মনসামঙ্গল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন:
'''''মনসামঙ্গল''''' বা '''''পদ্মাপু্রাণ''''' [[মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্য|মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের]] [[মঙ্গলকাব্য]] ধারার অন্যতম প্রধান কাব্য। এই ধারার অপর দুই প্রধান কাব্য ''[[চণ্ডীমঙ্গল]]'' ও ''[[ধর্মমঙ্গল]]'' কাব্যের তুলনায় ''মনসামঙ্গল'' প্রাচীনতর।<ref name = banglasahityaparichay>''বাংলা সাহিত্য পরিচয়'', ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তুলসী প্রকাশনী, কলকাতা, ২০০৮ সংস্করণ</ref>{{Rp|১১৬}} এই কাব্যের আদি কবি [[হরিদত্ত|কানা হরিদত্ত]] সম্ভবত ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষ বা চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বর্তমান ছিলেন।<ref name = banglamangalkabyeritihas>''বাংলা মঙ্গলকাব্যের ইতিহাস'', আশুতোষ ভট্টাচার্য, এ. মুখার্জি অ্যান্ড কোং প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ২০০৯ সংস্করণ</ref>{{Rp|২৪৯}} অনুমিত হয়, ''মনসামঙ্গল'' কাব্যের উৎপত্তি [[পশ্চিমবঙ্গ|পশ্চিমবঙ্গের]] [[রাঢ়]] অথবা [[বিহার|বিহার অঞ্চলে]]।<ref name = banglasahityeritibrittaII>''বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত'', দ্বিতীয় খণ্ড, অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, মডার্ন বুক এজেন্সি প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ২০০৬-০৭ সংস্করণ</ref>{{Rp|৫১}}<ref name = banglamangalkabyeritihas/>{{Rp|২৪২-৪৮, ২৩০-৪০}} পরে পূর্ববঙ্গ ও উত্তরবঙ্গেও এই কাব্যের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।<ref name = banglasahityeritibrittaII/>{{Rp|৫১,৫২}} অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেম, “বাংলা দেশের নানা অঞ্চলে বহু মনসামঙ্গল কাব্য পাওয়া গিয়েছে, তন্মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের কাব্যগুলি ‘মনসামঙ্গল’ ও পূর্ববঙ্গে প্রায়শই ‘পদ্মাপুরাণ’ নামে পরিচিত।<ref name = banglasahityeritibrittaII/>{{Rp|৫১}}
'''''মনসামঙ্গল''''' [[মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্য|মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের]] [[মঙ্গলকাব্য]] ধারার অন্যতম প্রধান কাব্য। মধ্যযুগে রচিত তিনটি প্রধান মঙ্গলকাব্যের মধ্যে (অপর দুটি কাব্য হল ''[[চণ্ডীমঙ্গল]]'' ও ''[[ধর্মমঙ্গল]]'') ''মনসামঙ্গল'' সর্বাপেক্ষা প্রাচীন। [[চৈতন্য মহাপ্রভু|চৈতন্যদেবের]] আবির্ভাবের পূর্বেই এই কাব্যের জনপ্রিয়তা সমগ্র [[বঙ্গ|বঙ্গদেশ]] এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিতেও ছড়িয়ে পড়ে।
 
''মনসামঙ্গল'' কাব্যের প্রধান দেবতা সর্পদেবী [[মনসা]]। মনসা মূলগতভাবে অনার্য দেবী। ভারতের আদিবাসী ও অন্ত্যজ সমাজে সর্পদেবী মনসার পূজা সুপ্রচলিত। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, খ্রিষ্টীয় দশম-একাদশ শতাব্দীতে বাংলায় মনসার পূজা প্রবর্তিত হয়। ''[[পদ্মপুরাণ]]'', [[দেবীভাগবত পুরাণ]]'' ও ''[[ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ]]''-এর মতো কয়েকটি আধুনিক উপপুরাণ গ্রন্থে দেবী মনসার উল্লেখ পাওয়া যায়; এই গ্রন্থগুলি অবশ্য খ্রিষ্টীয় একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীর পূর্বে রচিত হয়নি। লৌকিক দেবী হলেও কালক্রমে মনসা ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক হিন্দুসমাজেও প্রতিপত্তি অর্জন করে; এমনকি [[চৈতন্য মহাপ্রভু|চৈতন্যদেবের]] সমসাময়িক কালে শিক্ষিত বাঙালি সমাজেও মনসার পূজা প্রচলিত হয়।<ref name = banglasahityeritibrittaII/>{{Rp|৫১}}<ref name = banglamangalkabyeritihas/>{{Rp|২০৫-২৩}}
''মনসামঙ্গল'' কাব্য সর্পদেবী [[মনসা|মনসার]] মাহাত্ম্যব্যঞ্জক। মনসা মূলগতভাবে অনার্য দেবী। খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় সহস্রাব্দে আর্য ও অনার্য সংস্কৃতির মেলবন্ধনকালে মনসার হিন্দু দেবসমাজের অন্তর্ভুক্ত হন। এই কাব্যের প্রধান আখ্যানটিও আবর্তিত হয়েছে মর্ত্যলোকে মনসার নিজ পূজা প্রচারের প্রয়াসকে কেন্দ্র করে। কাব্যের মূল উপজীব্য [[চাঁদ সদাগর|চাঁদ সদাগরের]] উপর দেবী মনসার অত্যাচার, চাঁদের পুত্র লখিন্দরের সর্পাঘাতে মৃত্যু ও পুত্রবধূ [[বেহুলা|বেহুলার]] আত্মত্যাগের উপাখ্যান।
 
খ্রিষ্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে প্রথম ''মনসামঙ্গল'' কাব্যধারাটিএকটি বিকাশআখ্যানকাব্য। লাভএই কাব্যের প্রধান আখ্যানটিও আবর্তিত হয়েছে মর্ত্যলোকে মনসার নিজ পূজা প্রচারের প্রয়াসকে কেন্দ্র করে। কাব্যের মূল উপজীব্য [[চাঁদ সদাগর|চাঁদ সদাগরের]] উপর দেবী মনসার অত্যাচার, চাঁদের পুত্র লখিন্দরের সর্পাঘাতে মৃত্যু ও পুত্রবধূ [[বেহুলা|বেহুলার]] আত্মত্যাগের উপাখ্যান। এই কাব্যে সেযুগের হিন্দু বাঙালি সমাজের সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতি, আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদি সম্পর্কে নানা অনুপূঙ্খ বর্ণনা পাওয়া যায়। চাঁদ সদাগর শুধুমাত্র এই কাব্যেরই নয়, বরং সমগ্র বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বলিষ্ঠ চরিত্র; বেহুলা-লখিন্দরের করুণ উপাখ্যানটিও তার মানবিক আবেদনের কারণে আজও বাঙালি সমাজে জনপ্রিয়।
 
''মনসামঙ্গল'' কাব্যের আদি কবি [[হরিদত্ত]]। [[বিজয় গুপ্ত]] এই কাব্যের প্রথম উল্লেখযোগ্য এবং [[নারায়ণ দেব]] এই কাব্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি। অন্যান্য কবিদের মধ্যে [[কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ]], [[বিপ্রদাস পিপলাই]] প্রমুখের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। আধুনিক কালে ''মনসামঙ্গল'' অবলম্বনে বিশিষ্ট নাট্যকার [[শম্ভু মিত্র]] ''[[চাঁদ বণিকের পালা]]'' নামে একটি নাটক রচনা করেন। চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ধারাবাহিকের আকারেও একাধিকবার এই পুনঃসৃজিত হয়েছে মনসামঙ্গল।