আইন সমাজতত্ত্ব বা আইন সমাজবিজ্ঞান (বা আইনি সমাজবিজ্ঞান) প্রায়শই সমাজবিজ্ঞানের একটি উপশৃঙ্খলা বা আইনি অধ্যয়নের মধ্যে একটি আন্তঃশৃঙ্খলা পদ্ধতির হিসাবে বর্ণনা করা হয়। [১] কেউ কেউ সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে "প্রয়োজনীয়ভাবে" আইন হিসাবে সমাজবিজ্ঞানকে দেখেন,[২] তবে অন্যরা এটিকে আইন ও সমাজবিজ্ঞানের শাখার মধ্যে গবেষণার ক্ষেত্র হিসাবে বিবেচনা করার ঝোঁক রয়েছে।[৩] এখনও অনেকে এটিকে সমাজবিজ্ঞানের একটি উপশৃঙ্খলা বা আইনি অধ্যয়নের একটি শাখা হিসাবে বিবেচনা না করে, বরং বিস্তৃত সামাজিক বিজ্ঞানের ঐতিহ্যের মধ্যে নিজস্ব অধিকার নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্র হিসাবে বিবেচনা করে। সেই অনুযায়ী, মূলধারার যে সমাজবিজ্ঞান থেকে আলাদা ও তদনুসারে, এটি মূলধারার সমাজবিজ্ঞানের নিয়মতান্ত্রিকভাবে, তাত্ত্বিক ভিত্তি করে আইনের গবেষণামূলক অধ্যয়ন হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে। অন্যান্য দেশের ন্যায় রাজনৈতিক ক্ষমতার মাধ্যমে আইন ও সমাজ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়ে আসছে। আইন ও সমাজ সম্পর্কিত সকল প্রতিষ্ঠান প্রার্থক্য ছিল বাংলাদেশে আগাগোড়াই। মূলত পূর্বে বাংলা অঞ্চলে অপরাধমূলক আচরণের নিষ্পত্তি করাই আইন ও সমাজের মূল কাজ ছিল। এছাড়াও কিছু কিছু জায়গায় শাস্তি প্রদান করা হতো। আইন ও সমাজ কে কেন্দ্র করে গুপ্তযুগে যে প্রতিষ্ঠান চলতো তাকে অধিকরণ বলা হত। অধিকরণ পরিচালনার জন্য একজন রাজকর্মচারী ও কিছু সমবায় সংঘের সদস্য থাকতো। প্রাচীন কিছু তাম্রলিপি থেকে অধিকরণ এর বিচার কার্যাবলীর বর্ণনা পাওয়া যায়। এছাড়াও প্রাচীন জমি ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্যাদিও অধিকরণে কিছু প্রাচীন কাগজপত্র থেকে তথ্য পাওয়া যায়। গুপ্ত যুগের অধিকরণ প্রতিষ্ঠানটি শুধু বাদী-বিবাদীর মধ্যে আপোষ মীমাংসা করা ছাড়া কোন কর্তৃত্ব দেখাতো না। মধ্যযুগের প্রাথমিক পর্যায়ে গুপ্ত সাম্রাজ্য পৃথক হলে পল্লী ব্যবসায়ীদের শক্তি প্রতিপত্তি ও আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয় তাই বলা যায় মধ্যযুগের প্রাথমিক পর্যায় থেকে পল্লী অঞ্চলের মধ্যে ক্ষমতা ছড়িয়ে যায়। তারপর থেকে পল্লী অঞ্চলের নেতারা নিজেদের ক্ষমতা ব্যবহার করে সামরিক-সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন প্রশাসনিক কাঠামো নির্মাণ করে। গুপ্তযুগ পরবর্তী শাসকরা ভূমি দান ও প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে গুপ্ত পরবর্তী যুগে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত করে। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ছোট শাসকদের সাংস্কৃতিক সামরিক ও রাজনৈতিক সবরকম শক্তি কেন্দ্রের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। মুগল পূর্ব যুগের প্রত্যেক শাসক একেকজন সেনাধ্যক্ষ ছিল যারা বাংলায় দেশে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। সুলতানি এবং মোগল আমলে এভাবেই চলতো। সমাজবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক দিক বিবেচনায় বাংলার সুলতান ও মুগল শাসকদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ছিল নিরঙ্কুশ। ‘জগৎ একটি বাগান, আর রাষ্ট্র সে বাগানের মালী; সুলতানি রাজনৈতিক চিন্তাবিদ ফকরুদ্দিন রাজি এমনই বলেছেন, আর রাষ্ট্র মানেই সুলতান, যার অভিভাবক হচ্ছে আইন।’ এ ধরনের বক্তব্যে বাংলার স্থানীয় গোষ্ঠীপতিদের সঙ্গে সুলতানের রাজনৈতিক ক্ষমতা ভাগাভাগি করার বা অন্য কোনোরূপ ক্ষমতা-বণ্টনের সুযোগ তেমন নেই। মধ্যযুগের শেষ আধুনিক যুগের শুরুতে বাংলায় দুইটি উৎস বিদ্যমান ছিল স্থানীয় প্রায়শই হিন্দু নিয়ে গঠিত ও প্রাদেশিক রাজধানী মুসলিম সুলতান ও মুগল শাসক। দুই গ্রুপের মধ্যে কে কার চেয়ে বেশি আপোষ সমঝোতা করতে পারে এনিয়ে তাদের দুই দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সুলভ আচরণ ছিল।

আধুনিক যুগে আইন ও সমাজবিজ্ঞান সম্পাদনা

আধুনিক যুগের শুরুতে স্থানীয় ও প্রাদেশিক ক্ষমতাধরদের মূল কাজ ছিল প্রজাদের মধ্যে কার বিভিন্ন সমস্যা সমঝোতা মীমাংসা করা। এসব করতে তারা নিজেদের মত আইন তৈরি ও ব্যাখ্যা করতেন। এর ফলে তৎকালীন সমাজে বিভিন্ন দ্বন্দ্ব পূর্ণ বিকাশ লাভ করেছিল। তত্ত্বগতভাবে কাজীরা ছিলেন সুলতানি বা মুগল শাসকদের প্রতিনিধি। কিন্তু প্রত্যেক শহরের ইসলামী বিচারকদের এমন একটা কর্তৃত্ব ছিল যা রাষ্ট্র থেকে স্বাধীন। সুলতান বা দেওয়ানের ছিল প্রকৃত ক্ষমতা, কিন্তু কাজীর অবস্থান নির্ভরশীল এমন একটা কর্তৃত্বের ওপর যার কোনো সীমাবদ্ধ এলাকা ছিল না।  ফলে কাজীদের এক অন্যরকম বিচারিক ক্ষমতা ছিলো যাতে করে তারা মুসলিম অমুসলিম সবার প্রতি বিচার সংক্রান্ত যেকোন কাজ স্বাধীনভাবে করতেন। কাজীরা অন্যান্য শাসকের সিদ্ধান্ত ও যাচাই করতেন।

তথ্যসূত্র তালিকা সম্পাদনা

  1. various definitions of the sociology of law,see Ehrlich 1936 (orig 1912); Timasheff 1939; Pound 1943; Selznick 1965, Aubert 1969 and 1980, Black 1972, Stjernquist 1983, Hydén 1986, Tomasic 1987, Ferrari 1989, Podgorecki 1991, Cotterrell 1992, Banakar 2003 and 2011; Mathiesen 2005, Deflem 2008, Travers 2009, Nelken 2009, Scuro 2010, Banakar and Travers 2013, Banakar 2014.
  2. See Deflem 2008:3.
  3. Banakar 2003 and 2009, Banakar and Travers 2013.

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা