তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
৯৫ নং লাইন:
====মূল্যায়ন====
তারাশঙ্কর যে সময় আঞ্চলিক উপন্যাস রচনায় অগ্রসর হন, সেই সময় বাংলা সাহিত্যে গ্রামীণ জীবনকে কেন্দ্র করে আধুনিক উপন্যাস রচনায় কিছুটা ভাটা পড়েছিল।<ref>"তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়: উপন্যাসে ও উপকথায় অকৃত্রিম", সুরেশচন্দ্র মৈত্র, ''প্রসঙ্গ: বাংলা উপন্যাস'', সম্পাদনা: ড. অরুণ সান্যাল, ওয়েস্টবেঙ্গল পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৯৬০ সংস্করণ, পৃ. ২৯৩-৯৫</ref> এই পরিস্থিতিতে তারাশঙ্কর সারা জীবন ধরে নিজের পরিচিত ভূখণ্ডের জনজীবন থেকেই নিজের উপন্যাসের উপাদান সংগ্রহ করে গিয়েছেন। ক্ষেত্রবিশেষে তাঁর উপন্যাসে কল্পনার অবকাশ থাকলেও এগুলি প্রধানত বাস্তব জীবন ও সমাজচিত্রের আধারে গড়ে উঠেছে। এই কারণে গবেষক সুরেশচন্দ্র মৈত্র লিখেছেন, তারাশঙ্কর হলেন "রাঢ়ের অকৃত্রিম একনিষ্ঠ শিল্পী; [[চণ্ডীদাস|চণ্ডীদাসের]] পর বাংলা সাহিত্যে রাঢ়ের এত বড় নাগরিক দেখা দেননি। রাঢ়ই তাঁর পৃথিবী, বসুন্ধরা।… তারাশংকর রাঢ়ের আদিম প্রকৃতির আধুনিক প্রতিভূ।"<ref>"তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়: উপন্যাসে ও উপকথায় অকৃত্রিম", সুরেশচন্দ্র মৈত্র, ''প্রসঙ্গ: বাংলা উপন্যাস'', সম্পাদনা: ড. অরুণ সান্যাল, ওয়েস্টবেঙ্গল পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৯৬০ সংস্করণ, পৃ. ২৯৫-৯৬, ৩১৮</ref> তারাশঙ্করের সমসাময়িক [[কল্লোল (পত্রিকা)|কল্লোল]] গোষ্ঠীর লেখকদের প্রধান উপজীব্য ছিল বৈধ ও অবৈধ প্রেম। সেই প্রসঙ্গ তারাশঙ্করও গ্রহণ করেছেন, তবে জীবনের অন্যান্য প্রসঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করে তার মূল্য বিবেচনা করেছেন।<ref>"তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়: উপন্যাসে ও উপকথায় অকৃত্রিম", সুরেশচন্দ্র মৈত্র, ''প্রসঙ্গ: বাংলা উপন্যাস'', সম্পাদনা: ড. অরুণ সান্যাল, ওয়েস্টবেঙ্গল পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৯৬০ সংস্করণ, পৃ. ২৯৬</ref> উপন্যাসের "‘ক্রনিকল’-ধর্মিতা" বজায় রাখার ব্যাপারে তারাশঙ্কর তৎপর ছিলেন। ''ধাত্রীদেবতা'', ''কালিন্দী'', ''গণদেবতা'', ''পঞ্চগ্রাম'', ''হাঁসুলী বাঁকের উপকথা'' প্রভৃতি উপন্যাসগুলি মূলত সমাজজীবনের উপাখ্যান। পরবর্তীকালে তারাশঙ্কর বাহ্যজীবন থেকে মানুষের অন্তর্জীবনের উপরেও আলোকপাত করেছেন। এই প্রসঙ্গে ''আরোগ্য নিকেতন'' ও ''সপ্তপদী'' উপন্যাস দু’টির নাম বিশেষভাবে উল্লেখনীয়।<ref>"তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়: উপন্যাসে ও উপকথায় অকৃত্রিম", সুরেশচন্দ্র মৈত্র, ''প্রসঙ্গ: বাংলা উপন্যাস'', সম্পাদনা: ড. অরুণ সান্যাল, ওয়েস্টবেঙ্গল পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৯৬০ সংস্করণ, পৃ. ৩১৩</ref>
 
===ছোটোগল্প===
[[নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়|নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের]] মতে, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা অনেক গল্পই "আখ্যায়িকা"-ধর্মী (Tale)।<ref>''সাহিত্যে ছোটগল্প'', [[নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়]], মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১৪০৫ সংস্করণ, পৃ. ১৯৪</ref> তারাশঙ্করের ছোটোগল্পে সমাজের নানা শ্রেণির মানুষেরা উঠে এসেছে – এদের মধ্যে একদিকে যেমন রয়েছে দুলে, বাগদি, কাহার প্রভৃতির অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষ, আবার অন্যদিকে রয়েছে ক্ষয়িষ্ণু সামন্ততন্ত্রের প্রতিনিধিস্থানীয়েরাও। গভীর আস্তিক্যবোধ তাঁর মানসিকতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অধ্যাত্মবাদ ও [[মহাত্মা গান্ধী|মহাত্মা গান্ধীর]] অহিংসার আদর্শকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারাশঙ্করের সৃষ্ট চরিত্রগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে।<ref>"রবীন্দ্রোত্তর বাংলা ছোটগল্প: আধুনিকতার নানা মাত্রা", সাবিত্রী নন্দ চক্রবর্তী, ''প্রবন্ধ সঞ্চয়ন'', সম্পাদনা: ড. সত্যবতী গিরি ও ড. সমরেশ মজুমদার, রত্নাবলী, কলকাতা, ২০০৬, পৃ. ১২৬০</ref> তারাশঙ্করের গান্ধীবাদী মনোভাব তাঁর "শেষকথা", "শবরী" ও "নবমহাপ্রস্থান উপাখ্যান" প্রভৃতি গল্পে ফুটে উঠেছে।<ref>"বিংশ শতাব্দীর বঙ্গীয় গণআন্দোলন ও বাংলা কথাসাহিত্য", রবীন পাল, ''প্রবন্ধ সঞ্চয়ন'', সম্পাদনা: ড. সত্যবতী গিরি ও ড. সমরেশ মজুমদার, রত্নাবলী, কলকাতা, ২০০৬, পৃ. ১২৭০</ref> তারাশঙ্করের "পৌষলক্ষ্মী", "বোবাকান্না", "ইস্কাপন", "অহেতুক" ইত্যাদি গল্পে [[পঞ্চাশের মন্বন্তর|পঞ্চাশের মন্বন্তর]] ও সমসাময়িক যুদ্ধপ্রসঙ্গ উঠে এসেছে।<ref>"দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মন্বন্তর ও দেশভাগ: বাংলা কথাসাহিত্যে তার চিত্ররূপ", প্রণতি চক্রবর্তী, ''প্রবন্ধ সঞ্চয়ন'', সম্পাদনা: ড. সত্যবতী গিরি ও ড. সমরেশ মজুমদার, রত্নাবলী, কলকাতা, ২০০৬, পৃ. ১২৭০</ref>
 
== লেখার বৈশিষ্ট্য ==