'''কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান''' বা '''কোয়ান্টাম বলবিদ্যাপদার্থবিজ্ঞান''' ([[ইংরেজি ভাষা|ইংরেজি ভাষায়]]: Quantum mechanics) আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের একটি শাখা যা [[পরমাণু]] এবং অতিপারমাণবিক কণার/তরঙ্গের স্কেলে <ref>কণা ও তরঙ্গ একই বস্তু — যাকে আমরা কণা বলি তার আসলে "কণাধর্ম" ও "তরঙ্গধর্ম" দুই-ই বিদ্যমান, এবং এটা দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। এই ধারণাকে [[তরঙ্গ-কণা দ্বৈততা]] বলা হয়।</ref> [[পদার্থ|পদার্থের]] আচরণ বর্ণনা করে। কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানকে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করে বর্তমানেঅতিবৃহৎবিশাল কোন বস্তু যেমন [[তারা]] ও [[ছায়াপথ]] এবং [[ভৌত বিশ্বতত্ত্ব|বিশ্বতত্ত্বমূলক]] ঘটনা যেমন [[মহা বিস্ফোরণ]] বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যা করা যায়। পদার্থবিজ্ঞানের যেসব সংশ্রয়েক্ষেত্রে চিরায়ত [[নিউটনীয় বলবিজ্ঞান]] ব্যর্থদিয়ে হয়ব্যাখ্যা করা যায় না, সেগুলোরসেসব ক্ষেত্রে পদার্থগুলির ভৌত আচরণেরআচরণ নির্ভুলসম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণীধারণা করতেপাবার পারারজন্য জন্য সাধারণপদার্থবিজ্ঞানীরা পদার্থবিজ্ঞানী সম্প্রদায়ের মধ্যে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানেরবলবিজ্ঞান গ্রহণযোগ্যতাব্যবহার প্রতিষ্ঠিতকরে হয়েছে।থাকেন। পারমাণবিক অথবা ক্ষুদ্রতর স্কেলের সংশ্রয়ে, খুব নিম্ন অথবা খুব উচ্চ শক্তিতে, অথবা অতিশীতল তাপমাত্রায় চিরায়ত এবং কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের ভবিষ্যদ্বাণীরবিশ্লেষনের মধ্যে প্রায়শই পার্থক্য দেখা যায়। কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান [[রসায়ন]], [[আণবিক জীববিজ্ঞান]], [[ইলেকট্রনিক্স]], [[কণা পদার্থবিজ্ঞান]], [[ন্যানোপ্রযুক্তি]] এবং প্রযুক্তিবিদ্যার আধুনিক উন্নয়নের ভিত্তি, এবং বিজ্ঞানের এই শাখাগুলো বিগত পঞ্চাশ বছরে পৃথিবীকে প্রায় সম্পূর্ণভাবে রূপান্তরিত করেছে।
== ইতিহাস ==
{{মূল|কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের ইতিহাস}}
চিরায়ত বলবিজ্ঞান আমাদের চারপাশের জগতের অনেক ঘটনা নির্ভুলভাবে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। [[আইজাক নিউটন]] [[১৬৮৬]] সালে তাঁর বিখ্যাত বই ''Philosophiae Naturalis Principia Mathematica'', সংক্ষেপে ''প্রিঙ্কিপিয়াপ্রিন্সিপিয়া মাতেমাতিকাম্যাথেম্যাটিকা''-তে চিরায়ত বলবিজ্ঞানের মূলসূত্রগুলি লিপিবদ্ধ করেন। এরপর প্রায় দুইশ বছর ধরে এই সূত্রগুলিই পদার্থবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের সমস্ত ঘটনাবলির তাত্ত্বিক ব্যখ্যার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। কিন্তু ১৯শ শতকের শেষের দিকে এসে পরমাণুর ইলেক্ট্রনীয় গঠন ও আলোর ধর্মের উপর কিছু আবিষ্কার চিরায়ত বলবিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হচ্ছিল না। ১৯০৫ সালে [[আলবার্ট আইনস্টাইন]] বুঝতে পারেন যে চিরায়ত বলবিজ্ঞানের ধারণাগুলি অত্যন্ত দ্রুত গতিবেগের, অর্থাৎ আলোর গতিবেগের কাছাকাছি বেগের বস্তুর ওপর প্রয়োগ করা যায় না। তিনি এটা ব্যাখ্যা করার জন্য নির্মাণ করেন আপেক্ষিকতাভিত্তিক বলবিজ্ঞান নামের শাস্ত্র। চিরায়ত বলবিজ্ঞান নীতিগতভাবে ভ্রান্ত হলেও ধীর গতিবেগের বস্তুসমূহের জন্য এটিকে আপেক্ষিকতাভিত্তিক বলবিজ্ঞানের একটি ভাল আসন্নীকরণ হিসেবে গণ্য করা যায়। প্রায় একই সময়ে পদার্থবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে আবিষ্কার করেন যে চিরায়ত বলবিজ্ঞানের ধারণাগুলি অত্যন্ত ক্ষুদ্র বস্তুর ওপরেও প্রয়োগ করা যায় না। ১৯০০ থেকে ১৯২৭ সালের মধ্যে বেশ কিছু পদার্থবিজ্ঞানী ([[মাক্স প্লাংক]], [[নিল্স বোর]], [[আলবার্ট আইনস্টাইন]], [[ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ]], [[লুই দ্য ব্রয়ি]], [[এর্ভিন শ্র্যোডিঙার]], প্রমুখ) কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান উদ্ভাবন করেন। চিরায়ত বলবিজ্ঞান নীতিগতভাবে ভ্রান্ত হলেও বড় আকারের বস্তুসমূহের জন্য এটিকে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের একটি ভাল আসন্নীকরণ হিসেবে গণ্য করা যায়।