সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Istikalshah (আলোচনা | অবদান)
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
Istikalshah (আলোচনা | অবদান)
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
৬১ নং লাইন:
তথা তাতে যার জের, সে সংসারও।
 
 
== সাহিত্যচিন্তা ==
=== কাব্যরীতি (বুদ্ধদেব বসুর চোখে )===
তাঁর কাব্যসংগ্রহের ভূমিকায় , বুদ্ধদেব বসু লিখেছেন :
 
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিশ শতকের একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি, তাঁর মতো নানাগুণসমন্বিত পুরুষ রবীন্দ্রনাথের পরে আমি অন্য কাউকে দেখিনি। বহুকাল ধ'রে তাঁকে প্রত্যক্ষ দেখেছিলুম বলে, তাঁর মৃত্যুর পর থেকে একটি প্রশ্ন মাঝে-মাঝে আমার মনে জাগছে : যাকে আমরা প্রতিভা বলি, সে-বস্তুটি কী? তা কি বুদ্ধিরই কোনো উচ্চতর স্তর, না কি বুদ্ধির সীমাতিক্রান্ত কোনো বিশেষ ক্ষমতা, যার প্রয়োগের ক্ষেত্র এক ও অনন্য। ইংরেজি 'genius' শব্দে অলৌকিকের যে আভাস আছে, সেটা স্বীকার্য হ'লে প্ৰতিভাকে এক ধরনের আবেশ বলতে হয়, আর সংস্কৃত 'প্রতিভা' শব্দের আক্ষরিক অর্থ অনুসারে তা হ'য়ে ওঠে বুদ্ধির দীপ্তি, মেধার নামান্তর। যদি প্রতিভাকে অলৌকিক ব'লে মানি, তাহ'লে বলতে হয় যে সহজাত বিশেষ একটি শক্তির প্রভাবেই উত্তম কবিতা রচনা সম্ভব, রচয়িতা অন্যান্য বিষয়ে হীনবুদ্ধি হ'তে পারেন এবং হ'লে কিছু এসে যায় না, উপরন্তু ঐ বিশেষ ক্ষমতাটি শুধু দৈবক্রমে সহজাতভাবেই প্রাপণীয়। পক্ষান্তরে, প্রতিভাকে উন্নত বুদ্ধি ব'লে ভাবলে কবি হ'য়ে ওঠেন এমন এক ব্যক্তি যাঁর ধীশক্তি কোনো-কোনো ব্যক্তিগত বা ঐতিহাসিক কারণে কাব্যরচনায় নিয়োজিত হয়েছিলো, কিন্তু সেই কারণসমূহ ভিন্ন হ'লে যিনি বণিক বা বিজ্ঞানী বা কূটনীতিজ্ঞরূপে বিখ্যাত হ'তে পারতেন। এই দুই বিকল্পের মধ্যে কোনটা গ্রহণীয়?
৯০ ⟶ ৯১ নং লাইন:
আর-একটি কথা বহু বছর ধ'রে শুনে আসছি : সুধীন্দ্রনাথের কবিতা দুর্বোধ্য। এ বিষয়ে একটি পুরোনো লেখায় যা বলেছি, এখানে তার পুনরুক্তি করা ভিন্ন উপায় দেখি না। সুধীন্দ্রনাথের কবিতা দুর্বোধ্য নয়, দুরূহ; এবং সেই দুরূহতা অতিক্রম করা অল্পমাত্র আয়াসসাপেক্ষ। অনেক নতুন শব্দ, বা বাংলায় অচলিত সংস্কৃত শব্দ তিনি ব্যবহার করেছেন : তাঁর কবিতার অনুধাবনে এই হ'লো একমাত্র বিঘ্ন। বলা বাহুল্য, অভিধানের সাহায্য নিলে এই বিঘ্নের পরাভবে বিলম্ব হয় না। এবং অভিধান দেখার পরিশ্রমটুকু বহুগুণে পুরস্কৃত হয়, যখন আমরা পুলকিত হ'য়ে আবিষ্কার করি যে আমাদের অজানা শব্দসমূহের প্রয়োগ একেবারে নির্ভুল ও যথাযথ হয়েছে, পরিবর্তে অন্য কোনো শব্দ সেখানে ভাবাই যায় না। সুধীন্দ্রনাথের কবিতার গঠন এমন যুক্তিনিষ্ঠ, এমন সুমিত তাঁর বাক্যবিন্যাস, পংক্তিসমূহের পারম্পট এমন নির্বিকার, এবং শব্দপ্ৰয়োগ এমন যথার্থ, যে মাঝে-মাঝে দুরূহ শব্দ ব্যবহার না করলে, তাঁর কবিতা হ'তো না অমন সুমিত ও যুক্তিসহ, অমন ঘন ও সুশৃঙ্খল—অর্থাৎ, তাঁর চরিত্রই প্রকাশ পেতো না। আর এই দুরূহতা নিয়ে আপত্তি—পঁচিশ বছর আগেকার তুলনায় তা এখন অনেক মৃদু হওয়া উচিত, কেননা ইতিমধ্যে তাঁর প্রবর্তিত বহু শব্দ লেখক ও পাঠক-সমাজে প্রচলিত হ'য়ে গেছে; অল্পবয়সীরা হয়তো জানেনও না যে 'অন্বিষ্ট', 'অভিধা', 'ঐতিহ্য', 'প্রমা', 'প্রতিভাস', 'অবৈকল্য', 'ব্যক্তিস্বরূপ', 'বহিরাশ্রয়', 'কলাকৈবল্য' প্রভৃতি শব্দ ও শব্দবন্ধ— যা তাঁরা হয়তো কিছুটা যথেচ্ছভাবেই ব্যবহার করছেন—এগুলোর প্রথম ব্যবহার হয় সুধীন্দ্রনাথের কবিতায় ও প্রবন্ধে, এমনকি 'ক্লাসিকাল' অর্থে 'ধ্রুপদী' শব্দটিও তাঁরই উদ্ভাবনা। এই ধরনের শব্দ-সমবায়ের সাহায্যে তিনি যুগল সিদ্ধিলাভ করেছেন : একটিও ইংরেজি শব্দ ব্যবহার না ক'রে, বা অগত্যা চিন্তাকে তরল না ক'রে, লিখতে পেরেছেন জটিল ও তাত্ত্বিক বিষয়ে প্রবন্ধ, এবং তাঁর কবিতাকে দিয়েছেন এমন এক শ্রবণসুভগ সংগতি ও গাম্ভীর্য, যাকে বাংলা ভাষায় অপূর্ব বললে বেশি বলা হয় না। এবং এই সব শব্দ-রচনার দ্বারা, বাংলা ভাষার সম্পদ ও সম্ভাবনাকে তিনি কতদূর বাড়িয়ে দিয়েছেন, তা হয়তো না বললেও চলে। আধুনিক বাংলার ও আধুনিক যুগের একজন শ্রেষ্ঠ কবির এই কাব্যসংগ্রহ যাঁরা প্রথমবার পড়বেন, তাঁরা আমার ঈর্ষাভাজন, আর যাঁরা চেনা কবিতার সঙ্গে নিবিড়তর সম্বন্ধস্থাপনের জন্য এগিয়ে আসবেন, আমি নিজেকে তাঁদেরই সতীর্থ ব'লে মনে করি, কেননা আমি জানি যে আমার অবশিষ্ট আয়ুষ্কালে স্বল্প যে-ক'টি গ্রন্থ আমার নিত্যসঙ্গী হবে,তাঁর কাব্যসংগ্রহ হবে তারই অন্যতম।
 
==গদ্য==
===গদ্যভাষা===
প্রবন্ধ
সুধীন্দ্রনাথ দত্তের প্রবন্ধগ্রন্থ মাত্র দুটি, 'স্বগত' ও 'কুলায় ও কালপুরুষ'। 'স্বগত বেরোয় ১৯৩৮-এ, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৯৫৭-তে; ‘কুলায় ও কালপুরুষ' বেরোয় ১৯৫৭-তে। উভয় গ্রন্থই বহুদিন অমুদ্রিত। এই সংগ্রহ তাদেরই পুনর্মুদ্রণ। কেবল একটি নূতন প্রবন্ধ এতে যোগ হয়েছে, 'স্বগত' দ্বিতীয় সংস্করণ ও 'কুলাঙ্গ ও কালপুরুষ' প্রকাশের পরে লেখা, তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন আগে। অগ্রন্থিত ও অপ্রকাশিত আরো প্রবন্ধ ও প্রবন্ধপ্রতিম রচনা তাঁর রয়েছে।