮৭০) এ প্রকাশিত হয়; তারা পরবর্তীতে বৈরুতে (১৮৮৮) এ আলাদা করে প্রকাশিত হয়।

টিকা সম্পাদনা

  1. ইবি (১৮৭৮).
  2. ইবি (১৯১১).
  3. লুইস ১৯৯২, পৃ. ২৮।
  4. "Rafic Charaf"। মোকবেল শিল্প সংগ্রহ। ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০২০ 

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  • লুইস, বার্নার্ড (১৯৯২)। Race and Slavery in the Middle East: An Historical Enquiry। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃষ্ঠা ২৮আইএসবিএন 978-0-19-505326-5 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা