অসীম সময়ের টেস্ট

টেস্ট ক্রিকেট

অসীম সময়ের টেস্ট বা অনির্দিষ্ট সময়ের টেস্ট বা সময়বিহীন টেস্ট (ইংরেজি: Timeless Test) নির্দিষ্ট সময়বিহীন টেস্ট খেলাবিশেষ। কোন দলের জয় কিংবা টাই না হওয়া পর্যন্ত খেলাটি চলতে থাকে। এখানে ড্রয়ের কোনরূপ সম্ভাবনাই থাকে না। এরফলে, রক্ষণাত্মকভাবে ড্রয়ের দিকে খেলাকে নিয়ে যাওয়া একেবারেই অসম্ভব। কেননা, খেলায় নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে রাখা হয় না এবং মন্দ আবহাওয়ার কারণেও খেলায় ইতিবাচক ফলাফল আনয়ণে বাঁধার প্রাচীর গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এছাড়াও, খুব কমই কোন দলের ইনিংস ঘোষণা করার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে। সময়ের জন্য খেলায় দলের জয়ের লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টি করে না।

নিশ্চিত ফলাফল আনয়ণের জন্য এ পন্থা অবলম্বন করা হলেও কালের বিবর্তনে এ ধারণা বর্জন করা হয়। কেননা, অনিশ্চিত সময়, খেলার সময়সূচী ও বাণিজ্যিক কারণে এটি সম্ভব নয়। আধুনিক যুগে দলগুলো প্রায়শঃই কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশে-বিদেশে টেস্ট খেলায় ব্যস্ত সময়সূচীতে অংশ নিচ্ছে। ফলে, পাঁচ-দিনের সময়সীমার বাইরে এ ধরনের খেলা আয়োজন করা প্রকৃতপক্ষেই অসম্ভব ব্যাপার বটে।

ইতিহাস সম্পাদনা

১৮৭৭ সাল থেকে ১৯৩৯ সালের মধ্যে ৯৯টি অসীম সময়ের টেস্ট খেলার আয়োজন করা হয়েছিল।[১] ১৯৩৯ সালে ডারবানে সফররত ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার সিরিজের পঞ্চম টেস্ট সর্বশেষ ছিল।[২] বারোদিনের মধ্যে নয়দিন খেলার পর খেলাটি ড্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ পর্যায়ে ইংল্যান্ড দলের জাহাজে চড়ে দেশে ফেরার প্রয়োজন পড়ে।[৩] ৩ মার্চ খেলাটি শুরু হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা দল ইংল্যান্ডকে ৬৯৬ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করে। ঐ সময়ে ইংল্যান্ড দলের জাহাজ ধরার তাড়া ছিল। ১৪ মার্চ তারিখে ইংল্যান্ড দল ৬৫৪/৫ তুলে। এ সংগ্রহটি অদ্যাবধি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের চতুর্থ ইনিংসে সর্বাধিক সংগ্রহ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।[৪] এটিই দীর্ঘ সময় ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলার রেকর্ড হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। খেলার জন্যে পাঁচ-দিনের অধিক সময় লাগার সম্ভাবনা না থাকলেও বৃষ্টি ও পিচে রোলিং করার প্রয়োজন পড়ায় তিনবার খেলা বন্ধ থাকে। ব্যাটিংয়ের আদর্শ অবস্থা থাকা স্বত্ত্বেও খেলাটি পরিত্যক্ত হয়।[৫]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব-পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সবগুলো টেস্টই অসীম সময়ের ছিল।[৬] কেবলমাত্র দুইটি খেলা ড্রয়ে পরিণত হয়। উভয় খেলাই ১৮৮২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ছিল। খেলা দুটো জাহাজের সময়সূচীকে ঘিরে অসম্পূর্ণ অবস্থায় রাখতে হয়েছিল।[৭] খেলা চলাকালীন পিচ অরক্ষিত অবস্থায় থাকতো। অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়ায় পিচে বেশ জল দিতে হতো ও খেলাকালে বেশ খসখসে আকার ধারণ করতো। সচরাচর, চতুর্থ কিংবা পঞ্চম দিন ব্যাটিং অনুপযোগী হয়ে পড়তো।[৮] ১৯২৯ সালে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের পঞ্চম টেস্ট দীর্ঘ সময়ের জন্যে অনুষ্ঠিত হয়। খেলাটি আটদিন পর্যন্ত গড়ায়।[৬][৯]

১৯১২ সালের ত্রি-দেশীয় প্রতিযোগিতার নবম খেলায় ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া দল ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম অসীম সময়ের টেস্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছিল।[১০] অস্ট্রেলিয়ার বাইরে কিছু সিরিজে শেষ খেলার উপর সিরিজের ফলাফল নির্ধারণে অসীম সময়ের টেস্ট খেলা আয়োজন করা হতো। ১৯৩৮-৩৯ মৌসুমে ডারবানের পূর্বে ১৯৩০ সালে কিংস্টনে সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ডের মধ্যকার খেলাটি সাতদিনব্যাপী চলে। তবে, জাহাজের বিষয়ে খেলাটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। ১৯৩৮ সালে ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চ টেস্টের প্রথম আড়াই দিন ইংল্যান্ড ব্যাটিং করে ৯০৩/৭ তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। তবে, চতুর্থ দিনের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়া দল দুইবার ইনিংস শেষ করলে খেলাটিতে ফলাফল চলে আসে।[১১][১২][১৩]

ফেব্রুয়ারি, ১৯২৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে প্রথম অসীম সময়ের টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়। ১৯২২-২৩ মৌসুমে ইংরেজ দল দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করে। চার খেলায় কোন ফলাফল না আসায় ষষ্ঠ দিনের শুরুতে ইংল্যান্ড দল জয় তুলে নেয়। প্রথম দিন মাঠকর্মীরা নারকেলের আচ্ছাদনে তৈরি পিচে কুয়াশা বিতাড়ণে খেলা দেরিতে শুরু হয়।[১০]

বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পাদনা

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) কর্তৃপক্ষ আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের চূড়ান্ত খেলায় অসীম সময়ের টেস্ট খেলা আয়োজনের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে।[১৪] পরে অবশ্য এ চিন্তাধারাটি বাতিল হয়ে যায়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. John Lazenby, Edging Towards Darkness: The Story of the Last Timeless Test, Bloomsbury, London, 2017, p. 180.
  2. "England in South Africa Test Series – 5th Test"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  3. "Stalemate in the Timeless Test"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  4. Frindall, Bill (২০০৯)। Ask BeardersBBC Books। পৃষ্ঠা 216–217। আইএসবিএন 978-1-84607-880-4 
  5. Lazenby, pp. 99-181.
  6. Lazenby, p. 5.
  7. Lazenby, pp. 188-89.
  8. Lazenby, p. 229.
  9. "5th Test, England tour of Australia at Melbourne, Mar 8-16 1929"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৮ 
  10. Lazenby, p. 59.
  11. Lazenby, pp. 187-88.
  12. "4th Test, England tour of West Indies at Kingston, Apr 3-12 1930"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৮ 
  13. "5th Test, Australia tour of England at London, Aug 20-24 1938"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৮ 
  14. Gollapudi, Nagraj। "ICC could use 'timeless' Test for World Championship final"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৮ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা