তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
৪৭ নং লাইন:
 
==জীবনী==
===জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়===
১৮৯৮ সালের ২৩ জুলাই [[ব্রিটিশ ভারত|ব্রিটিশ ভারতের]] [[বাংলা প্রেসিডেন্সি|বাংলা প্রেসিডেন্সির]] (অধুনা [[ভারত|ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের]] [[পশ্চিমবঙ্গ]] রাজ্যের) অন্তর্গত [[বীরভূম জেলা|বীরভূম জেলার]] লাভপুর গ্রামে পৈত্রিকএক ক্ষয়িষ্ণু জমিদার বাসভবনেপরিবারে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। উল্লেখ্য, ক্ষয়িষ্ণু জমিদার পরিবারের সমস্যা ও লাভপুর-সন্নিহিত অঞ্চলের সাধারণ জনজীবন পরবর্তীকালে তারাশঙ্করের আঞ্চলিক উপন্যাসগুলির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছিল। তাঁর পিতার নাম ছিল হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতার নাম ছিল প্রভাবতী দেবী। ১৯০৫ সালেই পিতৃহারা হনহয়েছিলেন তারাশঙ্কর। এরপর ১৯১৬ সালে লাভপুরের যাদবলাল এইচ. ই. স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ তারাশঙ্করহয়ে প্রথমেতিনি উচ্চশিক্ষার্থে [[কলকাতা|কলকাতারকলকাতায়]] আসেন এবং প্রথমে [[সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, কলকাতা|সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে]] ও পরে সাউথ সাবার্বানসাবআর্বান কলেজে (অধুনা [[আশুতোষ কলেজ]]) ভর্তি হন;হন। কিন্তু ভগ্নস্বাস্থ্য ও রাজনৈতিক[[ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন|স্বাধীনতা আন্দোলনে]] যোগদানেরসক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে তিনি লেখাপড়া সম্পূর্ণ করতে পারেননি।<ref name=mahashweta77-79>মেকার্স অফ ইন্ডিয়ান লিটারেচার: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়'' (ইংরেজি), [[মহাশ্বেতা দেবী]], [[সাহিত্য অকাদেমি]], নতুন দিল্লি, ১৯৮৩, পৃ. ৭৭-৭৯</ref>
 
১৯১৬ সালেই উমাশশী দেবীর সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন তারাশঙ্কর। তাঁদের দুই পুত্র সনৎকুমার ও সরিৎকুমারের জন্ম যথাক্রমে ১৯১৮ ও ১৯২২ সালে এবং তিন কন্যা গঙ্গা, বুলু ও বাণীর জন্ম যথাক্রমে ১৯২৪, ১৯২৬ ও ১৯৩২ সালে। মধ্যম কন্যা বুলু ১৯৩২ সালেই মারা যায়।<ref name=mahashweta77-79/>
 
===সাহিত্যকীর্তি: প্রাক্-স্বাধীনতা যুগ===
১৯৩০ সালে রাজনৈতিক আন্দোলনে যোগযোগদান দিয়েকরে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেফতার হনহয়েছিলেন; সেই বছর ডিসেম্বর মাসেইমাসে জেলকারাগার থেকে মুক্তিমুক্তিলাভও পান।করেন। ১৯৩২ সালে [[শান্তিনিকেতন|শান্তিনিকেতনে]] [[রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর|রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের]] সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয় তাঁর। সেই বছরই প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ''[[চৈতালী ঘূর্ণি]]''।<ref name=mahashweta77-79/>
 
১৯৩৫ ও ১৯৩৭ সালে লাভপুরের অধিবাসীরা তারাশঙ্করকে সম্বর্ধিতদুই করেন।বার ১৯৩৭সম্বর্ধনা সালেদিয়েছিলেন। তাঁরাএরপর দ্বিতীয়বার১৯৩৯ তারাশঙ্করকেসালে সম্বর্ধনাপ্রকাশিত দিয়েছিলেন।হয় ''[[ধাত্রীদেবতা]]'' উপন্যাসটি। ১৯৪০ সালে তিনি কলকাতার [[বাগবাজার]] অঞ্চলে একটি বাড়ি ভাড়া করে নিজের পরিবারবর্গকে কলকাতায় নিয়ে আসেন। ১৯৪১ সালে তিনি সপরিবারে চলে যান কলকাতার উত্তর শহরতলি অঞ্চলের [[বরানগর|বরানগরে]]। ১৯৪২ সালে তিনি বীরভূম জেলা সাহিত্য সম্মেলনের পৌরহিত্য করেন। সেই বছরই তিনি ফ্যাসিবাদ-বিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৪৪ সালে তিনি কানপুর প্রবাসী সাহিত্য সম্মেলনে পৌরহিত্য করেন। এই সময়কালের মধ্যেই একে একে প্রকাশিত হয় তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ''[[কালিন্দী (উপন্যাস)|কালিন্দী]]'' (১৯৪০), ''[[গণদেবতা]]'' (১৯৪৩), ''[[মন্বন্তর (উপন্যাস)|মন্বন্তর]]'' (১৯৪৩), ''[[পঞ্চগ্রাম]]'' (১৯৪৪), ''[[কবি (উপন্যাস)|কবি]]'' (১৯৪৪), ''[[সন্দীপন পাঠশালা]]'' (১৯৪৬) ও ''[[অভিযান (উপন্যাস)|অভিযান]]'' (১৯৪৬)। ১৯৪৭ সালে তিনি কলকাতায় আয়োজিত প্রবাসী বঙ্গসাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধন করেছিলেন। সেই বছরই তিনি [[মুম্বই|বোম্বাইতে]] অনুষ্ঠিত সুবর্ণ জয়ন্তী প্রবাসী বঙ্গসাহিত্য সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন। ১৯৪৭ সালেই [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]] তারাশঙ্করকে শরৎ স্মৃতি পদক প্রদান করে। সেই বছর জুলাই মাসে জীবনের পঞ্চাশ-বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গের লেখকেরা তাঁকে সম্বর্ধনা দিয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালে কলকাতার [[টালা পার্ক]] অঞ্চলে নতুন বাড়ি তৈরি করে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তারাশঙ্কর।<ref name=mahashweta77-79/>
 
===সাহিত্যকীর্তি: স্বাধীনতা-উত্তর যুগ===
১৯৫১ সালে তিনি [[সোভিয়েত ইউনিয়ন]] সফরের একটি আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৫২ সালে তিনি [[পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা|পশ্চিমবঙ্গ বিধান পরিষদেরবিধানসভার]] সদস্য মনোনীত হয়েছিলেন।<ref name=mahashweta77-79/>
 
১৯৫৪ সালে তিনি মায়ের কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৫৫ সালে [[পশ্চিমবঙ্গ সরকার]] ''[[আরোগ্য নিকেতন]]'' উপন্যাসের জন্য তাঁকে [[রবীন্দ্র পুরস্কার|রবীন্দ্র পুরস্কারে]] সম্মানিত করে। ১৯৫৬ সালে চীনা লেখক লু-শুনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে [[ভারত সরকার]] তাঁকে [[চীন|চীনে]] প্রেরণ করে; কিন্তু পথমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি [[রেঙ্গুন]] থেকেই ফিরে আসেন। সেই বছরই তিনি [[সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার]] লাভ করেন। ১৯৫৭ সালে চীন সরকারের আমন্ত্রণে তিনি চীন সফরে যান। ১৯৫৮ সালে তিনি আফ্রো-এশীয় লেখক সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক সমিতিতে যোগ দিতে [[সোভিয়েত ইউনিয়ন|সোভিয়েত ইউনিয়নে]] যান। সেই বছরই আফ্রো-এশীয় লেখক সম্মেলনের ভারতীয় লেখকদের নেতা হিসেবে তিনি গিয়েছিলেন [[তাসখন্দ|তাসখন্দে]]।<ref name=mahashweta77-79/>
 
১৯৫৯ সালে [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]] তারাশঙ্করকে জগত্তারিণী স্বর্ণপদক প্রদান করে। সেই বছরই [[চেন্নাই|মাদ্রাজে]] আয়োজিত সর্বভারতীয় লেখক সম্মেলনে পৌরোহিত্য করেন তিনি। ১৯৬০ সালে তিনি বিধানপশ্চিমবঙ্গ পরিষদবিধানসভা থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং [[ভারতের রাষ্ট্রপতি]] কর্তৃক [[ভারতীয় সংসদ|সংসদের]] সদস্য মনোনীত হন। এই উপলক্ষ্যে [[হাওড়া জেলা|হাওড়া জেলার]] বাঁটরার অধিবাসীবৃন্দ তাঁকে গণসম্বর্ধনা জ্ঞাপন করেছিল। একই বছর লাভপুরের অধিবাসীরাও তাঁকে তৃতীয়বার সম্বর্ধিত করেন। ১৯৬২ সালে তিনি [[পদ্মশ্রী]] সম্মান লাভ করেন। এই বছরই তাঁর জ্যেষ্ঠ জামাতা শান্তিশঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু ঘটলে ভগ্নহৃদয় তারাশঙ্কর অন্যদিকে মনোযোগ ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য ছবি আঁকা ও কাঠের পুতুল তৈরিতে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি শিশিরকুমার পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি সংসদের সদস্যপদ থেকে অবসর নেন। ১৯৬৬ সালে তিনি নাগপুর বঙ্গসাহিত্য সম্মেলনে পৌরোহিত্য করেন। ১৯৬৭ সালে ''[[গণদেবতা]]'' উপন্যাসের জন্য তিনি [[জ্ঞানপীঠ পুরস্কার]] লাভ করেন। এই উপলক্ষ্যে [[কলকাতা পৌরসংস্থা]] তাঁকে গণসম্বর্ধনা দিয়েছিল।<ref name=mahashweta77-79/>
 
সত্তর বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসীরা [[মহাজাতি সদন|মহাজাতি সদনে]] তাঁকে আরেকটি সম্বর্ধনা দিয়েছিল। ১৯৬৮ সালে তিনি [[পদ্মভূষণ]] সম্মানে ভূষিত হন। সেই বছরই [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]] ও [[যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়]] তাঁকে সাম্মানিক ডি.লিট. প্রদান করে। ১৯৬৯ সালে তিনি [[সাহিত্য অকাদেমির ফেলো]] নির্বাচিত হন। সেই বছরই তাঁর মা প্রভাবতী দেবী প্রয়াত হন এবং তারাশঙ্কর [[বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ|বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের]] সভাপতি এবং ত্রৈমাসিক পত্রিকা ''শতরূপা''-র সম্পাদকীয় পর্ষদের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে তিনি লাভপুরে চতুর্থ সম্বর্ধনা লাভ করেন। ১৯৭১ সালে [[বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়|বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের]] আমন্ত্রণে তিনি নৃপেন্দ্রচন্দ্র স্মৃতি বক্তৃতা প্রদান করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালও তাঁকে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় স্মৃতি বক্তৃতা প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।<ref name=mahashweta77-79/>
 
===মৃত্যু===
১৯৭১ সালের জুলাই মাসে তিনি শরীরে সাইনাস-জাতীয় ব্যথা অনুভব করেন। ১৩ অগস্ট তিনি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যান; কিন্তু বিকেলের মধ্যেই আবার সুস্থ হয়ে ওঠেন। ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাঁর শরীর ঠিকই ছিল। তারপরই আরেকবার তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ১৪ সেপ্টেম্বর ভোরে তাঁর মৃত্যু ঘটে। জ্যেষ্ঠপুত্র সনৎকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তর কলকাতার [[নিমতলা মহাশ্মশান|নিমতলা মহাশ্মশানে]] তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন।<ref name=mahashweta77-79/>