বাগর্থবিজ্ঞান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Zaheen (আলোচনা | অবদান)
Zaheen (আলোচনা | অবদান)
সংশোধন
৪ নং লাইন:
আপাতদৃষ্টিতে অর্থকে বেশ অস্পষ্ট, বিমূর্ত, ধরা-ছোঁয়ার বাইরের একটি বস্তু বলে মনে হতে পারে। তবে বাগর্থবিজ্ঞানীরা ভাষার ব্যবহার নিয়ে অত্যন্ত সচেতনভাবে চিন্তা করেন যাতে তাঁরা অর্থ সম্পর্কে কিছু নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেন।
 
বাগর্থবিজ্ঞানীরা অর্থকে দুইটি প্রধান ভাগে ভাগ করেন: বক্তারবাচ্যার্থ (বা আক্ষরিক অর্থ, এবংবা শব্দার্থ/বাক্যার্থ।অভিধার্থ বক্তারবা আভিধানিক অর্থ) এবং ব্যঞ্জনার্থ। বাচ্যার্থ বলতে কোনও ভাষার শব্দ বা বাক্যের সমতুল্য কোনও কিছুকে বোঝায়; অর্থাৎ এটি শব্দ বা বাক্যটির আভিধানিক অর্থ। অন্যদিকে ব্যঞ্জনার্থ বলতে কোনকোনও বক্তা কোনকোনও একটি ভাষাংশ ব্যবহারের মাধ্যমে আসলে কী বোঝাতে চাচ্ছেন তাকে বোঝায়; বক্তার উদ্দিষ্ট অভিব্যক্তি-ই এখানে মুখ্য। অন্যদিকেএকই শব্দার্থ/বাক্যার্থবাক্য বলতেবা কোনশব্দ ভাষারভিন্ন শব্দভিন্ন বাবক্তা বাক্যেরপরিস্থিতিভেদে সমতুলভিন্ন কোনভিন্ন কিছুকেঅর্থে বোঝায়;প্রয়োগ অর্থাৎকরতে এটিপারেন। শব্দএমনকি কোনও কোনও বাক্যের বাচ্যার্থ বা বাক্যটিরআক্ষরিক আভিধানিকঅর্থ স্ববিরোধী বা অবাস্তব হলেও ঐ বাক্যগুলির মাধ্যমে বক্তা কোনও বিশেষ অনুভূতি অপরের কাছে প্রকাশ করতে পারেন। অর্থ।
 
একইবাগর্থবিজ্ঞানীরা বাক্যরৌপ বাবিধিসম্মতভাবে শব্দ ভিন্নপ্রণালীবদ্ধভাবে ভিন্নএই বক্তাঘটনাগুলি পরিস্থিতিভেদে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে প্রয়োগব্যাখ্যা করতে পারেন। এমনকি কোন কোন বাক্যের আক্ষরিক অর্থ স্ববিরোধী বা অবাস্তব হলেও ঐ বাক্যগুলির মাধ্যমে বক্তা কোন অনুভূতি অপরের কাছে প্রকাশ করতে পারেন। বাগর্থবিজ্ঞানীরা চেষ্টা করেন বিধিসম্মতভাবে এই ঘটনাগুলি ব্যাখ্যা করতে।করেন। তাঁরা রসায়ন, ভূ-বিজ্ঞান ও অন্যান্য ভৌত বিজ্ঞানের মত ভাষার অর্থ সম্পর্কিত তত্ত্ব দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন। তাঁরা অর্থ সম্পর্কে কতগুলি সুনির্দিষ্ট, পরস্পর-সম্পর্কিত, সাশ্রয়ী সংজ্ঞা ও বিবৃতি গঠন করার চেষ্টা করেন, যেগুলি ভাষাতে অর্থ সম্পর্কিত বিপুল পরিমাণ সাধারণবাস্তব তথ্য (fact) ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। দেখা গেছে, বিভিন্ন ভাষার অর্থ সম্পর্কিত প্রাথমিক তথ্য বা ঘটনাবলির মধ্যে অনেক মিল আছে (অনেক অমিল-ও আছে, কিন্তু বাগর্থবিজ্ঞানীরা মিলগুলির প্রতিই আগ্রহী)। বাগর্থবিজ্ঞানীরা এই সাদৃশ্যগুলি বিবেচনা করে মানুষের বলা সব ভাষার জন্য প্রযোজ্য একটি সাধারণ অর্থ বিষয়ক তত্ত্ব নির্মাণের চেষ্টা করেন।
 
পাশ্চাত্যে প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক [[এরিস্টটল|আরিস্তোত্‌ল]] ভাষাতে অর্থ নিয়ে প্রথম গবেষণা শুরু করেন, তবে তার পর বাগর্থবিজ্ঞানের অনেক উন্নতি ঘটেছে। বর্তমান বাগর্থবিজ্ঞানীরা [[প্রতীকী যুক্তিবিজ্ঞান]], [[সৃষ্টিশীল ব্যাকরণ]], ইত্যাদি আধুনিক কলাকৌশলের সহায়তা নিয়ে থাকেন, যেগুলি আরিস্তোত্‌লের কাছে লভ্য ছিল না।
 
== উক্তি, বাক্য ও বচন ==
উক্তি, বাক্য ও বচন এবং এদের মধ্যকার পার্থক্য বাগর্থবিজ্ঞানের অত্যন্ত মৌলিক বিষয়।
 
কোন ব্যক্তির উচ্চারিত কথা, যার আগে ও পরে ব্যক্তিটি নৈঃশব্দ্য রাখেন, তাকে উক্তি (utterance) বলে। উক্তির বিশেষ্যসমার্থক কিছু শব্দ -হল কহন, বাচন, কথন, ভাষণ ইত্যাদি। উক্তি কোনকোনও ব্যক্তি দ্বারা সম্পাদিত একটি ক্ষণস্থায়ী ভৌত ঘটনা, যা সম্পাদন শেষে বাতাসে মিলিয়ে যায়। উক্তি হল কোনকোনো ব্যক্তি কর্তৃক ভাষার একটি অংশের ব্যবহার। এটাএটি একটিমাত্র শব্দ হতে পারে, একটি শব্দগুচ্ছ হতে পারে, এক বা একাধিক বাক্যও হতে পারে। উক্তির সাথে বক্তার বলার ভঙ্গি, স্বরাঘাত, ও কণ্ঠস্বর, ইত্যাদি ব্যাপারগুলি জড়িত।
 
অন্যদিকে বাক্য (sentence) কোন ভৌত ঘটনা বা বস্তু নয়। এটি একটি বিমূর্ত মানসিক ধারণা। প্রচলিত সংজ্ঞামতে বাক্য হল কোন ভাষার ব্যাকরণের নিয়ম মেনে সৃষ্ট কতগুলি শব্দের গুচ্ছ বা ইংরেজি পরিভাষায় "স্ট্রিং", যা একটি সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে। বাক্যকে কোনএকাধিক বহুশব্দের শব্দ সমন্বয়েসহযোগে গঠিত কোনকোনও ভৌত, মূর্ত রূপে রূপায়িত উক্তির পেছনের আদর্শ বিমূর্ত রূপ হিসেবে গণ্য করা যায়। বাক্যের ধারণার সাথে বক্তার বলার ভঙ্গি, স্বরাঘাত, ও কণ্ঠস্বর, ইত্যাদি ব্যাপারগুলি জড়িত নয়। বাস্তব বিশ্বে বেশির ভাগ মানুষের উচ্চারিত বিভিন্ন উক্তি পূর্ণাঙ্গ বাক্য হিসেবে উচ্চারিত হয় না। কিন্তু এই উক্তিগুলি বিশ্লেষণ করার সময় এগুলিকে পূর্ণাঙ্গ বাক্যের খণ্ডিত অংশ হিসেবে গণ্য করলে বিশ্লেষণে সুবিধা হয়।
 
বাগর্থবিজ্ঞানে কোন একটি ব্যাকরণগতভাবে পূর্ণাঙ্গ বাক্যের অর্থের সাথে বচনের <ref>Proposition-এর বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে "বচন" শব্দটি ব্যবহার করেছেন বাংলা ভাষার বাগর্থবিজ্ঞানী রমাপ্রসাদ দাস তাঁর ''শব্দ ও অর্থঃ শব্দার্থের দর্শন'' (আনন্দ পাবলিশার্স, ১৯৯৫) নামের গ্রন্থে।</ref> (proposition) ধারণাটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোন বর্ণনামূলক বাক্যে যখন উক্ত হয় (অর্থাৎ এটিকে কোন উক্তি হিসেবে ব্যবহার করা হয়), তখন ঐ উক্তির অর্থের যে অংশটুকু কোনকোনও ঘটনার বিবরণ দেয়, তাকে বচন বলে। কোনকোনও ব্যক্তি একটি বর্ণনামূলক বাক্য উক্তি হিসেবে ব্যবহার করে (অর্থাৎ বাক্যটি উক্ত করে) কোনকোনও একটি বচন প্রকাশ করেন।
বাস্তব বিশ্বে বেশির ভাগ মানুষের উচ্চারিত বিভিন্ন উক্তি পূর্ণাঙ্গ বাক্য হিসেবে উচ্চারিত হয় না। কিন্তু এই উক্তিগুলি বিশ্লেষণ করার সময় এগুলিকে পূর্ণাঙ্গ বাক্যের খণ্ডিত অংশ হিসেবে গণ্য করলে বিশ্লেষণে সুবিধা হয়।
 
দুইটি বচন একই কি না, তা বেরনির্ণয় করার জন্য সত্যের ধারণা কাজে লাগানো যায়। যদি একই পরিস্থিতিতে কোন একটি বচন [[সত্য]] হয় এবং অপরটি মিথ্যা হয়, তবে বচন দুইটি ভিন্ন। সত্য বচনগুলি সত্য ঘটনা (fact)-র সাথে সম্পর্কিত। মিথ্যা বচনগুলি সত্য ঘটনার সাথে জড়িত নয়। আমরা মনের ভেতরে সত্য বা মিথ্যা দুই ধরনের বচনই তৈরি করতে পারি এবং এগুলি বিশ্বাসও করতে পারি, কিন্তু কেবল সত্য বচনগুলিই "জানা" সম্ভব। অর্থাৎ জ্ঞান বা (knowledge) হল সমস্ত সত্য বচনের সমষ্টি।
বাগর্থবিজ্ঞানে কোন একটি ব্যাকরণগতভাবে পূর্ণাঙ্গ বাক্যের অর্থের সাথে বচনের <ref>Proposition-এর বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে "বচন" শব্দটি ব্যবহার করেছেন বাংলা ভাষার বাগর্থবিজ্ঞানী রমাপ্রসাদ দাস তাঁর ''শব্দ ও অর্থঃ শব্দার্থের দর্শন'' (আনন্দ পাবলিশার্স, ১৯৯৫) নামের গ্রন্থে।</ref> (proposition) ধারণাটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোন বর্ণনামূলক বাক্যে যখন উক্ত হয় (অর্থাৎ এটিকে কোন উক্তি হিসেবে ব্যবহার করা হয়), তখন ঐ উক্তির অর্থের যে অংশটুকু কোন ঘটনার বিবরণ দেয়, তাকে বচন বলে। কোন ব্যক্তি একটি বর্ণনামূলক বাক্য উক্তি হিসেবে ব্যবহার করে (অর্থাৎ বাক্যটি উক্ত করে) কোন একটি বচন প্রকাশ করেন।
 
বচন কেবল বর্ণনামূলক বাক্যের সাথেই সম্পর্কিত নয়, প্রশ্নবাচক ও আদেশমূলক বাক্যের অর্থের সাথেও বচন জড়িত। যখন কোনকোনও ব্যক্তি কোনকোনও বিবরণমূলক বাক্য উচ্চারণ করেন, তখন তিনি বাক্যটির অন্তর্নিহিত বচনের সত্যতা মুখে ব্যক্ত করেন। কিন্তু যখন তিনি একটি প্রশ্ন করেন বা আদেশ দেন, তখন তিনি সরাসরি বাক্যটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বচনের সত্যতা-অসত্যতা ব্যক্ত করেন না। একই বচন বিভিন্ন ধরনের বাক্যে বাস্তবায়িত হতে পারে।
দুইটি বচন একই কি না তা বের করার জন্য সত্যের ধারণা কাজে লাগানো যায়। যদি একই পরিস্থিতিতে কোন একটি বচন [[সত্য]] হয় এবং অপরটি মিথ্যা হয়, তবে বচন দুইটি ভিন্ন। সত্য বচনগুলি সত্য ঘটনা (fact)-র সাথে সম্পর্কিত। মিথ্যা বচনগুলি সত্য ঘটনার সাথে জড়িত নয়। আমরা মনের ভেতরে সত্য বা মিথ্যা দুই ধরনের বচনই তৈরি করতে পারি এবং এগুলি বিশ্বাসও করতে পারি, কিন্তু কেবল সত্য বচনগুলিই "জানা" সম্ভব। অর্থাৎ জ্ঞান বা knowledge হল সমস্ত সত্য বচনের সমষ্টি।
 
বচন কেবল বর্ণনামূলক বাক্যের সাথেই সম্পর্কিত নয়, প্রশ্নবাচক ও আদেশমূলক বাক্যের অর্থের সাথেও বচন জড়িত। যখন কোন ব্যক্তি কোন বিবরণমূলক বাক্য উচ্চারণ করেন, তখন তিনি বাক্যটির অন্তর্নিহিত বচনের সত্যতা মুখে ব্যক্ত করেন। কিন্তু যখন তিনি একটি প্রশ্ন করেন বা আদেশ দেন, তখন তিনি সরাসরি বাক্যটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বচনের সত্যতা-অসত্যতা ব্যক্ত করেন না। একই বচন বিভিন্ন ধরনের বাক্যে বাস্তবায়িত হতে পারে।
 
উক্তি বা বাক্যের মত বচন কোন নির্দিষ্ট ভাষার বৈশিষ্ট্য নয়। বিভিন্ন ভাষার বাক্য একই বচন নির্দেশ করতে পারে। যেমন - ইংরেজি ভাষার ''I love you'', বাংলা ভাষার ''আমি তোমাকে ভালবাসি'' এবং ফরাসি ভাষার ''Je t'aime'' বাক্যগুলি একই বচন নির্দেশ করে।
৪৬ ⟶ ৪৪ নং লাইন:
একটি বচন বিভিন্ন রকম বাক্যে প্রকাশিত হতে পারে, আবার এই বাক্যগুলি একাধিক ব্যক্তির অসংখ্য ভৌত উক্তিতে প্রকাশিত হতে পারে --- সংক্ষেপে এই হল বচন, বাক্য ও উক্তির মধ্যকার সম্পর্ক।
 
বচন বিমূর্ত ও মানসিক; কোনকোনও ব্যক্তি মনের মাধ্যমে বচন অণুধাবনঅনুধাবন করতে পারেন। এ অর্থে বচন চিন্তার অংশ। কিন্তু চিন্তা ও বচন একই বস্তু নয়, যদিও অনেক সময় আমরা কথা বলার সময় "চিন্তা" শব্দটা দিয়ে বচনকে বুঝিয়ে থাকি (যেমন - "আমার মাথাতেও এই একই ''চিন্তা'' এসেছিল।" --- এই বাক্যে "চিন্তা" দিয়ে আসলে বচন বোঝানো হচ্ছে।) চিন্তা হল মানসিক প্রক্রিয়া, বচন হল বিমূর্ত আর্থিক একক, বাক্য হল বিমূর্ত ভাষিক বস্তু এবং উক্তি হল স্থান-কাল-নির্দিষ্ট ভৌত কাজ বা ঘটনা। এই চারটির আন্তঃসম্পর্ক জটিল ও সমস্যাবহুল।
 
== অর্থ ও নির্দেশন ==
বাগর্থবিজ্ঞানীরা অর্থ-বিষয়ক আরও দুইটি মৌলিক ধারণা আলাদাভাবে গণ্য করেন, যেগুলি হল অর্থ (sense) এবং নির্দেশন (reference)। প্রথমটি ভাষার ভিতরের আর্থ সম্পর্ক বর্ণনায় ব্যবহার করা হয়, আর দ্বিতীয়টি ভাষা ও বাস্তব বিশ্বের মধ্যকার সম্পর্ক বর্ণনায় ব্যবহৃত হয়।
 
নির্দেশন বলতে শব্দ বা শব্দগুচ্ছের মাধ্যমে কোন বক্তার বাস্তব বিশ্বের কোন ব্যক্তি, বস্তু, ঘটনা, ইত্যাদিকে নির্দেশ করাকে বোঝায়। যেমন - ''তামীম একটা খেলনা গাড়ি উপহার পেল।'' বাক্যটিতে "খেলনা গাড়ি" শব্দগুচ্ছটি দিয়ে বক্তা একটি বাস্তব খেলনা গাড়িকে নির্দেশ করছেন এবং "তামীম" শব্দটি দিয়ে সম্ভবত একটি বাস্তব মনুষ্যশিশুকে নির্দেশ করছেন। একই শব্দ, শব্দগুচ্ছ বা বাক্য দিয়ে পরিস্থিতিভেদে বিভিন্ন বাস্তব বস্তু নির্দেশ করা যেতে পারে। যেমন - "তামীম" শব্দটি ঐ নামের অসংখ্য মানুষের যেকোনযেকোনও একটিকে নির্দেশ করতে পারে। "খেলনা গাড়ি" শব্দদ্বয় পৃথিবীর অসংখ্য খেলনা গাড়ির যেকোনটিকেযেকোনওটিকে নির্দেশ করতে পারে। আবার উলটোবভাবেউলটোভাবে দুইটি ভিন্ন শব্দ, শব্দগুচ্ছ বা বাক্য একই বস্তু বা ব্যক্তিকে বোঝাতে পারে। যেমন - "২০০৫ সালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান" এবং "জর্জ ওয়াকার বুশ" একই ব্যক্তিকে নির্দেশ করে। যাকে নির্দেশ করা হয়, তাকে বলা হয় নির্দেশিত (referent)।
 
অন্যদিকে অর্থ (ইংরেজি sense-এর বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে) বলতে একটি আর্থিক সম্পর্কের সংশ্রয়ে (system of semantic relationship) অন্যান্য কথার (expressions) প্রেক্ষিতে কোন একটি কথার অবস্থানকে বোঝায়। ভিন্ন ভিন্ন শব্দ বা শব্দগুচ্ছ কোন বাক্যে একই অর্থে (sense-এ) ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন - ''লাঠিটা খাড়া দাড়িয়েদাঁড়িয়ে আছে'' এবং "লাঠিটা উল্লম্ব দাঁড়িয়ে আছে" বাক্য দুইটিতে "খাড়া" ও "উল্লম্ব" একই অর্থে ব্যবহৃত।ব্যবহৃত হয়েছে।
 
একই শব্দ ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন - "নদীর পাড়" এবং "শাড়ির পাড়"-এ "পাড়" শব্দটি দুইটি ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত। এই ধরনের ঘটনাকে বাগর্থবিজ্ঞানীরা বহুঅর্থকতাবহু-অর্থকতা (polysemy) বা সমার্থকতাসমরূপিতা (homonymy) --- এই দুইটি ধারণার যেকোনযেকোনও একটির সাহায্যে ব্যাখ্যা করেন। কোনকোন্‌ ধারণাটি প্রযুক্ত হবে, তা সাধারণত নির্ভর করে আলোচ্য শব্দগুলির বুৎপত্তির (etymology)-র উপর।
 
অর্থ (sense) কোন বাস্তব বস্তুকে নির্দেশ করে না। এটা আসলে ঠিক কী নির্দেশ করে তা সংজ্ঞার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা কঠিন। অর্থ বিমূর্ত ও মানসিক। যখন একজন ব্যক্তি কোনকোনও কথা বুঝতে পারেন, তখন তিনি কথাটির অর্থ (sense) ধরতে পেরেছেন বলে গণ্য করা হয়।
 
সমস্ত কথা বা ভাষিক অভিব্যক্তির অর্থ (sense) আছে, তবে কোনকোনও অভিব্যক্তিতে নির্দেশন, অর্থাৎ বাস্তব জগতের কোন বস্তু, ব্যক্তি, ইত্যাদির প্রতি নির্দেশ থাকতেও পারে, না-ও থাকতে পারে।
 
কোনকোনও শব্দ বা শব্দগুচ্ছের যেমন একটি পূর্ণ বাক্যের মত ব্যাকরণগত সম্পূর্ণতা নেই, ঠিক একইভাবে কোনকোনও শব্দ বা শব্দগুচ্ছের অর্থ (sense) একটি বচনের মত আর্থিক সম্পূর্ণতা ও স্বাধীনতাস্বাধীনতার প্রকাশঅধিকারী করতেনয়। পারে না। কোনকোনও শব্দ বা শব্দের অর্থ জেনেই এটি কোন্‌ অর্থে ব্যবহৃত হচ্ছে তা বলা যায় না, একটি বৃহত্তর বচনের কাঠামোয় ফেলে এর অর্থ (sense) বিশ্লেষণ করতে হয়।
 
অর্থ (sense) বলতে আসলেই কী বোঝায়, তা সম্পর্কে বাগর্থবিজ্ঞানীরাও পুরোপুরি নিশ্চিত নন। এটা অনেকটা বিদ্যুতের মত, আমরা বিদ্যুত ব্যবহার করি এবং বিদ্যুৎ কীভাবে কাজ করে, তা নিয়ে অনেক কথা বলতে পারি কিন্তু এটা আসলে যে কী, তা আমরা পুরোপুরি কখনোই হয়ত বুঝতে পারব না।
 
== পাদটীকা ও তথ্যনির্দেশতথ্যসূত্র ==
<references/>