শোলাকিয়া মাঠ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
RIPENDIL (আলোচনা | অবদান)
তথ্যসূত্র অগ্রহনযোগ্য
RIPENDIL (আলোচনা | অবদান)
কপিরাইটকৃত তথ্য কপি পেস্ট করে ব্যবহার বিধায় মুছে ফেলা হল।
৫ নং লাইন:
১৯৫০ সালে স্থানীয় দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ জৈনক ইশা খাঁর হুকুমে এই ঈদগাহ মাঠকে অতিরিক্ত ৪.৩৫ একর জমি দান করেন। বর্তমান শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের আয়তন ৭ একর। [[নরসুন্দা]] নদীর তীরে শোলাকিয়ার অবস্থান। বর্তমানে শোলাকিয়ার পূর্বপ্রান্তে দু'তলা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এই ঈদগাহ মাঠটি চারপাশে উচু দেয়ালে ঘেরা হলেও মাঝে মাঝেই ফাঁকা রাখা হয়েছে যাতে মানুষ মাঠে প্রবেশ ও বের হতে পারে। এছাড়া এই মাঠের প্রাচীর দেয়ালে কোনো দরজা নেই। শোলাকিয়া মাঠে ২৬৫ সারির প্রতিটিতে ৫০০ করে মুসল্লি দাঁড়াবার ব্যবস্থা আছে। ফলে মাঠের ভেতর সবমিলিয়ে এক লাখ বত্রিশ হাজার ৫০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে [[ঈদুল ফিতর|ঈদুল ফিতরের]] সময় দেখা যায়, আশপাশের সড়ক, খোলা জায়গা, এমনকি বাড়ির উঠানেও নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। এভাবে সর্বমোট প্রায় তিন লাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ পড়ে থাকেন। এবং এই মুসল্লির এই সংখ্যা প্রতিবছর বেড়ে চলেছে। শোলাকিয়া ঈদগাহ'র ব্যাবস্থাপনার জন্য ৫১ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটি রয়েছে। ঈদের নামাজের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিমূলক কর্মকান্ড এই কমিটি করে থাকে।<ref>[http://174.120.99.127/~thedaily/details.php?news=27&action=main&option=all&menu_type=&pub_no=118 দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত নিবন্ধ]</ref>
 
 
বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ। ঈশা-খাঁ এর ১৬তম বংশধর দেওয়ান মান্নান দাঁদ খান ১৯৫০ সালে শোলাকিয়ার ঈদগাদটি ওয়াক্‌ফ করেন। ওয়াক্‌ফ দলিলে উল্লেখ আছে তারও দুশো বছর আগে থেকে শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৮২৮ সালে প্রথম বড় জামাতে একসঙ্গে সোয়ালাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে ঈদগাহ মাঠটির নাম সোয়ালাখিয়া। সেই সোয়ালাখিয়া এখন শোলাকিয়া।
কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীর ঘেঁষে উপমহাদেশের বৃহত্তম ঈদগাহ শোলাকিয়ার অবস্থান। ঐতিহ্যবাহী এবং প্রায় আড়াইশ বছরের প্রাচীন এ শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। স্থানীয় মুসলিম সমপ্রদায়ের মধ্যে একটি বিশ্বাস রয়েছে যে, এ মাঠে পর পর ৩টি ঈদে নামাজ আদায় করতে পারলে একবার হজ্বব্রত পালনের ফল লাভ হয়। সে বিশ্বাস থেকেই হোক বা বিরাট জামাতে নামাজ আদায় করার মানসেই হোক প্রতি বছর এ ঈদগাহ জামাতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। ১৮২৮ সালে প্রথম বড় জামাতে একসঙ্গে ১ লক্ষ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়ালাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। এই সোয়ালাখ থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়ালাখিয়া’, যা উচ্চারণ বিবর্তনে হয়েছে শোলাকিয়া। ২০১০ সালের ঈদ জামাতে রেকর্ড প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। এ বছর এ ঈদগাহ মাঠে ১৮৩ তম ঈদজামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বছর ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার ঈদের জামাতে ইমামতি করেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাস-উদ।
পূর্ব কথাঃ
শোলাকিয়ার এ ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহটি প্রতিষ্ঠা করেন কিশোরগঞ্জ শহরের হয়বতনগর জমিদার বাড়ির লোকজন। ঈশা-খাঁ এর ১৬তম বংশধর হয়বতনগরের জমিদার দেওয়ান মান্নান দাঁদ খান তার মায়ের অসিয়াত মোতাবেক ১৯৫০ সালে শোলাকিয়ার ঈদগাহ্‌টি ওয়াক্‌ফ করেন। সেই ওয়াক্‌ফ দলিলে উল্লেখ আছে, ১৭৫০ সাল থেকে এ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সে হিসাব অনুসারে শোলাকিয়া ঈদগাহের বয়স ২শ’ ৬১ বছর। ১৮২৮ সাল থেকে জঙ্গলবাড়ির জমিদার ঈশাখাঁও এই মাঠে নামাজ পড়তেন বলে জানা যায়। চারপাশে অনুচ্চ প্রাচীর ঘেরা শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে মোট ২৬৫টি কাতার রয়েছে। মাঠে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ঈদগাহ সংলগ্ন খালি জায়গা এবং রাস্তার উপরে দাঁড়িয়েও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ এ বৃহত্তম জামাতে শরিক হন। কিশোরগঞ্জ মৌজার এ মাঠের মোট আয়তন ৬.৬১ একর।
ঈদ জামাত
দেশের বৃহত্তম এ ঈদজামাত উপলক্ষে কিশোরগঞ্জ শহরে ঈদ মেলা বসে। মাঠ পার্শ্ববর্তী এলাকায় হস্ত, কারু, ও নানারকম শিল্পের মেলা আগত মুসুল্লীদের জন্য এক অন্যতম আকর্ষণের বিষয়। স্থানে স্থানে নির্মিত হয় তোরণ, রাস্তার দু’পাশে টানানো হয় রং-বেরংয়ের পতাকা ও ব্যানার। জামাতের আগে-পরে শহর হয়ে ওঠে লোকে-লোকারণ্য ও উৎসবমুখর। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের তৃষ্ণা লাঘব করতে দলমত নির্বিশেষে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী এবং এলাকাবাসী মুসল্লিদের মাঝে বিশুদ্ধ খাবার পানি, বাতাসা, মিষ্টান্ন প্রভৃতি বিতরণ করেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। ঈদ জামাতের অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখার জন্য কৌতূহলী হাজার হাজার নারী-শিশু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী জনতা ভীড় করেন। সকাল ১০টায় ঈদের জামাত শুরু হলেও সকাল ৯টার মধ্যেই ঈদগাহে মুসল্লিগণ দলে দলে আসতে থাকেন। লাখো মুসল্লির ঢল নামে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। লাব্বায়িক আল্লাহুম্মা লাব্বায়িক ধ্বনিতে মুখরিত হয় চারদিক। এ মাঠের রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরুর ৫মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি শটগানের গুলি ছোঁড়া হয়। নামায শেষে দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মাহর জন্য মঙ্গল কামনা করে মুনাজাত পরিচালিত হয়। লাখো লাখো আবাল-বৃদ্ধা-বনিতার আমীন, আমীন রবে মুখরিত হয়ে উঠে ঈদগাহ।
উৎসবের প্রস্তুতি
শোলাকিয়া ঈদগাহে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাতে নামাজ আদায়ের জন্য দেশের দূর-দূরানেত্মর মুসলিস্নগণ ঈদের ২/৩ দিন আগে থেকেই ঈদগাহের মিম্বর, আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি, বিভিন্ন মসজিদ ও আবাসিক হোটেলগুলোতে এসে ওঠতে থাকেন। অনেক মুসলিস্ন ঈদের দিন ভোরবেলায় ট্রেন, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে ঈদগাহে আসেন। এখানকার ঈদজামাতে এ ধরনের অসংখ্য লোকের খোঁজ পাওয়া যায়, যারা দীর্ঘদিন যাবৎ এখানে নিয়মিত নামাজ পড়তে আসেন। সাধারণ মানুষ ছাড়াও প্রতিবারই এ জামাতে বিপুল সংখ্যক ভি.আই.পি উপস্থিত থাকেন। ২০০৬ সালে প্রথম বারের মতো স্যাটেলাইট চ্যানেল এনটিভি দেশের সর্ববৃহৎ এই ঈদ জামাত সরাসরি সমপ্রচারের ব্যবস্থা করে। ২০০৭ সাল থেকে চ্যানেল আই নিয়মিত ঈদ জামাত সরাসরি সমপ্রচার করছে। দূর-দূরানত্ম থেকে আসা মুসলিস্নদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে ‘শোলাকিয়া এক্সপ্রেস’ নামে ১টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে।
কিভাবে আসবেন
রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে কিশোরগঞ্জগামী বাস নিয়মিত বিরতীতে পাওয়া যায়। এছাড়াও ঢাকার গুরম্নত্বপূর্ণ বিভিন্ন বাস স্টপিজ যেমন গোলাপবাগ, যাত্রাবাড়ি, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট, টঙ্গি থেকেও কিশোরগঞ্জগামী বাসে উঠা যায়। রেলপথে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস-এ সরাসরি কিশোরগঞ্জ আসা যায়। এছাড়াও ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি লোকাল ট্রেনও চলাচল করে। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেটসহ দেশের অন্যান্য সব গুরম্নত্বপূর্ণ জেলা শহরের সঙ্গে কিশোরগঞ্জের সরাসরি বাস ও ট্রেন যোগাযোগ রয়েছে।
শত ব্যসত্মতা, নানা সমস্যা আর প্রাকৃতিক বৈরিতাকে উপেড়্গা করে লাখো মুসুলিস্ন শরিক হোন শোলাকিয়া ঈদ জামাতে। এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন ধনী-গরীব সকলে। তাদের উদ্দেশ্য একটাই যেন কোন অবস্থাতেই হাত ছাড়া হয়ে না যায় জামাতে অংশ গ্রহণ, আলস্নাহর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ। ধনী-গরীবের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সাম্য ও সুন্দরের ভিত্তিতে এক নতুন সমাজ গড়ার এই শিক্ষা নিয়েই বাড়ির পথে শোলকিয়া ছাড়েন লাখো মুসল্লি।
==তথ্যসূত্র==
<{{references/>}}
[http://kishoreganjnews.com/?p=53]
[[বিষয়শ্রেণী:কিশোরগঞ্জ জেলা]]