বাগর্থবিজ্ঞান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সংশোধন |
|||
৪ নং লাইন:
আপাতদৃষ্টিতে অর্থকে বেশ অস্পষ্ট, বিমূর্ত, ধরা-ছোঁয়ার বাইরের একটি বস্তু বলে মনে হতে পারে। তবে বাগর্থবিজ্ঞানীরা ভাষার ব্যবহার নিয়ে অত্যন্ত সচেতনভাবে চিন্তা করেন যাতে তাঁরা অর্থ সম্পর্কে কিছু নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেন।
বাগর্থবিজ্ঞানীরা অর্থকে দুইটি প্রধান ভাগে ভাগ করেন:
পাশ্চাত্যে প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক [[এরিস্টটল|আরিস্তোত্ল]] ভাষাতে অর্থ নিয়ে প্রথম গবেষণা শুরু করেন, তবে তার পর বাগর্থবিজ্ঞানের অনেক উন্নতি ঘটেছে। বর্তমান বাগর্থবিজ্ঞানীরা [[প্রতীকী যুক্তিবিজ্ঞান]], [[সৃষ্টিশীল ব্যাকরণ]], ইত্যাদি আধুনিক কলাকৌশলের সহায়তা নিয়ে থাকেন, যেগুলি আরিস্তোত্লের কাছে লভ্য ছিল না।
== উক্তি, বাক্য ও বচন ==
উক্তি, বাক্য ও বচন এবং এদের মধ্যকার পার্থক্য বাগর্থবিজ্ঞানের অত্যন্ত মৌলিক বিষয়।
কোন ব্যক্তির উচ্চারিত কথা, যার আগে ও পরে ব্যক্তিটি নৈঃশব্দ্য রাখেন, তাকে উক্তি (utterance) বলে। উক্তির
অন্যদিকে বাক্য (sentence) কোন ভৌত ঘটনা বা বস্তু নয়। এটি একটি বিমূর্ত মানসিক ধারণা। প্রচলিত সংজ্ঞামতে বাক্য হল কোন ভাষার ব্যাকরণের নিয়ম মেনে সৃষ্ট কতগুলি শব্দের গুচ্ছ বা ইংরেজি পরিভাষায় "স্ট্রিং", যা একটি সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে। বাক্যকে
বাগর্থবিজ্ঞানে কোন একটি ব্যাকরণগতভাবে পূর্ণাঙ্গ বাক্যের অর্থের সাথে বচনের <ref>Proposition-এর বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে "বচন" শব্দটি ব্যবহার করেছেন বাংলা ভাষার বাগর্থবিজ্ঞানী রমাপ্রসাদ দাস তাঁর ''শব্দ ও অর্থঃ শব্দার্থের দর্শন'' (আনন্দ পাবলিশার্স, ১৯৯৫) নামের গ্রন্থে।</ref> (proposition) ধারণাটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোন বর্ণনামূলক বাক্যে যখন উক্ত হয় (অর্থাৎ এটিকে কোন উক্তি হিসেবে ব্যবহার করা হয়), তখন ঐ উক্তির অর্থের যে অংশটুকু
দুইটি বচন একই কি না, তা
▲বাগর্থবিজ্ঞানে কোন একটি ব্যাকরণগতভাবে পূর্ণাঙ্গ বাক্যের অর্থের সাথে বচনের <ref>Proposition-এর বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে "বচন" শব্দটি ব্যবহার করেছেন বাংলা ভাষার বাগর্থবিজ্ঞানী রমাপ্রসাদ দাস তাঁর ''শব্দ ও অর্থঃ শব্দার্থের দর্শন'' (আনন্দ পাবলিশার্স, ১৯৯৫) নামের গ্রন্থে।</ref> (proposition) ধারণাটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোন বর্ণনামূলক বাক্যে যখন উক্ত হয় (অর্থাৎ এটিকে কোন উক্তি হিসেবে ব্যবহার করা হয়), তখন ঐ উক্তির অর্থের যে অংশটুকু কোন ঘটনার বিবরণ দেয়, তাকে বচন বলে। কোন ব্যক্তি একটি বর্ণনামূলক বাক্য উক্তি হিসেবে ব্যবহার করে (অর্থাৎ বাক্যটি উক্ত করে) কোন একটি বচন প্রকাশ করেন।
বচন কেবল বর্ণনামূলক বাক্যের সাথেই সম্পর্কিত নয়, প্রশ্নবাচক ও আদেশমূলক বাক্যের অর্থের সাথেও বচন জড়িত। যখন
▲দুইটি বচন একই কি না তা বের করার জন্য সত্যের ধারণা কাজে লাগানো যায়। যদি একই পরিস্থিতিতে কোন একটি বচন [[সত্য]] হয় এবং অপরটি মিথ্যা হয়, তবে বচন দুইটি ভিন্ন। সত্য বচনগুলি সত্য ঘটনা (fact)-র সাথে সম্পর্কিত। মিথ্যা বচনগুলি সত্য ঘটনার সাথে জড়িত নয়। আমরা মনের ভেতরে সত্য বা মিথ্যা দুই ধরনের বচনই তৈরি করতে পারি এবং এগুলি বিশ্বাসও করতে পারি, কিন্তু কেবল সত্য বচনগুলিই "জানা" সম্ভব। অর্থাৎ জ্ঞান বা knowledge হল সমস্ত সত্য বচনের সমষ্টি।
▲বচন কেবল বর্ণনামূলক বাক্যের সাথেই সম্পর্কিত নয়, প্রশ্নবাচক ও আদেশমূলক বাক্যের অর্থের সাথেও বচন জড়িত। যখন কোন ব্যক্তি কোন বিবরণমূলক বাক্য উচ্চারণ করেন, তখন তিনি বাক্যটির অন্তর্নিহিত বচনের সত্যতা মুখে ব্যক্ত করেন। কিন্তু যখন তিনি একটি প্রশ্ন করেন বা আদেশ দেন, তখন তিনি সরাসরি বাক্যটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বচনের সত্যতা-অসত্যতা ব্যক্ত করেন না। একই বচন বিভিন্ন ধরনের বাক্যে বাস্তবায়িত হতে পারে।
উক্তি বা বাক্যের মত বচন কোন নির্দিষ্ট ভাষার বৈশিষ্ট্য নয়। বিভিন্ন ভাষার বাক্য একই বচন নির্দেশ করতে পারে। যেমন - ইংরেজি ভাষার ''I love you'', বাংলা ভাষার ''আমি তোমাকে ভালবাসি'' এবং ফরাসি ভাষার ''Je t'aime'' বাক্যগুলি একই বচন নির্দেশ করে।
৪৬ ⟶ ৪৪ নং লাইন:
একটি বচন বিভিন্ন রকম বাক্যে প্রকাশিত হতে পারে, আবার এই বাক্যগুলি একাধিক ব্যক্তির অসংখ্য ভৌত উক্তিতে প্রকাশিত হতে পারে --- সংক্ষেপে এই হল বচন, বাক্য ও উক্তির মধ্যকার সম্পর্ক।
বচন বিমূর্ত ও মানসিক;
== অর্থ ও নির্দেশন ==
বাগর্থবিজ্ঞানীরা অর্থ-বিষয়ক আরও দুইটি মৌলিক ধারণা আলাদাভাবে গণ্য করেন, যেগুলি হল অর্থ (sense) এবং নির্দেশন (reference)। প্রথমটি ভাষার ভিতরের আর্থ সম্পর্ক বর্ণনায় ব্যবহার করা হয়, আর দ্বিতীয়টি ভাষা ও বাস্তব বিশ্বের মধ্যকার সম্পর্ক বর্ণনায় ব্যবহৃত হয়।
নির্দেশন বলতে শব্দ বা শব্দগুচ্ছের মাধ্যমে কোন বক্তার বাস্তব বিশ্বের কোন ব্যক্তি, বস্তু, ঘটনা, ইত্যাদিকে নির্দেশ করাকে বোঝায়। যেমন - ''তামীম একটা খেলনা গাড়ি উপহার পেল।'' বাক্যটিতে "খেলনা গাড়ি" শব্দগুচ্ছটি দিয়ে বক্তা একটি বাস্তব খেলনা গাড়িকে নির্দেশ করছেন এবং "তামীম" শব্দটি দিয়ে সম্ভবত একটি বাস্তব মনুষ্যশিশুকে নির্দেশ করছেন। একই শব্দ, শব্দগুচ্ছ বা বাক্য দিয়ে পরিস্থিতিভেদে বিভিন্ন বাস্তব বস্তু নির্দেশ করা যেতে পারে। যেমন - "তামীম" শব্দটি ঐ নামের অসংখ্য মানুষের
অন্যদিকে অর্থ (ইংরেজি sense-এর বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে) বলতে একটি আর্থিক সম্পর্কের সংশ্রয়ে (system of semantic relationship) অন্যান্য কথার (expressions) প্রেক্ষিতে কোন একটি কথার অবস্থানকে বোঝায়। ভিন্ন ভিন্ন শব্দ বা শব্দগুচ্ছ কোন বাক্যে একই অর্থে (sense-এ) ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন - ''লাঠিটা খাড়া
একই শব্দ ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন - "নদীর পাড়" এবং "শাড়ির পাড়"-এ "পাড়" শব্দটি দুইটি ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত। এই ধরনের ঘটনাকে বাগর্থবিজ্ঞানীরা
অর্থ (sense) কোন বাস্তব বস্তুকে নির্দেশ করে না। এটা আসলে ঠিক কী নির্দেশ করে তা সংজ্ঞার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা কঠিন। অর্থ বিমূর্ত ও মানসিক। যখন একজন ব্যক্তি
সমস্ত কথা বা ভাষিক অভিব্যক্তির অর্থ (sense) আছে, তবে
অর্থ (sense) বলতে আসলেই কী বোঝায়, তা সম্পর্কে বাগর্থবিজ্ঞানীরাও পুরোপুরি নিশ্চিত নন। এটা অনেকটা বিদ্যুতের মত, আমরা বিদ্যুত ব্যবহার করি এবং বিদ্যুৎ কীভাবে কাজ করে, তা নিয়ে অনেক কথা বলতে পারি কিন্তু এটা আসলে যে কী, তা আমরা পুরোপুরি কখনোই হয়ত বুঝতে পারব না।
== পাদটীকা ও
<references/>
|