অতীন্দ্রিয় উপলব্ধি

মনের বিশেষ ক্ষমতার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ

অতীন্দ্রিয় উপলব্ধি বলতে বোঝায় মনের বিশেষ ক্ষমতার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ। এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে শারীরিক কোনও উপায়ে তথ্য লাভ করা হয় না। পরিভাষাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন স্যার রিচার্ড বার্টন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী জে. বি. রাইন বিভিন্ন আধ্যাত্মিক ক্ষমতাকে ব্যাখ্যা করার জন্য অতীন্দ্রিয় উপলব্ধির ধারণাটিকে ব্যবহার করেন। অতীন্দ্রিয় উপলব্ধিকে অনেক সময় ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নামেও অভিহিত করা হয়। এই পরিভাষাটি সাধারণ উপায় ব্যতিরেকে বিশেষ উপায়ে তথ্য লাভকে নির্দেশ করে। যেমন- মনের দ্বারা অতীতকালের তথ্য লাভ।

জেনার কার্ড, বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে অতীন্দ্রিয় উপলব্ধি সংক্রান্ত পরীক্ষামূলক গবেষণায় ব্যবহৃত বিশেষ কার্ড।

পরামনোবিজ্ঞান হল অতীন্দ্রিয় সংক্রান্ত বিদ্যা।[১] বিজ্ঞানীরা সাধারণত অতীন্দ্রিয় উপলব্ধিকে অগ্রাহ্য করেন, কারণ এক্ষেত্রে কোন সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ অনুপস্থিত থাকে। এছাড়া পরীক্ষামূলক পদ্ধতি না থাকায় এ পদ্ধতির কোন সুস্পষ্ট নির্ভরযোগ্যতা না থাকার কারণে বিজ্ঞানীরা একে পুরোপুরি গ্রহণ করেননি।[২][৩][৪][৫][৬][৭]

ইতিহাস সম্পাদনা

১৯৩০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনার ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জে. বি. রাইন ও তাঁর স্ত্রী লুসিয়া রাইন মনস্তাত্ত্বিক গবেষণাকে পরীক্ষামূলক গবেষণায় উন্নীত করার চেষ্টা করেন। লুসিয়া রাইন মূলত স্বতঃস্ফূর্ত বিষয়গুলো নিয়ে এবং জে. বি. রাইন পরীক্ষাগারে কাজ করতে থাকেন। জে. বি. রাইন খুব সতর্কতার সাথে পরিভাষাসমূহ লক্ষ্য করেন এবং এজন্যে তিনি বাস্তব নিরীক্ষা চালান। এসময় কিছু সরল কার্ডের সেট উদ্ভাবন করা হয়। এগুলোকে বলে জেনার কার্ড।[৮] বর্তমানে এগুলোকে বলে ইএসপি কার্ড। এসব কার্ডে বৃত্ত, বর্গ, তরঙ্গাকৃতির রেখা, ক্রস এবং তারকার ন্যায় চিহ্ন রয়েছে। এরকম চিহ্নসম্বলিত পাঁচ ধরনের ২৫টি কার্ড একটি প্যাকেটে থাকে।

একটি অতীন্দ্রিয় দূরানুভূতি পরীক্ষায় প্রেরক ব্যক্তি কার্ডসমূহের একটি ধারার দিকে লক্ষ করেন, অপরদিকে গ্রাহক ব্যক্তি চিহ্নগুলি অনুমান করেন। আলোকদৃষ্টি পরীক্ষার ক্ষেত্রে, কার্ডের সেটটি গোপন করা হয় এবং গ্রাহক অনুমান করতে থাকেন। পূর্বলব্ধ জ্ঞান (প্রিকগনিশন) পরীক্ষার ক্ষেত্রে, গ্রাহকের অনুমানের পর কার্ডগুলোর ধারা নির্ধারণ করা হয়।

এসকল পরীক্ষায় কার্ডের ধারা অবশ্যই যথেচ্ছভাবে থাকতে হবে, যাতে পূর্বেই এ ব্যাপারে অবহিত না হওয়া যায়। প্রথমে কার্ডগুলো হাত দিয়ে এবং পরবর্তীতে যন্ত্রের মাধ্যমে এলোমেলো করা হয়। ইএসপি কার্ড ব্যবহারের একটি সুবিধা হল, পূর্ব-প্রত্যাশার চেয়ে উত্তরের যথার্থতা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান সহজেই প্রয়োগ করা যায়। রাইন সাধারণ লোককে পরীক্ষার কাজে ব্যবহার করেন এবং দাবি করেন, তারা প্রত্যাশার চেয়ে ভাল করেছে।

১৯৪০ সালে রাইন ও জে. জি. প্র্যাট ১৮৮২ থেকে অদ্যাবধি কার্ডভিত্তিক অনুমান সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাগুলোর একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা রচনা করেন। এর নাম এক্সট্রা-সেন্সরি পার্সেপশন আফটার সিক্সটি ইয়ার্‌স (Extra-Sensory Perception After Sixty Years) অর্থাৎ "ষাট বছর পরে অতীন্দ্রিয় উপলব্ধি"। এটি বিজ্ঞানের প্রথম অধি-বিশ্লেষণ হিসেবে স্বীকৃত।[৯] এতে রাইনের পরীক্ষার সকল প্রশ্নোত্তর সন্নিবেশিত আছে। এখানে ৫০টি পরীক্ষার কথা উল্লেখ আছে, এর মধ্যে ৩৩টিতে রাইন ছাড়াও অন্যান্য তদন্তকারীর ও ডিউক ইউনিভার্সিটি গ্রুপের অবদান রয়েছে। ৬১% স্বাধীন পরীক্ষার ফলাফল অতীন্দ্রিয় উপলব্ধির অস্তিত্বের সপক্ষে যায়।[১০] এসবের মধ্যে কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয় এবং নিউ ইয়র্কের হান্টার কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তাত্ত্বিকগণ সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন সর্বাধিক সংখ্যক বিচারকার্য সম্পাদন করেন।[১১][১২] কিছু প্রশ্নোত্তরের ব্যর্থতা রাইনকে আরও গবেষণা করতে উৎসাহিত করে।[১৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Parapsychological Association Homepage"। ২০১০-০৩-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-১০ 
  2. Gracely, Ph.D., Ed J. (১৯৯৮)। "Why Extraordinary Claims Demand Extraordinary Proof"PhACT। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৭-৩১ 
  3. Britannica Online Encyclopedia, Retrieved October 7, 2007.
  4. "Glossary of Key Words Frequently Used in Parapsychology"। Parapsychological Association। ২০১১-০১-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১২-২৪ 
  5. "Definition of extrasensory perception"। Merriam-Webster OnLine। ২০০৭-১০-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৯-০৬ 
  6. The Conscious Universe: The Scientific Truth of Psychic Phenomena by Dean I. Radin Harper Edge, আইএসবিএন ০-০৬-২৫১৫০২-০
  7. Robert Todd Carroll। "ESP (extrasensory perception)"। Skeptic's Dictionary!। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-২৩ 
  8. Vernon, David (১৯৮৯)। (ed.) Donald Laycock, David Vernon, Colin Groves, Simon Brown, সম্পাদক। Skeptical - a Handbook of Pseudoscience and the Paranormal। Canberra, Australia: Canberra Skeptics। পৃষ্ঠা 28। আইএসবিএন 0731657942 
  9. Bösch, H. (২০০৪)। Reanalyzing a meta-analysis on extra-sensory perception dating from 1940, the first comprehensive meta-analysis in the history of science। 47th Annual Convention of the Parapsychological Association।  অজানা প্যারামিটার |1= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  10. Honorton, C. (১৯৭৫)। "Error some place!"। Journal of Communication25 (25): 103–116। ডিওআই:10.1111/j.1460-2466.1975.tb00560.x 
  11. Martin, D.R., & Stribic, F.P. (১৯৩৮)। "Studies in extrasensory perception: I. An analysis of 25, 000 trials"Journal of Parapsychology2: 23–30। 
  12. Riess, B.F. (১৯৩৭)। "A case of high scores in card guessing at a distance"Journal of Parapsychology1: 260–263। 
  13. Rhine, J.B. (1966). Foreword. In Pratt, J.G., Rhine, J.B., Smith, B.M., Stuart, C.E., & Greenwood, J.A. (eds.). Extra-Sensory Perception After Sixty Years, 2nd ed. Boston, US: Humphries.

আরও পড়ুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা