নরেশ গুহ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Istikalshah (আলোচনা | অবদান)
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
Istikalshah (আলোচনা | অবদান)
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
৮৬ নং লাইন:
 
অমিয় চক্রবর্তী নরেশ গুহর প্রথম কাব্য দুরন্ত দুপুরের সমালোচনা করেন; ‘মার্কিন প্রবাসীর পত্র’ শিরোনামে তা কবিতা পত্রিকায় (পৌষ ১৩৬০) ছাপা হয়েছিল। অনিঃশেষ (১৯৭৬) কাব্যটি নরেশকে উৎসর্গ করেন অমিয়।
 
==বুদ্ধদেব বসুর সাহিত্য প্রসঙ্গে ==
বুদ্ধদেব বসুর 'মহাভারতের কথা' আলোচনা প্রসঙ্গে নরেশ গুহ মশাই বুব-র কবি মানস ও সাহিত্য নিয়ে প্রতিনিয়ত নিজের সঙ্গে ও পরের সঙ্গে সংগ্রামের পরিচয় উত্থাপন করেছেন। অতি কাছের থেকে তিনি আধুনিক কবিদের কাছে প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠা বুদ্ধদেব বসুর সাহিত্য প্রেমী প্রাণটিকে অনুভব করতে পেরেছিলেন বলে তাঁর 'মহাভারতের কথা' নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ভালোবাসার মানুষ বুদ্ধদেব বসুর দুঃখ সুখ সাধনার কথা তাঁর অন্যান্য সৃষ্টির কথাও উত্থাপন করেছেন। এবং জানিয়েছেন। “ঊর্ধ্বশ্বাস ব্যস্ততা সত্ত্বেও ব্যাসদেব কৃত সেই বিশাল আকর গ্রন্থটি কীভাবে পাঠ করলে একালের হৃদয়মনের পক্ষে বিশেষভাবে উপযোগী এবং উপকারী হতে পারে তারই অনুসন্ধান করা হয়েছে বুদ্ধদেবের রচনায়। গভীর অন্তদৃষ্টি প্রসূত এই আলোচ্য গ্রন্থটি মূল | মহাভারতের অন্তর্গত কিছু মিথলজির উপরে নির্ভরশীল, যাকে বুদ্ধদেব বসু' পুরাণকথা' অভিধায় বিশেষিত করেছেন।" আলোচক গুহ এ প্রসঙ্গে বু, ব-র অভিপ্রায়টিকেও তাঁরই ভাষায় পরিবেশন করেছেন: “আমাদের আধুনিক বুদ্ধিতে যে-সব ব্যাপার অবিশ্বাস্য (কিন্তু সব চেয়ে বুদ্ধিমানেরাও পুরাকালের যা বিশ্বাস করতেন), আমি সেগুলিকে অবাস্তব ব'লে প্রত্যাখ্যান করিনি, বরং সেই সব বাস্তবাতীত রহস্যের মধ্যেই মর্মকথার অনুসন্ধান করেছি।... আমি দেখাতে চেয়েছি যে মহাভারত কোনো সুদূরবর্তী ধূসর স্থবির উপাখ্যান নয়, আবহমান মানবজীবনের মধ্যে প্রবহমান। এই কথাটা অবশ্য ভারতবাসীর অজানা নয়, তবু নতুন করে বলারও প্রয়োজন আছে।"
 
এখানে সমালোচনার সমালোচনা নয়, তার অবকাশও নেই। সমালোচনা করতে গিয়ে কবি নরেশ গুহ বিভিন্ন প্রবন্ধে যে গণ্য ভাষা ব্যবহার করেছেন তারই কিছুটা নমুনা দেবার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র। আমরা বলেছি 'মহাভারতের কথা'-র সমালোচনাবলি কি রসগ্রাহী আলোচনা বলি, এই রচনাটির গদ্যই আমার কাছে শ্রেষ্ঠ বলে মনে হয়েছে। এতে একই সঙ্গে 'মহাভারতের কথা' ও তার লেখকের মহিমা একযোগে সম্ভ্রম-সুন্দর-গম্ভীর ভাষায় পরিবেশন করে বুদ্ধদেব বসু যে মহাভারতের নায়ক ব্যাপারে একটা নতুন মাত্রা যোগ করেছেন, তা দ্ব্যার্থহীন ভাষায় সমর্থন করেছেন।
 
"যুধিষ্ঠিরের এই নায়কত্ব প্রতিষ্ঠার কাজটি খুব সহজ নয়। আমাদের মনে পড়ে যায় যে যোদ্ধা হিশেবে তিনি কাহিনীর মধ্যে নগণ্যতম বীর, প্রণয় ব্যাপারেও অর্জুনের অতি অযোগ্য তিনি। হয়তো তিনি ভীমের মতো নির্দয় নন, কিন্তু কোনো সাধারণ জুয়াড়ির মতোই তাঁর দ্যুতাসক্তি আমাদের বিচলিত করে। অথচ আশ্চর্য এই যে পর্বের পর পর্ব পাঠ করতে করতে আমাদের শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রম বোধের কিছু মাত্র হ্রাস হয়না, আমরা বরং নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারি কীভাবে ধীরে ধীরে তাঁর নৈতিক সত্তার উম্মীলন ও বিকাশ হচ্ছে।... বুদ্ধদেব আমাদের ভুলতে দেন না যে, বেদে এই মহাত্মার কোনো প্রকৃত আস্থা নেই, অপারগ তিনি সর্বজনগ্রাহ্য কোনো পবিত্র শাস্ত্রের অনুগামী হতে। অথচ ধর্মবকরূপে বনপর্বে উপস্থিত তাঁর পিতার, সেই সংশয়াচ্ছা, মিলনপ্রয়াসী, রহস্যময় দেবতাটির অনুমোদিত সংযম ও শান্তিতে পৌঁছনোর শিক্ষাটি আয়ত্ত করতে তাঁকে জীবনের বহু দুঃখ ও বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিলো। দ্বন্দ্বময় জীবনের দাবি মানতে বাধা তিনি, কেননা সংসারী মানুষ হিশেবে ঘটনাজাল উপেক্ষা করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব। তবুও কীভাবে এই জটিল জাল অবশেষে তিনি ছিন্ন করতে পেরেছিলেন তারই অনুসন্ধানে 'মহাভারতের কথা'র বৃহত্তর অংশ ব্যয়িত হয়েছে।” আলোচক নরেশ গুহ মহাভারতের কথা --কে এমন সম্রদ্ধভাষায় আলোচনা করেছেন এবং আলোচনায় এমন মুন্সীয়ানার
 
পরিচয় দিয়েছেন যে, এ রচনার পাঠক বুব-র গ্রন্থটি তো বটেই – মূল ব্যাস মহাভারত পাঠের জন্যেও উন্মুখ হয়ে ওঠে। প্রবন্ধ-নিবন্ধ বুক রিভিউ-শোক জনিত স্মৃতি রোমন্থনাদির মধ্যে ব্যবহৃত গদ্য দেখে কোনো সৃষ্টিশীল লেখকের গদ্যশৈলীর পুর্ণাঙ্গ আলোচনা অসম্ভব। এখানে আমরা শুধু দেখাতে চেষ্টা করেছি শব্দের ওপরে কতখানি কর্তৃত্ব থাকলে একজন লেখক বিষয় অনুযায়ী ভাষাকে দিয়ে কী জাতের এবং কী পাতের প্রতিমা রচনা করতে পারেন। আমরা কবি নরেশ গুহর যে কটি রচনার মধ্যে দিয়ে যেতে পেরেছি, তাতে দেখেছি, রচনাগুলোতে সুখের কথা আছে, আছে দুঃখের কথা, আনন্দের কথা আছে, আছে মৃত্যুজনিত শোক ব্যথার কথা, আছে সম্ভ্রম প্রকাশ। আছে কটু কথায় কথা, আছে বিরক্তি, আছে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপও লঘু-গুরু-গম্ভীর- বৈদগ্ধ্য প্রকাশন কথা যেমন আছে, তেমনি আছে মরমী উপলব্ধির অনুরণনন। অনেক দেশি-বিদেশি লেখকের নাম এবং লেখকদের উপযুক্ত রচনার উদ্ধৃতি আছে যা তাঁর অতি পাঠক্রিয়া এবং উপলব্ধির বিশালতা ও বিশিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার প্রকাশ কিন্তু রচনাকে কণ্টকিত করেছে বলে মনে করায় না, বরং বক্তব্যকে প্রামান্য ভিত্তির ওপর দাঁড় করায়। কোথাও অহমিকা প্রকাশের চিহ্নমাত্র ধরা পড়ে না কোনো রচনায়। আমাদের বিশ্বাস, একজন লেখকের কৃতিত্ব সেখানেই, যেখানে তিনি তাঁর লেখা পাঠকালে পাঠককে সেই মুহূর্তে বিশ্বাস করাতে পারেন, লেখক যেভাবে যা বলেছেন, তার আর অন্যথা হয়না; আর তাঁর রচনাশৈলী তরতর করে পাঠককে টেনে নিয়ে যেতে পারে রচনার শেষ ছেদচিহ্ন পর্যন্ত এবং ভাবাতে পারেন তাঁর বক্তব্য বিষয়ে। কম কথা নয়, বর্তমান লেখক কবি নরেশ গুহর নানা ফুলের একতোড়া রচনা মাথাকে ক্লান্ত না করেই পড়ে গেছেন এবং 'অন্তরালে'-র যেটুকু 'ধ্বনি-প্রতিধ্বনি ধরতে পেরেছেন, প্রকাশ করতে প্রয়াসী হয়েছেন।