আদিপুস্তকে বন্যা আখ্যান

আদিপুস্তকে বন্যা আখ্যান বাইবেলের আদিপুস্তকে ৬ থেকে ৯ অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে।[১][২][৩][৪] মানব সংস্কৃতিতে অনেক বন্যা বিষয়ক পৌরণিক কথা প্রচলিত আছে। বর্ণনা অনুযায়ী, মানুষ যখন পাপাচারে লিপ্ত হয়ে যায়, তখন মহান ঈশ্বর পৃথিবীকে বন্যা দ্বারা প্লাবিত করে সৃষ্টিপূর্ব বিশৃঙ্খল অবস্থা আনয়ন করেন। তারপর নোয়ার জাহাজে উপবিষ্ট ক্ষুদ্র জগত থেকে পৃথিবীকে আবার বসবাস উপযোগী করেন। এভাবে সৃষ্টির প্রত্যাবর্তন চলতে থাকে।[৫] মানুষের অসৎ কর্ম ঈশ্বরকে এইা ধরনের বন্যা সৃষ্টির মাধ্যমে পৃথিবীকে ধ্বংস করতে বাধ্য করে। নোয়া, তার পরিবার ও তার অনুসারীদের এবং কিছু পশু-পাখিকে রক্ষার জন্য নোয়াকে জাহাজ বানানোর নির্দেশ প্রদান করেন। বন্যাকালীন সময়ে ঈশ্বর প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন যে তিনি এমন বন্যা আর পাঠাবেন না।[৬]

যদিও বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রুপ এই ঘটনাকে রূপক বলে মনে করেন, তবে অনেক দল ও ব্যক্তি আছে যারা মনে করেন যে উক্ত কাহিনী অক্ষরে অক্ষরে সত্য। উনিবিংশ শতাব্দী থেকে বিশেষজ্ঞ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া গেছে যে উক্ত কাহিনী অক্ষরে অক্ষরে সত্য হতে পারে না। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন অনেক গুলো বন্যা একত্রে পৌরাণিক কিংবদন্তি রূপ ধারণ করেছে।[৭][৮][৯]

জন মার্টিনের আঁকা তৈলচিত্র "The Deluge" (মহাপ্লাবন, ১৮৩৪ সাল, ইয়েলে ইউনিভার্সিটি

বন্যা আখ্যান সম্পাদনা

নেফিলিম সম্পাদনা

জেনেসিস 6:1–4 এ এই মহাপ্লাবণের কারণ বর্ণিত হয়েছে এইভাবেঃ ঈশ্বরের পুত্র মানুষের কন্যাকে বিবাহ করে এবং এক অসুর জাতির জন্ম দেয়, “শক্তিশালী মানুষ,যারা ছিলো বৃদ্ধ, তাদের অনেক প্রসিদ্ধি ছিলো”। জেনেসিসে আরো বলা হয়ঃ “ অতঃপর ঈশ্বর মানুষের অসদাচার দেখলেন, যারা একসময় পৃথিবীতে অতি মহৎ ব্যক্তি ছিলেন, এবং তাদের অন্তরের প্রতিটি কল্পনা অবিরত ভাবে অসাধু হতে থাকলো।” (জেনেসিস 6:5) তাই ইশ্বর পৃথিবীকে ধ্বংস করে পুনর্বার সৃষ্টি করতে মনস্থির করলেন।[১০]

ঈশ্বরের রায় সম্পাদনা

এই মহাপ্লাবন হয়েছিলো কারণ ঈশ্বর মানবজাতির বিচার করেন।[১১] jenesis 6:5-8 এ বলা হয়েছে, ঈশ্বর ‘মানুষ’কে বিচার করেন তার মন্দ কাজ ও পাপাচারের জন্য।জেনেসিস 6:11-22 এ আরো বলা হয়েছে, ঈশ্বর ‘সকল মাংসের’ বিচার করবেন তাদের দূর্নীতি ও অবাধ্যতার কারণে। জেনেসিসের ৬:৫-৮ নাম্বার শ্লোকে বর্ণিত বিচারকে মনে করা হয় যে তা পূর্বে লিখা হয়েছে ও দ্বিতীয়টির সাথে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।[১১] বিচারের এই উপাদান বন্যা আখ্যানকে ব্যাবিলনীয় মহাকাব্য গিলগামেশে বর্ণিত বন্যা থেকে পৃথক করে।[১১] গিলগামেশের কাহিনী অনুযায়ী বন্যার আখ্যান বর্ণিত হয়েছে শুধুমাত্র মহাকাব্যের কাহিনীর ধারাবাহিকতায় এবং প্রতীয়মান হয় যে  এটি বহু ঈশ্বরবাদীদের অহেতুক কল্পনা। এটি ইশ্বরের চূড়ান্ত বিচার ছিলো না। ব্যাবিলনীয় বন্যার আট্রাহ্যাসিস সংস্করণে বলা হয়েছে, ( যা সরাসরি বন্যা সংক্রান্ত) এটা স্পষ্ট যে এই বন্যা সরাসরি ঈশ্বর প্রদত্ত, অধিক জনসংখ্যা কমানোর জন্য ঈশ্বর এমন করেছেন। বন্যার পর নতুন মাপকাঠির প্রচলন করা হয় যার দ্বারা একই সমস্যার আবর্তন প্রতিরোধ করা যায়। [১২][১৩][১৪]

প্রস্তুতি সম্পাদনা

জেনেসিস এ, ঈশ্বর নোয়াহ কে নির্দেশ দিলেন একটি জাহাজ বানাতে, যেন জাহাজের মাধ্যমে তার পরিবার, অনুসারী ও প্রাণীদের জীবন রক্ষা করা যায়।[১৫] জাহাজটি গফার কাঠ দিয়ে তৈরী এবং এর ভেতর ও বাইরে আলকাতরার লেপন দেওয়া। এর দৈর্ঘ্য ছিলো ৩০০ হাত, প্রশস্ত ৫০ হাত এবং ৩০ হাত উঁচু। জাহাজের ছাদ দিয়ে সূর্যের আলো আশার জন্য খোলা ছিলো। জাহাজে মোট ৩টি ডেক ছিলো ও এক পাশে একটি প্রবেশদ্বার ছিলো। ঈশ্বর নোয়াহকে বললেন যে, সে (নোয়াহ) তার পুত্র,তার স্ত্রী, তার সন্তানদের স্ত্রী এবং প্রত্যেক প্রাণীর একজোড়া (নারী ও পুরুষ) করে নিয়ে জাহাজে উঠে জীবন বাঁচাতে (জেনেসিস)। বৃষ্টি শুরুর ৭ দিন পূর্বে, ঈশ্বর নোয়াহকে পরিজনবর্গের সাথে জাহাজে উঠার নির্দেশ দিলেন। বিপরীতে জেনেসিস ৬ এ বলা হয়েছে প্রত্যেক হালাল প্রাণী ও পাখির সাত জোড়া করে এবং অন্যান্য প্রাণীর দুইজোড়া করে জাহাজে তুলতে (জেনেসিস)। জাহাজে এসব প্রাণীর সংখ্যার বৈসাদৃশ্য নিয়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ রয়েছে। যেমনঃ “প্রত্যেক প্রকার প্রাণীর দুইটি করে” এর অর্থ ব্যাখ্যা করা হয় “কমপক্ষে দুইটি করে” হিসেবে। কিছু বাড়তি পশু নেওয়া হয়েছিলো ইশ্বরের নামে উৎসর্গ করার উদ্দেশ্যে (জেনেসিস) । [২]:২২

মহাপ্লাবন সম্পাদনা

 
একটি জলপাই শাখায় একটি কবুতর, Catacombs of Domitilla, রোম

রেনবো চুক্তি সম্পাদনা

 
নোয়াহর প্রশস্তি উপাসনা (অঙ্কনঃ জোসেফ এন্টন কোচ)

হিস্টোরিসিটি সম্পাদনা

আর্ক জ্যামিতি সম্পাদনা

 
এই খোদাইটি স্বর্ণ ও সার্ডোনিক্স এর ওপর অঙ্কিত, নোয়ার জাহাজের চলাফেরার পথে এক সারি পশুর ছবি আঁকা। এটি ফরাসি চিত্রকর বার্নাড স্যালোমন এর কাঠের কাজ।[১৬] যা ওয়াল্টার্স আর্ট মিউজিয়ামে রাখা আছে।

আরও দেখুন সম্পাদনা

  • Ark Encounter
  • Biblical cosmology
  • Noach (parsha)
  • Panbabylonism

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. Silverman, Jason (২০১৩)। Opening Heaven's Floodgates: The Genesis Flood Narrative, Its Context, and ReceptionGorgias Press 
  2. Levenson, Jon D. (২০০৪)। "Genesis: introduction and annotations"। Berlin, Adele; Brettler, Marc Zvi। The Jewish Study Bible। Oxford University Press। আইএসবিএন 9780195297515 
  3. Graves, Robert; Patai, Raphael (২০১৪)। Hebrew Myths: The Book of Genesis। RosettaBooks। পৃষ্ঠা PT92। আইএসবিএন 978-0795337154 
  4. Schwartz, Howard; Loebel-Fried, Caren; Ginsburg, Elliot K. (২০০৪)। Tree of Souls: The Mythology of Judaism। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 447। আইএসবিএন 978-0195358704 
  5. Bandstra 2009, পৃ. 61।
  6. Cotter 2003, পৃ. 49, 50।
  7. Young 1995, পৃ. History of the Collapse of "Flood Geology" and a Young Earth
  8. Browne 1983
  9. Ginzberg, Louis, 1909. The Legends of the Jews, vol. 1, pp. 145-169, Jewish Publication Society of America, Philadelphia. Reprinted as "Noah and the Flood in Jewish legend" in: Dundes, Alan (ed.), 1988. The Flood Myth, University of California Press, Berkeley and London, pp. 319-336.
  10. Bandstra 2009, পৃ. 59, 60।
  11. May, Herbert G. and Bruce M. Metzger. The New Oxford Annotated Bible with the Apocrypha. 1977.
  12. Dalley, Stephanie, ed. Myths from Mesopotamia: Creation, The Flood, Gilgamesh, and Others, pp. 5–8
  13. Dundes, Alan, ed. The Flood Myth, pp. 61–71
  14. Pleins, J. David, When the Great Abyss Opened: Classic and Contemporary Readings of Noah's Flood, pp. 102–103
  15. Bandstra 2009, পৃ. 62।
  16. "Cameo with Noah's Ark"The Walters Art Museum। ১৩ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 

সংস্করণ সম্পাদনা

Reading the Old Testament : an introduction to the Hebrew Bible, ২০০৯ 
Treasures old and new : essays in the theology of the Pentateuch, ২০০৪ 
The Secular Ark: Studies in the History of Biogeography, ১৯৮৩ 
Noah's Flood: The Genesis Story in Western Thought, ১৯৯৯ 
Genesis, ২০০৩ 
The Age of the Earth, ১৯৯১ 
The Biblical Flood: a case study of the Church's response to extrabiblical evidence, ১৯৯৫