অ্যাক্সন (গ্রীক ἄξων অ্যাক্সন, অক্ষ থেকে), বা স্নায়ু ফাইবার বা স্নায়ুতন্তু হলো স্নায়ুকোষের একটি দীর্ঘ পাতলা প্রক্ষেপণ, যা মেরুদন্ডী প্রাণীদের মাঝে দেখা যায়। এটি নিউরন থেকে বৈদ্যুতিক উদ্দীপনা এবং ক্রিয়া বিভব দূরবর্তী কোনো স্থানে প্রেরণ করে। কিছু সংবেদনশীল নিউরন (যেমন সিউডোইউনিপোলার নিউরন) স্পর্শ এবং উষ্ণতার জন্য দায়ী থাকায় এদের অ্যাক্সনকে অভিজাত স্নায়ু তন্তু বলা হয়। এক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক উদ্দীপনা প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে কোষদেহ এবং কোষদেহ থেকে অন্য শাখার সাথে মেরুদণ্ডের কোথাও ভ্রমণ করে। অ্যাক্সনের কর্মহীনতা সাধারণত বংশ অধিকার সূত্রে প্রাপ্ত যা পেরিফেরিয়াল এবং সেন্ট্রাল নিউরন উভয়কেই প্রভাবিত করে। স্নায়ু ফাইবারকে তিন প্রকারে শ্রেণিবদ্ধ করা হয় -১. গ্রুপ A স্নায়ু তন্তু,

Axon
একটি মাল্টি পোলার নিউরনের অ্যাক্সন
শনাক্তকারী
মে-এসএইচD001369
এফএমএFMA:67308
শারীরস্থান পরিভাষা

-২.গ্রুপ B স্নায়ু তন্তু এবং

-৩.গ্রুপ C স্নায়ু তন্তু । এছাড়াও অন্য শ্রেণিবিন্যাসে কেবল সংবেদনশীল তন্তুগুলিকে টাইপ I, টাইপ II, টাইপ III এবং টাইপ IV হিসাবে সংঘবদ্ধ করা হয়।

নিউরনের কোষদেহ থেকে যে দুই ধরনের সাইটোপ্লাজমিক প্রোট্রুশন বের হয় তার মধ্যে একটি হলো অ্যাক্সন এবং অন্যটি হলো ডেনড্রাইট। অ্যাক্সনকে বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য দ্বারা ডেনড্রাইট থেকে পৃথক করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে আকৃতি (ডেনড্রাইটগুলি প্রায়শই টেপার আকৃতি হয় যখন অ্যাক্সনগুলি সাধারণত একটি ধ্রুবক ব্যাসার্ধ বজায় রাখে), দৈর্ঘ্য (ডেনড্রাইটগুলো কোষদেহের চারপাশে একটি ছোট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকে যখন অ্যাক্সনগুলো অনেক দীর্ঘ হতে পারে), এবং ফাংশন (ডেনড্রাইটগুলো সংকেত গ্রহণ করে যেখানে অ্যাক্সন সংকেত প্রেরণ করে)। কিছু ধরনের নিউরনের ক্ষেত্রে কোনও অ্যাক্সন নেই এবং তাদের ডেনড্রাইটগুলো সংকেত প্রেরণ করে। কিছু প্রজাতিতে, অ্যাক্সনগুলো অ্যাক্সন বহনকারী ডেনড্রাইট নামে পরিচিত।[১] কোন নিউরনের একটির বেশী অ্যাক্সন থাকে না; তবে অমেরুদণ্ডী প্রাণী যেমন পোকামাকড় বা জোঁক অ্যাক্সন কখনও কখনও বেশ কয়েকটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত যা একে অপরের থেকে কমবেশি স্বাধীনভাবে কাজ করে।[২]

শারীরবিদ্যা সম্পাদনা

 
একটি আদর্শ মাইলিনেটেড (মায়েলিন সিদযুক্ত) অ্যাক্সন

অ্যাক্সনগুলো একটি ঝিল্লি দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে যা অ্যাক্সোলেমা নামে পরিচিত। অ্যাক্সনের সাইটোপ্লাজমকে অ্যাক্সোপ্লাজম বলা হয়। অ্যাক্সোপ্লাজমে নিজল দানা (Nissl Bodies) অনুপস্থিত। তার ওপর একটি স্নেহপদার্থের স্তর অবস্থিত যা মায়েলিন সিদ বা মেডুলারি আবরণ নামে পরিচিত, যা তড়িতের কুপরিবাহী। তার ওপরে নিউরিলেমা নামক আচ্ছাদন থাকে, যেটি অ্যাক্সন এর সবচেয়ে বাইরের আবরণ।

মায়েলিন সিদের ভিত্তিতে নিউরোনের প্রকারভেদ:-

  • মায়েলিন সিদযুক্ত নিউরোন (Myelinated neurone)
  • মায়েলিন সিদ বিহীন নিউরোন (Non-Myelinated neurone)

একটি অ্যাক্সনের শেষ শাখাগুলোকে টেলোডেন্ড্রিয়া বলা হয়। টেলোডেনড্রিয়ার ফুলে যাওয়া প্রান্তটি অ্যাক্সন টার্মিনাল হিসাবে পরিচিত যা সাইন্যাপটিক সংযোগ গঠনকারী অন্য নিউরনের ডেনড্রন বা কোষদেহে সংযোগ দেয়। অ্যাক্সন সাধারণত অন্য নিউরনের কোষদেহের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। কিন্তু কখনও কখনও কোনো পেশী বা গ্রন্থির কোষ—সাইন্যাপস নামক জংশনেও অ্যাক্সন সংযোগ স্থাপন করে। কিছু পরিস্থিতিতে, একটি নিউরনের অ্যাক্সন একই নিউরনের ডেনড্রাইটগুলোর সাথে একটি সাইন্যাপস গঠন করতে পারে, যার ফলে অট্যাপস হতে পারে।[৩]

একটি একক অ্যাক্সন, তার সমস্ত শাখা একত্রিত করে, মস্তিষ্কের একাধিক অংশের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংযোগ স্থাপন করতে পারে এবং হাজার হাজার সাইন্যাপটিক টার্মিনাল তৈরি করতে পারে।[৪] অ্যাক্সনের একটি বান্ডিল কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে একটি স্নায়ু ট্র্যাক্ট তৈরি করে, এবং প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রে একটি ফ্যাসিকল তৈরি করে। প্লাসেন্টাল স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে মস্তিষ্কের বৃহত্তম শ্বেত পদার্থ ট্র্যাক্ট হল কর্পাস ক্যালোসাম, যা মানব মস্তিষ্কের প্রায় ২০০ মিলিয়ন অ্যাক্সন দিয়ে গঠিত।[৪]

 
একটি বিচ্ছিন্ন মানব মস্তিষ্ক। এখানে গ্রে ম্যাটার (ধূসর বস্তু) এবং হোয়াইট ম্যাটার (শ্বেত বস্তু) দেখানো হয়েছে

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Triarhou LC (২০১৪)। "Axons emanating from dendrites: phylogenetic repercussions with Cajalian hues"Frontiers in Neuroanatomy8: 133। ডিওআই:10.3389/fnana.2014.00133পিএমআইডি 25477788পিএমসি 4235383  
  2. Yau KW (ডিসেম্বর ১৯৭৬)। "Receptive fields, geometry and conduction block of sensory neurones in the central nervous system of the leech"The Journal of Physiology263 (3): 513–38। ডিওআই:10.1113/jphysiol.1976.sp011643পিএমআইডি 1018277পিএমসি 1307715  
  3. Squire, Larry (২০১৩)। Fundamental neuroscience (4th সংস্করণ)। Amsterdam: Elsevier/Academic Press। পৃষ্ঠা 61–65। আইএসবিএন 978-0-12-385-870-2 
  4. Luders E, Thompson PM, Toga AW (আগস্ট ২০১০)। "The development of the corpus callosum in the healthy human brain"The Journal of Neuroscience30 (33): 10985–90। ডিওআই:10.1523/JNEUROSCI.5122-09.2010পিএমআইডি 20720105পিএমসি 3197828  

 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

  • Histology image: 3_09 at the University of Oklahoma Health Sciences Center — "Slide 3 Spinal cord"