নরেশ গুহ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Istikalshah (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
Istikalshah (আলোচনা | অবদান)
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
৯ নং লাইন:
 
ছবি উঠেছিল। প্রায় বছর ঘুরে যাওয়ার পর ঈষৎ অপ্রস্তুত শ্রান্ত দৃষ্টি কবির সেই ছবিতে রবীন্দ্রনাথ নিজে হাতে অটোগ্রাফও করে দিয়েছিলেন। তবে ঢাকার অতিথিদের মহাআয়োজনের সেই ছবি বহু পরে বহু সন্ধানেও নজরে পড়েনি নরেশ গুহর। তাঁর স্মৃতিতে বরং উজ্জ্বল ছিল চিত্রশিকারের পৌষপ্রাতে বেপরোয়া ছাত্রটির প্রতি কবির সতর্কবাণী। গাড়িতে ওঠার সময় মৃদু হেসে রবীন্দ্রনাথ বলে উঠেছিলেন: ‘‘গাড়ি চাপা পড়বে নাকি গো?’’
 
==অমিয় চক্রবর্তীর চিঠি ==
বিশ শতকের তিরিশোত্তর আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি অমিয় চক্রবর্তী (১৯০১-৮৬) ও পঞ্চাশের দশকের দুরন্ত দুপুরের কবি নরেশ গুহর (১৯২৩-২০০৯) মধ্যে পত্রালাপের সূচনা ১৯৪২-এ। তাঁকে লেখা অমিয় চক্রবর্তীর চিঠি সম্পর্কে নরেশ গুহ নিজেই জানিয়েছেন, ‘‘১৯৪২ থেকে শুরু করে ১৯৮৬ সালে তাঁর প্রয়াণকাল পর্যন্ত কবি অমিয় চক্রবর্তী আমাকে দুই শতাধিক অতি চমৎকার চিঠি লিখেছিলেন। বহু চিঠিই, ছিলো রীতিমতো দীর্ঘ এবং নানাভাবে মূল্যবান।
 
এই পত্রাবলির প্রেরক ও প্রাপকের ব্যক্তিগত ও সাহিত্যিক সম্পর্ক পিতা-পুত্রের মতো ঘনিষ্ঠ ছিল। পুত্রহীন অমিয় চক্রবর্তী ছাত্র নরেশকে পুত্রের মতো ভালোবাসতেন, মার্কিনপ্রবাসী কবি তাঁর ওপর নির্ভরশীলও ছিলেন। ১৯৫১ সালে লেখা এক চিঠিতে অমিয় নরেশকে লিখেছেন : ‘তুমি বহুদিন আমাদের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত আছো, তোমাকে ঘরের ছেলে বলেই মনে করি।’ (অমিয় চক্রবর্তী-র পত্র ৫, অহর্নিশ, নরেশ গুহ সংখ্যা, ২০০৯, পৃ ২৮) অমিয় চক্রবর্তীর একমাত্র সন্তান সেমন্তী ভট্টাচার্য বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে ৮ জানুয়ারি ১৯৯৩ তারিখে জানিয়েছেন : ‘বাবার সঙ্গে পরিচিত-ধন্য শ্রীনরেশ গুহ দীর্ঘকাল বাবার রচনা ও চিন্তাধারার সঙ্গে জড়িত থেকেছেন।’ (অহর্নিশ, নরেশ গুহ সংখ্যা, ২০০৯)
 
১৯৪৩ সালে নরেশ কী বিষয়ে এম এ পড়বেন – সম্ভবত এ-সম্পর্কে পরামর্শ চেয়ে অমিয়কে লিখেছিলেন। ১৯৪৩-র ১লা জুন অমিয় লিখছেন : ‘ইংরেজি নিয়ে পড়া মন্দ কি?’ (এখানে সংকলিত পত্র ৫)। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে এমএ ক্লাসে নরেশ শিক্ষকরূপে পেয়েছিলেন অমিয়কে। ১৯৪৫-এ এমএ পাশ করার পরের বছর অধ্যাপক অমিয় চক্রবর্তীর এলগিন রোডের বাড়িতে একদিন দেখা করেন তাঁর সঙ্গে (১৯৪৬)। দেশভাগের আগে দাঙ্গা-উপদ্রুত নোয়াখালিতে মহাত্মা গান্ধীর শান্তিমিশনে অমিয় চক্রবর্তীর সঙ্গী হয়েছিলেন নরেশ। ১৯৪৭-এর ২৯শে এপ্রিল অমিয়র সঙ্গে পাটনায় অবস্থানরত মহাত্মা গান্ধীর সাক্ষাৎ লাভ করেন নরেশ অমিয়র সঙ্গী হয়ে।
 
‘অমিয়-অধিগত ছিলেন অনেকটা, অমিয় চক্রবর্তীর মনোজগতের এক দ্বারী।’ – এই মত নরেশের ছাত্র ও পরে সহকর্মী ড. অমিয় দেবের। এখানে অমিয়-র যেসব চিঠি গ্রথিত, তার প্রথমটি (৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪২) থেকেই নবীন কবিকে পরামর্শ ও উপদেশ দিয়ে, উৎসাহ দিয়ে, তাঁর কবিতার প্রশংসা ও সমাদর করেছেন। এমনকি কলকাতায় বাসা ভাড়া পাওয়ার হদিস দিয়েও চিঠি লিখেছেন (জীবনানন্দ দাশের একটি কক্ষ সাব-লেট নেওয়ার সম্পর্কে)।
 
এবার দুইজনের সাহিত্যিক যোগাযোগের খতিয়ান। সিগনেট প্রেসে যুক্ত থাকাকালে নরেশ অমিয়র দুটি কাব্য – দূরযাত্রী ও পারাপার প্রকাশনায় সহযোগিতা করেন। নাভানা থেকে প্রবন্ধের বই সাম্প্রতিক প্রকাশেও নরেশের সাহায্যের কথা উল্লেখ করেছেন লেখক। দুই খন্ডে অমিয় চক্রবর্তীর কাব্যসংগ্রহ সম্পাদনা করেছেন নরেশ গুহ। রবীন্দ্রনাথ ও প্রমথ চৌধুরীকে লেখা অমিয়র চিঠিপত্রের দুটি স্বতন্ত্র গ্রন্থের সটীক সংস্করণ সম্পাদনা করেছেন তিনি।
 
নরেশ গুহর পত্রোত্তরে অমিয় আত্মচরিতের খসড়া ‘রচনা’ করেছেন (অহর্নিশ, নরেশ গুহ সংখ্যা, ২০০৯, পৃ ১১৬-১৫৬)।
 
পারাপার কাব্যের সমালোচনা লেখেন নরেশ (কবিতা, আষাঢ় ১৩৬২; পরে অন্তরালে ধ্বনি প্রতিধ্বনি গ্রন্থে সংকলিত)। ‘অমিয় চক্রবর্তীর মৃত্যু’ প্রবন্ধও এই গ্রন্থে আছে। কবিতায় সমালোচনা করেন অমিয়র Modern Tendencies in English Literature বইয়ের (আষাঢ় ১৩৫৩)।
 
অমিয় চক্রবর্তী নরেশ গুহর প্রথম কাব্য দুরন্ত দুপুরের সমালোচনা করেন; ‘মার্কিন প্রবাসীর পত্র’ শিরোনামে তা কবিতা পত্রিকায় (পৌষ ১৩৬০) ছাপা হয়েছিল। অনিঃশেষ (১৯৭৬) কাব্যটি নরেশকে উৎসর্গ করেন অমিয়।