আমানুল হক: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Rabbanituhin (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
Rabbanituhin-এর সম্পাদিত সংস্করণ হতে WikitanvirBot I-এর সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণে ফেরত
১৫ নং লাইন:
== প্রাথমিক জীবন ==
আমানুল হক [[সিরাজগঞ্জ|সিরাজগঞ্জের]] ছোট্ট গ্রাম শাহজাদপুরে ১৯২৫ সালে তার জন্ম গ্রহণ করেন।তাঁর বাবার অনুপ্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই তিনি আঁকাআঁকি করতেন। বড় হয়ে কিছুদিন আর্ট কলেজে লেখাপড়াও করেছেন তিনি। পরে তিনি চাকরি পান [[ঢাকা মেডিকেল কলেজ|ঢাকা মেডিকেল কলেজে]] আর্টিস্ট কাম ফটোগ্রাফার পদে। মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তিনি এঁকে দিতেন মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের জন্য। একটা ভাঙ্গা বক্স ক্যামেরা নিয়ে চারিদিকে ঘুরে বেড়াতেন এবং ছবি তুলতেন। তিনি [[১৯৫২]] সালে জড়িয়ে পড়েন [[ভাষা আন্দোলন|ভাষা আন্দোলনের]] সঙ্গে।<ref name="amanul haque">{{cite web|url=http://www.sonarbangladesh.com/newsdetails.php?ID=10859|title= রফিকের ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখে আঁতকে উঠেছিলাম |last= |first= |date=৯ই ফেব্রুয়ারি,২০১১ |work=দৈনিক যুগান্তর|accessdate=২০শে ফেব্রুয়ারি,২০১১ }}</ref>
== ভাষা আন্দোলন ==
আমানুল হক সর্বক্ষণই তাঁর নিজের কাঁধে ক্যামেরা ঝুলিয়ে রাখতেন। চোখে কিছু আটকে গেলেই তিনি তার ছবি তুলে রাখতেন যা ছিল তাঁর নেশা। একুশে ফেব্রু�য়ারিতে খারাপ ঘটনা ঘটতে পারে, এটা তিনি আগে থেকেই অনুমান করতে পেরেছিলেন।তাই [[১৯৫২]] সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে [[ভাষা আন্দোলন|ভাষা আন্দোলনের]] সময় তিনি তাঁর ক্যামেরা পকেটে লুকিয়ে রেখেছিলেন। ঐদিন [[গাজীউল হক]], [[আব্দুল মতিন]], অলি আহমেদ, গোলাম মওলাসহ আরও কয়েকজনের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছোট ছোট মিছিল বের হয়েছিল । পুলিশ মিছিল বাইরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনকারীদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং মিছিলে গুলি চালায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অনেক মানুষ। আমানুল হক তখন [[ঢাকা মেডিকেল কলেজ]] হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং দেখেন কয়েকজন ধরাধরি করে রক্তমাখা একজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসছে। সেটা ছিল গুলিবিদ্ধ [[বরকত]]কে । প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে ঐ রাতে হাসপাতালে ভর্তির পর তিনি মারা যান। ঐ দিন বরকতসহ [[রফিকউদ্দিন আহমদ]], [[জব্বার]], [[আব্দুস সালাম]] এবং নাম না জানা এক কিশোর শহীদ হন। ২২শে ফেব্রু�য়ারি পুরনো হাইকোর্ট ভবন এবং কার্জন হলের মাঝামাঝি একটি জায়গায় [[পুলিশ|পুলিশের]] গুলিতে শহীদ হন [[শফিউর রহমান]] এবং রিকশাচালক আউয়ালসহ আরও কয়েকজন। [[পুলিশ]] ২১ এবং ২২ তারিখের বেশিরভাগ লাশই গুম করতে সক্ষম হয়েছিল।<ref name="amanul haque"/>
 
== ঐতিহাসিক ছবি ==
শহীদ রফিককে যখন নামানো হয়, তখন দেখি মাথার ঘিলু গড়িয়ে পড়ছিল। আলোকচিত্রশিল্পী ও [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের]] ছাত্র রফিকুল ইসলাম আমানুল হককে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করতে থাকেন। রফিকুল আলমের ক্যামেরায় ফিল্ম ছিল না। রফিকুল আলম বলেনঃ “আমানুল হক সাহেবের কাছে একটা-দুটো ফিল্ম ছিল, তিনি ছবি তুলেছেন।” <ref name="amanul haque2"/>
[[রফিক|রফিকের]] লাশ ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলে সবাই ভেতরে গিয়ে লাশ খুঁজি পায়নি।তখন সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালক কাজী মোহম্মদ ইদ্রীস গোলমালের খবর শুনে [[ঢাকা মেডিকেল কলেজ|ঢাকা মেডিকেল কলেজে]] চলে আসেন খবর জানতে।তখন ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী হালিমা খাতুন তাকে বলেন যে নিহত একজনের লাশ রক্ষিত আছে হাসপাতালের পেছনে এবং তিনি চাইলে সে লাশ দেখতে পারেন । <ref name="amanul haque1"/>কাজী মোহম্মদ ইদ্রীস আমানুল হককে গোপনে নিয়ে আসেন ছবি তোলার জন্য। সাংবাদিক কাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস রফিকুল আলম ও আমানুল হককে নিয়ে গেলেন জরুরী বিভাগের পাশে একটা পাশে একটা আলাদা ঘরে যেখান থেকে লাশ গুম করে ফেলা হবে। ইদ্রিস সাহেব তাদের গোপনে ছবি তুলতে দিলেন। এটা ছিল একটা গোপন ব্যাপার।তাই সংকেত পাওয়ার পরপরই আমানুল সন্তর্পনে এগিয়ে যান হালিমার কাছে রক্তস্নাত লাশের ছবি তোলার জন্য যা ছিল শহীদ [[রফিকউদ্দিন আহমদ|রফিকউদ্দিনের]] লাশ। রফিকুল ইসলাম তখন আমানুল হককে বলেন ছবি তুলতে। কারণ তাঁর কাছে ফ্লিম ছিল না। সেই ছবিটাই কিন্তু শহীদদের একমাত্র ছবি।<ref name="amanul haque2">{{cite web|url=http://www.dailykalerkantho.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=23-02-2010&feature=yes&type=single&pub_no=82&menu_id=22&news_type_id=1&index=0
|title= ঐতিহাসিক ছবি|last= চৌধুরী |first= চন্দন |date= ২৩-০২-২০১০ |work= দৈনিক কালের কন্ঠ |accessdate=২০শে ফেব্রুয়ারি,২০১১ }}</ref> আমানুল হক বলেন, “ঢাকা মেডিকেলে সেদিন রফিকের ছবি তুলতে গিয়ে আঁতকে উঠেছিলাম। অন্ধকার একটি ঘরে রাখা ছিল রফিকের লাশ। আমি কয়েকজনের সহায়তায় সেদিন তার ক্ষতবিক্ষত লাশের ছবিটি তুলতে পেরেছিলাম।“<ref name="amanul haque"/>ছবিটির তিনটি কপি করা হয় যার একটি দেয়া হয় এ.এস.এম মোহসিনকে, মাজেদ খানকে (ইসলামের ইতিহাস বিভাগ, [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]]) এবং শেষ কপিটি দেয়া হয় দৈনিক আজাদে প্রকাশের জন্য যা মওলানা [[আকরাম খাঁ]]র নির্দেশে আর ছাপানো যায় নি। ছাত্ররা ছবিটি ব্যবহার করে লিফলেট ছাপায় যা দুর্ভাগ্যবশতঃ [[পুলিশ]] বাজেয়াপ্ত ও নিষিদ্ধ করে। অনেক পরে সাপ্তাহিক বিচিত্রার প্রচ্ছদে ছবিটি পুনঃপ্রকাশিত হয়।<ref name="amanul haque1">{{cite web|url=http://www.sachalayatan.com/arup/12128|title= একুশের সাড়া জাগানো সেই ছবিটির গল্প|last= |first= অরূপ |date= ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ |work= সচলায়তন |accessdate=২০শে ফেব্রুয়ারি,২০১১}}</ref>
 
== বিখ্যাত ব্যাক্তিদের সাথে ==
 
১৯৫২ সালে [[ভাষা আন্দোলন|ভাষা আন্দোলনের]] ছবি তুলে আমানুল হক পরিচিত হয়ে গিয়েছিলেন দ্রুত।১৯৫৭ সালে [[টাঙ্গাইল|টাঙ্গাইলের]] কাগমারীতে মওলানা [[আবদুল হামিদ খান ভাসানী]]র মহাসম্মেলনের তাঁর আলোকচিত্রের একটা প্রদর্শনী হয়েছিল। সেখানে এসেছিলেন [[ভারত]] থেকে সাংবাদিক হিসেবে কবি [[সুভাষ মুখোপাধ্যায়]] আর লেখক [[তারাশংকর বন্দোপাধ্যায়]]। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের সময় আমানুল হকের তোলা শহীদ রফিকের ছবিটি পোস্টার করে [[মুসলিম লীগ|মুসলিম লীগের]] বিরুদ্ধে প্রচার হয়েছিল। তাই তাঁর বিরুদ্ধে প্রায়ই পুলিশের হয়রানি হত। তিনি সেজন্য [[কলকাতা]]য় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সিনেমার কাজ শেখার জন্য। কবি [[সুভাষ মুখোপাধ্যায়]] তাঁকে নিয়ে যান [[সত্যজিত রায়|সত্যজিত রায়ের]] কাছে ৩ নম্বর লেক টেম্পল রোডের বাড়িতে ১৯৫৯ সালে।তিনি সেদিন একটা ছবি তুলেছিলেন।তারপর প্রায়ই ঐ বাড়িতে যেতেন নানাকাজে। [[সত্যজিত রায়|সত্যজিত রায়ের]] স্ত্রী বিজয়া রায় তাকে স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিতেন।তিনি তাঁর লেখা আমাদের কথা বইতে আমানুল হক সম্পর্কে লিখেছেন।আমানুল হক তখন [[সত্যজিত রায়|সত্যজিত রায়ের]] মা সুপ্রভা রায়ের সঙ্গে সত্যজিত্, বিজয়া রায় আর তাঁদের ছেলে সন্দ্বীপের যৌথ ছবি তুলে দেন।একদিন তিনি [[সত্যজিত রায়|সত্যজিত রায়ের]] ঘরে ঢুকে দেখেন টেবিলে [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] দুটি পত্রিকা সাপ্তাহিক চিত্রালী ও সংবাদ যা এই দুটি সত্যজিত্ রায় নিয়মিত রাখতেন। সেখানে অভিনেত্রী [[ববিতা]]র একটি ছবি দেখে [[সত্যজিত রায়]] ববিতা সম্পর্কে আমানুল হকের কাছে জানতে চান যা ছিল আসলে আমানুল হকেরই তোলা। সত্যজিত পরে [[ববিতা]]কে [[অশনি সংকেত]] ছবির নায়িকা হিসেবে নির্বাচন করেন। আমানুল হকের জীবনের বিশাল এক সময় সত্যজিত রায়ের সঙ্গে কাটিয়েছেন। তিনি নতুন ছবির শুটিং হলেই আমানুল হককে চিঠি লিখতেন, আর তিনি [[কলকাতা]]য় গিয়ে শুটিংয়ের ছবি তুলতেন।<ref name="amanul haque3"/>
 
 
 
== বর্তমান অবস্থা ==