বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
রিজওয়ান আহমেদ (আলোচনা | অবদান)
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা
রিজওয়ান আহমেদ (আলোচনা | অবদান)
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা
৪৭ নং লাইন:
 
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার প্রতি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৫৪ তম অধিবেশনে অ্যাকশন ফর এ কালচার অব পিস কর্মসূচী ঘোষণার সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং কমিশনেরও প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য। বর্তমানে জাতিসংঘের এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতময় এলাকায় চলমান শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, যার সঙ্গে বাংলাদেশ গভীরভাবে জড়িত। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী শীর্ষস্থানে থাকা দেশসমূহের অন্যতম বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এ ভূমিকার সূত্রপাত ঘটে ১৯৮৮ সালে ইরান-ইরাক মিলিটারি অবজারভেশন গ্রুপ (ইউএনআইআইএমওজি) এবং নামিবিয়াতে কার্যরত ইউনাইটেড নেশনস ট্রাঞ্জিশন অ্যাসিসট্যান্স গ্রুপে (ইউএনটিএজি) যোগদানের মাধ্যমে। পরবর্তী সময়ে ইউনিকম (ইউএনআইকেওএম) ফোর্সের অংশ হিসেবে গালফ যুদ্ধের সময় কুয়েতে এবং সৌদি আরবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি প্রকৌশল ব্যাটালিয়ন পাঠানো হয়। তখন থেকে বাংলাদেশ জাতিসংঘ পরিচালিত ৪৫টি শান্তিরক্ষা মিশন কার্যক্রমের মাধ্যমে ২৫টি রাষ্ট্রে ৮৩,০০০ জন শান্তিরক্ষী পাঠানোর মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে চলেছে। এই শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মিশন গুলো হলো: নামিবিয়াতে ইউএন ট্রাঞ্জিশন অ্যাসিসট্যান্স গ্রুপ (ইউএনটিএজি), কম্বোডিয়াতে ইউএন ট্রাঞ্জিশন অ্যাসিসট্যান্স গ্রুপ (ইউএনটিএসি) এবং ইউএন মিলিটারি লিঁয়াজো টীম (ইউএনএমএলটি), সোমালিয়াতে ইউএন অপারেশনস (ইউএনওএসওএম), উগান্ডা/রুয়ান্ডাতে ইউএন অবজার্ভার মিশন (ইউএনওএমইউআর), মোজাম্বিকে ইউএন অপারেশনস (ইউএনওএমওজেড), যুগোশ্ললাভিয়াতে ইউএন মিশন (ইউএনপিআরওএফওআর), লাইবেরিয়াতে ইউএন মিশন (ইউএনএমআইএল), হাইতিতে ইউএন মিশন (ইউএনএমআইএইচ), তাজাকিস্তানে ইউএন মিশন অব অবজার্ভার (ইউএনএমওটি), পশ্চিম সাহারাতে ইউএন মিশন ফর দ্যা রেফারেন্ডাম (এমআইএনইউআরএসও), সিয়েরা লিওনে ইউএন অ্যাসিসট্যান্স মিশন (ইউএনএএমএসআইএল), কসোভোতে ইউএন মিশন (ইউএনএমআইকে), জর্জিয়াতে ইউএন অবজার্ভার মিশন (ইউএনওএমআইজি), পূর্ব তিমুরে ইউএন মিশন ইন সাপোর্ট (ইউএনএমআইএসইটি), কঙ্গোতে ইউএন অর্গানাইজেশন মিশন (এমওএনইউসি), কোত দ্য’ল্যূভরে এবং ইথিওপিয়া/ইরিত্রিয়াতে ইউএন অপারেশনস (ইউএনএমইই)। ২০১০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ১০,৫৭৪ জন (সামরিক বাহিনী এবং পুলিশ) শান্তিরক্ষী সদস্যকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করে এবং ১২টি মিশনে ১১টি রাষ্ট্রে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা কর্মরত রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা দেশের জন্য অন্যতম শীর্ষ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী শক্তি। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা তাঁদের দায়িত্ববোধ, কর্মনিষ্ঠা এবং দক্ষতা দ্বারা উচু মর্যাদায় আসীন হয়েছে এবং তা বিশ্ববাসীর কাছে স্বীকৃত ও প্রসংশিত হয়েছে। সংকটকালীন সময়ে বিশ্বশান্তি রক্ষায় ঝুকিপূর্ণ দায়িত্ব পালনকালে ৮৮ জন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষা কর্মী এ পর্যন্ত তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছে।
==বাংলাদেশে জাতিসংঘের ভূমিকা==
বর্তমানে বাংলাদেশে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম ব্যাপক আকারে দেখা যায়। বাংলাদেশের জনগণের উন্নয়ন ও অগ্রগতির লক্ষ্যে ১০ টির বেশি জাতিসংঘ সংস্থা বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে সরকার এবং জনগণের সাথে একত্রিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। জাতিসংঘ সংস্থাসমূহের কাজের ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে অর্থনীতি, বিদ্যুৎ শক্তি, পরিবেশ, জরুরী সহায়তা, শিক্ষা, দুর্যোগ, খাদ্য, জেন্ডার ইস্যু, সুশাসন, স্বাস্থ্য, মানবাধিকার, আদিবাসী জনগোষ্ঠী, অভিগমন, পুষ্টি, অংশীদারিত্ব, জনসংখ্যা, দারিদ্র, শরণার্থী, শহরায়ন, কর্মসংস্থান এবং জীবনধারণ। জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ দেশের সুশাসনের লক্ষ্যে বিভিন্ন অ্যাক্ট ও অর্ডিন্যান্স তৈরিতে, এবং মানবাধিকার ইস্যু সমূহে ঝুকিপূর্ণ কর্মপরিকল্পনার উন্নয়নে এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিতে এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নীতিগত সমর্থন দিয়ে থাকে।
 
জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জাতিসংঘ উন্নয়ন সহায়তাকারী কাঠামোর (আনডাফ) মাধ্যমে জাতিসংঘের সকল সংস্থা একত্রিত হয়ে যৌথভাবে বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বে উন্নয়ন ধারণার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী বাংলাদেশে অবস্থিত জাতিসংঘের অন্যতম প্রধান শাখা জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি) জাতিসংঘ টিমের সাথে একত্রিত হয়ে আনডাফ-এর বাস্তবায়ন এবং উন্নয়নে সহায়তা করে থাকে। এই লক্ষ্যে ইউএনডিপি সরকারি সংস্থাসমূহকে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং দেশের দারিদ্র বিমোচন কৌশলপত্র (পিআরএসপি) তৈরিতে সহায়তা করে যাচ্ছে।
 
জাতিসংঘ শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থার (ইউনেস্কো) উদ্যোগে সুন্দরবন এবং আরো কিছু ঐতিহাসিক স্থান বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পনেরো শতকে নির্মিত পাহাড়পুর বিহার এবং বাগেরহাটের বিভিন্ন মসজিদের সংরক্ষণের লক্ষ্যে ইউনেস্কো ১৯৮৫ সালে এক আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে। ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতির ক্ষেত্রেও ইউনেস্কো প্রধান ভূমিকা পালন করে এবং প্রতি বছর বিশ্বের সর্বত্র ইউনেস্কোর তত্বাবধানে এই দিন মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে থাকে।
 
জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)-এর তত্বাবধানে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশের সর্বত্র গভীর নলকুপ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। বিশ শতকের আশি ও নববইয়ের দশকে রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ, প্রজননকালীন স্বাস্থ্যসেবা, এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় সহায়তার ক্ষেত্রে ইউনিসেফ বিশেষ ভূমিকা রাখে। বিশ্বখাদ্য ও কৃষি সংস্থা দেশের বৃহত্তর কৃষি সেক্টরের সাথে জড়িত এবং বাংলাদেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের যে লক্ষ্য তা পূরণে পর্যাপ্ত ধান, গম এবং অন্যান্য কৃষি উপকরণ দিয়ে সহায়তা করে থাকে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে কৌশলগত পরামর্শকমূলক সেবা এবং কমোডিটি সাপোর্ট দিয়ে থাকে। বাংলাদেশে ইউএনএফপিএ এ পর্যন্ত ছয়টি কান্ট্রি প্রোগ্রাম সম্পন্ন করেছে এবং বর্তমানে সপ্তম কান্ট্রি প্রোগাম (২০০৬-২০১০) বাস্তবায়নের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে স্থিতিশীলতা আনয়নের ক্ষেত্রেও ইউএনএফপিএ যুক্ত আছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বাংলাদেশের জনশক্তির শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে এবং বাংলাদেশের শ্রম আইন আইএলও’র নীতিমালার সাথে ভারসাম্য রেখে প্রণীত হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশের কাজের বিনিময়ে খাদ্য এবং ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) কার্যক্রমে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) বাংলাদেশ সরকারের সাথে মায়ানমার থেকে আগত ২৮,০০০ শরণার্থীর কল্যাণে এবং তাদের জীবনযাত্রার উন্নয়নে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক এবং বাংলাদেশ ১৯৭২ সাল থেকে যৌথভাবে উন্নয়নের ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক দারিদ্র দূরীকরণের মাধ্যমে উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বাংলাদেশের সহযোগী হয়ে কাজ করে থাকে। বিশ্বব্যাংক অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, বেসরকারী সংস্থা, সুশীল সমাজ, প্রাতিষ্ঠানিক লোকজন এবং স্থানীয় স্টক হোল্ডারদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এছাড়াও বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রজেক্টে ঋণ সহায়তা দিয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থা (আইএমএফ)-এর সাথে বাংলাদেশের ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। আইএমএফ’র ঋণ দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আনয়নে সহায়তা করে থাকে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা উন্মুক্ত করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের জনগনের স্বাস্থ্য উন্ন্য়ন এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে আসছে। ডব্লিউএইচও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য এবং ঔষুধ নীতি পর্যবেক্ষন করছে।
 
বাংলাদেশে অবস্থিত জাতিসংঘের অনেক সংস্থা আর্থ-সামজিক প্রজেক্ট তৈরিতে সহায়তার লক্ষ্যে দেশের জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচী, ফেলোশীপ অথবা গবেষণার জন্য ফান্ড প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশের উন্নয়ন কৌশল জাতিসংঘের সংস্থা সমূহের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় এবং জাতিসংঘের এই সংস্থাসমূহের একটি করে অফিসও বাংলাদেশে রয়েছে।
 
বাংলাদেশ এবং জাতিসংঘের বিগত বছরের যে সম্পর্ক তা দ্বারা বাংলাদেশ সংবিধানের কার্যকারিতা সুস্পষ্ট। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি জাতিসংঘের মাধ্যমে বিশ্বে আরো সমুন্নত হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে দ্বিধা বিভক্ত এবং অর্থনৈতিক ভাবে প্রতিদ্ধন্ধিতা পূর্ণ দ্বিমেরু কেন্দ্রীক বিশ্বে জাতিসংঘ একমাত্র সংস্থা যা বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করে রাখতে পারে। বাংলাদেশ নীতিগতভাবে তাই জাতিসংঘের মূলনীতিসমূহ মেনে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
 
== শান্তিরক্ষা ==