লিজে মাইটনার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
WikitanvirBot I (আলোচনা | অবদান)
বট বানান ঠিক করছে: তৈরী > তৈরি
BellayetBot (আলোচনা | অবদান)
Typo fixing, replaced: উপলক্ষ্য → উপলক্ষ, গীর্জা → গির্জা, জাতী → জাতি, জাতিয় → জাতীয়, ধরণ → ধর using AWB
১৪ নং লাইন:
[[১৯০৮]] সালে মিটনার এবং অটো হান যৌথভাবে একটি তেজষ্ক্রিয় মৌল বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেন যার নাম [[একটিনিয়াম]]। তাদের আবিষ্কৃত মৌলটি ছিল "একটিনিয়াম সি"। [[১৯০৯]] সালে তিনি হানের সহায়তায় [[জার্মান ফিজিক্যাল সোসাইটি|জার্মান ফিজিক্যাল সোসাইটিতে]] তাদের কাজের বিবরণী একটি গবেষণাপত্র আকারে পেশ করেন এবং একই সাথে এমিল ফিশার ইনস্টিটিউটের সকল ক্ষেত্রের সুবিধা পাবার আবেদন জানান। [[১৯১২]] সালে তারা তৎকালীন কাইজার ভিলহেল্‌ম ইনস্টিটিউটের সদস্যপদ লাভ করেন এবং এখানে কাজ করা শুরু করেন। অটোহান এখানে [[১৯৪৪]] সাল পর্যন্ত কাজ করলেও দেশান্তরিত হওয়ার কারণে মিটনার [[১৯৩৮]] সালেই এ স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হন। [[১৯১৪]] সালে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের রসায়ন বিভাগের [[তেজস্ক্রিয়তা]] শাখার পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। [[১৯১৫]] সাল পর্যন্ত তিনি এখানে ম্যাক্স প্লাংকের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। এই সাল থেকে তিনি নিজের মৌলিক কাজের ব্যাপারে আরও নিবেদিত ও সক্রিয় হয়ে উঠেন। ক্রমেই তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেন। [[প্রথম বিশ্বযুদ্ধ]] চলাকালীন সময়ে অস্ট্রিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রের বিভিন্ন হাসপাতালে তিনি তেজস্ক্রিয়াবিদ হিসেবে কাজ করেছেন।
 
[[১৯১৭]] সালে তিনি হানের সাথে মিলে আরেকটি তেজস্ক্রিয় রাসায়নিক মৌল আবিষ্কার করেন যার নাম [[প্রোটেকটিনিয়াম]] ([[পারমানবিক সংখ্যা]] ৯১)। তিনি [[১৯১৮]] সালে কাইজার ভিলহেল্‌ম ইনস্টিটিউটের [[পদার্থবিজ্ঞান]] বিভাগের পরিচালক নিযুক্ত হন। আর [[১৯১৯]] সালে [[প্রুশিয়া|প্রুশিয়ার]] বিজ্ঞান, কলা এবং শিক্ষা সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় থেকে অধ্যাপক পদ লাভ করেন। [[১৯২২]] সালে তিনি [[আলফা রশ্মি|আলফা]] এবং [[বিটা রশ্মি|বিটা বিকিরণের]] মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে সমর্থ হন। মাক্স ফন লাউয়ে [[১৯০৬]], হান [[১৯০৭]] এবং আইনস্টাইন [[১৯০৮]] সালের মধ্যে তাদের সর্বশেষ একাডেমিক পড়াশোনা শেষ করতে পেরেছিলেন। কিন্তু মিটনারের সর্বশেষ ডিগ্রি অর্জন করতে আরও বেশ খানিকটা সময় লেগেছিল। এর কারণ মেয়েদের জন্য অপর্যাপ্ত বিজ্ঞানসম্মত ডিগ্রি। তখন প্রুশিয়ায় এ ধরণেরধরনের উঁচু স্তরের পরীক্ষায় মেয়েদেরকে অংশ নিতে দেয়া হত না।
 
===বার্লিনে অধ্যাপনা===
মিটনার তার যোগ্যতা প্রমাণের জন্য এ সময় তেজস্ক্রিয়তার অন্যতম প্রধান অংশ বিটা রশ্মির বর্ণালীরবর্ণালির উপর একটি গবেষণাপত্র জমা দেন। একই সাথে লাউয়ে সুইজারল্যান্ডের শিক্ষা অনুষদে একটি সুপারিশমূলক পত্র লিখে পাঠান যাতে তিনি মিটনারকে পৃথিবীর একজন নেতৃস্থানীয় গবেষক বলে উল্লেখ করেন। তাই তার যোগ্যতার মূল্যায়ন করতে তিনি সুইজারল্যান্ডীয় শিক্ষা অনুষদকে অনুরোধ জানান। অবশেষে মিটনার সেই শিক্ষা অনুষদে নিজের স্থান করে নিতে সমর্থ হন। এ সময়েই মূলত মিটনারের একাডেমিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। তিনি [[১৯২৬]] সালে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন এবং [[১৯৩৩]] সাল পর্যন্ত এই পদে আসীন ছিলেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি তার গবেষণাও চলতে থাকে। [[১৯২৯]] সালে [[বিটাক্ষয়]] ধর্মের সূক্ষ্ণ পরিমাপ করতে সমর্থ হন। এই আবিষ্কারটি বিশেষ গুরুত্বের দাবীদার, কারণ এর মাধ্যমেই তেজস্ক্রিয় নিউক্লীয় রুপান্তর চিহ্নিতকরণ সম্ভব হয়েছে।
 
[[১৯৩০]] সালের [[ডিসেম্বর ৪]] তারিখে জার্মানির টুবিঙেনে [[হান্‌স গেইগার]] এবং লিস মিটনারের যৌথ উপস্থিতিতে তেজস্ক্রিয়তার উপর একটি আলোচনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সুইজারল্যান্ডীয় পদার্থবিজ্ঞানী [[ভোল্‌ফগ্যাং পাউলি]] [[জুরিখ]] থেকে এসে আর এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন নি। কিন্তু তিনি একটি চিঠি পেরণ করেন যাতে তিনি তেজস্ক্রিয়তার জগতে [[নিউট্রিনো]] নামক একটি নতুন বস্তুকণার উপস্থিতির চমকপ্রদ অনুসিদ্ধান্ত পেশ করেছিলেন। এই চিঠিটি পড়ে মিটনার বিশেষ ঔৎসুক হয়ে উঠেন এবং চিঠিটি অনেকদিন পর্যন্ত সযত্নে রেখে দিয়েছিলেন। এ সময় অটো হান বার্লিনে মিটনারের তেজস্ক্রিয়তা বিষয়ে তাদের আবিস্কার এবং ভবিষ্যৎ প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় বসেন। নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার তাগিদে তার বেশ ঘনিষ্ঠভাবে কাজ শুরু করেন। কাইজার ভিলহেল্‌ম ইনস্টিটিউটের লক্ষ্যকে প্রতিষ্ঠিত করাও তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। তারা তাদের বক্তৃতাগুলো পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করতেন না। তাদের কাজের ধারাটিকে নিজেরা খুব উপভোগ করতেন। একই সাথে মিটনার সফলভাবে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন। কিন্তু [[১৯৩৩]] সালে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। কারণ তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে তথা বংশের দিক দিয়ে বিশুদ্ধ [[আর্য]] ছিলেন না। আসলে এই সালেই [[এডল্‌ফ হিটলার]] জার্মানির চ্যান্সেলর হয় এবং হিটলারের কট্টর জাতীয়তাবাদ ও আর্য রক্তের পূজার কারণেই মিটনারসহ আরও অনেক বিজ্ঞানী ও শিক্ষককে তাদের কাজ ছেড়ে দিতে হয়।
২৭ নং লাইন:
স্টকহোমে অধ্যাপনায় নিযুক্ত থাকার পাশাপাশি তিনি [[স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়|স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ে]] পরমাণু বিষয়ে গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন। গবেষণা শেষে [[১৯৩৯]] সালে তিনি তার ভ্রাতুষ্পুত্র ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী [[অটো রবার্ট ফ্রিশ্‌চ|অটো রবার্ট ফ্রিশ্‌চের]] সাথে মিলে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। এই গবেষণাপত্রটিই প্রথম পরমাণুর বিভাজন বিষয়ে তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা প্রদানে সক্ষম হয়েছিল। মিটনার এবং ফ্রিশ্‌চ পরমাণুর এই বিভাজন প্রক্রিয়ার নাম দিয়েছিলেন [[নিউক্লীয় বিযোজন]] বা [[নিউক্লীয় বিভাজন]] (nuclear fission)। এই আবিষ্কার [[পারমানবিক শক্তি]] অর্জনের ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিউক্লীয় বিভাজন প্রক্রিয়াটি প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন [[অটো হান]] ও [[ফ্রিট্‌জ স্ট্রাসম্যান]]।
 
[[১৯৪৬]] সালের অর্ধেক সময় তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের [[ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়|ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে]] অতিথি অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করেন। এ সময় টেকনিক্যাল কলেজে নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক নিযুক্ত হন। [[১৯৪৭]] সালে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর গ্রহণ করেন। এর আগে যে নোবেল ইনস্টিটিউটে যোগ দিয়েছিলেন তাও ত্যাগ করেন। অব্যবহিত পরেই সুয়েডীয় পরমাণু শক্তি কমিশনের সাহায্যে একটি ছোট আকারের ব্যক্তিগত গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করেন। এই গবেষণাগারে প্রকৌশল বিজ্ঞানের কাজ করেই বাকি সময়টা কাটিয়েছিলেন। সেখানে তিনি একটি পরীক্ষণমূলক পারমাণবিক চুল্লী স্থাপন করেছিলেন। শেষ জীবনে এসে [[১৯৬৩]] সালে ভিয়েনাতে অবস্থিত ইউরেনিয়া শিক্ষা ইনস্টিটিউটের পদার্থবিজ্ঞানের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যেউপলক্ষে একটি বিখ্যাত বক্তৃতা দিয়েছিলেন। জীবনের শেষ কটা দিন ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ শহরে ভ্রাতুষ্পুত্র ফ্রিশ্‌চের সাথে নির্জন পরিবেশে অবস্থিত একটি বাসায় বসবাস করতেন। [[১৯৬৮]] সালের [[অক্টোবর ২৭|২৭ অক্টোবর]] এই মহিয়সী বিজ্ঞানী [[ইংল্যান্ড|ইংল্যান্ডের]] [[কেমব্রিজ]] শহরে মৃত্যুবরণ করেন। এর মাত্র চার মাস আগে [[জুলাই ২৮]] তারিখে অটো হানের মৃত্যু হয়েছিল। ইংল্যান্ডের এক গীর্জারগির্জার পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাধিস্থ করা হয়েছে। তার সমাধি ফলকে পাথরে খোদাই করে লেখা আছে:
{{cquote|
<i>লিস মিটনার এমন একজন পদার্থবিজ্ঞানী যিনি কখনও তার মানবিকতাকে হারান নি।}}